সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 02

আমি কিছু না বলে, অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।নিজের হাত ছাড়ানোর অযথা চেস্টা করছি তার হাতের থেকে।সে আমাকে আরও জোড়ে টেনে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়,
-আজ যদি তুই সত্যি চলে যেতি তাহলে প্রেস, মিডিয়াতে আমাকে নিয়ে কত নিউজ বানানো হতো যানিস? হেড লাইন হতো আহান খানের বিয়ের দিন তার হবু বউ পালিয়েছে। তোর মতোন মেয়ে এইসবের কি বুঝবে? গাঁধি! ডাফর! আরে কত মেয়ে আমার জন্য নিজের হাত কেটেছে সেটাও তোর কল্পনার বাহিরে।
কথাটা বলে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগে।আমার চলার শক্তি না থাকায় পরে যায়। উনি এগিয়ে এসে রাগে দাঁত কটমট করে বলে,
-এভাবে নাটক করে কোনো লাভ নেই।জ্ঞান হারালে যে পায়ে ব্যাথা হয় না সেটা আমি খুব ভালো করেই যানি।বিয়ে তো আজ তোর আমাকেই করতে হবে।এবার ওঠ।
আমাকে উঠিয়ে দাড় করিয়ে টানতে থাকে।
-আমি সত্যিই হাঁটতে পারছি না বিশ্বাস করুন।আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।
-ওহহ তাই নাকি? যন্ত্রণা কেন হবে? কেউ মেরেছে নাকি?
উনাকে কিভাবে বলি মা আমাকে মেরেছে! হয়তো হাত পায়ে মোজা পরা এইজন্য উনি আমার গায়ের দাগগুলো দেখতে পারছেন না।
-হা হা হা।নাটক অনেক করছিস। তোর তো অভিনেত্রী হওয়া উচিৎ ছিলো। তবে চিন্তা করিস না আমি তোকে সেই সুযোগটাও করে দিবো।দিনে এতো এতো অফার আসে কতোগুলো কাজ যে রিজেক্ট করি তোর কল্পনার বাইরে।আমি একবার বললেই তোকে যে কেউ কাজ দিয়ে দিবে।
ছিঃ উনি এতোটা জঘন্য কেন? কিভাবে কথা বলছে আমার সাথে? এই লোকটাকে আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না আল্লাহ।(আনমনে)
আমাকে উনি অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নেয়।আমি আমার হাত পা ছোটাছুটি করছি।
-যদি আর একটু নড়াচড়া করিস তো এক আছাড় মেরে এখানেই ফেলে দেবো।তারপর ভাঙা কোমড় নিয়ে বাসর করিস।
আমি আর কোনো কথা বলি না চুপ হয়ে আছি।কিন্তু বাসরের কথা শুনে আমার ভেতরটা ভয়ে কাঁপছে।গায়ের মধ্যে ঘিনঘিন করছে।ভাবছি, এমন একটা নোংরা, অসভ্য আর খারাপ লোকের সাথে কিছুতেই আমি বাসর করবো না।কিন্তু এই বিয়েটা আটকাবো কিভাবে? এখন তো আমার পালানোর কোনো পথ নেই।
উনি উনার নাক আমার কপালে ঠেকিয়ে বলে,
-কি ভাবছিস?
আমি মাথা ঝাকিয়ে কিছু না অর্থ বোঝায়।আসেপাশে মানুষের চিৎকার চ্যাচামেচির শব্দ শুনতে পেয়ে তাকিয়ে খেয়াল করি, উনি আমাকে নিয়ে হাটছে আর দু’পাশে অনেক মানুষের আনাগোনা।সকলের মুখে আহান! আহান! আর আহান! মানুষের চিৎকার চ্যাচামেচির হট্টগোল।যাদেরকে ঘিরে আটকে রেখেছে উনার গার্ডগুলো।
-দেখেছিস কত মানুষ আমার জন্য পাগল? শুধু একটা অটোগ্রাফ নেবার জন্য এমন করছে আর তুই কিনা? ডাফর! আজ যদি তোকে ফলো করতে লোক না লাগাতাম তাহলে এতোক্ষণে মিডিয়া আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিত।
আমি ভীর ভাট্টার দিকে ইশারা করে বললাম,
-ওদের ভেতর থেকে কাউকে বেছে নিয়ে বিয়ে করে নিন না।আমার জীবনটা কেন নস্ট করছেন আপনি?আপনার পরিবেশের সাথে আমি কখনো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো না।তাছাড়াও আমি তো আপনার থেকে বয়সে অনেক ছোট।১১ বছরের ছোট। আপনার পরিবারের চাল-চলন, আচার-নিয়ম আমার এই ছোট্ট মাথায় কখনো ঢুকবে না।আমার কথা শুনুন।আপনি আপনার মতোই মিডিয়ার জগতের কাউকে বিয়ে করে নিন।খুব সুখে থাকবেন।সেদিন আপনাকে আমি একটা থাপ্পড় দিয়ে ছিলাম বলেই তো এমন জেদ ধরেছেন।ঠিক আছে আপনি আমাকে আরও অনেকগুলো থাপ্পড় মেরে দিন। তবুও এই বিয়েটা করবেন না প্লিজ।আর আমাকে তো আপনি কখনো দেখেন নি।বিশ্বাস করুন আমি খুব কুৎসিত দেখতে।একদম হাড়িল কালির মতোন কালো।নাক চেপ্টা।দাঁত ভোকলা। দেখলে আপনার অনেক ভয় করবে।আপনি কি পারবেন আমার সাথে সংসার করতে?
উনাকে কথাগুলো বলে আল্লাহকে ডাকছি।আল্লাহ মিথ্যা বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও।এমন পরিস্থিতিতে পরেছি যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছি না। কখন কি বলছি নিজেও জানি না।
উনি আমায় খুব জোড়ে একটা ধমক দেয় আর আমি কেঁপে উঠি।
-আমাকে তোর বোঁকা মনে হয়? এ্যাক্টারের সাথে এ্যাক্টিং করিস? বিয়ে আমি তোকেই করবো।আর একটা কথা বলেছিস তো আছাড় মেরে এখানেই কোমড়টা ভেঙে দিবো।
উনি আমাকে গাড়ির কাছে আনলে ড্রাইভার গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। আমাকে কোল থেকে নামিয়ে উনি গাড়িতে বসায়।ঘুরে এসে অপজিট পাশের দরজাটা খুলে উনি গাড়ির ভেতরে বসতে যাবে এমন সময় কিছু রিপোর্টার্স এসে উনাকে ঘিরে ধরে।উনার সামনে মাইক ধরে বলে,
-স্যার! স্যার! একটু থামুন। মি.আহান খান।আজ বিয়ের দিন আপনার হবু বউকে নিয়ে হসপিটালে কেন এলেন? কোনো সিরিয়াস মেটার?
উনি গাড়ির দরজা জোড়ে শব্দ করে বন্ধ করে গার্ড গুলোকে ইশারায় বলে রিপোর্টার্সগুলোকে সরাতে।গার্ডগুলো এসে রিপোর্টার্স গুলোকে দূরে সরাতে থাকে।আর রিপোর্টারগুলো গাড়ির দরজায় উঁকি দিয়ে আমার মুখ দেখার চেস্টা করে।কিন্তু মুখ বাঁধা থাকার কারণে দেখতে পারে না।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। গাড়ির পিছনের ছিটে শুধু উনি আর আমি।খুব ভয় করছে আমার।না তাকিয়েই অনুভব করছি আমি, উনি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কিছুটা এগিয়ে এসে আমার গা ঘেঁষে বসেই আমার বাম পা’টা উনার এক পা দিয়ে টেনে ধরেছে।তারপর আমার বাম হাতটা টেনে ধরে উনার হাতের আঙুল আমার হাতের আঙুলে চেপে রেখেছে।আমি একদম ঠান্ডা ফ্রীজের মতোন জমে আছি।উনি আমার হাত উঠিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে সামনের আয়নায় চেয়ে দেখে আমার চোখ দুটো খিচে খুব শক্ত করে বন্ধ করা।চোখের পাপড়ি কাঁপাকাঁপি করছে।সঙ্গে সঙ্গে মুচকি হেসে উনি আমার হাতটা ছেড়ে দেয়। তারপর আমার গালটা খুব শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়,
-তো কি বলছিলি যেন আমাকে তুই? তোকে আমি কখনো দেখিনি?
তোর চোখ দেখেছি আমি।ওই কাজল কালো মায়াবী হরিণী চোখ।
উনার কথায় আমি চোখ মেলে তাকায়। উনি আমার মুখটা ছেড়ে দেয়।আর আমি হা হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রই।উনি বলে,
-আরে ফ্লিমের ডায়লগ এটা।তোকে আমি কখনো দেখিনি ফ্লিমটার নাম।
ওহহ তাহলে ফ্লিমের ডায়লগ শুনালো আমাকে উনি? অভিনেতা তো ইমোশনাল ভালো করতে পারে বোঝা যাচ্ছে।(মনে মনে)
-বয়সের কথা বলছিলি না আমাকে?
তুই কি জানিস ক্লাস সিক্স, সেভেনের মেয়েরাও আমার হতে চাই? জনপ্রিয় অভিনেতা আহান খান আমি।বয়স মেটার করে না তোর আমার মধ্যে।কারণ আমি সব বয়সের মেয়ের জন্যই উপযুক্ত। একটা কথা বল তো? আমাকে দেখে কি তোর বুড়া মনে হয়? নাকি হ্যান্ডসাম?
আমি মনে মনে বলছি, বিয়াদ্দপ, বজ্জাত, অসভ্য, নোংরা আরও অনেক কিছু।হ্যান্ডসাম না ছায়।নিজেই নিজের প্রশংসা করে।আহাম্মক একটা।
-কিরে বল?
-আমার কিচ্ছু বলার নেই আপনাকে।আপনি যেমন তাতো আপনি জানেনই।আমি বললে তো আর চেঞ্জ হয়ে যাবেন না।
-তোকে কে বলতে বলেছে? ডাফর! আমার হতে চাই ফ্লিমের ডায়লগ এটা।
ওহহ এখনো উনা আমাকে ফ্লিমের ডায়লগ শুনাচ্ছে।আমিও কত্ত বোঁকা।বোঁকার মতোন তার সাথে কথা বলছি।(আনমনে)
গাড়ি এসে আমাদের বাড়ির গেটের সামনে দাড়ায়। মা এসে রাগি দৃস্টিতে তাকায় আমার দিকে। উনি আমাকে ডাকলে আমার ধ্যান ফেরে। তাকিয়ে দেখি মা সামনে দাড়ানো।মা গাড়ির দরজাটা খুলেই আমার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের করে।আমাকে টানটে টানটে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যেতে লাগে।আমি চলতে না পেরে হাটু নুইয়ে বসে পড়ি তবুও টানছে।টেনেই চলেছে।ফ্লোরে ঘেঁষতে ঘেঁষতে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।আমি চিৎকার করছি।হঠাৎ উনি ছুটে এসে মায়ের হাত ধরে ছিটকে দূরে ফেলে দেয়। তারপর আমাকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসে। ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে বিছানার উপরে এনেই আমাকে ধরাম দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
-পা কি ন্যাংরা হয়ে গেছে তোর যে হাঁটতে পারছিস না? বিয়ে না করার অনেক বাহানা দেখিয়েছিস কিন্তু আর না।একটা কথা মনে রাখিস এবার বাড়ি ভর্তি মিডিয়ার লোকজন।এমন কিছু যেন আর না করতে দেখি যেটা করলে আমার সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়।আর তোর মাকেও দেখে নেবো।এত্তগুলো টাকা খেয়েও একটু বুদ্ধি হলো না।সকলের সামনে এভাবে তোকে টানলো? কেউ এই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দী করে নিলে কি হতো?
ওহহ তাহলে নিজের সম্মানের কথা ভেবে আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে? (মনে মনে)
তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এবার উনি শাড়ি, গহনা, কসমেটিকস সব এনে রেখেছে,
-এগুলো কি পড়তে পারবি নাকি আমি পরিয়ে দিবো?
-আপনি পরাবেন মানে?
-মানের নমুনা তো একবার দেখিয়েছিসই।একা ছাড়লে আবার পালাবি।এবার কোনো রিস্ক নিবো না। বিয়ের আগে আর তোকে চোখের আড়াল করছি না আমি।একবার বিয়েটা হোক তারপর সবকিছু শুধে আসলে ওসুল করবো।
উনার কথা শুনে আমার কান্না পাচ্ছে খুব।মনে মনে বলছি, এই লোকটাকে বিয়ে করতে হবে আমার? আল্লাহ কিছু করো।আমি উনার কাছে দু’হাত জোড় করে মিনতি করি,
-দেখুন, আমি এসব পড়তে পারবো না।আমি পারবো না সেজেগুজে বিয়ের আসরে গিয়ে বসতে।প্লিজ বুঝার চেস্টা করুন।আমি পরপুরুষের সামনে পারবো না এভাবে যেতে।দয়া করুন আমার উপর।আমাকে বিয়ে করবেন না প্লিজ।
উনি এসে আমার হাতটা মোচড় দিয়ে ধরে,
-এখনো তোর মুখে সেই এক কথা? বলেছিনা বিয়ে তোর আমাকেই করতে হবে।আর আজই।
-কেন এমন করছেন? কি দেখেছেন আমার মধ্যে আপনি? আপনি তো অনেক মেয়ের জীবন নস্ট করেছেন।তাদেরকে বিয়ে করেন নি।তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করতে চাইছেন?
-সেটা তোর না জানলেও চলবে।এভাবেই চল।সাজতে হবে না।
উনি আমাকে আবার কোলে তুলে বিয়ের আসরে নিয়ে যায়। মিডিয়ার মানুষেরা দূর থেকে নিউজ বানাচ্ছে।ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলছে।কেউ কেউ আবার ভিডিও করছে।উনি এমন ভাব দেখাচ্ছেন সকলের সামনে যেন আমাকে খুব ভালোবাসে।আমি তো জানি বিয়ের পর উনি আমার উপর কতটা অত্যাচার করবে। কেন যে সেদিন চরটা মারতে গেলাম? এখন এই অসভ্যটা আমার সারাটা জীবন ত্যানাত্যানা করবে ছাড়বে।
কিছুক্ষণ পর সকল নিয়ম মেনে বিয়ে পরানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়।না চাইতেও বিয়েটা করতে হয় এই জঘন্য আর অসভ্য সেলিব্রেটিকে। এখন সে আমার স্বামী। ভাবলেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।ভেতরটা ঘিনঘিন করছে।
চলবে,,,,,