হিংস্র ভালোবাসা

হিংস্র ভালোবাসা !! Part- 32( শেষ পর্ব )

— ভাই ও যা বলতে চাইছে তুই কথা না বলে মন শোন তোর এখনো অনেক কিছু জানার আছে ড্যাডের বিষয় যা তুই এখনো জানিস না….

মিহুর কথায় মেঘ চুপ করে আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সত্যি টা জানার জন্য ৷ আদিল মেঘের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো বিগত পাচঁ বছর আগের কথা গুলো , মেঘ বিশ্বাস করতে পারছে না ওর ড্যাড এতোটা নিচ জঘন্যতম লোক আর এই লোকটার জন্যই ফারহা ওকে ভুল বুঝে দুরে চলে গিয়েছিলো ভাবতেই রাগে শরীলের রক্ত টকবগিয়ে ফুটতে লাগলো মেঘের ৷ মেঘ রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আবার ও ভাঙ্গচুর শুরু করলো ৷ মেঘের চোখ মুখ দেখে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে মেঘের চোখ দিয়ে যেনো আগুনের লাভা বের হচ্ছে মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে ৷ মেঘ ভাবতে পারছে না যার ছোয়া ভালোবাসা ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবহমান তাকে শেষ করার জন্য ওর নিজের ড্যাড এতো কিছু করেছে ফারহা কে নয় যেনো ওর কলিজা কে ওর শরীল থেকে আলাদা করতে চাইলো …

মেঘের রাগ দেখে মিহু সাহস করে মেঘের কাছে যেয়ে মেঘ কে জরিয়ে ধরে বলে” ভাই শান্ত হো ফারহার কিচ্ছু হবে না আমরা হতে দিবো ৷ শুধু তুই শান্ত হো নয় তো আমরা কি করে ফারহা কে তোর কাছে ফিরিয়ে আনবো ..??

মিহুর কথা গুলো যেনো মেঘের রাগ কমানোর বদলে উল্টো আরো বেরে গেলো মিহু কে ছেড়ে দিয়ে হুংকার দিয়ে ওঠে মেঘ…..

— আমার তোদের কাউ কে চাই না মিহু তুই ও ড্যাডের মতো ৷ নয় তো তুই এতো বছর ড্যাডের সাথে থাকতি না আমি তোকে ও আর বিশ্বাস করি না…

কথা গুলো বলে মেঘ মুখ ঘুড়িয়ে চোখ বুজে সব টা প্রথম থেকে একে একে মিলাতে লাগলো,,,,এদিকে আদিল মিহুর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে উঠলো ” সি মিস মিহু চৌধুরী তোমার নিজের ভাই তোমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না সেখানে আমি তোমাকে কি করে বিশ্বাস করি ৷ ? তোমার মতো মেয়েরা শুধু অন্যের ক্ষতি করতে পারে আর কিছু না”

চুপ একদম চুপ আদিল অনেক বলে ফেলেছো তুমি কি ভাবো নিজে কে তুমি হা কি ভাবো , না জেনে কোন মন্তব্য করা যেমন ঠিক না তেমনি না জেনে কারোর উইক পয়েন্টে আঘাত করা টা ও ঠিক না ৷ আমি শুরু থেকে কিছুই জানতাম না , ফারহার বিষয় আর না ফারিহার বিষয় তাহলে আমার দোষ টা কোথায় বলতে পারো তোমরা (জোড়ে চিৎকার করে) কোথায় আমার দোষ উল্টো তোমরা ভাই বোন মিলে আমার সাথে কি করেছো তা কি ভুলে গেছো নাহ আমি ভুলে নি তারপর ও আমি তোমাদের ক্ষমা করে আবার নতুন করে সব টা গড়ার চেষ্টা করেছি আর তুমি বার বার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো কারন টা কি আমি আরহান চৌধুরীর মেয়ে তাই তো ওকে ফাইন আর জ্বালাবো না তোমাকে ভালো থাকো…..(মিহু দৌড়ে রুমে চলে গিয়ে দরজা লক করে কান্না করতে থাকে এদিকে মিহুর কথা গুলো আদিল কে ভাবাচ্ছে ” সত্যি তো এখানে মিহুর তো কোন দোষ নেই আমি শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিয়েছি..? নাহ আমি যা করেছি ঠিক করেছি এর থেকে ও কঠিন শাস্তি ওদের পাওনা ছিলো” হঠাৎ করে আদিলের মেঘের কথা মাথায় আসতেই সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে এটা দেখে আদিল বলতে লাগলো” মেঘ আমি মানে ,,,,,মাঝপথে মেঘ ইশারায় আদিল কে থামিয়ে দিয়ে বলে….

— ব্যাস আদিল আর বলতে হবে না আমি সব টা বুজতে পেরেছি ৷ ওই জঘন্য লোকটার জন্য আমার বোনটাকে কি কি ফেস করতে হয়েছে কিন্তু আর না আসলাম আমি এই মুহূর্তে আরহান চৌধুরী কে আমার সামনে দেখতে চাই…(মেঘ)

— ইয়েস বস,,,

আসলাম ওর লোকদের ফোন করে বাড়ি থেকে আরহান চৌধুরী কে তুলে আনতে বলে ওর কথা মতো আসলামের লোকেরা আরহান চৌধুরী কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে………
.
.
.
মেঘের সামনে বসে আছে আরহান চৌধুরী ভয়ে কাপঁছে কারন মেঘের পোশা হায়না দুটো আরহান চৌধুরী দু পাশে দারিয়ে আছে৷ আরহান চৌধুরী খুব ভালো করেই বুজতে পারছে মেঘ সব টা জানতে পেরে গেছে কি করে মেঘ কে মেনেজ করবে এটা ঠিক ভেবে উঠতে পারছে না আরহান চৌধুরী ..৷ মেঘ অনেকক্ষণ আরহান চৌধুরী কে চুপ করে থাকতে দেখে ইতু কে ইশারা আরহান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে যেতে মেঘের হায়না টা মেঘের চোখের ভাষা বুজতে পেরে চেচিয়ে উঠলো সাথে সাথে আরহান চৌধুরী কেপে উঠলো ….

— ক,,কি হ,, হচ্ছে টা কি মেঘ ..?? আমাকে এখানে এভাবে তুলে আনলে কেনো ..?

— আপনাকে কেনো এখানে আনা হয়েছে তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন মিস্টার আরহান চৌধুরী ..(মেঘ)

— মেঘ তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার বাবা ৷ এভাবে কথা বলতে পারো না আমার সাথে…(চেচিয়ে বললো আরহান চৌধুরী )

— যাষ্ট স্যাটআপ মিস্টার চৌধুরী আপনি কারোর বাবা নন ৷ না আমার আর না মিহুর একচুয়ালি আপনি কারোর বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই নয় তো মেয়ের বয়সি একটার মেয়ের সাথে এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারতেন না৷ আপনাকে বাবা বলতে আমার ঘৃনা করে ৷ যাই হোক এখন বলুন Ak কোথায় আছে ..??

Ak নাম শোনা মাত্র আরহান চৌধুরী চমকে উঠলো …মেঘ আরহান কে চমকাতে দেখে মৃদু হেসে বলে উঠলো ……..

— Ak নাম টা শুনে এভাবে চমকে উঠলেন তারমানে আপনি সব টাই জানেন এখন ভালোই ভালো বলছি বলে দিন কোথায় আছে ওরা ওদের একযেক্ট লোকেশন টা কোথায় ……

— তোর কি মনে হয় মেঘ তুই আমাকে এভাবে ধমকালে আমি সব বলে দিবো হা হা হা নো নো নো ইউ আর এ্যাবসুলুটলি রং মেঘ যতো যাই করিস না কেনো আমি আমার মুখ খুলবো না….(আরহান চৌধুরী )

— ড্যাড তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যে তুমি সবটা ভাইকে বলে দেও…(মিহু)

— হা হা হা তোর কথায় আমি মেঘ কে Ak কোথায় আছে বলবো এটা তুই ভাবলি কি করে মিহু…….

মেঘ আরহান চৌধুরীর কথা শুনে বাকা হেসে ইতু মিতু কে ছেড়ে দিতে ইশারা করলো আসলাম কে আসলাম মেঘের ইশারায় ইতু মিতু(হায়না) দুটো কে ছেড়ে দিতে আরহান চৌধুরীর ঝাপিয়ে পরে আরহান চৌধুরী সাথে সাথে আর্তনাদ করে ওঠে ….

— মেঘ আমাকে হায়নাদের হাত থেকে বাচা বাবা আমি সব বলছি সব বলছি….(আরহান চৌধুরী )

আসলাম সাথে সাথে চেইন টেনে হায়না দের সরিয়ে নিয়ে আসে ৷ মিহু একগ্লাস পানি আরহান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিতে আরহান চৌধুরীর দ্রুত পানি গ্লাস টা নিয়ে এক নিশ্বাসে পানি টা খেয়ে হাপাতে থাকে …..

— তো মিস্টার চৌধুরি কি যে বলছিলেন তখন ….( বাকা হেসে বললো মেঘ)

— মেঘ আমাকে ক্ষমা করে দে ৷ আমি সব টা বলছি তোকে কোথায় নিয়ে গেছে Ak ফারহা কে ……

আরহান চৌধুরী ভয়ে সব সত্যি টা বলে দিলো মেঘ কে কোথায় নিয়ে গেছে ফারহা কে৷ মেঘ আসলাম লোক নিয়ে রেডি হয়ে নিতে বলে রুমে চলে যায় গান নিতে ৷ মেঘ দুটো ধারালো ছুড়ি পায়ে লুকিয়ে রাখলো আর কোমরে গান …..

— মেঘ আমি ও তোমাদের সাথে যাবো সাথে আরহান চৌধুরী কে নিয়ে…(আদিল)

মেঘ কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে গেলো আদিল মিহু আসলাম আর আরহান চৌধুরীকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো………..
.
.
.
.
.
.
— ফারহা খাবার টা খেয়ে নে …(আগুন)

— তোর দেওয়া কোন খাবার কেনো পানি ও খাবো না আমি নিয়ে যা এই সব ..সব ফেলে দিয়ে…

— হাউ ডেয়ার ইউ , তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর কথা বলার এখানে কারোর আমার মুখের উপর কথা বলার সে কলিজা নেই জানিস না এখানে আমি সব আমার কথায় সব ওঠে বসে….(আগুন)

— তোর কথায় সব ওঠ বস করলে ও এই ফারহা করে না তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর কোন পোশা কুত্তা না …(ফারহা)

আগুনের মুখে মুখে পাল্টা জবাব গুলো যেনো আগুনে আরো রাগিয়ে দিচ্ছে ৷ আগুন তেরে এক হাত দিয়ে ফারহার চুলে মুঠি ধরে অন্য হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে আগুন…..

— তোর সাহস দেখে সত্যি আমি অবাক বেবি ৷ এরকম বিপদজনক জায়গায় থেকে ও নিজের এটিটিউড ইগো জেদ কোন টাই ছেড়ে দিচ্ছিস না ৷ আই লাইক ইট ৷ বাট আমি ভেবে ছিলাম তোকে ইউ কে নিয়ে যেয়ে তারপর তোকে বিয়ে করে নিজের করে নিবো কিন্তু এখন তোর এটিটিউড দেখে মনে হচ্ছে এতো দেরি করা আমার জন্য বিপদ বয়ে নিয়ে আসতে পারে তাই আজ রাতে তোকে নিজের করে নিবো তারপর বিয়ে হলে ও কি আর না হলে ও কি …..

আগুন এতো শক্ত করে ফারহার গলা চেপে ধরেছে যে ফারহার চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে ফারহা নিশ্বাস নিতে পারছে না চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে কিন্তু সে দিকে আগুনের খেয়াল নেই সে তার রাগ প্রদর্শন করতে ব্যাস্ত ৷ হঠাৎ করে আগুন ফারহা কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তবে দরজা লক করতে ভুলে যায় আগুন ৷

— মাই গড আর একটু সময় গলাটা চেপে ধরে থাকলে মরেই যেতাম সালা কুত্তা তোর আমাকে নিজের করে পাওয়া আশা এমন ভাবে বের করবো যে তুই কল্পনাতে ও ভাবতে পারবি না ৷ তার আগে ওই মেয়ে গুলো কে বাচাতে হবে ৷ আচ্ছা অফিস্যারের সাহায্য নিলে কেমন হয় ৷ কিন্তু করে ওনার সাথে কন্ট্রাক করবো ফোন টা তো ……..ফারহা ফোনের কথা ভাবতে চোখ পরে রুমের এক কোনে থাকা টেলিফোন টার দিকে ….. ওই তো একটা টেলিফোন দেখি এটা দিয়ে কাজ হয় কিনা তারপর অন্য ব্যাবস্তা করছি…

ফারহা টেলিফোন টা নিয়ে অফিস্যার রায়হান কে কল করে ……

— হ্যালো অফিস্যার আমি ফারহা বলছি চিনতে পারছেন তো..??(ফারহা)

— ইয়েস মিসেস চৌধুরি আমি জানতাম আপনি আমাকে ফোন করবেন ৷

— অফিস্যার আমাকে ,,মাঝপথে কথা থামিয়ে দিয়ে অফিস্যার বলে উঠলো …

— শুনুন আমি জানি আপনি বিপদে আছেন ৷ আমি আমার অফিস্যারদের অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি আপনাকে উদ্ধার করতে কিন্তু আমার মনে হয় না ওরা বেশি কিছু করতে পারবে বলে …

— শুনুন অফিস্যার আমাকে হেল্প করার জন্য আপনাকে কল করেনি আমি এখানে কিছু মেয়ের জন্য আপনার হেল্পের প্রয়োজন ৷ আজ ওদের পাচার করা হবে ৷ আমি চাই না কিছু নিশ্পাপ মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হোক আপনি আপনার অফিস্যার কে বলবেন সাবধানে আসতে কারন এখানে পদে পদে বিপদ ……

— বাহ আপনাকে তো রিতিমতো আমার স্যালুট করতে ইচ্ছে করছে নিজে এমন ভয়ঙ্কর বিপদে পরে আছেন যে কোন সময় যা কিছু হতে পারে এটা যেনে ও নিজে কে না বাচাতে চেয়ে ওই মেয়ে গুলোর কথা ভাবছেন ৷ আসোলে আপনি সবার থেকে আলাদা……

— অফিস্যার আমি আপনাকে আমার প্রশংসা শোনার জন্য ফোন করেনি আমার হাতে সত্যি সময় কম আপনি যা করার দ্রুত করুন ৷

কথাটা বলে কল টা কেটে দিলো ফারহা…….এদিকে অফিস্যারের কথা মতো লোকেশন ট্রেস করে বাকি অফিসারদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়….

ফারহা ধিরে ধিরে রুম থেকে বের হয়ে পশ্চিমের রুম টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে আগুনের লোক দেখতে পেয়ে ফারহা টেবিলের নিচে লুকিয়ে যায় ৷ লোক টা অন্য দিকে চলে যেতেই ফারহা টেবিলে নিচ থেকে বের হয়ে মেয়ে গুলো কে যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমের দরজার লক খুলে ভিতরে ঢুকে …

— ম্যাম আপনি ঠিক আছেন ??(নীলা)

— হুম আমি ঠিক আছি ৷ নীলা বাকি দের নিয়ে তোমাকে এখুনি পালাতে হবে ,-,,,

— ম্যাম কি করে পালাবো আমাদের প্রত্যেকের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বাধা আর প্রত্যেকটার চাবি ওদের বসের কাছে ….(নীলা)

— ওয়াট (চাপা কণ্ঠে) এখন কি হবে ,? কিছু একটা দিয়ে ভাঙ্গতে হবে……

— কি ভাঙ্গবে বেবি….(আগুন)

— আ,,আগুন তু,,তুই এখানে..??( ঘাবড়ে গিয়ে )

— কেনো আমাকে হঠাৎ এখানে দেখবে এক্সপেক্ট করিস নি বুঝি হা হা হা তোর এই ঘাবড়ে যাওয়া মুখ টা দেখতে না আমার সেই লাগে জানিস……

— আগুনের এমন কথা শুনে ফারহা চোখ মুখ শক্ত করে আগুন কে বলে উঠলো ..” আগুন মেয়ে গুলো কে এভাবে আটকে রেখেছিস কেনো ওদের ছেড়ে দে ৷ ”

— ছেড়ে তো দিবোই তবে মাল টা আগে নিজের হাতে পেয়ে নি তারপর ……

ফারহা আগুনের কথার ধরন দেখে বুজতে পারলো আগুন ওদের কোথায় ছাড়ার কথা বলছে…..

— তোকে ছেড়ে রেখে ভেবেছিলাম তুই হয়তো এভাবে থাকলে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবি কিন্ত আ’ম ওয়াজ রং তোকে রাজি করানো যে এতো সহজ না সেটা আমি বুজতে পারি নি ৷ নেভার মাইন্ড কিছুক্ষণ পর তুই এমনি রাজি হয়ে যাবি……(কথাটা বলে এক পৌশাচিক হাসি দিলো আগুন)

— মানে কি বলতে চাইছিস তুই…(ফারহা)

আগুন ফারহার কথার জবাব না দিয়ে ফারহা কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ফারহাকে যে রুমে রাখা হয়েছিলো সে রুমে নিয়ে বেডের উপর ছুড়ে মারলো……
.
.
.
.
— এখানে Ak ফারহা কে নিয়ে এসেছে মেঘ…(আরহান চৌধুরী)

— আসলাম লোক নিয়ে পুরো বিল্ডিং টা ঘিড়ে ফেলো আমি ভিতরে যাচ্ছি …(মেঘ)

— বস আপনি একা ভিতরে যাবেন ..??

— আসলাম আমি যাচ্ছি মেঘের সাথে আর আরহান চৌধুরী কে ও নিয়ে যাচ্ছি….(আদিল)

— আসলাম আমি যা করতে বললাম তাই কর ৷ আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না আমার কিচ্ছু হবে না৷

মেঘের কথা মতো আসলাম লোক নিয়ে পুরো বিল্ডিং টা ঘিড়ে ফেলে Ak লোকদের উপর আক্রমন করে ৷ আর এদিকে আদিল মেঘ আর আরহান চৌধুরী প্রবেশ করে আগুনের ডেরায় ……

মেঘ এক হাতে ধারালো ছুড়ি আর অন্য হাতে গান নিয়ে একের পর এক আঘাত করে আগুনের লোকদের মারতে থাকে৷ আদিল একদিকে আর আগুন অন্যদিকে মাঝখানে আরহান চৌধুরী সাইড হয়ে সরে গেলো ৷ মিহু ও সমানে আগুনের লোকদের আঘাত করতে লাগলো৷ এদিকে আগুন ব্যাস্ত হয়ে পরে ফারহা নিজের করে নেওয়ার জন্য…..

— আগুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু তুই ভালো করেই জানিস আমার প্রতি মেঘের হিংস্র ভালোবাসা ও যদি জানতে পারে তুই আমাকে ছোয়ার চেষ্টা করেছিস তাহলে ও তোর ওই দুই হাত কেটে হায়না কে দিয়ে খাওয়াবে …….

ফারহার কথা শুনে আগুন গা কাপিয়ে হাসতে লাগলো….

— কি বললি তুই মেঘ আমার হাত কাটে হায়না কে দিয়ে খাওয়াবে নাইস জোকস বাট ফর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার ডেরাতে যদি মেঘ ভুল বসত ঢুকে পরে তাহলে জানে বেচে ফিরতে পারবে না ৷ আমার এই দু হাত দিয়ে মেঘ কে এখানে পুতে ফেলবো….
কিন্তু মেঘের আসার আগে যে তোকে আমার পেতে হবে বেবি….

আগুন কথাটা বলে একটু একটু করে আগাতে থাকে ফারহার দিকে এদিকে ফারহা নিজেকে বাচানোর জন্য হাতের কাছে যা কিছু পাচ্ছে তাই আগুনের দিকে ছুড়ে মারছে কিন্তু আগুন তা খেলার মতো ক্যাচ করে ধরছে…….

— ওহ বেবি তোর পুরোনো অভ্যাস আর গেলো না রাগ করলে হাতে কাছে যা পাস তা ছুড়ে মারিস ..(৩২ পাটি দাঁত বের করে )

— আগুন একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না বলে দিচ্ছি …

আগুন ফারহা ধরে ফেলে বেডের সাথে দু হাত চেপে ধরে …” কি রে দেখ তোকে ছুয়ে আছি কিন্তু তোর মেঘ তো এখনো এলো না তোকে বাচাতে তাহলে কি তুই ও তোর মরে যাওয়া বোনের মতো আমার কাছে ধর্ষন হবি …??”

আগুন কথা শুনে ফারহা স্তব্ধ হয়ে গেলো ” তুই ফারিহা কে …”

” হ্যা আমি ফারিহা কে প্রথমে ধর্ষন করি তারপর আমার লোকের জানিস তোর বোন কতো নাটক করেছিল হাত জোড় করেছিল কিন্তু আমি শুনি নি আর এখন তুই কি মজা বল দু বোন কে আমি ….বাকি টা বলতে পারলো না তার আগে ফারহা আগুন কে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য দোর দিতেই কারো বুকে ধাক্কা খায় ফারহা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে মেঘ…..

— মেঘ তুমি এসেছো….(কান্না করতে করতে বললো ফারহা)

— হ্যা জান আমার কলিজায় কেউ হাত দেবে আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখবো হা কেটে ফেলবো তাদের (আগুনের দিকে তাকিয়ে )

মেঘ ফারহার চোখে মুখে চুমু দিয়ে পাশে দারাতে বলে….

— বাহ কি এন্ট্রি হিরোর ঠিক টাইমে হিরোইন কে বাচানোর জন্য এন্ট্রি নিয়েছিস কিন্তু আনফরচুন্টেলি এখন আর তোরা কেউ ফিরে যেতে পারবি না সব কটা কে আমার হাতে মরতে হবে… বলে আগুন মেঘের দিকে তেরে আসতেই মেঘ আগুনের পেটে এক লাথি মারে আগুন এক লাথি খেয়ে দুরে ছিটকে পরে সে সুযোগে ফারহা আগুনের রুমে গিয়ে শিকলের চাবি নিয়ে মেয়ে গুলোর পায়ের বাধন খুলে দেয় ৷ মেয়েদের মুক্ত করে আবার রুমে ফিরে এসে দেখে আদিল আহত হয়ে মাটিতে পরে আছে আর মিহুর ও জ্ঞান নেই৷আর এদিকে মেঘ একবার আগুন কে আঘাত করতে আগুন আবার পাল্টা আঘাত করছে মেঘ কে এক পর্যায়ে ফারহা চোখ পরে রুমে এক কোনে দারিয়ে থাকা আরহান চৌধুরীর দিকে ফারহা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আরহান চৌধুরীর হাতে চাকু যেটা রক্ত মেখে আছে৷ ফারহার বুজতে আর বাকি নেই যে আরহান চৌধুরী আদিল কে আঘাত করেছে ছুড়িটা দিয়ে ফারহা ধিরে ধিরে আরহান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে যায় ৷ আরহান চৌধুরী ফারহা কে দেখতে পেয়ে হাতের ছুড়িটা দিয়ে ফারহা কে আঘাত করার চেষ্টা করে কিন্তু ফারহা বুদ্ধি করে টেলিফোনের পাশে ফ্লাওয়ার ভাজ টা নিয়ে স্বজোড়ে আরহান চৌধুরীর মাথায় আঘাত করে সাথে সাথে আরহান চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে ৷ ফারহা হাতে ওড়না পেচিয়ে আরহান চৌধুরীর হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে আগুনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো…..

— তোর জন্য আমার সব প্লান ভেস্তে গেলো তোকে আমি ছাড়বো না মেঘ তোকে মরতে হবে এই আগুন খানের হাতে তোকে মরতে হবেই …(মেঘের গলা চেপে ধরে)

— কে কার হাতে মরবে তা তুই এখুনি যেনে যাবি জানোয়ার আমার জানের শরীলে হাত দিয়েছিস তাই না ( গলা থেকে হাত ছুটিয়ে) এই হাত আমি রাখবো না ছুড়িটা বের করে আগুনের দুহাতে কোপাতে থাকে মেঘ এক পর্যায়ে আগুনের হাত দুটো ওর শরীল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর আগুন ফ্লোরে শুয়ে ছটপট করতে থাকে তখনি ফারহা ওর হাতে থাকা ছুড়িটা দিয়ে আগুলে গলায় এক পোচ দিতেই আগুনের নরুলি কেটে দু ভাগ হয়ে যায় ততোখনে পুলিশ এসে আরহান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতেই ফারহা ফ্লোরে বসে পড়ে।আগুনের নিষ্প্রাণ নিথর বিভৎস মর দেহের পাশে বসে ফারহা অঝোর কান্না করতে থাকে। আগুনের শরীর থেকে রক্তের বন্যা বয়ে চলছে। ফারহা আগুনের দেহের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে থাকে আমি পেরেছি ফারিহা,দেখ আমি পেরেছি। দেখ তোর খুনিকে নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি। এমন শাস্তি দিয়েছি যে কেউ মনে রাখবে। ফারহাকে কান্না করতে দেখে মেঘ ফারহার পাশে বসে দুই গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দেয়।মেঘ ফারহার দুই গালে হাত রেখে কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে স্লো ভয়েসে বলে এই জানোয়ারের জন্য নিজের চোখের পানি অপচয় করো না জান।তোমার চোখের পানির মূল্য আমার কাছে কতটা তা তুমি জানো না। প্লিজ আমার অমূল্য সম্পদটা এই জানোয়ারের জন্য নষ্ট করো না। প্রত্যেক বার আগুনের নাম নেওয়ার সময় মেঘের কণ্ঠে আগুনের প্রতি রাগের ভাব স্পষ্ট ফুটে ওঠে।আচমকা ফারহা মেঘকে সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলে মেঘও তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের বুকের পাঁজরের সাথে মিশিয়ে নেয়।

“আমি পেরেছি মেঘ,,দেখ আমি আগুনকে নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি। ফারিহার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি আমি” (ফারহা)

-“হুমম,, জান তুমি তোমার বোনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পেরেছ। শুধু তাই না তুমি ওইসব মেয়েদের কেও বাঁচিয়েছো। যাদের আগুন পাচার করে দেওয়ার জন্য আটকের রেখেছিল। তোমার জন্য মেয়েগুলো আবারও তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারছে” (মেঘ)

অশ্রু ভরা টলটল চোখে ফারহার ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। মেঘ ফারহাকে হাসি মুখটা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মন ভরে দেখতে থাকে আদিল। আর নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখে অজান্তেই মিহুর ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে। ঠোঁটে হাসি ফুটলেও আদিলকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট মিহুর মনকে প্রতি নিয়ত দগ্ধ করতে থাকে।

“ফারু ওঠ,, এখানেই থাকবি না-কি বাসায়ও ফিরতে হবে ” (আদিল মুচকি হেঁসে)

আদিলের কথায় মেঘ ফারহা মুচকি হেসে দিয়ে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায়। ফারহা গুটি গুটি পায়ে আদিলের কাছে এসে বলে ভাই আজ তোর কাছে একটা জিনিস চাই দিবি আমাকে?

-“তোকে কখন না করেছি, যে আজ করব। একবার মুখ ফুটে বল তুই যা চাইবি তাই এনে তোর সামনে হাজির করব “(ফারহার গালে হাত রেখে)

— ভাই আমি চাই পুরোনো সব অতিত ভুলে গিয়ে তুই আর মিহু নতুন করে জীবন টা শুরু কর…

— কিন্তু ,,,

— কোন কিন্তু না ভাই , আমি এখন বুজতে পারছি আমি এতোটাই প্রতিশোধের নেশায় মেতে ওঠে ছিলাম যে একটা নিশ্পাপ মেয়ের ক্ষতি করে ফেলেছি ৷ আমি চাই না আমার জন্য আবার ও এই মেয়েটা কষ্ট পাক তুই রাখবি না আমার কথা..??

আদিল ফারহার কপালে স্নেহের পরশ দিয়ে বলে” রাখবো আমার কলিজার কথা আমি রাখবো ”

আদিলের মুখে কথাটা শোনা মাত্র মিহুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো তা একমাত্র মেঘের চোখে ধরা পরলো…..

— যাক এবার আমার বোন টাও ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সুখে থাকবে আর কি চাই একজন ভাই হয়ে…..(মেঘ)

আকাশে কালো মেঘ কেটে গিয়ে এক নতুন ভোরের সূচনা হলো ……

হ্যা আজ মেঘ ফারহার নতুন করে আবার পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো সাথে সাথে আদিল মিহু বিয়ে ও একি সময়ে সম্পূর্ন হলো …….

অবশেষে সব বাঁধা সব অন্ধকার অতিক্রম করে ভালোবাসার মানুষ গুলো একত্রিত হয়ে যায়। যেখানে আরহান চৌধুরী বা আগুনের অভিশপ্ত কালো ছায়ার কোন চিহ্ন নেই। আছে শুধু ভালোবাসা আর পূর্ণতার ছোঁয়া। মনে ভালোবাসার তৃপ্ততা নিয়ে ফারহা মেঘ,আদিল মিহু এগিয়ে চলে জীবনের নতুন অধ্যায়ের দিকে। যে নতুন অধ্যানে আগুনের কোন জায়গা নেই,,,আছে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা ❤️❤️❤️

*****সমাপ্ত*****

( হ্যালো রিডার্স,, গল্প টার শেষ কয়েকটা পর্ব হয় তো আপনাদের মনমতো করে লেখতে পারি নি,, আমার ব্যর্থতা যে আপনাদের পছন্দ মত হয় নি তাই হয় তো আপনাদের সাড়া কম পেয়েছি,,যাই হোক আজ #হিংস্র_ভালোবাসা গল্প টার সমাপ্তি হলো,,যারা গল্প টা প্রথম থেকে পড়েছেন আশাকরি তারা গল্প টার সম্পর্কে ভালোমন্দ মতামত জানাবেন,,প্রথম পর্ব পড়ে কি মনে হয়েছিল আর শেষ টা পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন নিশ্চয়ই,, আর ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *