সে কি জানে

সে কি জানে ! Part- 19

রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি আর রেয়ান।।রেয়ান চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।আর আমি করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।।আমার ঠিক সামনে রয়েছে প্রায় ২০টির মতো ফুচকার প্লেট।।এসবগুলো আমাকে খেতে হবে।। এটাই রেয়ানের আদেশ!!কারন আমি আজকে আবার ফুটপাতের ফুচকা খেয়েছি।।খেয়েছি বললে ভুল হবে।। খেতে নিয়েছিলাম!!
.
ভার্সিটি ছুটি হওয়ার আধা ঘন্টা পরও রেয়ান আসছিলেন না।।এদিকে আমি ক্ষুধায় কাতর।।আমার চোখের সামনে ফুটপাতের ফুচকা গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।।ভেবেছিলাম হয়তো রেয়ান আরও দেড়ি করে আসবেন।। তাই ফুচকাওয়ালাকে অনেক কাকুতি-মিনতি করে,,ঘুস খাইয়ে এক প্লেট ফুচকা কিনে নিলাম।।তারপর যেই না একটা ফুচকা মুখে দিতে যাবো ঠিক তখনই কোথা থেকে রেয়ান এসে আমার হাত ধরে ফেলেন।।তার দিকে তাকাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।।আচমকা কাশতে শুরু করি আমি।।আর রেয়ান!!উনি তো আমাকে ধমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।।সাথে ফুচকাওয়ালাকে কিভাবে সায়েস্তা করবেন সেটাও হয়তো ভাবছেন।।এরপর বাকিটা ইতিহাস।।

—” তুমি ফুচকা গুলো খাওয়া শুরু করবে নাকি আমি জোড় করে খাওয়াবো?? ”
—” আপনার মাথা ঠিক আছে??এতগুলো ফুচকা মানুষ কিভাবে খায়?? ”
—” মানুষ খেতে না পারলেও তোমাকে খেতে হবে।। ”
—” আমি কি মানুষ না?? ”
—” না!!নাও ফাস্ট।।জলদি খেয়ে শেষ করো এগুলো।। ”
—” রেয়ান প্লিজ এগুলো ফেরত দিন।।এতগুলো ফুচকা আমি কিভাবে খাবো।।প্লিজ ফেরত দিন না।। ”
—” আমার কথার অবাধ্য হওয়ার সময় মনে ছিল না তোমার।।এখন কোনো ফেরত দেওয়া-নেওয়া হবে না।।চুপ-চাপ সব ফুচকা খেয়ে শেষ করবে।।নাও হারি আপ!! ”
উনার কথা শুনে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।। যেন চোখ দিয়ে বলছি “প্লিজ রেয়ান” কিন্তু না!!উনি তার সিদ্ধান্তে অটুট।। আমাকে সব ফুচকা খেতে হবে মানে খেতেই হবে।।চোখ মুখ আরও শক্ত করে অনেকটা বিরক্তি নিয়ে উনি বলে উঠলেন…..
—” ডু ইট ফাস্ট মরুভূমি!!নাহলে আমি বাধ্য হবো তোমাকে জোর করে খাওয়াতে।। ”
এবার আমি কেঁদেই দিলাম।।এত অত্যাচার করছেন কেন উনি?? একটুও কি নিজের পছন্দের খাবার খেতে পারবো না আমি।।তাছাড়া কিই-বা করেছি ??শুধু ফুটপাতের ফুচকা খেতে নিচ্ছিলাম এটাই।।এ-র জন্য কেউ এভাবে শাস্তি দেয়??নাক টানতে টানতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম…..
—” শুধু তো ফুচকাই খেতে যাচ্ছিলাম।।এ-র জন্য এমন শাস্তি কেন দিচ্ছেন?? ”
—” প্রথমত আমি তোমাকে বারণ করেছিলাম ফুচকা খেতে।।তাও কেন খেতে গেলে??তুমি কি জানো ফুটপাতের ফুচকায় কত ময়লা- আবর্জনা থাকে।।অনেক সময় তো তারা ময়লা হাতেই ফুচকা বানায়।।যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।।তার উপর যদি তাদের কোনো ছোঁয়াছে রোগ থাকে আর সে অবস্থায় তারা ফুচকা বানায় তাহলে তার রোগটা তোমার কাছেও যেতে পারে।।এজন্য মানা করি তোমাকে ওসব খেতে।।কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনলে না।।এখন শাস্তি ভুগো।।তাছাড়া শাস্তি তো তেমন কিছুই দি নি।।তোমার ফেভরেট ফুচকাই তো।।তাহলে খেতে অসুবিধা কিসের??তাই তাড়াতাড়ি ফুচকা খাবা!! বাসায়ও তো যেতে হবে আমাদের তাই না?? নাও স্টার্ট!! ”
তার কথায় জুক্তি থাকলেও এখন সেটা আমার মোটেও ভালো লাগছে না।।বারবার আকুতি মিনতি করার পরও যখন উনি শুনলেন না।।তখন একবার করুন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ফুচকা খেতে শুরু করলাম।।২প্লেট ফুচকা খেতেই আমি শেষ।।আমার দাঁড়া আর খাওয়া সম্ভব না।।এদিকে রেয়ান তাড়া করছেন যেন সব ফুচকা তাড়াতাড়ি শেষ করি আমি।।কিন্তু কিভাবে??আমার পেটে যে আর জায়গা নেই।।কিছুটা রাগ নিয়েই এবার বললাম…..
—” আপনি খেতে পারবেন এতগুলো ফুচকা যে আমাকে বলছেন।।তাছাড়া ২প্লেট তো খেয়েছি আর কত খাবো।।প্লিজ রেয়ান এবার রেহাই দিন।।আমার পেটে সত্যি আর জায়গা নেই।৷ ”

কথাটা শুনে কিছুক্ষন ভ্রুঁ কুচঁকে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।।পরক্ষনে ওয়েটারকে ডেকে তার কাছে ৫০০টাকার নোট ধড়িয়ে দিলেন।।তারপর আমার হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন গাড়ির দিকে।।গাড়িতে বসতেই উনি আমার দিকে ঝুঁকে পড়লেন।।সাথে সাথে আমি চোখ বড় বড় করে খানিকটা ঢেবে গেলাম গাড়ির সিটের সাথে।।তা দেখে বাঁকা হাসলেন রেয়ান।।পরক্ষনে আমার সিট বেল্ট লাগাতে শুরু করলেন।।শেষে সরে আসতে নিয়ে কানে ফিসফিস করে বললেন…….
—” নেক্স টাইম যেন এমন আর না হয় জান।।নাহলে শাস্তিটা অন্য ভাবে দিবো।।এবার মাফ করে দিয়েছি পরেরবার হয়তো নাও করতে পারি।।শোকর করো বিয়েটা হয় নি।। “(চোখ টিপ মেরে)
বলেই আবার বাঁকা হাসলেন উনি।।সে হাসি অদ্ভুদ।।অনেকটাই অদ্ভুদ!!

আজকে রাতে দিধার গায়ে হলুদ।।সে উপলক্ষে রেয়ান আমাকে একটা হলুদ লেহেংগা দিয়েছেন।।সাথে সাজুগুজোর কিছু সামগ্রী।।মা আর রিহানের জন্য রয়েছে শাড়ি আর পাঞ্চাবী।।শুনেছি আজকে নাকি রেয়ান আর রিহান একই রকমের পাঞ্চাবী পড়বে।।কথাটা রেয়ান বলেছে রিহানকে।।এ-র জন্য রিহান তো খুশিতে রিতিমতো নাচানাচি করছে।।
সন্ধ্যার দিকে রেয়ান গাড়ি পাঠায় আমাদেরকে নিতে।।আশ্চর্য রকম ভাবে রেয়ান আসে নি আমাদের নিতে।। কিন্তু কেন??তাকে পাঞ্চাবীতে কেমন লাগবে সেটা তো আমার দেখতে ইচ্ছে করছে।।আফসোস দেখাটা এখন হলো না।।হলুদের অনুষ্টানে গেলেই হয়তো তাকে দেখবো।।কিন্তু আমি ভুল!!সেখানে গিয়েও তার দেখা নেই।।বুঝতে পারছি না উনি কোথায়।।এদিকে নির্ঝর নামক ছেলেটা এত কিছু জানার পরও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।।তাকিয়ে আছে তাকিয়ে আছেই!!এ-র কি লজ্জা নেই।।এভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিকে??আজব!!রেয়ান যদি এটা দেখে তাহলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।।তাই যথাসম্ভব নির্ঝরের আড়াল হচ্ছি।।কিন্তু অসভ্যটা ঠিকই আমার পিছু পিছু আসছে।।এবার রেগে গেলাম আমি।।তার কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাবো।।তখনই আমাকে অবাক করে দিয়ে কোথা থেকে রেয়ান এসে নির্ঝরের সামনে দাঁড়ালেন।।নির্ঝরের পাঞ্চাবীর কলার ঠিক করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন……
—” বেশি উড়তে ইচ্ছে করছে তাই না।।ডানা টা কেটে দিলে কেমন হয়??একটা কথা শুনে রাখ,,হাত-পা ভেঙ্গে দিবো যদি আমার বউয়ের দিকে বাজে নজরে দেখিস।।জানে মেরে ফেলব একদম!! ”
.
.
.
#চলবে🍁