1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃলেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া ( মিরা )সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া ( মিরা )

সে কি জানে Season 2

প্রায় ১মাস ঘর বন্দী হয়ে আছি আমি।।জানালা দিয়ে শুধু বাইরের আলোটুকুই দেখতে পাই।।বাইরের আলো যখন আমার চোখে পড়ে মুহুর্তেই জলে ভরে যায় চোখটা।।সহ্য ক্ষমতা কমে আসে ধীরে ধীরে।।চোখটা ঝাপসা হতে শুরু করে।।চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা।।বাবা-মাকে চোখের সামনে হারানোর দৃশ্য।।এতটা বেপরোয়া কেন আমি??আমারই চোখের সামনে আমার বাবা-মার মৃত্যু হলো আর আমি কি না কিচ্ছু করতে পারলাম না।।একদম কিচ্ছুটি না!!মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যাই।।কিন্তু আত্মহত্যাই কি সমাধান??অবশ্যই না!!এতে একূল ওকূল সব হারাবো আমি।।অনতত জাহান্নামি হওয়ার থেকে এ জীবনটাই ডের ভালো।।কিন্তু কেন যেন মনটা বুঝে না সেটা।।প্রতি মুহুর্তেই ভয়ংকর অসহ্যতায় ভুগছি আমি।।মনে হয় আমি যেন জীবনত লাশ হয়ে গেছি!!
হঠাৎ দরজা থাক্কানোর শব্দে ভাবনায় ছেদ পরে আমার।। ধীর পায়ে এগিয়ে দরজা খুলতেই দেখি মামী দাঁড়িয়ে আছেন।।তবে তিনি একা নন,,একটা ছেলেও আছে তার সাথে।।আমাকে দেখে মলিন হাসলো দু’জনেই।।তাদের এমন হাসি দেখে বিরক্তি হচ্ছি খুব।।এ-ই ছেলেকে নিয়ে মামী কেন আমার কাছে এসেছেন বুঝতে বেগ পেতে হলো না আমার।।কিছুটা রেগে মামীকে বললাম……
—” তুমি কি আবার আমার জন্য ডক্তর এনেছো?? ”
—” আসলে!! ”
—” আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না মা।।শুধু শুধু এমন ডক্তর আনা বন্ধ করো।।টাকা নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।।আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো।।প্রত্যেকটা ডক্তরের মতো এ ছেলেকেও চলে যেতে হবে।।সো একে আগেই যেতে বলো।।পরে অপমানিত হয়ে যেতে হবে।। ”
কথাগুলো একদমে বলে ফেললাম আমি।।পরক্ষনেই ঠাসস শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।।এতে কিছুটা কষ্ট পান মামী।।করুন চোখে একবার ছেলেটার দিকে তাকান।।নরম কণ্ঠে বলেন…..
—” আসলে রেয়ান।।মেয়েটা একটু….! ”
মামীর কথার মাঝখানেই রেয়ান বলে উঠেন…..
—” উনিই কি মিরা?? ”
—” হুম!! ”
শান্ত দৃষ্টিতে দরজার দিকে একবার তাকালেন রেয়ান।।কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলেন উনি।।পরক্ষনেই মামীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন…….
—” আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি!!আমি মিস মরু!! মিরাকে ঠিক করব।।বাট আমার একটা শর্ত আছে।। ”
—” কি শর্ত রেয়ান?? ”

(বিঃ দ্রঃ “ সে কি জানে Season 2 ! লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া ( মিরা ) ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
–” উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনেক ভালোভাবে উনার মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে।।ফলে সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে উনি বদমেজাজি হয়ে গেছেন। আমার প্রথমে উনাকে হাসানো শিখাতে হবে।।সো এটার জন্য হয়তো অনেক উল্টাপাল্টা কাজ করতে হবে আমার।।আর এতে আপনি কোনো বাঁধা দিতে পারবেন না।।চিন্তা করবেন না।। কোনো বাজে কিংবা খারাপ কাজ করব না।।আপনার ভাগনীর জন্য যা ভালো তাই-ই করব।। ”
কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেন মামী।।রেয়ানকে দেখে কেন যেন তার মনে হচ্ছে “হ্যা!!এ ছেলেটাই পারবে আমার মেয়েকে ঠিক করতে” তাই আপত্তি জানালেন না তিনি।।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন…..
—” ঠিকাছে!! তোমার শর্তে আমি রাজি।।কিন্তু আমার মেয়েটা যেন সুস্থ হয়।। ”
—” নিশ্চিন্তে থাকুন।।আচ্ছা একটা কথা কি জিজ্ঞেস করতে পারি?? ”
—” বলো?? ”
—” আমি যতটুকু জানি।।মিস মিরা আপনার ভাগনী।।কিন্তু আপনি উনাকে মেয়ে বলছেন আর উনি আপনাকে মা।।কেন বলুন তো?? ”
—” আসলে ওর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ও আমাকেই মা ডাকা শুরু করে।।তাছাড়া ও তো আমার মেয়ের মতোই।।তাই না?? ”
—” হুম অবশ্যই!! ”
রেয়ান কিছুক্ষন তাকিয়ে তাকলেন মামীর দিকে।।মামীর মুখের নূরানী ছাপ-টা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।।যা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখছেন রেয়ান।।পরক্ষনেই চোখ নামিয়ে নেন উনি।।মামীকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।।রাস্তায় গিয়ে যেখানে আমার রুমের জানালা আছে তার ঠিক সামনে দাঁড়ান উনি।।জানালার পাশের পাইপটার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ বুলিতে নেন।।পরক্ষনেই বাঁকা হেসে বললেন…….
—” আপনি কি মনে করেছেন মিস মরুভূমি!!আমি অন্যান্য ডক্তরদের মতো।।যদি সেটা মনে করে থাকেন তাহলে আপনি ভুল।।আজ পর্যন্ত অনেক পাগল ঠিক করেছি আমি।।বাট আপনি আমার প্রথম মেয়ে পাগল পেসেন্ট।।আপনাকে তো একটু জ্বালানো যায়-ই।।কংগ্রেচুলেসন মিস মরুভূমি।।কালকে থেকে রোজ এ-ই রেয়ানের সাথে দেখা হবে আপনার।।আর আপনার রুমে যেতে আমার যাতায়াত স্থান হবে এ-ই পাইপ।। ”
ভেবেই অমায়িক একটা হাসি দিলেন রেয়ান!!

টং-এর দোকানে বসে বসে চা খাচ্ছে আবদ্ধ।।দৃষ্টি স্কুলের গেটের দিকে।।এতক্ষন হয়ে গেছে স্কুল ছুটির কিন্তু মেয়েটা এখনও আসছে না।।তাহলে কি আজকে স্কুলে আসে নি সে।।ভেবেই চায়ের কাপে চুমুক দেয় আবদ্ধ।।এদিকে দশম শ্রেণির ছাত্রী দীঘি!! ক্লান্ত শরীর নিয়ে স্কুল থেকে ধীর পায়ে বের হচ্ছে সে।।স্কুল গেট পার হয়ে রাস্তায় আসতেই তার চোখ যায় পাশে থাকা টং এ-র দোকানে চা খাওয়ারত আবদ্ধের দিকে।।সাথে সাথে থমকে যায় সে।।ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে তার।।পরক্ষনেই যত দ্রুত সম্ভব হাঁটা শুরু করে সে।।কিছুতেই আবদ্ধের সাথে মুখোমুখি হতে চায় না দীঘি।।কিন্তু সেটা কি আর হওয়ার??আবদ্ধ দীঘিকে দেখা মাত্রই চা রেখে দৌড়ে যায় তার কাছে।।দীঘির হাত-টা শক্ত করে ধরে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে ।।দীঘি হাত ছাঁড়াতে নিলে আরও শক্ত করে ধরে আবদ্ধ।।কিছুক্ষন নিরব থাকার পর দীঘি আমতা আমতা করে বলে উঠে……
—” আপনি কেন বারবার আমার স্কুলে আসেন??জানেন আপনাকে আর আমাকে নিয়ে সবাই কত কি বলে??আপনি আর আসবেন না প্লিজ!! ”
—” তুই বললেই হলো?? ”
—” হাত ছাড়ুন আমার।। ”
—” খাই ফেলি।।তাহলে মেবি ভালো হবে।। ”
থমকে গেল দীঘি।।লোকটা এমন কেন??তার ভালো লাগে না এসব।।সবসময় বাজে কথা বলেন উনি।।হাতে ব্যথা পাচ্ছি তাই তো হাত ছাঁড়তে বললাম।।আর উনি কি বললেন যত্তসব!!

—” দেখুন ভাইয়া আমার হাতে ব্যথা পাচ্ছি।।প্লিজ একটু হালকা করে ধরুন।। ”
আবদ্ধ হাতের বাঁধনটা একটু আলগা করল।।পরক্ষনেই আবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে দীঘিকে বলে উঠে…..
—” ও-ই।।আমি তোর ভাইয়া লাগি।। ”
—” অবশ্যই।। ”
রেগে গেল আবদ্ধ।।অন্যহাত দিয়ে দীঘির গালে আসতে করে থাপ্পড় মারলো সে।।রাগি কণ্ঠে বলল…..
—” ১০০টা বাচ্চার মা বানানোর পরও বলিস আমি তোর ভাইয়া লাগি।।ফাজিল মেয়ে কোথাকার!!আর একবার ভাইয়া বলবি তো মুখের ৩২টা দাঁতই ভেংগে দিবো।। ”
লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে দীঘি।।লোকটা এমন নাও করতে পারতো।।এভাবে কেউ মারে??তাও আবার রাস্তায়!!রিতিমতো কান্না পাচ্ছে দীঘির।।কিন্তু এতে বিন্দু মাত্র পাত্তা নেই আবদ্ধের।।সে দীঘির হাত ধরে আপন মনে হাঁটছে।।উদ্দেশ্য বাসায় পৌঁছে দিবে তাকে।।হঠাৎ আবদ্ধের গান গাওয়ার আওয়াজ পায় দীঘি।।আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখে আবদ্ধ সামনে তাকিয়ে থেকেই গান গাইছে…….
🍁কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে🍁
🍁কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে🍁
🍁তোমারে দেখিতে দেয় না🍁
🍁মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না🍁
🍁মোহমেঘ তোমারে অন্ধ করে রাখে🍁
🍁তোমারে দেখিতে দেয় না🍁
🍁মাঝে মাঝে তব দেখা পাই🍁
🍁চিরদিন কেন পাই না🍁
🍁মাঝে মাঝে তব দেখা পাই🍁
🍁চিরদিন কেন পাই না🍁
.
.
.
#চলবে🍁

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া মিরা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন………

👉আমাদের ফেসবুক পেজ