সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 07

-তুই আমার বুকে কি করছিস? যা এখান থেকে।
-আহান আমি! আসলে আপনি আমার বুকে।আমি তো আপনার নিচে আছি দেখুন।
-কোথায়? আমি তো দেখছি তুই আমার উপরে।ওঠ! আমার উপর থেকে।
জ্বরে হয়তো উনার মাথাটা গেছে।কি বলছেন নিজেও জানে না।
-না আহান! আমি সত্যি বলছি। একটু ভালোভাবে দেখুন।
উনি আমার মুখের সামনে নিজের চোখদুটি দুই হাত দিয়ে টেনে বড় করে গোলগোল করে ঘুরিয়ে দেখলেন।তারপরও বললেন,
-এইতো দেখছি তুই আমার বুকের উপর।
আমি আর কিছু না বলে উনাকে ঠেলে সরাতে চাইলাম আর তখন উনার দুই হাতের চর আমার গালে পরল। না আছে সেই চরের শব্দ আর না হচ্ছে তার অনুভব। তবুও উনি আমাকে মারলেন আস্তে আস্তে।অসুস্থ শরীরে উনি ঢলে পরছেন আমার বুকে।আবার মাথা উঁচিয়ে থাপড়াচ্ছেন আমার গালে।উনার কান্ড দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।উনি আমার দুই গালে উনার দুই হাতের আঙুল ঠেসে ধরে বলতে লাগলেন,
-তোকে না মেরে আমার একটা দিনও সম্পূর্ণ হবে না।কথায় কথায় উড়া ধুরা পিটাবো তোকে।আচ্ছা, তুই কি আমাকে ভয় পাস?
আমি নড়েচড়ে কিছু একটা ভাবার ট্রাই করে বললাম।
-হ্যাঁ, খুব ভয় পাই।
ব্যাস! আমার গালে পরলো উনার আরও একটা চর।আমি উনার দিকে গালে হাত রেখে তাকিয়ে রইলাম।উনি বলল,
-ব্যাথা করলো না তাই না? ঠিক আছে কাল আবার মারবো এখন একটু আদর করে দিই।
উনি আমার উপর থেকে উঠে পরলেন।তারপর আমাকে কোলে তুলে ঢুলতে ঢুলতে বিছানায় নিয়ে গেলেন।বিছানার উপরে এসে ধরাম দিয়ে পরলেন আমাকে নিয়ে উনি।তারপর! যা হবার ছিলো তাই হলো।
সকালে! বিছানার উপরে বসে শাড়ির আঁচল বুকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি আমি।উনি আমার পাশে পা এলিয়ে দিয়ে বসে আছেন।আমার দিকে তাকাচ্ছেন।আবার উনার চোখে আমার চোখ পরলেই উনি নিজের চোখ নামিয়ে নিচ্ছেন।নিচু চোখে কন্ঠ নামিয়ে বললেন উনি,
-এতো ঘেনঘেন সুর আমার ভালো লাগে না।তুই আমাকে কিছু দিয়েছিস আমি তোকে কিছু দিয়েছি। এতে কান্নার কি হলো? এসব বন্ধ করে কাল রাতে আমি তোকে কি বলেছি সেটা আগে বল?
আমি উনার কলারটা চেপে ধরে বললাম,
-না বলবো না। তারপর আবার ভ্যায়ায়াআআ করে কাঁদতে থাকলাম।
-মহা মুশকিল তো। না বলে শুধুই কাঁদে। ইচ্ছা তো করছে..
উনি নিজের হাত উঁচু করেন আমাকে মারবার জন্য। আর আমি উনার বুকে ঝাপিয়ে পরি। উনি থেমে যান।
-কি হলো? এতো সাহস কোথা থেকে আসলো তোর? আমাকে? সুপারস্টার আহান খানকে জড়িয়ে ধরিস?
-আপনি দিয়েছেন সাহস। কাল রাতে জ্বরের ঘোরে আমাকে অনেক আদর করেছেন আপনি।অনেক ছরিও বলেছেন।আর বলেছেন আমাকে ভালোওবাসেন।আমি আপনার বুকে মাথা রাখলে আপনার দুনিয়ার কিচ্ছু মনে থাকে না।রাগও কাজ করে না।শুধুই ভালোবাসতে ইচ্ছা করে।
-সিরিয়াসলি? এসব বলেছি আমি?
-হ্যাঁ।বলেছেন তো।আরও অনেক কিছু বলেছেন।প্রথমে ভেবেছিলাম সবকিছু আপনার কোনো না কোনো মুভির ডায়লগ। তারপর এই ডায়েরিটা যখন আমার হাতে দিলেন আমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কতোটা ভালোবাসেন।তখন আমি বিশ্বাস করলাম।
বালিশের নিচ থেকে ডায়েরিটা বের করে উনার সামনে ধরলাম।উনি ডায়েরিটা আমার হাত থেকে কেড়ে নিলেন।তারপর আমাকে ঠেলে উঠে বসে আমার কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন,
-গাঁধি! ডাফর! এটা ডায়লগের ডায়েরি।
আমি উনার দিকে তাকালাম।ভাবছি উনি কি বলছেন।উনি আমার হাত মুচড়ে পিছনে ধরে বললেন,
-সুপারস্টার আহান খান কখনো কাউকে ভালোবাসে না।এটা নিজের মাথায় গেঁথে নে।আর এই ডায়েরিটা? এটা আমার ডায়লগ মনে করার জন্য লিখে রাখা।বিভিন্ন সাক্ষাৎ কারে আমার কাছে বিভিন্ন মুভির ডায়লগ শোনার রিকুয়েষ্ট আসে।এতো মুভি করেছি যে কিছু মুভির ডায়লগ তো ভুলেই যায়। তাই এটাতে যত্ন করে লিখে রাখা যেন এর থেকে সঠিক সময়ে ডায়লগ দেখে নিতে পারি।বুঝতে পেরেছিস?
আমার হাতে ব্যাথা করছে।উনি এখনও আমার হাতটা মুচড়ে ধরে আছেন।আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ অর্থ বোঝালে উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। আমার খুব কস্ট লাগতে থাকে।বিছানা থেকে নেমে চলে আসতে লাগি উনি আমার শাড়ির আঁচলটা পেছনের থেকে টেনে ধরেন।
-এখন কোথায় যাচ্ছিস? রাতে কি করেছি কিচ্ছু মনে নেই।তুই সত্য বলছিস না মিথ্যা বলছিস বুঝবো কিভাবে? মিথ্যাই বলবি হয়তো।আয় তোর মিথ্যাকে সত্যি করি দিই।
উনি হেঁচকা টানে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলেন।তারপর আবার কাল রাতের মতোন ওসব করতে শুরু করলেন।না পারছি উনাকে দূরে সরিয়ে দিতে। আর না পারছি উনাকে… ধূর অসভ্য একটা লোক।
সকাল ৮টা বাজে…সার্ভেন্ট এসে ব্রেকফাস্ট নিয়ে ডাকছেন আমাদেরকে।আমি উঠে ওয়াশরুমে যাবো উনি টেনে আমাকে বিছানার সাথে এমন ভাবে চেপে ধরেন যে উঠতেই পারছি না।
-কোথায় যাচ্ছিস তুই? আমি কি তোকে যেতে বলেছি?
-আহান! আর কত? আমি যাই না এখন। আপনি উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিন।
-এই তুই থামবি? আর একটা কথা বললে কানের নিচে দেবো।বেয়াদ্দপ মেয়ে।আমি তোকে উঠার অনুমতি দিয়েছি? যতোক্ষণ না আমি বলছি এই বিছানা থেকে এক পাও নিচে ফেলবি তো তোর পা ভেঙে আমি হাতে ধরিয়ে দেবো।আমার যখন হয়ে যাবে আমি এমনিতেই তোকে ছেড়ে দেবো।তারপর যাস যেখানে যাবি।
আমি আর কিচ্ছু বলি না।উনার যা ইচ্ছে উনি তাই করে চলেছেন।আমি ভাবছি কি এই লোকটা? সব মুভির রোমান্স দেখছি আজ একসাথে আমার উপর ঢালছেন।
সকাল এগারটা….আমি সাওয়ার নিয়ে বিছানার উপরে বসে আয়না দেখে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছছি।এমন সময় উনি ওয়াশরুম থেকে সাওয়ার শেষ করে বাইরে আসলেন।উনার ভেজা চুলের বিন্দু বিন্দু পানি নগ্ন বুকটায় গড়িয়ে পরছে।উনার বুকে, পিঠে কালকের মাইরের দাগ এখনও স্পষ্ট আছে।উনি রুমের মধ্যে আমার সামনে হাঁটা চলা করছেন।ওষুধ নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাড়িয়ে বুকে লাগিয়ে পিঠে লাগানোর চেস্টা করছেন।কিন্তু পিঠে হাত পাচ্ছেন না।আমি বিছানা থেকে নেমে উনার কাছে গিয়ে হাত থেকে ওষুধটা কেড়ে নিলাম। তারপর উনার পিঠের ক্ষতগুলোতে ঠোঁটের পরস ছুঁইয়ে দিয়ে ওষুধ লাগাতে লাগলাম। ওষুধ লাগানোর সময় উনি কিচ্ছু বললেন না।তারপর উনার সামনে এসে দাড়িয়ে যখন আমি বললাম, হয়ে গেছে আহান! সঙ্গে সঙ্গে উনি চোখ খুললেন আর আমার গালে উনার থাপ্পড় পরল। রাগি মেজাজে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
-তোকে কে বলেছে আমাকে ওষুধ লাগিয়ে দিতে? সুপারস্টার আহানকে সামনে পেয়েছিস তাই না? মেয়েরা সব চিপকু টাইপ। তোকে অন্য রকম ভেবেছিলাম।কিন্তু না… বেয়াদ্দপ মেয়ে।
তাওয়ালটা আমার মুখে ছুড়ে আমার সামনে থেকে চলে যান উনি।আর আমি গালে হাত দিয়ে টলমল চোখে তাকিয়ে থাকি উনার যাওয়ার পানে।
কিছুক্ষণ পর,, একটা মেয়েকে নিয়ে উনি রুমে আসলেন।উনি হাঁটছেন মেয়েটা উনার পিছে পিছে হাঁটছেন।সোফাই এসে বসলেন উনি।মেয়েটা উনার সামনেই দাড়িয়ে আছেন।পায়ে পা তুলে হাত বাড়ালেন উনি।মেয়েটা উনার হাতে একটা পেপারস দিয়ে অনেক ইনজয় করে সমস্ত শরীর হেলেদুলে বললেন,
-স্যার ভালো ভাবে পড়ুন হিন্দি ফিল্মের অফার।এমন সুযোগ বারবার আসে না।আপনি একবার সাইনটা করে দিন।তারপর দেখবেন কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছেন।
উনি উঠে দাড়িয়ে মেয়েটার গালে ঠাসসসস! করে একটা থাপ্পড় বসায়। মেয়েটা গালে হাত দিয়ে উনার দিকে তাকালে উনি দেয় এক ধমক।মেয়েটা কেঁপে উঠে।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।উনি ক্ষিপ্ত দৃষ্টি আরোপ করে দাঁত কটমট করে বললেন,
-মিস নাইরা আপনার কি মনে হয় আমি নিচু শ্রেনির এ্যাক্টর?
মেয়েটা মাথা ঝাকিয়ে না অর্থ বোঝায়।
-তাহলে বললেন কেন কোথা থেকে কোথায় পৌঁছাবো? আমি যেখানে আছি সেখানেই ভালো আছি।আর এই এগ্রিমেন্টে কি লেখা আছে? ভালো ভাবে না পরেই আমার সামনে এনেছেন আপনি? আপনার কি মনে হয় টাকার জন্য আমি যে কোনো হিন্দি ফিল্মের হিরোইনের সাথে..
উনি থামলেন।মেয়েটা গদগদ কন্ঠ বললেন,
-স্যার এটাতো তেমন কোন ব্যাপার না।হিন্দি সব ফিল্মেই নায়ক নায়িকাদের মধ্যে চুম্মা চুম্মি আরও অনেক কিছু হয়ে থাকে।
মেয়েটার কথা শুনে আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেল।উনি পাশ ফিরে খেয়াল করলেন আমি রুমে আছি।আর উনাদের কথা শুনছি।উনি চোখ ঘুরিয়ে হাসি মুখে মেয়েটার দিকে তাকালেন আর বললেন,
-ঠিক বলেছেন মিস নাইরা।অবশ্য হিন্দি ফিল্মের হিরোইনদের সাথে চুম্মা খেতে আমার কোনো অসুবিধা নেয়। শুধু চুম্মা কেন বলছি তাদের সাথে বেড শেয়ার করতেও আমি রাজি।কিন্তু সেটা ক্যামেরার সামনে নয়।আমার সম্মান বলেও তো একটা ব্যাপার আছে তাই না? আপনি এই অফারটা ক্যানসেল করে দিন।
-ওকে স্যার
কথাটি বলে মেয়েটা চলে যায়। আর আমি ভাবছি উনি এতোটা নোংরা? টাকার জন্য এসব করে ফিল্মের মধ্যে? আমি তো কখনো উনার ফিল্ম দেখি নি।বান্ধবীদের কাছে শুনেছিলাম উনি অনেক রোমান্টিক।তাহলে কি? না আর ভাবতে পারছি না।এই মেয়েটাও বা কেমন? পরনের পোশাকের কোনো বালা মন্দ নেয়।দেখলে আমারই লজ্জা লাগছে।উনি কিভাবে কথা বলেন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে? ছিঃ
চোখ তুলে দেখি উনি আমার সামনে বসে আছেন।ভ্রু উঁচিয়ে বলছেন,
-কি ভাবছো, হুমমম?
উনার কথা শুনে আমিতো অবাক।এই প্রথমবার উনি আমাকে তুমি করে বলল।আমি কিছু না বলেই চুপ করে আছি।উনি বলতে শুরু করলো,
-ওই যে মেয়েটাকে দেখলে।পার্সোনাল এসিস্টেন্ট আমার।অনেক সুন্দর দেখতে।যতোটা না সুন্দর দেখতে তার চেয়েও বেশি সুন্দর ওর চাল-চলন, পোশাক-আশাক।যা তোমার মধ্যে নেয়। ওর কোমড়টা দেখেছো? আহ! আর ওর ঠোঁট।
উনার মুখটা চেপে ধরলাম আমি।
-মেয়েটার এমন কিছু কি আছে যা আপনি দেখেন নি? অথচ আমারটা দেখেছেন?
কথাটা বলে উনার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।উনি নিশ্চুপ।কিচ্ছু বলছেন না।
-কি হলো চুপ করে আছেন যে? তাহলে কি আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি?
উনি রেগে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর মেয়েটার কোমড় ধরে রুমে নিয়ে আসলেন। তারপর আমার সামনে দাড়িয়ে মেয়েটার কোমড় চেপে ধরে বললেন,
-বেবি কিস মি?
-ওকে স্যার।
মেয়েটা উনার গাল ধরে উনার মুখের দিকে আগাচ্ছে।আর আমি নিজের চোখ বন্ধে করে অন্য দিকে ঘুরে আছি।
চলবে,,,,,