সে কি জানে Season 2 ! Part- 09
অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতে বেত নিয়ে বসে আছে আবদ্ধ। আবদ্ধের ঠিক সামমে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে দীঘি। কান্না পাচ্ছে তার।খুব কান্না! আবদ্ধ এভাবে তাকে সায়েস্তা করতে উঠে পড়ে লাগবে সেটা কখনও ভাবে নি দীঘি। কালকে তো তার বাবা তাকে মেরেছে।আজকে হয়তো আবদ্ধ মারবে। ভাবতেই গলা শুকিয়ে গেল দীঘির। করুন চোখে একবার আবদ্ধকে দেখছে তো একবার বেত-টাকে। হঠাৎ আবদ্ধ গর্জে ওঠে…..
— “তোকে কালকে রাতে জিজ্ঞেস করেছিলাম না তোর মা-বাবা তোকে কিছু করেছে কিনা? তুই আমাকে মিথ্যা কথা কোন সাহসে বলেছিলি?”
আবদ্ধের এরুপ ধমকে কেঁপে উঠে দীঘি। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠে…..
— “স..সরি!”
রাগ যেন আরও বেড়ে গেল আবদ্ধের।আবারও চিল্লিয়ে বলে উঠে….
— “তোর সাহস দেখে আমি হতবাক! ওড়না পেচিয়ে আমার সামনে আসিস যেন আমি তোর শরীরের দাগগুলো না দেখতে পাই। এসব ফালতু আইডিয়া কোথ থেকে আসে তোর মাথায়?হা?”
আবদ্ধের ধমকে বারবার কেঁপে উঠছে দীঘি। তার যে খুব ভয় করছে আবদ্ধকে। আবদ্ধের এমন রুপ সে কখনও দেখেনি। সে কি এখন তাকে মারবে বেট-টা দিয়ে?ভাবতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো দীঘি। এমনটা করায় চোখ ছোট ছোট করে দীঘির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল আবদ্ধ। পরক্ষনেই হাতের বেত-টা দুমরে-মুচরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে। দীঘি এখনও ভয়ে কাঁপছে। আবদ্ধ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দীঘির এক হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যায় গাড়ির দিকে।
গাড়িতে বসতেই আবদ্ধ কি যেন বিড়বিড় করতে করতে দীঘির সীট বেল্ট লাগিয়ে দিতে শুরু করে। দীঘির খানিকটা কাছে যেতেই তার কানে আসে আবদ্ধের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো…..
—- “ফাজিল মেয়ে কোথাকার। আরেকটু বড় হলে কি হতো তোর? এখন আমাকে অপেক্ষা করতে হবে তোকে বিয়ে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যাই হোক, ওই জানোয়ারদের কাছে রাখবো না তোকে। উঠিয়ে নিয়ে যাবো। দরকার পরলে নিজের কাছে রাখবো। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মার রুমে থাকবে। বিয়ের পরে আমার….”
আর কিছু শুনতে পারলো না দীঘি। এর আগেই আবদ্ধ সোজা হয়ে বসে পরে।চোখ-মুখ শক্ত করে বিড়বিড় করা অবস্থায়ই গাড়ি স্টার্ট দেয় সে।
.
ঘুম ভাঙ্গতেই মাথার মধ্যে তীব্র ব্যথা শুরু হয়ে যায় আমার। চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করি। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি তো রেয়ানের সাথে রাঙামাটি ছিলাম। ভাবতেই চোখ কোচলে আবার চারদিকে তাকালাম। না, এটা তো আমার রুমই।মানে আমি মামীর বাসায়। কিন্তু কখন আসলাম এখানে?
আমার ভাবনার মাঝে ছেদ করে রুমের দরজা খুলে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়ল। সামনে তাকাতেই দেখি মামী। আর তার পেছনে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান। আপাতত তার দিকে পাত্তা দিলাম না আমি। মামীর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শুধু। মুখে হাসি থাকলেও মামীর মুখটায় কেমন চিন্তিত চিন্তিত ভাব! চোখে পানি! আমার কাছে এসেই পরম মমতায় আগলে ধরলেন উনি। আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরি তাকে। কতদিন পর দেখা হলো তার সাথে। চোখে পানি চলে এসেছে আপনা-আপনি, ইচ্ছে করছে মামীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে।খুব করে কান্না করতে। ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে না পেরে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দিলাম আমি, সাথে মামীও।পেছন থেকে আমাদের এ দৃশ্য মুগদ্ধ নয়নে দেখছেন রেয়ান আর হাসছেন।
প্রায় অনেক্ষন পর মামী আর আমি স্বাভাবিক হই।উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠেন….
— “নাস্তা কোথায় খাবি? নিচে চল?”
— “রুমে খাই।”
মামী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন….
— “আর কতদিম এভাবে রুম বন্দি হয়ে থাকবি মা।নিচে এসে খেয়ে যা, ভালো লাগবে!”
— “আচ্ছা।তুমি যাও আমি আসছি।”
মামী আবারও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তারপর চলে গেলেন নিচে।এদিকে মামী যেতেই রেয়ান আমার সামনে এসে দাঁড়ান।মুখে বাঁকা হাসি হেসে বলে উঠেন…..
— “ইসস! কান্না করে মুখের কি অবস্থা করেছে।আমি তো পুরায় প্রেমে পড়ে যাচ্ছি তোমার।একেবারে পেত্নির মতো লাগছে তোমাকে।”
তার কথা শুনে রাগ হলো আমার।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলাম…..
— “আপনি একটা পাগল ডক্টর।আপনার সব কিছু আমার বিরক্ত লাগে। সো প্লিজ, আমার সাথে কথা বলবেন না দয়া করে।”
— “সাট আপ মরু! তুমি বললেই আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করব না। উল্টা আরও বেশি বলব।”
— “আপনার মতো বেহায়া তো এটাই পারে।”
— “ও রেইলি?আমি বেহায়া?তাহলে তো এ বেহায়ার বেহায়া পনা দেখাতেই হয়!কি বলো?”
বলেই এক কদম আমার দিকে এগিয়ে আসলেন উনি।সাথে সাথে আমি বলে উঠলাম….
— “দেখুন আমার কাছে আসবেন না নাহলে কিন্তু!”
রেয়ান ভ্রঁ কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে আর বললেন….
— “কিন্তু কি?চুমু দিবে আমায়?” (বাঁকা হেসে)
— “দিতেও পারি বলা তো যায় না।”
চোখ ছোটছোট করে আমার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে জোড়ে জোড়ে হেসে দিলেন রেয়ান। আমার কথা হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ভেবেছিলেন হয়তো আমি এমনটা করব না।কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে আমি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। রেয়ানের কাছে গিয়ে উনার কলার টেনে ধরলাম। তার পায়ের ওপর পা রেখে মুখ একটু এগিয়ে জোড়েসোড়ে কামড় দিলাম উনার নাকে।আমাকে আর পায় কে দিলাম এক দৌড়।আপাতত এই ডক্টর থেকে পিছা ছুটাতে হবে আমার!
এদিকে রেয়ান চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। এটাও কি হওয়ার কথা ছিল তার সাথে। ভাবতেই হাসলো সে। নাকে হাত বুলাতে বুলাতে আনমনেই বলে উঠলেন…
— “জঙ্গলি বিল্লি একটা!রাতেই খবর নিবো তোমার।তখন দেখবো কিভাবে পালাও!”
ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে কামরুলের।মেয়েকে মেরে কত বড় ভুল করে ফেলেছেন তা আবদ্ধকে দেখেই বুঝতে পারছেন। কেমন লাল লাল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।যেন চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে তাকে!
এদিকে আবদ্ধ কামরুলের সামনেই সোফার উপর পায়ের ওপর পা তুলে মাথায় এক হাত দিয়ে শুয়ে আছে। আর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কামরুলের দিকে। ইচ্ছে করছে মেরে পুতে ফেলতে এ লোককে।কিন্তু সে নিরুপায়।শ্বশুড় বলে কথা! কিন্তু শাস্তি তো সে দিবেই। ভেবেই দাঁড়িয়ে গেল আবদ্ধ। কামরুলের মুখে টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে নেরে বলে উঠে….
— “তোর মতো জানোয়ারকে ছেঁড়ে দিচ্ছি বলে ভাবিস না শাস্তি দিবো না। অবশ্যই দিবো।এই যে টাকা দেখসোস না এটা দিয়ে এক্ষুনি কাঁচা মরিচ আনবি।আর এক নাগারে সব খাবি।আমি তোর মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি ও আমার সাথেই থাকবে আমার বাসায়।আর শুন এসে যেন দেখি কাঁচা কিনে রাখসোস।আমার সামনে বসে বসেই খাবি তুই।”
বলেই দীঘির হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো আবদ্ধ।
.
.
#চলবে🍁
Comments