সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 30

আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম।আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না।স্নিগ্ধা আমাকে ঝাকিয়ে বললেন, কি ভাবছো আরিশা আমি মিথ্যা বলছি? আমি নড়ে চড়ে বসলাম।আমার দু’চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা পানি বেড়িয়ে এলো।চোখের পানি মুছে নিয়ে তাকালাম স্নিগ্ধার দিকে।হিচকি তুলে বললাম আমি,
-আপনি মিথ্যা বলছেন স্নিগ্ধা।আপনি একজন অভিনেত্রী। অনেক টেলেন্ট আপনার মধ্যে। আমি জানি না আপনি কেন এমন করছেন।কেন উনাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছেন।এতোদিন আপনাকে আমি অনেক ভালো ভাবতাম।মায়া হতো আপনার জন্য।কিন্তু কাল যেই ব্যাবহারটা আমার মায়ের সাথে করলেন আপনি।যেই এক্টিংটা করলেন আমার সামনে তারপর আমি নিশ্চিত আপনি মিথ্যা বলতে পারেন।
আমার কথা শুনে স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালেন।চুল গুলো এলোমেলো করে ঘুরে এসে বসে পরলেন আমার সামনে।আমার কপাল চাপড়ে হিংস্র রূপ ধারণ করে বললেন,
-এই মেয়ে এই! আর কি বললে বুঝবি রে তুই? কত বছর ধরে আমি আহানের কাছে আসতে চাচ্ছি।আর তুই সাধারণ একটা মেয়ে হয়ে হুট করে ওর বউ হয়ে চলে এলি? কি দেখেছে তোর মধ্যে সুপারস্টার আহান খান? কি আছে তোর মধ্যে?
স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালেন। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে স্নিগ্ধার। এদিক ওদিক তাকিয়ে পাগলের মতো হাবভাব নিয়ে ঝুঁকে আমার সামনে এসে বললেন,
-আট মাস চলে না আমার? তারমানে তো আর কিছুদিনের মধ্যে সত্যিটা সবার সামনে চলে আসবে।আমি যে প্রেগনেন্ট নই যেনে যাবে সবাই। তখন কি হবে? আহান কখনো আমাকে মেনে নেবে না।আর তোকে আমি আহানের জীবনে রাখবো না।একটা কাজ করি বরং তোকেই এখন মেরে ফেলি।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
-কি বলছেন এসব স্নিগ্ধা? আপনি প্রেগনেন্ট না?
স্নিগ্ধা একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললেন,
-না না না।আমি প্রেগনেন্ট নই।সব আমার সাজানো নাটক।মদ সেদিন খেয়েছিলো ঠিকই কিন্তু আমি চাইলেও আহানকে আমার কাছে টানতে পারি নি।তোর ভালোবাসার ভুত ছিলো যে ওর ঘাড়ে।পিক গুলো তুলিয়েছিলাম ওকে জোড় করে টেনে টেনে।
-ছিঃ আপনি এতো বাজে? উনি কিছু করেন নি সেদিন।কেন করলেন এমনটা আপনি?
স্নিগ্ধা আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,
-তোর জন্য করেছি।তুই যতো নস্টের মূল।তুই আহানের জীবনে না আসলে এসব কিছুই হতো না।আহান এত্ত বোকা যে বিশ্বাস করে নিলো আমার নাটকটা।আরে এতো ভালোবাসা তোর প্রতি ওর।কাল এসেছিলো আমার কাছে রিকুয়েষ্ট করতে।তুই নাকি বলেছিস বিয়ে করতে আমাকে।আহান তো আমাকে বিয়ে করবে না।তাহলে তোকে আর পটিয়ে, তোর সামনে কস্টে আছি দেখিয়ে আমার কি লাভ? কাল আহানের রিকুয়েস্টে বলেছিলাম আমি আমার সন্তানের বাবা আহান না।ধূর এসব কথা তোকে বলে এখন সময় কেন নস্ট করছি? একটা কাজ করি তোকে মেরে ফেলি এখন।আহান যখন আমার হলো না তখন তোকেও পেতে দেবো না।
স্নিগ্ধা হাত বাড়িয়ে ফল কাটা ছুড়িটা উঠিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন।আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপছি। স্নিগ্ধা এক টানে ছুড়িটা দিয়ে নিজের লং জামাটার আধ্যেকটা কেটে ফেললেন।সেলোয়ারের ভেতর থেকে টেনে কাপড়ের টুকরোগুলো বের করতে লাগলেন।আমি ভয়ে ভয়ে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে রইলাম স্নিগ্ধার দিকে।স্নিগ্ধা কাপড়ের টুকরোগুলো উঠিয়ে আমার কোলের উপর রেখে বললেন,
-এইটা আমার আর আহানের সন্তান।তারপর পৈচাশিক ভাবে হেসে উঠে বললেন, আমি বোকার মতোন আহানকে পাবো বলে কতোকিছুই না করেছি।তোদের রুমে সিসি ক্যামেরা পর্যন্ত লাগিয়ে রেখেছি।এতো ভালোবাসা তোদের মধ্যে শুধু আমাকে নিয়েই ঝামেলা।এখন তো আমার কাছে বেশি সময় নেয়।আট মাস চলে আর দু’মাস পর বাচ্চা কোথা থেকে আনবো? তুই মর তাতেই আমার শান্তি।
কথাটা বলে স্নিগ্ধা ছুড়িটা আমার পেটে বসাতে যাবে আমি বিছানার থেকে বালিশ উঠিয়ে স্নিগ্ধার মুখের উপর মেরে দিয়ে আস্তে করে দৌড়ে উঁচু পেটটা সামলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।
স্নিগ্ধা আমার পিছনে ছুটছে।পুরো বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।আমি চিৎকার করছি কাউকে পাচ্ছি না।অন্য দিন তো আমার একটা চিৎকারে বাড়ির সব সার্ভেন্টগুলো ছুটে আসে।তাহলে আজ কি হলো?
স্নিগ্ধা আমার পেছনের থেকে অট্টহাসি দিয়ে উঠে বললেন,
-আজ সকালে তোর শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে আবদার করে খিচুড়িটা রেঁধেছিলাম। সেই খিচুড়িতে নিজের হাতে ঘুমের ওষুধ ঢেলে দিয়েছি।বাড়ির প্রত্যেকটা গার্ড, সার্ভেন্ট সবাইকে মিস্টি কথা বলে খাইয়ে দিয়েছি খিচুড়ি।সন্ধ্যার আগে কেউ উঠবে বলে মনে হয় না।
কথাটা শুনে আমি ভয়ে আরও জোড়ে ছুটতে লাগলাম কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলাম না উঁচু পেটটা নিয়ে।মাঝ সিঁড়িতে আসতেই স্নিগ্ধা এসে আমাকে ধরে ফেললেন।আমি দুই হাত জোড় করে বললাম স্নিগ্ধাকে,
-এমনটা করবেন না স্নিগ্ধা। আমার বেবিটার কথা ভাবুন।ওতো কিছু করে নি।প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।
-ছেড়ে দেবো? ঠিক আছে।যা ছেড়ে দিলাম তোকে।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাঝ সিঁড়ি থেকে নিচে ফেলে দিলেন স্নিগ্ধা।নিচে পরে আমার সমস্ত শরীর অসর হয়ে আছে।একদম নিস্তেজ হয়ে ছটফট করছি আমি যন্ত্রণায়।চোখদুটো দিয়ে দেখতে পাচ্ছি স্নিগ্ধা মাঝ সিঁড়িতে দাড়িয়ে অট্টহাসিতে লুটোপুটি হয়ে পরেছেন।
🍁
রুহানের গান শেষ হতেই বছরের সেরা গায়িকার এওয়ার্ড দেওয়ার পালা।সকলে জানতো এওয়ার্ডটা ম্যাশ পাবে।অডিয়েন্স তো ম্যাশ ম্যাশ বলে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।অবশেষে যখন ম্যাশের নাম নেওয়া হলো।তখন সকলে ম্যাশকে দেখার জন্য আগ্রহী।ম্যাশ বসে আছে।আর কাঁদছে। চুমপুয়িং ম্যাশকে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠিয়ে দাড়াতে বললেন।ম্যাশ দাড়িয়ে পরতেই সমস্ত লাইট, ক্যামেরা ম্যাশের উপর।ম্যাশ ধীর পায়ে স্টেজে উঠে এলেন।এওয়ার্ড হাতে কিছু বললেন সবাইকে।যা শুনে সকলের চোখে পানি চলে আসলো।ম্যাশের বলা শেষ কথাটা ছিলো, তার স্বামীটা অন্য একটা মেয়ের হয়ে গেছে।সে তো লেখাপড়া না জানা অশিক্ষিত, বোকা মেয়ে ছিলো তাই তাকে ভুলে গিয়েছেন তিনি।
সকলে ম্যাশকে দেখতে চায়। ম্যাশ সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-আজ আমি আমার সকল ফেনদের সামনে আসবো।
হিজাবের উপরের পার্টটা টেনে নিজের মুখ খুললেন ম্যাশ।রুহানের চোখ গিয়ে আটকে পরলো ম্যাশের উপর।রুহান উঠে দাড়ালেন।সেনডি উঠে রুহানের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-কি হলো রুহান দাড়িয়েছো কেন?
রুহান কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে ম্যাশকে দেখিয়ে বললেন,
-আমার বউটা।মাইশা ও।আমাকে যেতে হবে ওর কাছে।ও কি বলল শুনলেনা? ভুল বুঝেছে আমায়।তুমি আমার থেকে দূরে থাকো সেনডি প্লিজ।
রুহানের মুখে কথাটা শুনে সেনডির চোখদুটো ছলছল হয়ে গেলো।রুহানের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিলো সেনডি।মাইশা স্টেজ থেকে নেমে ছুটে মেকাপ রুমের মধ্যে গেলেন।মাইশা কাঁদছে আর ট্যিসু পেপারে চোখের পানি মুছছে।এমন সময় পেছনের থেকে মেকাপ রুমের দরজা লক করার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো সে।তাকিয়ে দেখলো তার স্বামীটা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে।মাইশার মনের মধ্যে একরাশ কস্ট অভিমান নিয়ে জমা হচ্ছে।স্বামীটা ধীর গতিতে এগিয়ে এসে মাইশার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।মাইশার কপালে নিজের কপালটা ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন,
-খুব খারাপ আমি তাই না? তোমাকে ভালোবেসেছি।এতোগুলো দিন অপেক্ষা করেছি।ঠিক মতো খাই নি, নিজের যত্ন নিই নি।খুব স্বার্থপর আমি? অন্য মেয়ের হয়ে গেছি আমি?
মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে শার্টটা দুই পাশ থেকে টেনে সবগুলো বোতাম ছিড়ে ফেলে বুকটা দেখেলেন রুহান।মাইশা রুহানের বুকটার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে পোড়া দাগ।নিজের বুকে পুড়িয়ে মাইশার নামটা লিখে রেখেছে রুহান।
রুহান চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললেন,
-খুব খারাপ আমি তাই তো পাগলের মতো তোমাকে খুঁজেছি।কিন্তু পাই নি।আজ তুমি সকলের সামনে যেই কথাগুলো বললে সব সত্যি। আর আমার কস্ট! সেই সব মিথ্যা।
🍁
সকালে কিছু না খেয়ে বেড়িয়ে পরেছিলেন উনি।রাত থেকে আমার সাথে কোনো কথা বলেন নি।নিজের মনের মধ্যেই খারাপ লাগছে উনার।শুটিং বন্ধ করে গাড়িতে উঠে পরলেন উনি।রাস্তার সাইটে একটা ফুলের দোকানের সামনে গাড়ি থামালেন।গার্ডদের নামিয়ে দিয়ে একটা গাড়িতে ফুল ভর্তি করলেন।মনে মনে ছরি বলে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন উনি।
চলবে,,,,