সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 11
আমার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে উনি আমার আঙুলে একটা ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে সকলের সামনে চিৎকার করে ভালোবাসি আরু বললেন। উনার স্পর্শে আজ আমার সত্যি অসহ্য লাগছে। ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করছে।উনার বলা অশ্লীল কথাগুলো আমার কানে এসে বাঢ়ি খাচ্ছে অনবরত।উনি হাতের ইশারা দেখিয়ে মিউজিক অন করতে বললেন।মিউজিক অন হতেই উনি ড্যান্স করতে শুরু করলেন।ড্যান্স করতে করতে উনি আমার খুব কাছে চলে আসলেন। আমার হাত ধরে টেনে টেনে আমাকেও ড্যান্স করাতে লাগলেন।লজ্জা, ঘৃণা আর অস্বস্তিতে আমার মাথাটা ভারী হয়ে আসছিলো।আমি সহ্য করতে না পেরে উনাকে ফেলে দিলাম এক ধাক্কায় সুইমিংপুলে। পানিতে পরে উনি কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে আছেন।সকলের দৃষ্টি উনার উপরে।উনি পরিস্থিতি সামলাতে সুইমিংপুল থেকে ড্যান্স করতে করতে উঠে আসলেন। ভেজা শরীরে আমার চারপাশে ঘুরতে লাগলেন।আমি সেখান থেকে চলে আসবো উনি আমার হাতটা পিছনের থেকে টেনে ধরলেন।উনার ভেজা শরীরের সাথে পেছনের থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে হালকা দুলিয়ে আমাকে নিয়ে ড্যান্স করতে থাকলেন।উনি আমাকে ঘুরিয়ে কোমড় চেপে ধরলে উনার বুকে হাত ঠেলে সরিয়ে এক ছুটে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।
রুমের মধ্যে বসে আছি।অঝোরে কান্না আসছে।এতোগুলা মানুষের সামনে কিভাবে আমাকে নিয়ে ড্যান্স করলেন উনি।ভাবতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।এসব যদি ভাইরাল হয়ে যায় তাহলে তো কত্ত মানুষ দেখবে।নাহ নাহ এভাবে চলতে পারে না।
উনি ভেজা শরীরে রুমে এসে আমার সামনে বসলেন।আমার মাথায় আলতো হাত রাখলে আমি কেঁপে উঠলাম।উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরলেন।আমাকে টানতে টানতে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন।পানি ছেড়ে দিলেন আর আমার নেকাবটা হেঁচকা টানে খুলে ফেললেন।আমার চুলের মুঠি ধরে আমার মুখটা বেসিনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন।যখনই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আমাকে টেনে তুলছে আবার নিঃশ্বাস ফেলতেই আমার মুখটা বেসিনের পানির ভেতরে ঠেসে ধরছেন।এভাবে কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
-তোর অনেক সাহস বেড়েছে।সকলের সামনে সুইমিংপুলে ফেলেছিস আমাকে? সুপারস্টার আহান খানকে? আর এসব জঙ্গি সাজ পোশাক নিয়ে বাইরে গিয়েছিস।তোকে না বলেছিলাম আমার দেওয়া পোশাক পড়তে? আমার কথার অবাধ্যতা? আজ এর শেষ তোকে আমি দেখিয়ে ছাড়বো। পর্দা তাই না? লজ্জা? অহংকার? আমার সামনে এর কিছুই তোর থাকবে না।
উনি টেনে আমার বোরখাটা খুলে ফেললেন।আমার পড়নের জামাটা টেনে ছিড়ে ফেললেন।উনি দেখতে পেলেন উনার দেওয়া পোশাক আমার জামার ভেতরে পরা ছিলো।আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-এগুলো পড়েছিলি তুই?
আমি সঙ্গে সঙ্গে উনার কলারটা টেনে ধরলাম।
-হ্যাঁ পড়েছি।আপনি আমাকে একটা পোশাক দিয়েছেন আর সেটা আমি পড়েছি।কারণ এই পোশাকে আমি শুধু আপনার সামনেই আসতে পারি।অন্য কারও সামনে নয়।আর আপনি? আমার শরীরটাকে আপনার কাছে কি এতোই সস্তা মনে হয়? কিভাবে ভাবলেন আমি এসব পরে বাইরে যাবো? লজ্জা করলো না আপনার? স্বামী হয়ে নিজের স্ত্রীর সম্মানের কথা ভাবলেন না। আমার অর্ধ নগ্ন শরীরটা মানুষ দেখবে।আমার দিকে কুনজর দিবে। সেটা কি আপনার ভালো লাগবে? ছিঃ ঘৃণা করছে আপনাকে দেখলে আমার আজ।গা ঘিনঘিন করছে।এর চেয়ে আপনি আমার হাতে বিষ তুলে দিতেন। আমি আপনার একটা কথায় খেয়ে নিতাম।
রাগে উনার শার্টটা দু’হাতে খামছে ধরে সবগুলো বোতাম টেনে ছিঁড়ে ফেললাম।উনি নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। দু’হাতে উনার কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বললাম,
-আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে।আপনি আমাকে মুক্তি দিন।আপনার এতো বড় দুনিয়ায় আমি আর থাকতে চাই না।আমি আমার ছোট্ট দুনিয়াতে খুব ভালো ছিলাম।আর যাই হোক কখনো আমার সম্মান নিয়ে এভাবে টানা হেঁচড়া কেউ করে নি।ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন না আমাকে? দিয়ে দিন।আমার পক্ষে আর আপনার মতো নিকৃষ্ট মানুষের সাথে থাকা সম্ভব নয়।
আমার কথায় যেন উনি নড়ে উঠলেন।আমি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লাম।উনি আমার পাশেই দাড়িয়ে আছেন।নিজের চুল খামচে ধরে এদিকে ওদিকে তাকিচ্ছেন।যেন দিশেহারা হয়ে গেছেন উনি।
দুপুর বারোটা! ওয়াশরুমের এক কোণে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছি আমি।উনি বসে আছেন ঠিক আমার উল্টো দিকটায়।বাইরে থেকে শ্বাশুড়ি মায়ের কন্ঠস্বর আসলে আমার ধ্যান ফেরে।ঘাড় ঘুড়িয়ে উনাকে দেখতে পেলাম। উনি দেয়ালে পিঠ আর মাথা ঠেকিয়ে এক দৃষ্টিতে নিচু মুখ করে বসে আছেন।উনাকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম তখন রাগের মাথায় কি কি বলেছি! ভুল তো কিছু বলি নি।তবুও উনার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে খারাপ লাগছে এখন।আমি উঠে উনার কাছে গেলাম।উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
-আহান? আহান শুনছেন?
উনি নড়েচড়ে উঠে আমার দিকে তাকালেন।ওয়াশরুমে থাকা তোয়ালেটা দিয়ে আমার শরীরে মুড়িয়ে দিলেন।আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে গেলেন।আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচু দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
-আমি খুব খারাপ তাই না আরু? আমাকে ভালোবাসা যায় না? শুধুই ঘৃণা করা যায়।সত্যিই তো তোমার মতোন মেয়ের যোগ্য না আমি।খুব বেশিই কস্ট দিয়ে ফেলেছি।যানি না কিভাবে ক্ষমা চাইতে হয়।তবুও যদি পারো ক্ষমা করে দিও।আমার স্পর্শে যদি সত্যিই গা ঘিনঘিন করে তোমার তাহলে আর কখনো তোমার কাছে আসবো না।মুক্তি চেয়েছো।দিয়ে দেবো।আমাকে একটু সময় দাও।
উনার কথায় আজ আমি হেসে উঠলাম।উনার স্বভাব বুঝতে বাকি নেই আমার।নিশ্চয় অভিনয় করছেন আমার অনুভুতির সাথে।হয়তো আবার কিছুক্ষণ পর বলবে ফিল্মের ডায়লগ শুনিয়েছেন,
-আপনি আবার অভিনয় করছেন তাই না? এতো অভিনয় কেন করেন আমার সাথে? আমি বোকা তারজন্য? আপনার কথা আমি সহজে বিশ্বাস করতে পারি তাই?
-অভিনয় করছি না সত্যি বলছি।
-হ্যাঁ সত্যিই বলছেন।আসলে আপনি খুব ভালো অভিনেতা তার পরিচয় দিচ্ছেন।
শ্বাশুড়ি মা বাইরে থেকে ডাকছে দেখে আমি আর কথা না বলে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসলাম।শ্বাশুড়ি মায়ের মুখটা আজ খুব উজ্জ্বল। দেখে বোঝা যাচ্ছে অন্তরের খুশিটা আজ তার চোখে মুখে জানান দিচ্ছে।
-কি হয়েছে মা?
শ্বাশুড়ি মা আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা পেপারস আমার হাতে তুলে দিলেন।
-এটা কি মা?
-এটা মিরার বাবার বাড়ির ভাগের সম্পত্তির দলিল।উত্তরাধিকার সূত্রে এটা তোমারই পাওয়ার কথা। ভাবছি আহানের তো অনেক আছে।আর আহানের যা কিছু সবই তো তোমার।তাই এটা দিয়ে একটা ভালো কাজে লাগাবো।একটা অনাথ আশ্রম খুলবো। যদি তুমি অনুমতি দাও।আসলে তোমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো সামর্থ থাকলে একটা অনাথ আশ্রমটা করবার।তাই..?
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টি ভঙ্গিতে তাকালাম,
-মা মিরা কে? আমি কি তাকে চিনি?
এরই মধ্যে উনি ওয়াশরুম থেকে বের হলেন।মা চুপ করে আছেন।নিচু দৃষ্টিতে কিছু বলতে যাবেন আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে আছেন। উনার প্যান্টের চেইন খোলা।আমাদের দুজনকে রুমে কথা বলতে দেখে ভাবলেশহীন ভাবে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।কতোক্ষণ ভাবার পর আমি উনার পিছনে ছুটলাম।উনাকে ডাকতে লাগলাম উনি ফিরে তাকালেন না।মনে হচ্ছে কিছু একটা ভাবছে আর আনমনা হয়ে হাঁটছে।উনি বাড়ির মেইন গেটটার কাছে চলে এসেছেন।গেইটটা খুললেই সর্বনাশ।সাড়া বাড়ি ফাঁকা। সব গার্ট, সার্ভেন্ট বাইরে।আমি খুব দ্রুত গতিতে দৌড়ে আসলাম।উনি দরজায় হাত দিতেই উনাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
-কি হয়েছে আরু?
উনাকে কিছু না বলে আমি চেইনটা টেনে আগে আটকিয়ে দিলাম।তারপর বললাম,
-এইজন্য! এইভাবে বাইরে যাচ্ছিলেন আপনি।তখন থেকে ডাকেই চলেছি।আপনার মন কোথায় থাকে বলুন তো?
উনি আমার কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। উনার যাওয়ার পরে আমি পিছনে ঘুরে শ্বাশুড়ি মাকে দেখতে পেলাম।তিনি বললেন,
-কি হলো বৌ মা ওইভাবে ছুটে আসলে কেন?
-এমনি মা উনাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।
-ওহহ।তোমাদের ভেতরে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে জেনে ভালো লাগছে।
-কোথায় আর ঠিক হলো।কথা না বলেই চলে গেলেন।হয়তো আমাকে উনার এখন আর ভালো লাগছে না।কয়দিন পর ঠিকই ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
-এসব কি বলছো মা? আহান তোমাকে ডিভোর্স দিবে?
-হ্যাঁ মা।শুনেছি প্রায় সব সেলিব্রেটিরাই ডিভোর্সি হয়।দু’চারটা বিয়ে করে।আর উনি তো সুপারস্টার আহান খান।আমার মতো মেয়েকে কি উনার বেশি দিন ভালো লাগবে? দুইদিন পর নতুন পেলেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।তাছাড়াও যা চরিত্র উনার..
আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ি মা চড় বসালো আমার গালে।আমি গালে হাত দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম।
-আমাকে আপনি মারলেন মা?
-হ্যাঁ মারলাম। তোমার সাহস কি করে হয় আমার আহানকে নিয়ে এভাবে বলার? তুমি জানো ও তোমাকে কতটা ভালোবাসে? তুমি যেটা করেছো ওর সাথে তারপরও ও তোমাকে ভালোবাসে।আমি শুধু তোমার মায়ের কথা ভেবে আর তোমার তখনকার বয়সের কথা বিবেচনা করে তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তু আহান পারেনি ওই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে।গত দশ বছর ধরে আমি ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছি।হাজার হাজার মেয়ে দেখেছি ওর জন্য।সব মেয়েকে ও রিজেক্ট করেছে।ও বারবার বলেছে বিয়ে করলে শুধু তোমাকেই করবে।ওর খুশির কথা ভেবেই তোমাকে নিজের পুত্রবধূ করেছি।ভেবেছিলাম তুমি তোমার মায়ের মতোন হয়েছো।মিরার প্রতিচ্ছবি দেখেছি তোমার মধ্যে। কিন্তু তোমার ওই মুখে আমার আহানকে নিয়ে একটাও এমন কথা বলবে না যেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
কথাগুলো বলে শ্বাশুড়ি মা শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে ধরে রুমের দিকে ছুটলেন।আমি ভাবছি কি করেছি আমি? আমার তো কিচ্ছু মনে নেয়। কে মিরা? তার সাথে কি সম্পর্ক আমার? (মনে মনে)
চলবে,,,,