সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 31

নিচে পরে শরীরটা আমার নিস্তেজ হয়ে পরলো।যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম আমি।উঠে দাড়ানোর চেস্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।রক্তে আমার শরীরের কাপড় ভিজে যাচ্ছে। চিৎকার করার শক্তিটুকুও আমার নেয়।আমি হাত পা দাপাদাপি করতে লাগলাম।বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখলাম স্নিগ্ধা হাসতে হাসতে সিঁড়ি থেকে নামছে।কাপাকাপা হাতটা আমার আলতো ভাবে পেটের উপরে রাখলাম আমি।এমন সময়ে বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠলো।স্নিগ্ধার মুখটা যেন মুহূর্তে ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।আমি ফ্লোরে ঘেষে পেছনে সরতে সরতে মেন ডোরের কাছে চলে এলাম।নিস্তেজ শরীর নিয়ে ডোর খুলতে পারলাম না আমি।স্নিগ্ধা এসে আমার মুখটা বেঁধে ফেললেন।আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলেন।হঠাৎ ডোর ভাঙার আওয়াজে থেমে গেলেন স্নিগ্ধা।পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন উনি।মেন ডোরের বাইরে রক্তের স্রোত গড়িয়ে পরায় উনি আচ করতে পেরেছেন কিছুটা।সামনে তাকিয়ে উনি রক্তের পথে বেয়ে চোখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমাকে দেখে থমকে গেলেন উনি।আমার রক্তাক্ত শরীরটাকে হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় স্নিগ্ধা টানছে।এটা দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে বসে পরতে চাইলেন উনি।উনার এসিস্টেন্ট নাইরা এসে স্যার বলে ধরে রাখলেন উনাকে।ভয় পেয়ে দুই তিন সিঁড়ির উপর থেকে স্নিগ্ধা আমাকে আবার ছেড়ে দিলেন।আমাকে গড়িয়ে নিচে পরতে দেখে উঠে দাড়ালেন উনি।স্নিগ্ধা দৌড়ে পালাতে চাইলে নাইরা স্নিগ্ধাকে ধরে ফেললেন।আর উনি ছুটে আসলেন আমার কাছে।আমাকে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে নিজের বুকের সাথে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।আমি রক্তাক্ত হাতটা আমার আস্তে করে উঠিয়ে উনার গালে রাখলাম।কাতরানো স্বরে কাপা কাপা ঠোঁটে হিচকি তুলে বললাম উনাকে,
-আ হা ন। আ আ আমার খ খুব কস কসট হচ চ্ছে আহান।আমা দের সন সনতান।
এটুকু বলতেই আমার চোখদুটো আস্তে করে বন্ধ হয়ে আসলো।
🍁
রুহান আর কিছু বলার আগেই মাইশা রুহানের বুকে ঝাপিয়ে পরলেন।রুহানের শার্ট খামচে বুকের সাথে নিজের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে কেঁদে উঠলো সে।রুহান মাইশাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরলেন না।কান্না জড়িয়ে কন্ঠস্বরে বললেন,
-আমি তো ভালো স্বামী না।সরো আমার বুক থেকে।
মাইশাকে টেনে নিজের মুখের সামনে আনলেন রুহান।মাইশা রুহানের মুখের দিকে খুব অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।রুহান কিছু না বলে চলে যেতে লাগলে মাইশা টেনে ধরলো রুহানের হাত।রুহান হাত ছাড়িয়ে নিতে গেলে পা জড়িয়ে ধরে বসে পরলো সে।ডুকরে কেঁদে উঠে বলল,
-ওও আমার স্বামী। এমন করবেন না আমার সাথে। আমি মরে যাবো। বিশ্বাস করুন আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেয়। আমার এই বুকটায় খুব কস্ট হয় আমার স্বামীটার জন্য। এতোগুলো দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি বোঝাতে পারবো না আপনাকে।আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।ভুল বুঝেছি আপনাকে।আমার এই সমস্ত মন জুড়ে শুধু আপনি আছেন।আমি আর আপনাকে হারাতে চায় না।আপনার কস্টও দেখতে পারছি না আমি।প্লিজ আমাকে আর একটা সুযোগ দিন।কাছে টেনে নিন আমায়।একটু দয়া করুন।
রুহান চোখ বন্ধ করে কথাগুলো শুনলেন। বন্ধ দুই চোখের কোণ ঘেঁষে অশ্রুধারা গড়িয়ে পরতে লাগলো তার।মাইশার মাথায় হাত রেখে চোখ খুলে বললেন সে,
-কি করছো কি মাইশা? পা ছাড়ো আমার।
মাইশা আরও শক্ত করে রুহানের পা জড়িয়ে ধরলো।কান্না জড়িত কন্ঠেস্বরে আবার বলল,
-আজ আমি কিছুতেই আপনাকে আমায় ছেড়ে যেতে দিবো না।যেই ভুলটা আমি করেছি সেটা আপনি করতে পারেন না।ভালোবাসেন না আমাকে? তাহলে আমায় ফেলে চলে যাচ্ছেন কেন?
রুহান মাইশার কাঁধ ধরে উঠিয়ে দাড় করালেন।মাইশার মুখের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।দেখলেন মাইশা হিচকি তুলে কাঁদছে। রুহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।মাইশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন সে।এমন সময় মেকাপ রুমের বাইরে দরজার ওপাশে কিছু ভাঙার আওয়াজ কানে এলো দুজনের।দুজনে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখতে পেলেন বাইরে কেউ নেই।একটা ফুলদানি ভেঙে পরে আছে।
🍁
একগুচ্ছ গোলাপ হাতে দাড়িয়ে আছেন ডিসুজা।চুমপুয়িং ডিসুজাকে দেখে এগিয়ে আসলেন।লজ্জা লজ্জা মুখ করে কপালে চলে আসা চুলগুলো কানে গুজলেন সে।ডিসুজা গম্ভীর হয়ে আছেন।কোনো কথা বললেন না।চুমপুয়িং নিজের দিক থেকে বলা শুরু করলেন।আমতা আমতা করে শুদ্ধ ইংরেজিতে বললেন,
-আজ বলে দিন আপনার প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসার কথা।
ডিসুজা কেঁপে উঠলেন চুমপুয়িং এর কথা শুনে।চোখ তুলে চুমপুয়িং এর দিকে তাকালেন।জবাবে চুমপুয়িং কে শক্ত করে দু’বাহু চেপে ধরে বললেন,
-ভালোবাসার কথা বলতে এসেছো? সেটা কি আমার জন্য কাম্য?
এতো শক্ত করে চেপে ধরায় চুমপুয়িং মোড়ামুড়ি করছেন।চেস্টা করছেন ডিসুজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার।মুখটা মলিন করে বলে উঠলেন,
-আমার লাগছে ডিসুজা ছাড়ুন।
ডিসুজা এক ধাক্কায় চুমপুয়িং দূরে সরিয়ে দেয়। চুমপুয়িং পরে গিয়ে পায়ে মোচড় লাগে।নিচে বসে উঠার চেস্টা করে কিন্তু পারে না উঠতে।পায়ে হাত দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ডিসুজার মুখপানে সে।ডিসুজা ফুলের গুচ্ছ ছুড়ে মারলেন চুমপুয়িং এর মুখের সামনে।চুমপুয়িং কেঁপে উঠলেন। মনে মনে ভাবলেন কেন করছেন উনি এমনটা। আমিতো উনাকে খুব ভালোবাসি সেটা কি উনি বোঝেন না? হুট করে এসেই ডিসুজা চুমপুয়িং এর চুলের মুঠো টেনে ধরে বললেন,
-তুই জানতি ম্যাশ বিবাহিত।আমাকে কেন আগে বলিস নি? তোর জন্য! শুধু মাত্র তোর জন্য জীবনে আবার আমি এতো বড় একটা ধাক্কা খেলাম।বাবা মা মারা যাবার পর তোকেই একমাত্র বিশ্বাস করেছিলাম আমি।যেখানে গিয়েছি তোকে সঙ্গে করে নিয়েছি।তোকে আমি বলেছিলাম একজনকে ভালোবাসি।আজ তাকে প্রপোজ করবো।তাহলে কেন করলি এমনটা তুই?
চুমপুয়িং চুলের মুঠো থেকে ডিসুজার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।ডিসুজা চুল ছেড়ে দিয়ে চুমপুয়িং এর গালটা চেপে ধরে বললেন,
-তুই যা করেছিস।তার শাস্তি তোকে পেতে হবে।
চুমপুয়িং কে উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলেন।গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাড়ালে ডিসুজা চুমপুয়িং কে টেনে গাড়ির থেকে নামালেন।টানতে টানতে রুমের মধ্যে আনলেন চুমপুয়িং কে।ব্লেড খুলে চুমপুয়িং কে মারতে লাগলেন।চুমপুয়িং মার খেতে খেতে চিৎকার করে বলে উঠলেন,
-আপনি আমাকে মারতে মারতে মেরে ফেললেও আমার কোনো দুঃখ নেয়। ভালোবাসি যে আপনাকে।আমি সত্যি জানতাম না আপনি ম্যাশকে ভালোবাসেন।আমিতো শুধু ম্যাশকে তার ভালোবাসার কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
ডিসুজা আরও রেগে গেলেন।ম্যাশের মাথাটা ফ্লোরে চেপে ধরে রাগে গজগজ করে বললেন,
-ভালোবাসিস আমাকে? তোর জন্য ম্যাশ আমার হতে পারে নি।ম্যাশ থাকুক তার ভালোবাসাকে নিয়ে। আর তুই! যে যন্ত্রণা আমাকে দিয়েছিস। তা জীবনেও মিটবে না আমার।এর ফল তোকেও ভোগ করতে হবে। আমার মনের কস্টগুলো তোর শরীরের উপর দিয়ে যাবে।
চলবে,,,