একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 36

__________________
ভয়ংকর পার্টি বলতে যে কিছু আছে তা সাফা এখন নিজের চোখে দেখছে।তার কাছে পার্টি দেওয়া মানে আইসক্রিম ট্রিট বা ফুচকা পার্টিতেই সমাপ্ত ছিলো।কিন্তু এরা যে কত ভয়ংকর ভাবে পার্টি করে নিজেদের মাঝে এটা এদের নাচানাচি দেখেই সাফা বুঝতে পেরেছে।লুঙ্গী ডান্স থেকে শুরু করে ডিজেওয়ালে আবার সেখান থেকে লাফিয়ে কালা চশমায় চলে যাচ্ছে। সাফার মাথা ধরে গেছে।সে মোটেও এগুলোর সাথে মানানসই নয়।সাফা রুমের কোনার সোফায় বসে আছে।রাত প্রায় অনেক হয়েছে তার ঘুমও পাচ্ছে।কিন্তু এদের পার্টি শেষের নাম নেই।মাহি নাচতে নাচতে সাফার পাশে বসে।একটা গ্লাস এগিয়ে বলে,
—-” নেও সাফা কোলড্রিংস।”
সাফা পাশ ফিরে তাকায়।মাহি তাকে এত আদর করে গ্লাস দিচ্ছে দেখে সাফার বেহুশ হওয়ার উপক্রম। আর যাই হোক মাহি তাকে কতটা অপছন্দ করে এটা তার জানা আছে।তাহলে এত ভালোবাসা আসছে কোথা থেকে?সাফা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে।মাহি হেঁসে উঠে বলে,
—–” আরে কি হল খাও।তুমি কি এখনো রেগে আছো??রেগে থাকলে স্যরি।নেও”
গ্লাস এগিয়ে দিয়ে।সাফা ডান হাত এগিয়ে গ্লাস নেয়।মাহির দিকে তাকিয়েই গ্লাসে মুখ দেয়।মাহি হাঁসে। সাফার মনে হয় এ মেয়ে পাগল। হুদাই হাঁসে কা??
সাফা পরপর কয়েক গ্লাস খেয়ে নিয়েছে।তার কেমন যানি লাগছে।আরো কয়েক গ্লাস খেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু খেলো না।সাফা উঠে দাঁড়ায়। নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে।কিন্তু মাতাল কেনো হবে সে??সে কি মদ খেয়েছে নাকি??সাফা ডুলুডুলু পায়ে রুমের বাহিরে চলে আসে। এত সাউন্ডে তার মাথা ব্যথা করছে।কি ভয়ংকর সব শব্দ।সাফার মনে হচ্ছে কান ফেঁটে যাচ্ছে তার।সাফা দেয়াল ধরে হাঁটে।তা না হলে তার মনে হচ্ছে সে পরে যাবে।ঘরময় সব তার কাছে অগোছালো মনে হচ্ছে।
নিভ্র মাত্র ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসেছে।যতসব আজগোবি স্বপ্ন দেখে সে নিজে নিজে হাসছে।পাগল সে সত্যিই হয়েগেছে। রুমের দরজা ঠেলে সাফা ডুকে পরে।নিভ্র চমকে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়।সে কি আবার স্বপ্ন দেখছে নাকি??কিন্তু সে তো জেগে আছে।তবে জেগে কিভাবে স্বপ্ন দেখবে??নিভ্র ভালো করে সাফার দিকে তাকায়।সাফা চোখ গোল গোল করে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে হাত উঁচিয়ে বললো,
—–” আরে ডাক্তার যে!!কিন্তু আপনি আমার রুমে কি করছেন??আপনার রুম কই??”
নিভ্র ভারী অবাক।তবুও রুমটাকে ভালো করে দেখে নেয়।কোই এটা তো তার রুম।তাহলে সাফা এমন কেনো বলছে??নিভ্র কয়েক পা এগিয়ে এসে সাফার সামনে দাঁড়ায়। সাফাকে ভালো করে একবার দেখে।তার কাছে সাফাকে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে।নিভ্র চিন্তিত সুরে বলে,
—” সাফা কি হয়েছে আর এভাবে ডুলছো কেনো??দেখি এদিকে এসো??”
সাফা মুখে আঙ্গুল দিয়ে এগিয়ে আসে।এসেই নিজের উপড় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সাফা।নিভ্রর বুকে ঠাসস করে ঝাঁপিয়ে পড়ে।নিভ্র টাল সামলাতে না পেরে দু’কদম পিছিয়ে যায়।হাত রাখে পিছনের আলমিরাতে।এমন কিছু সাফা করবে নিভ্র ভাবেনি।তাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।সাফা তার শরীর ছুঁয়ে দিলেই মুহূর্তেই শরীরময় উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে।তাই সে সাফাকে গভীর ভাবে ধরতে চায় না।কিন্তু সাফা হুমড়ি খেয়ে নিভ্রর বুকের পাশের হৃৎপিন্ডের উপড়ই পড়েছে।নিভ্র হতভম্ভ। সাফা হঠাৎই কেঁদে উঠে।সাফার এমন কান্ডে নিভ্র সম্পূর্ন রূপে বিস্মিত।এমন কেনো করছে সাফা এটাই বুঝতে পারছে না নিভ্র।সাফার মাথায় হাত বুলাতেই সাফা নিভ্রর হাত নিজের কপালে রাখে।নিভ্র এবার সত্যিই অবাক।সাফা বলে,
—-” আমার কি হয়েছে ডাক্তার শুধু প্রেম প্রেম লাগে।”
নিভ্র বিষম খায়।সাফার দিকে বড় বড় চোখে তাকায়।সাফা সে দিকে পাত্তা না দিয়ে নিভ্রর গাল দুটো টেনে বলে,
—-” আপনার গাল গুলো কি কিউটট একদম গুলুমুলু। কামড়ে দিতে ইচ্ছা করে।দি কামড়??”
নিভ্র একটু সরে আসে।বলে কি এ মেয়ে??স্বপ্নে তো চুমু খেয়েছে এবার কি কামড় খাবে??কামড়ের চাইতে চুমু বেটার ছিলো।সাফা হঠাৎ কান্না থামিয়ে আবার এ্যা এ্যা করে কেঁদে উঠে।নিভ্রর মাথায় কিছুই ডুকছে না।হঠাৎ নিভ্রর মাথায় একটা কথা আসে।নিভ্র উদ্বেগী কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে,
—-” সাফা আর ইউ ড্রাংক!!”
সাফা কান্না থামায়।পানি ভর্তি চোখে তাকিয়ে বলে,
—-” এটা আবার কি ডাক্তার??মনে হচ্ছে হৃৎপিন্ডের আর এক নাম!!দেখেছেন আমি না পড়েও সব জানি।”
সাফা হিহি করে হেঁসে উঠে।নিভ্রর মাথায় হাত।সাফা ড্রিংক করেছে??কিন্তু সে মদ পেলো কই।নিভ্র আর একটু কাছে এগিয়ে আসে। কিন্তু গন্ধ পাচ্ছেনা।কমলার গন্ধ আসছে।মানে সে কমলার জুস টাইপের কিছু খেয়েছে।তার জানা মতে সাফা এগুলো থেকে বহু দুরে থাকে।আর এই বাসায় এগুলো নিষিদ্ধ।রাফা এগুলো কখনোই পার্টিতে আনবে না।এগুলো তো সে ছুঁয়েও দেখেনা।তার জানা মতে রাফার ফ্রেন্ডসরাও এসব দিকে খুবই সচেতন। তাহলে সাফা পেলো কই। দাদা দেখলে শেষ।নিভ্র সাফার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—-” সাফা কি খেয়েছ তুমি??আর এমন শব্দ করে হাসবে না।বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছে।চুপ!!”
সাফা ঠোঁট উল্টে বলে,
—” সবাই না।শুধু বুড়ারা।আপু তো জেগে পার্টি করে।আমিও করি।চলেন আপনি আমাদের সাথে
করবেন।আসেন!!”
—-” দরকার নেই।তুমি এখানেই থাকো আমি নিচে যাচ্ছি। বসো!!”
সাফা আবার কান্না শুরু করে।নিভ্র পড়েছে মহা বিপদে।বাড়ির কেউ যদি এটা জনতে পারে তবে ব্যাপারটা মোটেও ভালো হবে না।নিভ্র সাফাকে ধমকে বলে,
—-” চুপ সাফা।”
সাফার কান্নার গতি বাড়ে।এরপর বলে,
—-” ভালোবাসেন না আপনি!!খারাপ ডাক্তার
ফালতু।আমি থাকমু না চলে যাবো ছাড়েন।
ছাড়েন!”
নিভ্র দমে।মনে মনে বলে এই মেয়ে দৌড়ে সব সময় তার ভালোবাসায় চলে যায় কেনো??সাফার কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।তারপর আদরের সুরে বলে,
—–” স্যরি।”
—-” ভালোবাসেন?? ”
—-” অনেক অনেক ভালোবাসি আমার সাফারানীকে। আর এত কিউটি সাফাকে ভালো না বেসে আমি কোথায় যাবো বলো??উপায় আছে নাকি??
নেই।”
সাফা কান্নার মাঝেই হাঁসে। নিভ্র এক হাতে সাফার সামনের চুলগুলো কানের পাশে গুঁছিয়ে দেয়।সাফার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হাঁসে। সাফা হুট করেই নিভ্রর পিঠ জড়িয়ে তার বুকে মাথা রাখে।নিভ্র সাফার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
—” সাফা কি খেয়েছিলে??আমাকে বলো??”
—” জুসস।”
—” কিসের জুসস??”
—” কোলড্রিংস জুসস”
নিভ্র খানিকক্ষণ হাঁসে। সাফার ফসফস কথা শুনে তার হাঁসি পাচ্ছে।কি জিজ্ঞেস করছে আর বলছে কি??নিভ্র সাফাকে টেনে সরাতে চায় কিন্তু সাফা তো সাফাই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিভ্রকে।নিভ্র ভেবে পাচ্ছে না।কোলড্রিংসে মাতাল হওয়ার মত কি আছে??নিভ্র প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—” কোলড্রিংস কে দিয়েছে তোমাকে?? রাফা??”
—” না তো জানি না।”
—” আচ্ছা বসো আমি আসি।”
সাফা নিভ্রকে ছেড়ে দেয়।দৌড় লাগায় দরজার দিকে।নিভ্র হাত টেনে ধরে।নিভ্র বুঝতে পারছে সাফার উপর রিয়েকশন ধীরে ধীরে হচ্ছে। তাই এখন সে সব রকমের পাগলামি করবে নিশ্চিত। বাড়িতে ব্যাপারটা জানাজানি হলে মোটেও ভালো হবে না।সাফা চেঁচিয়ে হাত ঝাঁড়তে শুরু করে।আর বলে,
—” আমি যাবো ছাড়েন।ছাড়েন!চিৎকার করবো তা না হলে??ওই শয়তান ডাক্তার ছাড়!!”
—” সাফা এমন করছো কেনো এদিকে এসে বসো!”
—” কামড়ে দিবো কিন্তু ডাক্তার??”
—” ঠিক আছে দিয়ো।আগে এদিকে বসো।”
সাফাকে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না।নিভ্র সাফার দু’হাত চেঁপে কোলে বসিয়ে রেখেছে।কিন্তু সাফা ঝাপ্টা ঝাপ্টি ঝাঁপা ঝাঁপি করছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে হুট করেই সাফা খুব শক্তিশালী হয়েগেছে। তাকে ক্লান্ত করার মত শক্তিশালী। নিভ্র বহু কষ্টে চুপ করিয়ে যেই না উঠলো সাফা ঘরের নানা জিনিস ছুড়াছুঁড়ি করা শুরু করে।বিছানার পাশের বেড টেবিলের উপড়ে রাখা কাঁচের জগ ফেলে ভেঙে ফেলে।নিভ্রর সারা রুমে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।নিভ্র এবার হাপিয়ে গেছে।মনে হচ্ছে তার সামনে চার পাঁচ বছরের একটা মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি।
________________________
মাহি সিঁড়ি পাশে উঁকিঝুঁকি দিয়ে সাফাকে খুঁজছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছেনা তাই তার মেজাজ গরম হয়ে আছে।সাফা আসলেই একটা কান্ড ঘটত।কিন্তু কোথায় সাফা সেটাই বুঝতে পাড়ছেনা। রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সে বেড়িয়ে পড়েছে।এখন কোথায় তাই খুঁজে চলেছে।ইচ্ছে করেই সাফার কোলড্রিংসে মদ মিশিয়ে দিয়েছে।এই বাড়িতে এগুলো নিষিদ্ধ এটা মাহি যানে। সাফাকে অপদস্থ করার জন্যই এমনটা করেছে কিন্তু সাফাই নামছে না।মাহি সব দিকে উঁকি দিচ্ছে।
.
.
সাফার পাগলামি নিভ্র অনেক্ষন সোজ্জ করেছে।কিন্তু সাফা নিজের হাত কেটেঁ ফেলায় নিভ্র প্রচন্ড রেগে আছে।সাফাকে ধমকের সরু বলে,
—” যথেষ্ট সাফা!অনেক হয়েছে! ফাইজলামি শেষ করো তা না হলে কপালে কি আছে আমি যানি না।এদিকে এসো।এত লাফালফির কি আছে??তুমি ঠিক করে বসো??”
সাফা প্রচন্ড ভয় পায় নিভ্রর চিৎকারে।সাথে সাথে কেঁদে দেয়।নিভ্র এবার প্রচন্ড রেগে আছে।এতটা কিভাবে কেউ করতে পারে??সাফাকে কাছে টেনে আনে।সাফা নিজেও বেশ ক্লান্ত। কিন্তু পাগলামি কমেনি।শুধু ঘুড়ছে মাথা।নিভ্রর কাছে আসে।নিভ্র হাতে স্যাভলন লাগায়।হালকা কেটেঁছে।সাফা আর এক হাতে নিভ্রর লম্বা লম্বা চুলগুলো টানে।আবার চোখে আঙ্গুল ডুকিয়ে দেয়।নিভ্র ব্যাথা পায় কিন্তু কিছু বলে না।আবার টিশার্ট কামড়ে ধরে।অনেক্ষন এগুলো করে সে ক্লান্ত গলায় বলে,
—” আমি ঘুমাবো।”
নিভ্র একবার সাফার দিকে তাকায়।চোখ লাল হয়ে আছে।সে নিশ্চিত সাফার কাল প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হবে।সাফা আবার বলে,
—” ঘুম আসে ডাক্তার সাহেব।”
—” ওকে রুমে চলো!”
—” না এটা আমার রুম। আমি এখানেই ঘুমাবো।এখানে মানে এখানে।”
নিভ্র দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।একে বলে কোনো লাভ নেই।হুশেইত নেই মেয়েটার।নিভ্র সাফাকে নিজের বিছানায় শুয়ে দেয়।সে সোফায় না হয় অন্য রুমে ঘুমাবে।সাফা নিভ্রর বুক ঝাপ্টে ঘুমায়।নিভ্র হাত ঝাঁড়িয়ে উঠে পড়ে।গায়ে চাদুর টেনে দেয়।সোফায় বসে কিছুক্ষণ ভাবে।তারপর উঠে দাঁড়ায়। নিচে নামে।মাহি তখন অন্যমনস্ক হয়ে ভাব ছিলো।মাহিকে দেখে নিভ্র দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে,
—” এখানে কি করছো মাহি??”
মাহি চমকায়।ভীতু চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।তার হাত পা কাপঁছে। নিভ্র ভ্রু তুলে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সরে যায়।এর সাথে তার তেমন কথা বলতে ইচ্ছে করে না।রাফা নিশ্চুই ঘুমিয়ে গেছে।তাই নিভ্র তার মাকে কল করে।কয়েক বার রিং হয়।তারপর ইফতেখার কল রিসিভ করে।এত রাতে নিভ্রর কল দেখে ইফতেখার চমকায়।ভয়মাখানো গলায় প্রশ্ন করে,
—” কি হয়েছে আদর??তুমি ঠিক আছো?বলো??”
—” আম্মু আমি ঠিক আছি।তুমি বাহিরে এসো রুমের।আমি অপেক্ষা করছি।”
ইফতেখার দ্রুত কাপড় ঠিক করে বেড়িয়ে পরে।ভয়ে তার বুক কাপঁছে। তার ছেলে এত রাতে কল করার ছেলে না।তাহলে তার কি কিছু হয়েছে??ইফতেখার দরজা খুলতেই নিভ্র বলে,
—” আম্মু সাফা আমার রুমে।”
ইফতেখার একটু অবাক হয়ে বলে,
—” এত রাতে!!দরকারে গেছে মনে হয়??”
—” না আম্মু। রাফার সাথে পার্টি করেছে রাত ভর।কিন্তু হুট করেই রুমে আসে।দেখে প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরেছি ও ড্রাংক।”
ইফতেখার বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
—” কি??”
—” এটা আসল কথা না।সাফা এগুলো খায় না আমি জানি।কেউ কোলড্রিংসের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে মনে হয়।যাই হোক। ও আমার রুমেই ঘুমিয়েছে।বাড়িময় লোক।তুমি ওর কাছে যাও।আমি অভ্রর রুমে যাচ্ছি।”
—” আচ্ছা ”
ইফতেখার হতবম্ভ হয়েই হেঁটে যায়।মাহি নিজের মাথায় নিজেই হাত দিয়ে বাড়ি দেয়।মেয়েটাকে নিজে নিয়ে আসলে ভালো হতো।সব প্ল্যান ভেস্তে গেছে।
________________
সাফার ঘুম ভাঙ্গতেই মাথা ধরে উঠে বসে।তার মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে।ব্যথায় সে চেঁচিয়ে উঠে।নিভ্র গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে।সাফা একবার চোখ বুজে আবার খোলে।এত মাথা ব্যথা কেনো করছে বুঝতে পারছেনা সে।
—” এটা খাও তা না হলে মাথা ফেটেই যাবে।”
সাফা চোখ তুলে তাকায়।নিভ্রকে সকাল সকাল নিজের রুমে দেখে চমকে বলে,
—” আপনি আমার রুমে কি করেন??”
—” তোমার রুম!!লাইক সিরিয়েস?? তার মানে এখনো নেশা কাঁটেনি??”
সাফা হা করে তাকিয়ে বলে,
—” নেশা কেনো হবে??”
—” বুঝতে পেরেছি তুমি এখনো মাতাল।এগুলো খাও।তা না হলে আবার আমার রুমের বারোটা বাজাবে আমি নিশ্চিত।”
—” আরে কি সব বলছেন??মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ব্যথায়।আপনি না ডাক্তার??কিছু না করে আপনি ফালতু বকেন কেনো??”
—” তাই নাকি আমি ফালতু বকি নাকি আপনি তান্ডব করেন দেখেন!!”
সাফা চোখ ছোট করে মাথা চেঁপে চার দিকে তাকায়।রুমের অবস্থা দেখে সে বিস্ময়ে ভূত দেখার মত করে চমকায়।তারপর বলে,
—” এগুলো কে করেছে??কি বাজে অবস্থা।আল্লাহ!!”
নিভ্র হাসলো।তারপর বললো,
—” আপনি কেরেছেন ম্যাডাম।আর আজ রাফার হলুদ সো তাড়াতাড়ি উঠো।আর এগুলো খাও পড়ে না হয় সব বলবো।তা না হলে তোমার মাথা ব্যথা আরো বাড়বে।”
সাফা হাত বাড়িয়ে গ্লাস নেয়।চোখমুখ কুঁচকে নিভ্রর দিকে তাকায়।গালের টোল দেখে নিভ্র আঙ্গুল দিয়ে গাল টেনে দিয়ে হাঁসে। সাফা ভ্রুজোড়া কিঞ্চিত উপড় করে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দেয়।আর চোখমুখ কুঁচকে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
—“ছিঃ চিনি ছাড়া শরবত!!আপনি মনে হয় চিনি দিতে ভুলে গেছেন।যান চিনি নিয়ে আসেন।কেমন যানি খেতে।একদম টকটক।”
—” আপনার জন্য টকটকই দরকার।কালতো ঠকঠক করে নেচেছেন আর আমার বারোটা বাজিয়েছেন সো এটাই খাবেন।খান।”
সাফা একটু ভাবে।কাল রাতের কিছুই তার মনে নেই।কি হয়েছিলো??আর সে কি কি করেছিলো??নিভ্রর দিকে তাকায় সাফা।নিভ্র ভ্রু দু’টির একটি উপড়ে তুলে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে থাকে।সাফার মনে হচ্ছে সে উল্টাপাল্টা কিছুতো করেছে তবে কি??সাফা সংশয় নিয়ে ঘুড়ে বসে।তারপর বলে,
—” ইয়ে মানে আসলে আমি রাতে কি কি করেছি??”
নিভ্র ম্যাগাজিন থেকে চোখ তুলে একবার তাকায়।তারপর বাঁকা বাঁকা করে হেঁসে।তারপর আবার মুখে ইনোসেন্ট ভাব আনে।দেখে মনে হচ্ছে তার কত দুঃখ।চোখ নিচের দিকে দিয়ে বললো,
—” অনেক কিছু করেছো।এক কথায় আমার মত ভোলাভালা,ইনোসেন্ট বাচ্চা ছেলের উপড় তুমি হামলে পড়েছিলে।নিজেকে বাঁচাতে পাড়লাম কই??দুঃখ!!এখন আমার কি হবে??কে বিয়ে করবে আমায়??আমি তো শেষ। সব শেষ।আমি কিভাবে এই সমাজের কাছে মুখ দেখাবো।
নিভ্র ন্যাকা ন্যাকা করে সাফার দিকে তাকায়।চোখ মিটমিটি করে তার।সাফা মুহূর্তেই হকচকিয়ে উঠে। ঠিক করে উড়না টেনে বসে।বিস্মের সাথে প্রশ্ন করে,
—” আমি কি করেছি আপনার সাথে??”
—” তুমি যানো না কি করেছো??সব শেষ করেছো??”
সাফার কেমন ভয় ভয় করে।নিভ্রর দিকে মুখ ছোট করে তাকিয়ে ছোট করে জবাব দেয়,
—” আমার কিছু মনে পড়ছেনা কেনো??আমি সত্যিই আপনার কি করেছি মনে পড়ছেনা।”
নিভ্র চোখ ছোট করে বলে,
—” তাই??”
সাফা মাথা নামায়।তারপর বলে,
—” হুম😔”
নিভ্র সাফার মুখভঙ্গি দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠে।সাফা আহাম্মকের মত হা করে তাকিয়ে মাথা চেঁপে বসে থাকে।
________________
সাফা নিচে পাইচারি করছে।মাথা এখনো ব্যথা হয়ে আছে।সকাল ৯টা ছুঁই ছুঁই। কলিং বেল বেজে উঠতেই সাফা দরজার দিকে তাকায়।অনেক দিন পড়ে বাবাকে দেখে দৌড়ে লাফিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ফ্লোর থেকে পা আলাদা করে উঁচু হয়ে জাপ্টে থাকে।বাড়ির সবাই সাফার কান্ডে হাঁসে।সারিককে দেখলে কেউই বলবে না তার এত বড় একটা মেয়ে আছে।এখনো অনেক স্ট্রং আর ফিট বডি।নিভ্র সোফা থেকে দাঁড়িয়ে সাফার বাবার দিকে তাকায়।আগে যে একবার দেখা হয়েছে তখন অত ভালো ভাবে দেখেনি।সাফা তার বাবার মত হয়েছে বলে নিভ্রর একবার মনে হয়।বাবার মত গায়ের রং লাল গোড়া।চোখা নাক।বাবার যেমন গালের দু’পাশ লাল হয়ে থাকে সবসময় সাফারও তেমন।বাবার মতই চিকন লাল ঠোঁট।আর চোখা নাক।তবুও কোথাও মিসিং।সম্পূর্ন তার মত না।সাফার মাকে তার একবার দেখার প্রয়োজন তাহলেই বুঝতে পারবে কার মত সাফা।নিজের চিন্তার ভাব দেখে নিভ্র হাঁসে। কোথায় হৃৎপিন্ড নিয়ে রিচার্জ করা ছেলে এখন নিজের হৃৎপিন্ডের শব্দ হারিয়ে সাফার গবেষণায় নেমেছে।হা
নিভ্র মাহিকে দেখে গভীর ভাবে।একটা চাঞ্জও সে সাফাকে অপমান না করে যেতে দেয় না।কথায় কথায় ঠেস লাগিয়ে কিছুনা কিছু বলে।মাহি যেনো দিন দিন ঝুঁকির একটা কারন হয়ে যাচ্ছে।
.
.
#চলবে________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *