পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 12
—” কি হলো তোকে প্রশ্ন করেছি হাত ভেঙে কি একবারো তার খবর নেওয়া হয়েছে??”
অরিত্রান চোখ বাঁকিয়ে রিমনের দিকে তাকালো।তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে রিমনের প্রতি সে কতটা বিরক্ত। রিমনের এমন অদ্ভুত প্রশ্ন আর কথা কোনোটাই তার ভালো লাগছে না।হঠাৎ ওয়াসেনাত নামক মেয়েটার প্রতি রিমন এত যত্নশীল হয়ে উঠেছে কেনো তাও অরিত্রানের মাথায় আসছে না।কাউকে খুন করলেও তো রিমন কৈইফিয়ত চাইতে আসে না।আর আজ হাত ভেঙেছে বলে একদম জেরা করছে??হোয়াই?? অরিত্রান সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে রিমনের দিকে।রিমন একটু ভড়কে গিয়ে চাপা হাসি দিয়ে বললো,
—” এভাবে তাকাছিস কেনো??আসলে ডক্টর সাইদ কল করেছিলো।তোকে নাকি অনেক বার কল করেছিলো তুই রিসিভ করছ নাই।তার চাইতে বড় কথা হলো তুই নিজে নাকি তাকে বলেছিস ওয়াসেনাতকে দেখে আসতে??তাই জিজ্ঞেস করলাম তুই কি তার খবর নিয়েছিস কি না??”
অরিত্রান বিছানা থেকে উঠে সোফায় বসলো।রিমন বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।একটু উত্তরের আশা ছিলো তার মনে কিন্তু অরিত্রান তা দিলো না।আসল কথা সে অরিত্রানের কার্যকলাপে প্রচণ্ড ভাবে অবাক।সেদিন যে ওয়াসেনাতকে দেখতে অরিত্রান হসপিটালে গেছে কথাটা সে রিমির কাছে শুনেছে।অরিত্রান হসপিটালে গেছে তাও রোগী দেখতে তার উপর যাকে সে নিজে অসুস্থ করেছে।কথাটা ভাবতেই রিমন হতবাক।অরিত্রানের মনে কখন কি চলে এটা সে জানে না।তবে সে অরিত্রানকে যানতে চায় খুব করে।ওয়াসেনাত নামক মেয়েটার প্রতি অরিত্রানের অনুভুতি গুলো একদম ভিন্ন মনে হয় তার।সত্যি কি ভিন্ন???
—” আমি কখন কি করি আর করবো তার কৈফিয়ত কাউকে দিনা এটা তুই আমার চাইতে ভালো যানছ। বাই দ্যা ওয়ে রিমি নামের মেয়েটার সাথে তোর এত কিসের খাতিল??আন্সার মি??”
অরিত্রান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো
রিমন চমকে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। ধরা পড়ার মত মুখ করে সে অরিত্রানের রুম থেকে কেঁটে পরতে চায়।অরিত্রান গম্ভীর গলায় আবার বললো,
—” তোর কি মেয়েটাকে পছন্দ??”
রিমন থমকে দাড়ায়।ভয়ে তার হাত পা কাঁপে।অরিত্রানকে এত ভয় সে পায় না।তাও মাঝে মাঝে ভয়টা বিরল ভাবে আক্রমণ করে তাকে।যেমন এখন করছে।অরিত্রান আবার বললো,
—” এমন ঝগড়ুটে মেয়ে হয়!!আই কান্ট বিলিভ দিস।সি ইজ ভেড়ী ডেঞ্জারাস গার্ল।কথায় কথায় চিৎকার করে। আর হামলে পড়ে quarrel শুরু করে।ডিজগাস্টিং!!”
রিমন হা করে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।মনে মনে রিমিকে প্রচুর বকতে ইচ্ছে করছে।ঝগড়া করে আরকি তাই বলে সবার সাথে করবে নাকি??শত হোক অরিত্রানের সাথে কেনো করতে গেলো।রিমন বললো,
—” আসলে ও একটু এমনই।তুই মাইন্ড করিছ না।মেয়েটা এমনে কিন্তু ভালো।”
অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে তাকায়। “ও”শব্দটা যেনো তার কানে এসে লাগলো।রিমন এক দৌড়ে রুমের বাহিরে চলেগেছে। ভয়ে তো তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এসেছে অরিত্রানকে জব্দ করতে হয়েগেলো নিজে।অরিত্রান রিমনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর আবার ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কাজে মন দেয়।তার এত সময় কই এসব নিয়ে চিন্তা করার।
_______________________
—” এই তুই সারা দিন ফোনে এত কি করছ বলতো??নিশ্চুয়ই প্রেম!! তাই না??কার সাথে বল??”
ওয়াসেনাতের এমন প্রশ্নে রিমির মুখটা ছোট হয়ে আসে।মাহিরের সাথে তার এখন মেসেজ, কলে অনেক কথা হয়।ছেলেটার গোঁফটা তার পছন্দ না।তা নাহলে কিন্তু দেখতে মাশআল্লাহ্।আর সবচাইতে বড় কথা সেদিন হোটেলে একা পেয়েও তার সাথে কোনো বাজে বিহেভ করলো না ছেলেটা।কত ভালো সে।ভালো না হলে কি ওয়াসেনাতকে হসপিটালে নিয়ে আসা থেকে সব কাজে সাহায্য করতো?? না তো।সেই দিন থেকেই তার এই ছেলেটাকে দারুন লাগে।রিমি ওয়াসেনাতের বাম হাত চেপে বললো,
—” অনেক দিন তো হসপিটালে থাকলি কাল আমরা ঘুরতে যাবো।যাবি??”
ওয়াসেনাত চোখ ছোট করে বললো,
—” মতলবটা কি বলতো??আমি কিন্তু এই প্রশ্ন করি নাই।সো তোর আসল কাহিনী ক??তা না হলে যামু না।বলে দিলাম??”
রিমি চমকে গেলো।ওয়াসেনাত ধরে ফেললো।কাল মাহির তাকে আর ওয়াসেনাতকে পাশের একটা ক্যাফেতে নিয়ে যাবে বলেছে।তাই ওয়াসেনাতকে রাজি করাতে এসেছে সে।কিন্তু কি বলবে তাই ভাবছে।ওয়াসেনাত আবার বললো,
—” বল বল কাহিনী কি??তুই কি প্রেম টেম শুরু করে দিলি??কাল নিশ্চুয়ই ট্রিট দিবি।রাইট??”
—” আরে না দোস্ত।মাহির আমাদের ঘুরতে নিবে।অনেক দিন তো হসপিটালে আছি।তাই সে বলেছে কাল পাশের একটা ক্যাফেতে নিয়ে যাবে বা আমরা চলে যেতাম।সে থাকবে।কত দিন যাই না বল??চল না??আর মাহির তো প্রতিদিন তোকে দেখতে আসে কাল একদিন ওর সাথে গেলে কি হবে বল??”
ওয়াসেনাত মিটমিট করে হেসে বললো,
—” গোঁফা মাহির!!কিছুই হবে না আমার।তবে আপনার বহুত কিছু হয়েগেছে। তবে গোঁফা মাহির ছেলেটা খুবই ভালো।শুধু গোঁফটা বিশ্রী।বাকি সব ঠিক ঠাক আপনার ওওওওর!!”
রিমি হঠাৎ করেই লজ্জা পাচ্ছে।মাহিরকে তার সত্যি খুব ভালো লাগে।নুহাশ ছেলেটা যতটা বিরক্তি কর মাহির ততটাই ভালো।ওয়াসেনাত হঠাৎ চেঁচিয়ে বললো,
—” আয় হায়!!
রিমি ভ্রুকুঁচকে বললো,
—” কি হয়েছে??”
—” গোঁফা মাহির যদি তোর ওওও হয় ওই পরিত্রাণের কি হবে দোস্ত?? শালারে না দেখেই আমার বিধবা বিধবা মনে হচ্ছে। তোর না জান, প্রান, কলিজা।তারে রেখে এখন মাহির??না এ হতে পারে না।”
—” আরে ফালতু কথা ছাড়।অরিত্রান আমার জান, প্রান কলিজাই থাকবে।মাহির তো শুধু ফ্রেন্ড। অরিত্রান আমার ক্রাশ।তবে দোস্ত ওই নুহাশরে আমার একদম ভালো লাগে না।শয়তান লোক একটা।তা না হলে কি তোরে এত ব্যাথা দিতো??নির্দয় মানুষ।ফালতু পোলা।”
ওয়াসেনাত হেসে ফেলে।এই পরিত্রাণকে একবার দেখার ইচ্ছে জেগেও তার দেখতে ইচ্ছে হয় না।নুহাশ নামটা শুনেই ওয়াসেনাতের তার কথা মনে পরে।লোকটা অদ্ভুত হলেও কিছু একটা আছে তার মাঝে।যা ওয়াসেনাতকে খুব করে ভাবায়।রাতের নির্ঘুমের সঙ্গি হচ্ছে দিন দিন এই নুহাশ নামের মানুষটা।শ্যামলা মুখশ্রী। গভীর দু’খানি চোখ চশমার ফ্রেমে বন্ধি থাকে সবসময়।চশমাটা খুললেই মনে হয় কত রহস্য তার চোখে।মনে হয় চোখের কালো মনিটাও আসল না। তাকে যেমন দেখতে লাগে তেমন কিন্তু সে নয়।কোথাও তার প্রচুর রহস্য লুকিয়ে আছে।কিন্তু কোথায়??মনের গহিনে??
______________________
পৃথিবীর আলাদা রং রূপ হয়?? কথাটা মিথ্যা।সব কিছুই সাদা কালোর ফ্রেমে বাধাই করা।অন্ধকার নিস্তব্ধ পরিবেশ।ব্যালকুনি থেকে নিচের দিকে তাকালে সে অন্ধকার আর বুঝা যাচ্ছে না।ঝকঝক উজ্জ্বল আলো চার দিকে মুড়িয়ে রেখেছে হোটেলটাকে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রাঙিয়ে আছে দূরের রাস্তাটা।নীরবতায় ছেঁয়ে গেছে চারপাশ।রাতটা নির্ঝুম নির্জন।কোলাহল নেই কোনো??ব্যস্ততা নেই কাজে।আছে শুধু নিস্তব্ধতার আলাপ আর আলোচনা।প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে কথা বলছে ঝিঁ ঝিঁ করে।জীবনটা চক্রের মত ঘূর্ণায়মান। আসলেই কি মানুষের জীবনে টাকাই সব??অর্থ সম্পদেই কি জীবন নামের এই বিশাল চক্র চলমান??নাকি কোনো একটা সময়ে প্রশান্তি নামক বস্তুটাও প্রয়োজন??হয় তো প্রয়োজন??কিন্তু কোথায় পাবে এটা তা জানা নেই অরিত্রানের??নিজেকে ব্যস্ত রাখতে রাখতেও একটা সময় সে ক্লান্ত হয়।তার ও ইচ্ছে জাগে কারো সাথে নিজের মনের কথা বলতে।কিন্তু সঙ্গী তো নেই।তার একলা জীবনের সঙ্গী শুধু কাজ।বাকি সময়টা এমন নির্ঘুম চোখে ভেসে বেড়ায় অন্ধকার।জীবনের সব জুড়ে শুধু অন্ধকার।তাই এই গভীর কালো রাতটা তার ভালো লাগে।কিন্তু রাতটাও আলোকিত আজ।শুধু তার জীবনে আলো নেই।অরিত্রান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চোখ রাখে আকাশের দিকে।পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ।আকাশি রংটা চোখে ধরা না পড়লেও থালার মত চাঁদটা তার চোখ এড়ালো না।চাঁদের দিকে নিস্তব্ধ হয়ে কিছুসময় তাকিয়ে থাকে অরিত্রান। আজ ও ঘুমটা ধরা দিলো না।দিবে কিভাবে আজ তো সে ঘুমের ঔষুধ খেতেই ভুলেগেছে।ইদানীং সে অনেক কিছু করতে ভুলে যায়।আর কিছুদিন এই শহরে।তারপর আবার নতুন শহরে তার বাস হবে।নতুন শহরের কোনো হোটেলের ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে সে এভাবেই আবার চাঁদ দেখবে।কিন্তু সব চাঁদ কি এক??চাঁদ তো একটাই হয়।যা পৃথিবীময় বিচরন করে।কথাটা জেনেও বোকার মত সে এমন চিন্তা কেনো করছে??হঠাৎ তারা ঝলসে পড়ার মত তার মনের মাঝেও ওয়াসেনাত নামটা উঁকি দিচ্ছে। চাঁদ ও একটা আর ওয়াসেনাত নামের মেয়েটাও একটা তাহলে কি তাকেও সব জায়গায় পাওয়া যাবে??তা তো সম্ভবনা। অরিত্রান চোখবুজে দীর্ঘ কিছু শ্বাস ফেলে।চোখের পাতায় দৃশ্যমান হয় ঘামে ভেজা মুখশ্রী। ফেইড়ি লাইটে মোড়ানো সেই মেয়ে।হাসতে হাসতে মাথায় বেলীফুলের মালা জড়ানো সেই মুখ।পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে সেই হাসি।অরিত্রান চোখ খুলে তাকায়।মেয়েটার সম্পর্কে বেশিই ভাবছে সে।সত্যি কি বেশি ভাবছে?? অরিত্রানের মন নেই।তবুও হঠাৎ এই প্রশ্ন কোথা থেকে উদিত হচ্ছে??অরিত্রান বেশি ভাবতে চায় না।দু’দিন পরেই দেশ ছাড়বে সে।রাহিত নামক বস্তুর কাজ কালই শেষ করবে সে।তারপর আর এই শহরে আসবে না।শহরটা তাকে কেমন এলোমেলো করে দিয়েছে।কঠোর থেকে দয়াবানে রূপ নিচ্ছে সে।দয়া দিয়ে আদো কি কিছু হয় ??মস্তিষ্কের এমন খামখেয়ালী প্রশ্নে অরিত্রানের মন বললো,
—” হয়।দয়া মায়া আবেগ অনুভুতি নিয়েই মানুষ।”
অরিত্রান মনকে পাত্তা দেয় না।মনের কথা ঠেলে হেঁসে বলে,”তাহলে আমি মানুষই নই।”
পরক্ষনেই তার মনে পরে সে তো দুজনকে এই দয়ামায়া দেখিয়েছে।কিন্তু কেনো??অরিত্রান নিজের সব প্রশ্ন অসমাপ্ত রেখে ব্যালকুনির সাদা গোল সোফায় বসে পরে।মনের কোটারে গুটিশুটি মেরে জায়গা নেওয়া সেই কেউটাকে তার প্রচণ্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।আজ সারাটা দিন তার মুখটা দেখার প্রবল ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু সে গেলো না।সব ইচ্ছে গুলোকে প্রাধান্য দিতে নেই।মেয়েটার সামনে কেমন দূর্বল দূর্বল মনে হয় তার নিজেকে।অরিত্রান খান তো পাষণ্ড। দূর্বলতা তার নেই।দূর্বলা থেকে তার আবার আযমানের কথা মনে পরে যায়।ভালোবাসা কি সত্যি ভয় পাওয়া শিখায়??তাহলে এই জঘন্য শব্দের সাথে সে কখনো পরিচিত হবে না।তাকে দেখে ভয় পাবে সবাই। একজনকে ছাড়া আর কিছুর প্রতি ভীতূ না সে।অরিত্রানের এসব চিন্তার মাঝে হুট করে ডক্টর সাইদের কথা মনে পড়ে।হাতটা কি বেশি ভেঙেছে??কথাটা ভাবতে ভাবতেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।ফোন খুঁজে সাইদ নামের লোকটাকে কল করে।কল ধরতেই অরিত্রান উত্তেজিত হয়ে বললো,
—” ওয়াসেনাত বিনতে তৌফিকের হাত কি বেশি injured হয়েছে??”
সাইদ অবাক হলো।খুবই অবাক বলে যে ভাষা আছে তাই সে হয়েছে।অরিত্রান এতটা যত্ন কেনো নিচ্ছে মেয়েটার??কথাটা গলায় এসে আঁটকে গেলো।আর মুখ দিয়ে বের হলো না।অরিত্রান আবার বিরক্ত গলায় বললো,
—” আপনাকে কিছু প্রশ্ন করা হচ্ছে।আই থিংক আপনি deafen না।”
—” সরি স্যার।আসলে আমি একটু অবাক হয়েছি তো তাই!!”
—” হোয়াই??”
—” কোনো কারন নেই। তেমন কিছু না স্যার।আসলে মেয়েটার হাতের হাড্ডিতে আঘাত পেয়েছে।মানে হাড় ভেঙেছে।একমাসের মাঝে ভালো হয়ে যাবে।কেউ পিছনের দিকে হাত ঘুরিয়ে দিয়েছে তাই এমন হয়েছে।আর কোনো প্রবলেন নেই।”
অরিত্রান ঝাঁঝালো গলায় বললো,
—” মেয়েটা নয় ওয়াসেনাত নাম ওর।রোগীদের নাম না জেনে অবশ্যই আপনি treatment করেন না বলে আমার মনে হয়?তাই নাম নিয়ে বলবেন।একটা নাম থাকে মানুষের।আই থিংক ইউ understand.
অরিত্রান কল কেটে দিয়েছে।ডাক্তার সাইদ হতবাক হয়ে বসে পড়ে। সামান্য মেয়ে বলে সম্মদন করায় এত রেগে কেনো গেলো??এটাই তার মাথায় ডুকছে না।
অরিত্রান ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে হঠাৎ এত রাগ কেনো হলো তার??মেয়ে বলেছে বলে??এটা তো স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।হলোটা কি??অরিত্রান নিজের প্রতি আর বিরক্ত ধরে রাখতে পারলো না।ফোনটা একপাশে ছুঁড়ে দিয়ে পিঠ ছড়িয়ে দিলো বিছানায়।কাল তার ভার্সিটি নামক যন্ত্রণার ইতি টানতে হবে।হঠাৎ নিজের অদ্ভুত কাজ গুলো তার আর ভালো লাগছে না।ছুটি নিতে চায় হঠাৎ পাল্টে যাওয়া জীবনের গতিপথ থেকে।
__________________
বিকেল ৩টা ছুঁই ছুঁই। ওয়াসেনাত দুপুরের খাবার খেয়ে বালিশে মাথা রাখতেই তাকে জাপ্টে ধরে ঘুম নামক অদ্ভুত শব্দদয়।ঘুম পাগল মানুষের এই এক সমস্যা।যখন তখন বিনা নিমন্ত্রণে এসে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দেয়।ঠিক একুই ভাবে ওয়াসেনাতের নীলাভ চোখে একঝাঁক আরাম হয়ে ধরা দিয়েছে ঘুম।কিন্তু কেউ মনে হয় ওয়াসেনাতের এই আরাম নিতে পারলো না।চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা খেয়ে ওয়াসেনাত ভাঙা হাত নিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।ডান হাত তুলতে গিয়েও তুলতে না পেরে সে বিস্মিত। ঘুমের তালে সে ভুলেই গেছে মহান অরিত্রান তার হাত ভেঙে দিয়েছে।কিছুসময় স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে ওয়াসেনাত। রাগে দুঃখে তার চোখটা একদম খুলতে ইচ্ছে করছে না। সামনের যে ব্যক্তি আছে তাকে এখন ঠাটিয়ে এক না তিন চার চড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু সে পারবে না।ডান হাত তো ভাঙা।বাম হাতের চড় ঠিকমত গালে পড়বে না।
—” হাবার মত আর কতসময় চোখবুজে থাকবি??চোখ খোল।আর এই তোরে ঘুমাতে কে বলছে??”
ওয়াসেনাত রাগে কটমট করে চোখ না খুলে বললো,
—” ঘুম আমার স্বাধীন দেশের স্বাধীন অধীকার। কারো বলার জন্য আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।তাই ঘুমিয়েছি এতে তোর কি??”
—” ফালতু কথা রাখ।উঠে রেডি হ??অলরেডি ৩টা বাজে।
ওয়াসেনাত চোখ খুলে অবাক হয়ে বললো,
—” কেনো??”
—” আরে আমরা মাহিরের কাছে মানে ক্যাফেতে যাবো তাই।”
—” এখন!!এই সময়েই যেতে হবে??ভাই আজ না কাল যাবো।ঘুমটা মাস্ত ছিলো।”
রিমি অসহায় ভাব দেখিয়ে বললো,
—” প্লিজজজ ভাই।”
—” ড্রেস চেঞ্জ করতে সাহাস্য কর।”
ওয়াসেনাতের ভারী গলা।তার বিরক্ত লাগলেও রিমির এমন অসহায় ভাব সে দেখতে পারে না।সেই ছোট থেকে তারা একসাথে।তার জন্য মেয়েটা নিজের ঘরবাড়ি সব ফেলে হলে থাকে।আর এই কয়েকদিন তো একদম তার মায়ের মত তাকে আগলে রাখছে। তার জন্য কত করে রিমি আর রিমির জন্য এইটুকুনি করবে না এটা হতে পারে না।
______________________
বিরক্তি নামের শব্দটা আসলেই বিরক্তিকর একটা শব্দ। আর সেই শব্দটা এখন রিমনের উপর হচ্ছে অরিত্রানের।তাকে দুনিয়ার সবাই ভয় পায়।এমন কি এই রিমনও পায়।তাও তার সাহস একটু বেশি।কারন সে জানে অরিত্রান আর যাই হোক তার প্রতি একটু দয়াশীলতা দেখায়।তাই তো রাহিদের কাছে যাওয়া বাদ দিয়ে তাকে ক্যাফেতে বসিয়ে রেখেছে।তাও নকল রূপে।রিমনের মনে আসলে চলছেটা কি তা চট করে ধরে নিয়েছে অরিত্রান।রিমন ভয়ে আছে।অরিত্রানকে জোড়াজোড়ি করে এখানে এনে বসিয়েছে সে।তার মূল কারন রিমি!!রিমিকে সে ভয় পায়।অরিত্রান তাকে সাহস জোগায় তাই নিয়ে এসেছে।অরিত্রান পাশে থাকলে তার সব সহজ সহজ লাগে।অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে সোফার সাথে ঠেসে বসে আছে আর ফোন স্ক্রল করছে।কিছুক্ষণ পর পর আবার রিমনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।রিমনের ভাবটা এমন আজ সে শুধু শুধু নয় প্রপোজাল দিতে এসেছে।নীল শার্ট ইন করে পরেছে।অরিত্রানের সব কেমন অদ্ভুত লাগছে।আশ্চর্য এত সাজুগুজু করে আসার মানে কি??তারা কি মেয়ে দেখতে এসেছে নাকি??অরিত্রান বাংলাদেশের হিস্ট্রি ঘেটে এটাও জানতে পেরেছে ইদানীং পাত্রপাত্রী ক্যাফে,রেস্টুরেন্ট,এসব জায়গায় দেখা করতে আসে।সাথে নিয়ে আসে বন্ধু।আচ্ছা রিমন কি তেমনই কিছু করবে?? আর সে কি ওই বন্ধু??অরিত্রানের চোখেমুখে তিক্ততা ফুটে উঠে।যেনো কেউ তাকে বেধে এখানে আঁটকে রেখেছে যেতে পারলেই বাঁচে।ইদানীং লেন্স লাগিয়ে তার চোখের সমস্যা হচ্ছে। স্কিনেরও প্রবলেম হচ্ছে। তার উপর রিমনের আজেবাজে কাজ।অরিত্রান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—” আর কতক্ষণ বসে থাকবেন আপনি মিস্টার রিমন??”
রিমন কিছু বলে না।ভাবলেশহীন ভাবে বসে বসে টেবিলের উপরে রাখা লাল গোলাপ গুঁচ্ছ থেকে একটা গোলাপ নিয়ে সে নাড়াচাড়া করছে।গোলাপ গুলো তারা নিজেরা নিয়ে আসে নি। এখানেই ছিলো।ফুলদানীতে।রিমনের ভাব দেখে অরিত্রান ধপ করে জ্বলে উঠে। রাগে কটমটিয়ে সে বললো,
—” তোর কি আমাকে ভয় লাগে না রিমন??”
রিমন মুখে হালকা হাসি টেনে বললো,
—” অবশ্যই ভয় লাগে।এই যে আমি ভয়ে কাঁপছি। থরথর করে কলিজা কাঁপছে।পায়ের পাতা নড়ছে।ভয়ে আমি চিৎকার ও করছি।ঘামও হচ্ছে খুব।গলায় দম আঁটকে আছে।মর মর অবস্থা। নিঃশ্বাস নিতেও ভয় লাগছে।কখন চড় মারবি তাই ভাবছি।গালটা রেডি করেও রেখেছি।তবে সাবধানে গোঁফ পরে গেলে কিন্তু কেল্লাফতে।
অরিত্রান কাপালে ভাঁজ ফেলে এক ভ্রু তুলে বললো,
—” ভয় আর তুই??কই তোর ভয়,কাঁপাকাঁপি, ধাপাধাপি??”
রিমন আবার মিষ্টি করে হেসে বললো,
—” মনে মনে দোস্ত। সব মনে মনে।মুভিটুভি তো দেখছ না দেখলে বুঝতি মনে মনেও কাঁপাকাঁপি, ধাপাধাপি, ভয়, চিৎকার সব করা যায়।যেমন এখন আমি করছি কিন্তু তুই দেখতেও পাড়ছিস না আর শুনতেও পাড়ছিস না।”
অরিত্রান রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখে ধরা পরেছে এক কালো পরী।কালো হেজাবে মোড়ানো মুখশ্রী। কাঁচের দরজা ঠেলে দিয়ে রিমি তাকে সাধরে ভিতরে ডুকতে দিচ্ছে। ডান হাত গলায় ঝুলে আছে বাদামী প্লাস্টারে ঢেকে।লম্বা কালো সিল্কের গাউন।ফুল লম্বা হাতা।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি।যেনো মুহূর্তে অরিত্রান ঘায়েল হচ্ছে। কালো হেজাবটা একটা পেঁচ দিয়ে পিছনে ছেড়ে দিয়েছে।হেজাবের ডান পাশে ছোট একটা সাদা ফুল।নাম না জানা ফুল।অরিত্রান জানে না এই ফুলের নাম কি??ঠোঁট চেপে হেসে একবার পিছনে ঘুরতেই অরিত্রানের মনে হচ্ছে হেজাবের ঝুলন্ত অংশটুকু চুলের মত লেপ্টে আছে পিঠে।অরিত্রান এখনো তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।দৃষ্টির কোনো নড়চড় হচ্ছে না তার।আজ এই মুহূর্তে মেয়েটাকে সে আশা করেনি এখানে।দু’দিন পরে দেখেও মনে হচ্ছে বহু বছর পরে আবার তাদের দেখা এই ক্যাফে মঞ্চে।নতুন সূর্যের মতই উজ্জ্বলিত লাগছে তার চারপাশ।হঠাৎ এমন লাগার কারন ধরতে পারছে না অরিত্রান।
.
.
#চলবে____