সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 10

আমি ধীর পায়ে রুম থেকে বের হচ্ছি।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা কাঁপি করছে।না জানি উনি আমায় আজ কি শাস্তি দেন।সমস্ত বাড়িতে মানুষ শূন্য।শ্বাশুড়ি মা আজ বাড়িতে নেয়।না যানি থাকলে আজ কি হতো! বাড়ির বাইরের বিশাল এড়িয়া জুড়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দূর থেকে কানে ভেসে আসছে সকলের চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ।উনি গেইটের কাছেই দাড়িয়ে আছেন।আমি বাড়ির মেইন গেটটা কাছে পৌঁছালাম।উনি আমার পায়ের শব্দ পেয়ে মাইক হাতে নিয়ে সকলের দৃস্টি আকর্ষন করল।সকলে অধির আগ্রহে আছে আমাকে দেখার জন্য। আমি দরজা খুলতেই উনি ফিল্মি স্ট্রাইলে বসে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো।আর সকল লাইট ক্যামেরা আমাদের দুজনের উপর এসে পরলো।উনি চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো উনার আখিঁদ্বয়।উনার আদেশ অমান্য করায় অনেক রেগে গেলেন উনি। উঠে দাড়িয়ে সকলের সামনে আমার হাত মুচড়ে ধরলেন।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-তোর কি আমাকে একটুও ভয় করে না? এতো বড় সাহস তোর তুই এমন জঙ্গি সেজে বের হয়েছিস?
রাগে উনার হুস নেয় কি বলছেন! ওদিকে সমস্ত লাইট ক্যামেরা এবং উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আমাদের উপর পরলো।তারা লাইভ ভিডিও সহ ব্রেকিং নিউজ তৈরি করতে লাগলেন।
আমি উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।উনি কটকটে মেজাজে ঝাকালেন আমায়।হাত মুচড়িয়ে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে বললেন,
-আমাকে অপমান তাই না? আমার কথার অবাধ্য হওয়া? তোর সব রাশ আজ মেটাবো আমি।
উনি আমার দিকে আগাতে লাগলেন।উনার চোখদুটো রাগে গজগজ করতে লাগলো।আমি দেখেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম।উনি আমার কাছে এসে দাড়িয়ে বললেন,
-আজ তোর এই পর্দা, লজ্জা, সব যদি না আমি তুলতে পেরেছি তাহলে আমিও সুপারস্টার আহান খান নই।
আমি উনার কথায় খুব ভয় পেয়ে গেলাম।আমার হাত পা কাপা কাপি শুরু করে দিলো। উনাকে তবুও সাহস করে বললাম আমি,
-কককি কররবেন আপনি?
-এতো টাকার কন্টাক্টে সাইন করেছি।সুটিং তো করেই ছাড়বো।আর সেটা আজই।
কথাটা শুনতেই আমার ভেতরটা ধপ করে উঠলো।আসেপাশে তাকিয়ে দেখি এতো মানুষের ভীর, লাইট-ক্যামেরার আলো। আমার ভয়টা খুব তীব্র হতে লাগলো। তবুও আমি মনে মনে প্রতিশ্রুতি দিলাম কিছুতেই নিজের পর্দা নস্ট হতে দিবো না তারজন্য যাই হয়ে যাক।
উনি এক থাবড় দিয়ে আমার বোরখার নেকাবটা ধরে বসলেন।হেঁচকা টান দিতে যাবে আমি নিচ থেকে মুঠো ভর্তি ধূলো হাতে উঠিয়ে উনার চোখে ছুড়ে মারলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি আমার নেকাবটা ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখে হাত রাখলেন।আর চিৎকার করে উঠলেন।চার পাঁচ জন সার্ভেন্ট এসে উনার চোখে পানি ছিটাতে লাগলো।উনি এখন কিছুটা তাকাতে পারছেন।এবার রাগে আমার দিকে তেড়ে আসলেন উনি।আমি উনার পা জড়িয়ে ধরলাম।কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম আমি,
-আপনার সব আদেশ আমি মানতে পারবো যেগুলো বৈধ।কিন্তু স্রষ্টা যেগুলোকে নিষিদ্ধ আর হারাম বলেছে সেগুলো আমি কিছুতেই পারবো না মানতে।কিছুতেই না! এই পর্দা আমার একমাত্র অহংকার। দয়া করে এটা আপনি নস্ট করবেন না প্লিজ!
উনি আমার দুই’কাঁধ খামচে ধরে দাড় করালেন।আমাকে বললেন,
-তাই নাকি? এতো অহংকার তোর এই পর্দা নিয়ে? ঠিক আছে আজ সকলের সামনে আমি তোর এই পর্দার অহংকার চুন্ন করবো।তারপর তোকে ডিভোর্স দিয়ে বোঝাবো আহান খান কি জিনিস!
উনার মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম।তাহলে যা ভাবতাম আমি তাই! সব সেলিব্রেটিরা এমন হয়? (মনে মনে)
উনি পৈচাশিক ভাবে হেসে উঠলেন।আমার নেকাবটা আবার টান দিতে যাবেন আমি উনার হাতটা ধরে বসলাম।উনার চোখের দিকে না তাকিয়ে নিচু দৃষ্টিতে বললাম,
-দিন! দিয়ে দিন ডিভোর্স! যেই স্বামী তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান খোলামেলা ভাবে সকলের সামনে প্রদর্শন করতে চায়। স্ত্রী পর্দা করে যেনেও তার পর্দাকে সম্মান না করে স্ত্রীর হাতে অর্ধ নগ্ন পোশাক তুলে দিয়ে বলে সেটা পরে মিডিয়ার সামনে আসতে।এমনকি স্ত্রীর সামনে অন্য নারীর মুখে চুমু খাই এমন স্বামীর সাথে আর থাকা যায় না।ভেবেছিলাম ভালোবাসা দিয়ে সব সম্ভব।আপনাকে নিজের মতো করে নিতে পারবো।কিন্তু না! এখন মনে হচ্ছে ভালোবাসাটাই সব না।ডির্ভোস যদিও খুব নিকৃষ্ট একটা মাধ্যম সম্পর্ক বিচ্ছেদের। তবুও এটা সৃষ্টিকর্তার কাছে অত্যন্ত বৈধ আর হালাল বলে বিবেচিত।স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে খেয়ানত করে, পরনারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে ঐ স্বামীর শাস্তি হচ্ছে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা।আপনাকে আমি কিচ্ছু করতে পারবো না তাই শুধু ডিভোর্স দিবো।থাকুন আপনার এই বিশাল প্রাচ্যুর্য নিয়ে আপনি।আমি আমার ওই ছোট দুনিয়ায় এর থেকে ভালো ছিলাম।চলে যাবো আমি।
একদমে কথাগুলো বলে আমি কাঁদতে থাকলাম।আমাকে অবাক করে দিয়ে আচমকা উনি এক ঝাটকায় আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন।আমার মাথাটা নিজের বুকে চেপে রেখে হাসি মুখে ঘুরে তাকালেন মিডিয়ার সামনে।সবাইকে উদ্দেশ্য করে হেসে উঠে বললেন,
-কেমন লাগলো আমাদের অভিনয়?
উনার কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম উনার দিকে। উনি আবারও হাসি মাখা মুখ করে বলতে লাগলেন,
-ফ্যানজ জাস্ট ইনজয়।এমন কিচ্ছু হয় নি আমাদের মাঝে শুধুই অভিনয় করছিলাম।সবাইকে বোঝাচ্ছিলাম আমার বউয়ের মধ্যেও কত টেলেন্ট আছে।
উনার কথা শুনে সকলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। করুণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকায়। একজন তো বলে উঠলেন,
-ওয়াও স্যার।কত্ত ইমোশনাল এ্যাক্টিং আমার চোখে তো পানি চলে এসেছিলো ম্যামের জন্য।
উনি মুচকি হেসে দাঁত কেলালেন।আমি মাথাটা উনার বুক থেকে সরাবো উনি আমার মাথাটা আরও শক্ত করে বুকে মিশিয়ে নিলেন।ফিসফিয়ে আমাকে বললেন উনি,
-একদম উঠবে না।তাহলে কিন্তু পানিসমেন্ট আছে হুমমম।
উনার কথাটা একজনের কানে পৌঁছালো।আর সে বলে উঠলো ওয়াও কত্ত রোমান্টিক এই জুটি।উনি হাসি হাসি মুখ করে আমাকে কোলে তুলে স্টেজে নিয়ে বসালেন।আমার সামনে ফিল্মি স্টাইলে বসে হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরলেন।
-আই লাভ ইউ #বোরখাওয়ালী তুমি কি আমার সাথে সাড়া জীবন কাটাতে পারবা?
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার একই কথা বললেন।কিন্তু আমার কোনো উত্তর পেলেন না।তাই উনি আবার বললেন,
-ঠিক আছে বলবা না তো বলো না।তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তোমাকে ভালোবাসবো।তুমি আমাকে ছেড়ে গেলেও আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনবো। তুমি যতোই আমাকে কস্ট দাও, ব্যাথা দাও আমার বুকের এই বা পাশটায় তোমার নাম লেখা থাকবে।বুঝলে মহারানী বলে আমার কপালে কপাল ঠেকালেন উনি।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসার পেজে আসবেন।
সকলে উনার কথা শুনে মুগ্ধ। একমাত্র আমিই বুঝছি উনি কত বড় এ্যাক্টার্স।
আমার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে উনি আমার আঙুলে একটা ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে সকলের সামনে চিৎকার করে ভালোবাসি আরু বললেন। উনার স্পর্শে আজ আমার সত্যি অসহ্য লাগছে। ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করছে।উনার বলা অশ্লীল কথাগুলো আমার কানে এসে বাঢ়ি খাচ্ছে অনবরত…..
চলবে,,,,,,

Comments