আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 51

হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
কোথায় থেকে কি ভাবে জীবনের রং বদলে যায়।
তা সত্যি মানুষের অজানা।
একটা ছোট অবুঝ সন্তানের সামনে দিয়ে তার বাবা মা কে রক্তাক্ত অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
যে বাচ্চা তার বাবা মা’কে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সে বাচ্চা কতোটা সহ্য করতে পারে তা আমার অজানা।অবুঝ মনে যে দাগ পড়েছে সেই দাগ কি ভাবে মিটবে তা সবার অজানা।
কি ভাবে কি হলো এসব কিছু সবার অজানা।
না জানি কোন বিপদে পড়েছে সবাই।
অনু আরিয়ান মিষ্টি তিন জন আল্লাহর রহমতে ভাল আছে।তবে ভালো নেই আবির আর রিমা।
বলা যাচ্ছে না এরা দু জনের মধ্যে কেউ বাঁচবে কি না।তবে আবিরের থেকে বেশি খারাপ অবস্থা রিমার।
কারণ সে প্রেগন্যান্ট আর এতো বড় দূর্ঘটনায় মা এবং বাচ্চা দু জনে খুব বেশি আঘাত পেয়েছে।
আজ আপন মানুষদের হারানোর ভয়ে সবার বুকের মাঝে কুঁকড়ে উঠছে বার বার।
অনু আরিয়ানের বুকের উপর আছড়ে পরে কান্না করছে।একদিকে তার প্রাণ প্রিয় ভাই তো অপর পাশে তার ভাবী।
এমন কষ্ট বুঝি কেউ একসাথে সইতে পারে?
দু জ’ন ওর কাছের মানুষ।

তাদের কাউকে সে হারাতে পারবে না।
শুধু একজন কে নয় তা দুজন কে সুস্থ চাই।
আজ আয়াত আর রিমি দুজনে একসাথে একি হসপিটালে আছে।রিমি নিজের বোনকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অপর দিকে আয়াত আবিরে ট্রিটমেন্ট করছে।
যাতে করে আবির কে সে বিপদ মুক্ত করতে পারে।
রিদি রাজ কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছে।সত্যি আজ ওদের বড় দুখের দিন।কোথায় সবাই আনন্দ করবে।
আর কোথায় আজ ওরা আপন মানুষ কে হারিয়ে ফেলার ভয়ে কান্নাকাটি করছে।
অনুর মা বাবার অবস্থা ভালো না।
তারা দুজনে ছেলে আর বউমার এমন এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে তখন থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
রিমার মা বাবার ও একি অবস্থা জামাই মেয়ের এতো খারাপ অবস্থা তারা মেনে নিতে পারছে না।
দিশা আর মৌ মিষ্টি কে নিজেদের কাছে রেখেছে।

বেচারি ছোট মিষ্টি এটা ঠিকি বুঝতে পেরেছে তার আম্মু আব্বু খুব অসুস্থ। হয়তো তাদের দুজন কে সে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারে।
মিষ্টি কান্না করতে করতে অনুর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ফুপি আমার মা বাবার যদি কিছু হয় তাহলে আমিও কিন্তু তাদের সাথে চলে যাবো।আমি কেনো আম্মু আব্বু কে ছাড়া একা থাকবে।প্লিজ ফুপি তুমি আম্মু আব্বু কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দিতে বলো না ডাক্তার দের।ওরা তো ইনজেকশন দিলে সবাই ভাল হয়ে যায়।তাহলে আমার আম্মু আব্বু এমন অসুস্থ হয়ে আছে কেনো?”
অনু আরিয়ান কে ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে মিষ্টি কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,”না সোনা মা তোমার আম্মু আব্বু কারো কিছু হবে না।
আমরা তো কখনো কারো সাথে খারাপ কিছু করি নাই সোনা।তাহলে আমাদের সাথে কেনো আল্লাহ খারাপ কিছু হতে দিবে বলো? ”
মিষ্টি বলে,”সত্যি ফুপি আম্মু আব্বুর কিছু হবে না তো? ”
অনু মিষ্টিকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে,”ইনশাআল্লাহ তারা সুস্থ হয়ে যাবে দেখবে মামুনি।”
এমন সময় বাহিরে অটি রুমের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
লাল আলো বন্ধ হওয়া দেখে অনু আরিয়ান, রাজ রিদি সবার হার্ট বিড যেনো কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।
জানি না এই রুমের বাহিরে এসে ডাক্তার কি কথা শোনাবে সবাই কে?
সবার বুকের মাঝে দুরুদুরু করতে শুরু করে দেয়।
অনু মিষ্টি কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।খারাপ কোনো খবর সে হয়তো শুনতে পারবে না।
এমন সময় সবার একবুক আশা আর ভয়ের মাঝে অপারেটর রুম থেকে রিমি বাহিরে বেড়িয়ে চলে আসে।
রিমি কে দেখে রিদি ছুটে গিয়ে বলে,”রিমি আপু রিমার কি অবস্থা ও আর বাচ্চা দুজনে সুস্থ আছে তো? ”
রিমি চিৎকার করে কান্না করে নিজের দু হাত সামনে এনে বলে,”আমি আমার বোন কে বাঁচাতে পারি নাই।এই হাতের দুই হাতের মাঝে সে তার শেষ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়েছে।
আমি আমার কলিজার টুকরো বোনের জন্য কিছু করতে পারি নাই।
আমার বোন আর নেই!
অনু আমার বোন আর নেই।”
অনু এই কথা শুনে সোজা উঠে রিমির মুখে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”তোমার সাহস হয় কি করে আমার ভাবী কে মৃত বলার?
তুমি কি ভুলে গেছো আমার ভাবীর বাচ্চা হবে। তুমি এমন খারাপ সময়ের মাঝে কি করে তাকে নিয়ে মজা করছো।
দেখে রিমি আপু একদম রিমাকে নিয়ে মজা করবে না।বলো ও ভালো আছে তাই না।
আমি জানি রিমা খুব ভালো আছে।
তুমি আমাকে মিথ্যা ভয় দেখাতে এই সব বলছো তাই না?”
রিমি অনুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে,”রিমা আর নেই রে অনু।সে আমাদের ছেড়ে সারাজীবনে জন্য চলে গেছে।
রিমা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে।”
অনু রিমি কে ছাড়িয়ে দূরে সরে এসে বলে,”তুমি জানো কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো তুমি?
ও ছাড়া আমি বাবার বাড়িতে গেলে কার সাথে ঝগড়া করবো?
কার সাথে আমার ভাই কে নিয়ে কথা কাটাকাটি করবো?
আর সব থেকে বড় কথা রিমা কি ভাবে মিষ্টি কে ছেড়ে চলে যেতে পারে?
আমার ভাই আর মিষ্টির কি হবে? ”

রিমি বলে,”আবির ভাইয়ের অবস্থা ভালো না।
জানি না আল্লাহ কি চাইছে আমাদের থেকে।”
মিষ্টি বড় দের মুখে এসব কথা শুনে খুব কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
মৌ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে হসপিটালের বাহিরে চলে যায়।মিষ্টি বার বার তার আম্মুর কাছে যাবার জন্য বায়না করতে থাকে।
এদিকে আরিয়ান খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আবিরের অবস্থা খুব একটা ভালো না।
এবার তিন অজু করে এসে জায়নামাজের পাটিতে নামাজ পড়তে বসে পরে।
তারা কান্না করে নিজের ভাইয়ের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করতে থাকে।
রিমাকে তারা হারিয়েছে কিন্তু আবির কে হারাতে চাই না।
অনেক সময় পর আয়াত এসে ওদের বলে আবির ভাই এখন একটু ভালো তবে তার জ্ঞান ফিরতে দুই তিনদিন দেড়ি হতে পারে।
তার শরীর আর ব্রেন এতো বড় আঘাত নিতে পারে নাই।তার শরীর খুব দুর্বল তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে যার কারণে সে কিছুদিন ঘুমের আবরণে মুড়িয়ে থাকবে।

অনু কান্না করে নিজের শরীর এতোটা দুর্বল করে নিয়েছে যে তাকে আবার অন্য ডাক্তার নার্স চেকআপ করে।
অনুর কিছু টেস্ট করার পর ডাক্তার আরিয়ান কে বলে,”জানি আজকের দিন আপনাদের সবার জন্য খুব কষ্টের তবে আপনার বউ প্রেগন্যান্ট।সে হয়তো এই কথাটা জানে না।
প্লিজ তার খেয়াল রাখবেন।
জানি এমন অবস্থায় এমন খুশির খবর কাটা ঘায়ে নুনেরছিটের মতো লাগে।”
আরিয়ান অনুর মাথার কাছে গিয়ে বসে মনে মনে বলে,”আজ আমাদের জীবনের সব থেকে খুশির দিন কিন্তু আজকের এই কালো রাএি সবার জন্য বিষাদের মতো।”
এইভাবে এই গভীর কালো অভিশপ্ত রাএি পার হয়ে নতুন ভোরের আলো নিয়ে সকালের সুচনা করে।
তবে আজ সবাই মিলে অনুদের বাড়িতে এসেছে তাদের বাড়ির বউকে চির-বিদায় দিতে।
মিষ্টি তো ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে বলে সে তার আম্মুকে কোথাও যেতে দিবে না।তার আব্বু আসলে ঠিকি ওর আম্মু ঘুম থেকে উঠবে।
তাই সে তার দাদী মার কাছে গিয়ে বলে,”ও দাদী মা তুমি আব্বু কে আসতে বলো না দেখো সবাই আম্মুকে কেমন সাদা কাপড়ে পড়িয়ে দিয়েছে। আমার আম্মু তো কখনো এমন কাপড় পড়ে না।

আর দেখো না আম্মু কে দেখতে কতো মানুষ এসেছে আমাদের বাড়িতে।আম্মুকে এতো মানুষ ঘিড়ে রেখেছে আম্মুর ভয় করবে তো।
প্লিজ দাদী মা আব্বু কে তাড়াতাড়ি কল দিয়ে বাড়িতে আসতে বলো। ”
অনুর মা নাতনীর মুখে এই সব কথা শুনে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে,”তোমার আম্মু আজ তার নিজের বাড়িতে যাচ্ছে।
যে বাড়িতে আমাদের সবাই কে একদিন যেতে হবে।”
মিষ্টি বলে,”এটাই তো আম্মুর বাড়ি তাহলে কোন বাড়িতে যাচ্ছে আম্মু? ”
অনুর মা বলে,”একটা ছোট মাটির ঘর আছে।
যে ঘরে সবাই কে যেতে হয় সোনা।”
মিষ্টি বলে,”তাহলে আমিও যাবো আম্মুর সাথে আম্মুর বাড়িতে।”
মৌ এসে মিষ্টি কে সেখান থেকে নিয়ে তার মাকে শেষ বারের মতো দেখিয়ে আড়ালে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে বাড়ির সবাই মিলে রিমার জানাজা এবং দাফনের কাজ শেষ করে ফিরে আসে।
সবাই অনুদের বাড়িতে এসে দেখে বাড়ির পরিবেশ একদম স্তব্ধ। এটাকে বলে শোকের নিরবতা।সবার চোখে পানি ছলছল করছে।কারো চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
এমন অসময় যদি কেনো বাড়ির কচি তরতাজা প্রাণ শেষ হয়ে যায় তাহলে সেই বাড়ির মানুষের কি অবস্থা হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশের বাহিরে।
আরিয়ান অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
এক রাতের শোকে মেয়েটার হাল বেহাল।
শুধু তার না এবাড়ির সবার একি অবস্থা।
এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে আরিয়ান আর কাউকে তাদের খুশির কথা বলতে পারে না বলা যায় না যে।
এভাবে দুইদিন পার হয়ে যায়।

আরিয়ান অনুর এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছে না।
আরিয়ানের মাথার মধ্যের হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
কোথায় থেকে কি ভাবে সব কিছুর শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
এর মধ্যে আবিরের জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে কি ভাবে জানাবে এই দুখের কথাটা।
উফফ সব কিছু অারিয়ানের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।না অনুকে এই ভাবে দেখতে পারছে না বাড়ির সবার হাল অবস্থা এমন চেহারা দেখতে পারছে।
এবার আরিয়ানের কিছু করা দরকার এভাবে সব কিছু সে মেনে নিতে পারছে না।
অনু এই-ভাবে কষ্টের মাঝে থাকলে হয়তো নিজের অজান্তে বাচ্চা ও ক্ষতি করতে পাবে।
সব কিছু এইভাবে এলোমেলো হয়েগেছে কি করে দেখতে হবে জানতে হবে আমাকে।
(ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)



চলবে……