রাগী বস

রাগী বস – পর্ব- ০৭


সিফাত:সিনহা আর আমি দুজনে বসে আছি কোনো কথা বলছি না,সিনহা শুধু কেঁদে যাচ্ছে,আমার খারাপ লাগছে খুব।আমার তো পৃথিবীতে কেউ নাই, সিনহা র মায়ের কিছু হলে সিনহার ও পৃথিবীতে কেউ থাকবে না। আচ্ছা আমি যে কথা দিলাম সিনহার মা কে সিনহা কে দেখে রাখবো ওর দায়িত্ব নিলাম,আমি কি মন থেকে ওর দায়িত্ব টা নিলাম নাকি মৃত্যুপথযাত্রী এর মন রাখার জন্য কোনটা।কিন্তু আমার এতো টান আসছে কেন সিনহার প্রতি,এতো মায়া লাগে কেন।শুধু আপনজন মনে হয়।আজকে ওর বিপদ জন্য শুধু মানবতার খাতিরে আমি ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি নাকি অন্যকিছু বসে বসে এইসব ভাবছি,হঠাৎ সিনহার দিকে চোখ গেলো।সিনহা আমার হাত দু হাতে জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।চোখের কোনে এখনো পানি চিক চিক করছে।ভাবছি ওকে সরাবো কি না সরাতে গিয়েও সরালাম না সারাদিন আজ অনেক প্রেসার গেছে ওর ওপর,থাক এভাবে ঘুমিয়ে।
.
সিনহা:ভোরের আলো ফুটেছে,তারপরো একটু অন্ধকার আছে।আমার ঘুম টা ভেংগে গেলো।ঘুম ভেংগে দেখি স্যারের হাত দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি,তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিলাম।স্যার আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আমরা কখন ঘুমিয়েছি এভাবে মনে নেই।রাতে তো আমি স্যারের পাশে বসে কান্না করছিলাম,স্যারেরমুখের দিকে তাকিয়ে আছি।চোখ মুখে চিন্তা আর ক্লান্তির ছাপ।রাতে ঘুমাতে পারেনি,আমার জন্য স্যারের এতো প্রবলেম হলো।স্যার যে মা কে কথা দিলো কিন্তু কেন,মানবতা দয়া দেখানোর জন্য।দয়া দেখালো আমায়।এইসব ভাবছি এর মধ্যে স্যার জেগে গেলো। তাড়াতাড়ি আমার থেকে দুরে সরে গেলো।
.
সিফাত:আমি সিনহার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম,কখন ঘুমালাম,ধুর সিনহা কি যে ভাবলো,তারাতারি করে সরে বসলাম ওর থেকে।
.
সিফাত:সিনহা আমি এখন একটু আসি ফ্রেশ হয়ে অফিস যাবো কিছু কাজ সেড়ে আবার আসবো,তুমি এখানে থাকো আর সবকিছু খেয়াল রাখো।আমি আসছি আবার।
.
সিনহা:ওকে স্যার বলছিলাম অফিসে তো আমারো কাজ ছিলো আপনার সাথে?
.
সিফাত:সেগুলো আমি করে নিবো তুমি এখানে থাকো আর যখনি কোন প্রয়োজন পরে আমায় কল করবে ওকে?
.
সিনহা:ওকে স্যার।
.
সিফাত:সিনহা কে হসপিটালে রেখে অফিস চলে আসলাম।
.
সিনহা:স্যার চলে গেলো,মানুষটাকে যতটা খারাপ ভাবি ততটা না।একটু ভালো আছে। এগুলো বসে বসে ভাবছি।একটু পর মায়ের অপারেশন শুরু হবে।স্যার এখনো আসছে না হয়তো ব্যস্ত আছে।আজ অফিসের কাজের চাপ বেশি।
.
সিফাত:আজ এতো বেশি কাজের চাপ ধুরর ভালো লাগছে না,হসপিটালে যাওয়ার কথা ছিলো যেতেই পারছি না,অপারেশন মনে হয় শুরু হয়েছে।সিনহা একা একা কি করছে কে জানে।যাই বেরিয়ে পড়ি বাকি কাজটুকু পরে করি।
.
সিনহা:অপারেশন শুরু হয়েছে জানি না কি হবে।মায়ের কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাবো কেউ থাকবে না আমার খুব কান্না পাচ্ছে।😭
.
সিফাত:অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি হসপিটালের উদ্দেশ্যে,কিন্তু জ্যামে আটকে গেছি,ধ্যাত ভালোই লাগে না এই শহরে জ্যাম দেখলে মনে হয়,গাড়ি গুলো সব ভেংগে ফেলি। আর কতক্ষণ আটকে থাকবো এইবার একটু জ্যাম কম রে,জানি না ওদিকের এখন কি অবস্থা।
.
সিনহা:O.T আলো অফ হলো।ডাক্তার বেরিয়ে আসার সাথেই ছুটে গেলাম ডাক্তারের কাছে হাত পা কাঁপছে জানি না কি হলো,ডাক্তার মুখ কালো করে আছে বললাম,
.
সিনহা:কি হয়েছে,, ডক্টর আমার মা ঠিক হয়ে গেছে তাই না?
.
ডক্টর :sorry,,,! 🙁
.
sinha:what,,?
.
doctor :sorry mam she is death. অপারেশনের সময় সে মারা গেছে।তার মাথায় যে টিউমার টা ছিলো সেটা অত্যন্ত ঝুকিপুর্ন,সরি আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি 🙁
.
সিনহা:কি শুনলাম আমি, আমি কিছু বুঝতে পারছি না মাথাটা কেমনজানি ঘুরছে,সব অন্ধকার লাগছে।আমি আর নিজের আয়ত্তে নেই পড়ে গেলাম।
.
সিফাত:অনেক ক্ষন জ্যামে আটকে থাকার পর হসপিটালে পৌছে ডক্টরের সিনহা কে বলা কথাগুলো শুনে ফেললাম,সিনহা কেমন জানি করে পড়ে যাচ্ছিলো আমি ছুটে গিয়ে ধরলাম।সিনহার এখন আমার হাতের ওপর সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে ওর মাথাটা শুধু ভেংগে নিচের দিকে যাচ্ছে।আমি শক্ত করে ওর মাথাটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম।কোলে তুলে ওকে বেডে শুইয়ে দিলাম।ডাক্তার দেখে বললো তেমন কিছু না শরীর দুর্বলতা আর এই ঘটনাটা সে নিতে পারেনি তাই সেন্সলেস
হয়ে গেছে।
.
.
সিনহার অনেকক্ষন পর সেন্স আসলো,সেন্স ফিরেই সে আমায় জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।ঘটনার আকস্মিকতায় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।আমিও ওর মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে রাখলাম।
.
সিনহা:আমার খুব কান্না পাচ্ছে,আজ থেকে আমার আর আপন বলতে কেউ থাকলো না পৃথিবীতে আমি একা হয়ে গেলাম।সেন্স ফিরতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে স্যার কে জড়িয়ে ধরলাম,কেনো আমি তাকে জরিয়ে ধরলাম হয়তো একটু ভরসার হাত খুজছি তাই উনাকে দেখে ভরসা পেয়েছি।আমি স্যারের বুকে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছি।
.
সিফাত:সিনহা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে,আমার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছে ও চোখের পানিতে,কি বলে সান্তনা দিবো আমি ওকে জানি না শুধু মনে মনে বললাম আমি আছি সিনহা,তোমার কিছু হবে না,আমি তোমায় আগলে রাখবো তোমার মা কে দেওয়া কথা আমি রাখবো এইসব ভেবে সিনহার মুখটা উচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,কেঁদো না সিনহা,সব আল্লাহর ইচ্ছা,তুমি দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
সিনহা আর ওর মায়ের ডেট বডি বাড়ি নিয়ে তার দাফন কার্য শেষ করলাম।সিনহা রুমের এক কোনায় থ হয়ে বসে আছে।ওর দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আশেপাশের প্রতিবেশীরা এসে ওকে সান্তনা দিয়ে চলে যাচ্ছে।আমার বাড়ি যেতে হবে কিন্তু সিনহা কে একা রেখে কিভাবে,,ভাবছি কি করা যায়।
.
to be continue….
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *