তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 28 (Last-Part)

#Part: 28 (শেষ পর্ব)
তানহার বাবার সাথে কথা বলছে তনয়ের বাবা। তানহার বাবা প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না পরে তনয় বলে,
–বাবা,আমার আর তানহার মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির জন্য আমরা আলাদা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমি আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি। ওর প্রতি ভালোবাসা আগে থেকেই ছিল, শুধু বুঝা বাকি ছিল আমার। যখন থেকে ও দূরে গিয়েছে আমি বুঝেছি ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকব না। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না। তানহাও আমাকে মাফ করে দিয়েছে। আপনিও শেষ একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন। কথা দিচ্ছি নিরাশ করব না।
এবার তানহার বাবা রাজি হয়ে গেলেন। ঠিক হলো পরের সপ্তাহে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে ওদের।
এদিকে সবাই খুশি থাকলেও আদিব কি যেন নিয়ে একটু চিন্তিত আছে। শ্রেয়া লক্ষ্য করলো বিষয়টা। সে আদিবকে যেয়ে জিজ্ঞেস করল,
–কি হয়েছে আপনার? এইরকম দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?
–কিছু হয়নি। মন ভালো নেই।
–কেন? কি হয়েছে?
–কিছুনা। আচ্ছা একটা কথা বলো তো।
–জি বলুন।
–ধরো, তোমার প্রথম দেখায় কাউকে ভালো লেগেছে।এরপর তার সাথে কিছুদিন কাটানোর পর তোমার মনে হলো যে তুমি ওকে পছন্দ করো। তখন তোমার কি করা উচিত?
–আমার সাথে যদি এইরকম হতো তাহলে আমি সবার আগে এটা বুঝতাম যে ওই মানুষটা আমার ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা? যদি নেহাতই ভালো লাগা হয়, তাহলে তাকে নিয়ে ভেবে লাভ নেই। কিন্তু…
–কিন্তু কি?
-কিন্তু যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আলাদা কথা। ভালোবাসাকে পেলে মানুষ প্রকৃত সুখী হয়। তাই যদি ভালোবাসা হয়ে থাকে তাহলে তাকে পাওয়ার চেস্টা করা উচিত। নাহলে অনুভূতিটা পরে বুঝলে আমার ভাইয়ার মতো অবস্থা হবে তার।
–কিন্তু যদি সে অন্য কাউকে পছন্দ করে? বা ওর রিলেশন থেকে থাকে তাহলে?
–এইরকম হলে সরে যাওয়া উচিত।
শ্রেয়ার কথা শুনে আদিব দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর বলল,
–তোমার দেখি ভালোই ধারণা আছে এইসব ব্যাপারে। বয়ফ্রেন্ড লাকি তোমার!
–ঠিক বলেছেন। বয়ফ্রেন্ড লাকি হবে আমার!
–হবে মানে? (ভ্রু কুচকে)
–মানে যখন আমার বয়ফ্রেন্ড হবে তখন সে লাকি হবে!
–তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই? (চোখ বড় করে)
–জি নাহ। আমাকে সামলানোর মতো কেউ আসেনি এখনও। কিন্তু আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাইনা?
–হ্যা, আছে তো। (দাত কেলিয়ে)
–ওহ। কংগ্রেটস। আমি আসি তাহলে (মলিন হেসে)
এবার আদিব খুব খুশি।শ্রেয়ার বয়ফ্রেন্ড নেই শুনে যেন একটা বোঝা নেমে গেল ওর বুকের উপর থেকে! সে জানতে চায় শ্রেয়ার মনেও ওর জন্য কিছু আছে নাকি।
,
,
,
বিয়ের দিন আসতে আর কয়েকদিন বাকি। এই কয়দিনে আদিব-শ্রেয়ার বন্ধুত্ব আরও ভালো হয়েছে। আদিব বুঝেছে শ্রেয়ার প্রতি ওর অনুভবটা ভালোবাসার আর শ্রেয়া জানে আদিব একজনকে ভালোবাসে কিন্তু ওর কস্ট হয় এটা শুনলে, সে যে মনে মনে আদিবকে পছন্দ করে এটা বুঝেছে কিন্তু সে অন্য কাউকে ভালোবাসে শুনে অনুভূতিকে লুকোনোর চেস্টা করে।
.
.
এর মধ্যে মিশার বিয়ের দাওয়াতে গেলো তনয়রা। সাথে শ্রেয়া আর আদিবও গিয়েছিল। মিশাকে ওর বর রাফসানের সাথে দেখে তানহা ওকে অভিনন্দন জানালো। মিশা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–আজ আমি খুব খুশি তানহা। সত্যিই মানুষের ভালো করলে সৃষ্টিকর্তা নিজের সাথেও ভালো করে আমি নিজের চোখে দেখলাম। রাফসান আমাকে অনেক ভালোবাসে। সেদিন হয়তো আমি তোমাদের সংসার নস্ট করিনি বলে আমার জীবনে এত ভালো একটা সংগী এসেছে। আমাদের জন্য দোয়া করো তোমরা।
–অবশ্যই মিশা আপু। আপনি খুব সুখী হবেন দেখে নিয়েন আর সামনে আমাদের বিয়ে। আপনি আর ভাইয়াও আসবেন কিন্তু।


এদিকে মিশার এক ফ্রেন্ড আদিবের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে দেখে শ্রেয়ার কেন জানি খুব খারাপ লাগলো। সে জানেনা কেন কিন্তু ও জেলাস ফিল করছে। ওর এসব ভাবনার মধ্যেই তনয়ের এক ফ্রেন্ড ওর সাথে কথা বলতে এলো,
–হাই আমি তাসিন। তুমি তনয়ের বোন না?
–জি,কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
–আমি ওর ফ্রেন্ড। আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি।
–শ্রেয়া, তোমাকে তানহা ডাকছে। চলো তো! (আদিব)
,
,
তানহাদের কাছে যাওয়ার আগেই আদিব শ্রেয়াকে টেনে এক কোণে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,
–কিসের কথা হচ্ছিল ওই ছেলের সাথে শুনি?
–যাই হোক আপনার কি? (অন্যদিক হয়ে)
–যা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দেও। (দাতে দাত চেপে)
–তেমন কিছুই না। আপনিও তো ওই মেয়েটার সাথে কথা বলছিলেন। আমি কিছু বলেছি? তাহলে আপনার এত সমস্যা কোথায়? (ছলছল চোখে)
–আমার সমস্যা কোথায়? তুমি কি সত্যিই বুঝোনা?
–বুঝিনা আমি। আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন তাহলে আমার কোনকিছুতে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা না। আমি বিয়ে করলেও আপনার কিছু যায় আসবেনা।
–কি বললে তুমি? বিয়ে করবে তুমি?
–হ্যা করব,আপনার কি সমস্যা?
–ওকে ফাইন,আমিও দেখছি কিভাবে কর। (বলে চলে যায়)
আদিব চলে যাওয়ার পর শ্রেয়া কাদতে থাকে। কেন হলো এমন ওর সাথে? তারপর কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে তানহার কাছে যায় সে। তানহা ওকে বারবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে মন খারাপ কেন কিন্তু কোন উত্তর দিলোনা সে!

আজ বিয়ের দিন তানহা-তনয়ের। তানহার সাথে শ্রেয়াকেও পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্রেয়া দেখে ওকেও অনেক ভারী সাজ দেওয়া হচ্ছে। ও মানা করে কিন্তু তানহা বলে করতে দেও, নিজের ভাইয়ের বিয়ে তোমার। তখন সে আর কিছু বলেনা। লেহেংগা পড়ে সাজ কমপ্লিট হওয়ার পর শ্রেয়া বলে,
–ভাবী, দেখোনা কত সাজিয়ে দিয়েছে। আমাকেও বউ লাগছে। (গাল ফুলিয়ে)
–বিয়ের বয়স হয়েছে বউ তো লাগবেই ননদিনী! (গাল টিপে)
.
ওরা যখন অনুষ্ঠানের জন্য বুক করে রাখা ক্লাবে পৌঁছায় তখন শ্রেয়া দেখে চারটা সিট বর-বউ এর বসার জন্য। ও অবাক হয়ে ওর বাবাকে বলে,
–বাবা, আর কার বিয়ে হচ্ছে এখানে?
–তোর। (হেসে)
–মানেএএ? কার সাথে? কিভাবে ঠিক হলো? (আকাশ থেকে পড়ে)
–আমার সাথে।
আওয়াজ শুনে শ্রেয়া তাকিয়ে দেখে সামনে আদিব হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে শেরওয়ানি পড়ে। সে এগিয়ে এসে শ্রেয়ার হাত ধরে বলল,
–আমি আমাদের বাবা-মা কে বলে দিয়েছি যে আমরা দুইজন দুইজনকে পছন্দ করি আর তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই। তখন সবাই মিলে ঠিক করল দুইটা শুভ কাজ একসাথেই হোক!এইজন্য আজ আমাদেরও বিয়ে।
— কিন্ত বাবা…
–হয়েছে থাক। তুই তো আমাদের বললি না যে আদিবকে পছন্দ করিস। ছেলে নিজে যখন বলল তোদের দুজনের কথা তখন ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। বাকি সব কথা পরে এখন বিয়ে হয়ে যাক!
অতঃপর দুইটা দম্পতী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো!
বাসর ঘরে বসে ছিলো শ্রেয়া। আদিব আসতেই ওর কলার ধরে বলল,
–কেন করলেন আপনি এমন? আপনি না অন্য কাউকে ভালোবাসেন? তাহলে আমার সাথে এরকম করার মানে কি? (চিল্লিয়ে)
–উফফ আস্তে চিল্লাও। কান ফেটে গেল আমার। আমার কথা তো শুনতে একবার।
–কি কথা?
–আমি কাউকে ভালোবাসি এটা তো জানতে কিন্তু কাকে ভালোবাসি এটা শুনতে চেয়েছিলে কখনও?
–মানে? আপনি কাকে ভালোবাসেন?
–তোমাকে শ্রেয়ামনি। তুমি ছাড়া এই হৃদয়ে আর কেউ নেই। (নাক টেনে দিয়ে)
–সত্যি? (হেসে)
–হায় কপাল! বাসর রাতে বউ বলছে আমি মিথ্যা কথা বলি! (কপালে হাত দিয়ে) আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি পাটকাঠি। আই লাভ ইউ!
–হয়েছে ঢং করতে হবেনা। আই লাভ ইউ টু ফালতু লোক! (জড়িয়ে ধরে)
.
.
এদিকে তানহা বেডে বসে আছে আর তনয় এসে পাশে বসে দাত কেলিয়ে হাসছে। তানহা বলল,
–কি ব্যাপার জনাব? এত খুশি যে? (ভ্রু কুচকে)
–ফাইনালি তোমাকে নিজের করে পেয়েছি তানহা। আজ যে কি শান্তি লাগছে আমার!
–তা ঠিক বলেছেন। কিন্তু আপনি যদি আগে বুঝতেন তাহলে এত ঝামেলা হতোই না আমাদের মাঝে।
–ও সব ভুল বুঝাবুঝির কথা বাদ দেও। বাসর রাতে কেউ ওগুলো কথা বলে?
–তাও বলব। কারণ এইবার তো মেনেছি সব কিন্তু এরপর থেকে আমাকে ভুল বুঝে অযথা রেগে যান তাহলে কিন্তু একবারে চলে যাব আমি।আর থাকব না আপনার..
বলতেই তানহার মুখ চেপে ধরে তনয়,
–এইরকম কথা আর মুখেও আনবেনা খবরদার। আমি কোথাও যেতে দিবোনা তোমাকে। তুমি আমার ছিলে, আমার আছো এবং আমারই থাকবে! বুঝেছো তানহু বেবি? (জড়িয়ে ধরে)
–বুঝেছি। এখন ছাড়ুন। ঘুমাবো আমি।
–এই কিসের ঘুম আজকে? আজকেই তো পেলাম তোমায়, আজ নো ঘুম, অনলি ভালোবাসা বলে তানহার ঠোঁটে ঠোট ডুবিয়ে ভালোবাসার রাজ্যে পাড়ি জমালো ওরা দুজনে!
প্রত্যেকেই আজ তাদের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছে। ভালোবাসার রঙে মেতে উঠুক তাদের জীবন, আজীবন একসাথে সুখে-দুঃখে থাকুক তারা, যাদের এক হওয়ার কথা ছিল, আজীবন একসাথেই থাকবে!
————–সমাপ্ত❤❤❤———-
[শেষ হয়ে গেলো গল্পটা! আপনারা জানেন আমি একটু অসুস্থ তাই আপনাদের অপেক্ষায় না রেখে শেষ করে দিলাম। এটা আমার লেখা প্রথম গল্প, হয়তো অনেকের ভালো লেগেছে, হয়তো অনেকের লাগেনি। তবুও যারা পাশে ছিলেন সবার জন্য ভালোবাসা আর যারা এতদিন গল্পটা পড়েছেন, আজকে শেষবারের মতো জানাবেন কেমন লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে, ভালো থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করিয়েন❤❤❤]