যদি তুমি জানতে !! Part- 11
ওয়াশরুমে যেয়ে হাত ধুতে নিলে কেউ দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দেয়।পেছন ঘুরে দেখতে যাব তার আগেই আমার মুখ চেপে দেয়ালে ঠেসে ধরে। হাত মুচড়িয়ে ধরে। আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সাঈদ ভাই! উনি আমার মুখের কাছে উনার মুখ এনে রেখেছেন। চেহারা রাগে টগবগ করছে। আমি ছাড়তে চাইলে সে আরও জোরে চেপে ধরে। মুখ এত জোরে চেপে রেখেছেন আমি শ্বাস নিতেও পারছিলাম না। সাঈদ ভাই চোখে চোখ রেখে বললেন-
-তোকে এইভাবে সেজে আসতে কে বলছে! যেটা না করি সেটা আরো বেশি করে না করলে তোর শান্তি লাগেনা, তাইতো! জাষ্ট ওয়েট!
-উমম….উম…
-চুপ! নড়াচড়া করলে এখনই এক অঘটন ঘটিয়ে ফেলব! সকালের কথা ভুলিনাই!
বলা শেষ করে সাঈদ ভাই আমার মুখ থেকে তার হাত সরিয়ে নিলেন। আমাকে বেসিনের সামনে দাড় করিয়ে দুহাতে পানি নিয়ে আমার মুখে ছুড়ে মারেন। সাথেসাথেই মেকআপের সব সাজুগুজু গলে গলে পড়তে লাগল। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতেই কেদেঁ দিলাম। খুব শখ করে প্রথমবার অন্যের কাছ থেকে সেজেছিলাম, কিন্তু আমার কপাল এতোই খারাপ যে ভাই সব সাজ শেষ করে আমার ফেস একাকার করে দিলেন। টপটপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে। সেদিকে তার বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই। সাঈদ ভাই টিস্যু নিয়ে মুখের সব মেকআপ আস্তে আস্তে মুছে তুলতে লাগলেন। একের পর এক টিস্যু মুছে মুছে শেষ করছেন আর ফ্লেশ করছেন। ভাই আরো টিস্যু হাতে নিয়ে চোখ মুছিয়ে বললেন-
-এইসব হাবিজাবি দিয়ে আর কখনো যদি সামনে আসতে দেখি ! তোর একদিন কি আমার একদিন! ফাউল এইগুলা কখনো দিবিনা!
সাঈদ ভাই খানিকটা সময় নিয়ে টিস্যু দিয়ে পুরো মেকআপ তুলে ফেললেন। কান্না বন্ধ হলে আজ তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকি। ডিপ বেগুনি রঙের পান্জাবী, কালো জিন্স। হাতা কনুই পযর্ন্ত উঠানো। হাতে বড় কালো ঘড়ি। পান্জাবীর বুকের দিকটায় তিনটা বোতামের মধ্যে দুইটা খোলা। ফর্সা অংশ দেখা যাচ্ছে। চুলগুলো অসম্ভব লোভনীয়। ইশশ! ভাই কে বলছিলো পান্জাবী পড়তে!! তুমি র্ফমাল গেটআপে থাকলেই সবকয়টা মেয়ের হুশ উড়িয়ে দাও!তার মধ্যে এই পান্জাবি !! এই স্নেহা বোধহয় তোমার জন্যই আর আমার সাথে আর বসেনি!! তোমাকে দেখে পাগল হয়ে ওখানেই রয়ে গেছে!!তোমার মধ্যে এমন কি আছে হ্যাঁ..বারবার তোমাকে ইচ্ছা অনিচ্ছায় দেখতে দেখতে পাগল হই!! সারাটা নাচের মধ্যে তোমাকে একপলক দেখার জন্য খুজে চলেছি!!! তুমিই সামনে আসলে না! এতো সুন্দর করে তো তোমার জন্যই সেজেছিলাম ভাই!!
সাঈদ ভাই তার পান্জাবির পকেট থেকে কিছু দিয়ে মোড়ানো একটা রুমাল বের করলেন। রুমালটা বেসিনের ওপর একপাশে রেখে খুললেন। দেখি একটা পেন কাজল, একটা লিপ লাইনার । আমাকে সোজা এবং স্থির হয়ে দাড়াতে বললেন। একহাত দিয়ে মাথা উচু করে ধরলেন, আরেকহাত দিয়ে ওয়াটার লাইনে কাজল দিয়ে দিতে লাগলেন। আস্তে আস্তে চোখদুটোতে একইভাবে কাজল কালো করে দিলেন। আয়নায় দেখতে চাইলে বাধা দিয়ে বললেন – “পরে দেখিস, এখনো কমপ্লিট হয়নি”। কাজল দেওয়া শেষে লিপ লাইনারটা হাতে নিলেন। মেরুন রঙের লিপ লাইনারটা দিয়ে গাঢ় করে লিপ আর্ট করে দিলেন। আর্ট করা অংশটুকু লিপ লাইনার দিয়েই ভরাট করতে লাগলেন। লিপের সাজ শেষ হলে এবার আরেক পকেট থেকে একটা মোড়ানো টিস্যু বের করলেন। টিস্যুটা খুলে আমার হাতে রাখতে দিলে দেখি পাউডার। সাঈদ ভাই আরেকটা টিস্যু নিয়ে একটু পাউডার ভরিয়ে আমার ফেসে স্মুথলি ব্লেন্ড করতে লাগলেন। উনি খুব সুন্দর করে ফেসে পাউডারের ছোয়া বসাতে লাগলেন। পাউডার দেয়া শেষে সবকিছু ঘুছিয়ে পকেটে রেখে আমাকে আয়নার সামনে দাড় করালে দেখি আমাকে সিম্পল সাজে আগের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে!! সাঈদ ভাই আমার পিছু দাড়িয়ে বললেন-
-নাও ইটস পার্ফেক্ট! যা পার্টিতে যা। আর শোন তোর ওই স্যারের থেকে দূরে থাকবি। দ্বিতীয়বার যেন বলার প্রয়োজন নাহয়।
-ভাই তুমি এগুলা কোথা থেকে নিয়ে আসলে?
-কোনগুলা?
-এইযে কাজল, লিপ লাইনার, পাউডার।
– টাকাপয়সা না থাকলেও সাজগোজের জিনিস যে মেয়ে মানুষের ব্যাগে থাকে, এইটা চিরন্তন সত্য। আম্মুর ব্যাগ থেকে নিসি।
-তুমি সাজানো কোথা থেকে শিখলে???
-ওইযে বলছিলাম, স্মিপল জিনিস শিখতে টাইম লাগেনা!!যা এখন! এই ওয়াশরুম থেকে বের হ। আরো দেরি করলে তোর পেট খারাপের গুজব বাতাসে ঢোল পিটাবে!
-থ্যাংক ইউ সাঈদ ভাই।
-ওই ওয়েট! আমি এইসব “থ্যাংক ইউ ট্যাংক ইউ” চাই না। লাল মরিচের মশলা মাখা আদর টা দে!
-ধুরর! ভাই! তুমি আবার শুরু করছো!
-আমি স্পেশাল জিনিস লাইক করি। আই নিড দ্যাট নাও! কুইক!
-না দিলে হয়না?
-নো!
-পার্টিতে সবাই খুজবে তো।।
-সো হোয়াট!
-প্লিজ!!
-আই সেইড নো!
-ভাই তুমি লম্বা।। আমি এখন পারবো না প্লিজ!!
-ওয়েট!
সাইদ ভাই “ওয়েট” বলার সাথেসাথে জট করে কোলে তুলে নিল। আর বলল-
-নাও, কুইক! এখন পারবি দে !
সাঈদ ভাই মাঝে মাঝে একদম বাচ্চাদের মতো বায়না করতে থাকে।কি এক মুশকিলের মধ্যে পড়লাম! কেন যে ওইদিন আদরের কথা বলতে গেলাম, আরে কপালরে !! কপাল আমার ! এখন উঠতে বসতে এই ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে!! না পারতে এখন আবারও লাল মরিচের মশলা মাখা আদর দিতে হবে!
আমি সাঈদ ভাইয়ের কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দেই। সাঈদ ভাই চোখ বন্ধ করে আছেন। আমাকে কোল থেকে নামাচ্ছেনও না। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ভাই আমার গালে ঠোট ছুয়িয়ে দিলেন, আর বললেন-
-জুনায়েদ সাঈদ শেয়ার করা পছন্দ করে না, আই হোপ অন্য ছেলে থেকে দূরে থাকবি। নাও গো।
সাঈদ ভাই ছেড়ে দিলে আমি সোজা হয়ে দাড়াই। দরজার সিটকিনি খুলে এক দৌড়ে ছাদে চলে যাই। পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পাচ্ছিনা!! লজ্জায় শেষ।। ছাদে যেয়ে দাড়াতেই স্যার সামনে এসে বললেন-
-কি ব্যাপার ফিহা, তুমি হাতধুতে এতো সময় কেন নিলে?
-একটু কাজ ছিলো স্যার।
-ওওও নাও আই সি!! তুমি মেকআপ ঠিক করতে গিয়েছো!! একটু আগে তোমায় সুন্দর লাগছিলো, এখন এভাবে সিম্পল ভাবে কেন এলে?? এনি রিজন?
-না স্যার তেমন কিছু না। আমার হেভি মেকআপ করার অভ্যেস নেইতো এজন্য এভাবে এসেছি।
-ওহ্ আচ্ছা। নো প্রবলেম। সাদামাটাতেও তুমি অনেক সুন্দর।।
-থ্যাংকস স্যার।
.
.
দিপ ভাইয়ার দেওয়া পার্টিটা সেইই ছিল।। ভাইয়া যে শৌখিন প্রিয় মানুষ তা পার্টির জমজমাট দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। সবাই নেচেছে। দিপ ভাইয়ার “কোকা কোলা তু” গানে ড্যান্স আর সাঈদ ভাইয়ার “কালা চাশমা” গানে ড্যান্স ছিলো হিট অফ দ্যা পার্টি!!! বাকি সবাই একেক গানে নাচলেও নাচের চেয়ে হাসছে বেশি।। রাত সাড়ে তিনটার দিকে এতো জাকজমক পার্টি শেষ করে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি। ঘুমাচ্ছি বললে ভুল হবে। বরং মশা মারছি! ডাবল বেডের মধ্যে বড় ভাবি, ছোট ভাবি আর দিপ ভাইয়ার ফুপির বড়ছেলের বউ গাদাগাদি করে শুয়ে আছেন। স্নেহা আর আমি ফ্লোরে একসাথে বিছানা করে শুয়ে আছি। স্নেহার শোয়া এতই খারাপ যে হাতপা যাই পারে ঘুমের ঘোরে সব আমার উপর তুলে দেয়। তার মধ্যে ছোট ভাবি আর ফুপির ছেলের বউ ইচ্ছামতো “ঘ্যারঘ্যার” করে নাক ডাকছেন! এমন অবস্থায় কে ঘুমুতে পারে! ফ্লোরে শোয়ার আমার মোটেও অভ্যাস নেই, সেই জায়গায় ফ্লোরে শুয়ে আমার ঘাড়, কোমর দুটোই ব্যাথা করছে। তবুও খিচ মেরে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ের কাছে আছে। ভ্রম ভেবে একপাশ থেকে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তাও মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ে আকিবুকি করছে। চোখ খুলে উঠে দেখি সাঈদ ভাই ! আমি হঠাৎ উনাকে দেখে চিৎকার দিতে নিলে ভাই খপ করে আমার মুখ চেপে ধরলেন, ইশারায় “চুপচুপ” করে নিঃশব্দে ঠোট নাড়িয়ে বললেন । হাত ছেড়ে আমার কাছে বসলেন। আর ফিসফিস করে বললেন-
-নাবিলা আমার ঘুম পাচ্ছেনা। রুমে একটা বিছানার মধ্যে পাচজন মিলে গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছে। কিছু কর!
-আমি কি করব? আমি নিজেই জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছি।।
-ওই গাদাগাদি অবস্থায় আমার কখনোই ঘুম ধরবেনা, তার মধ্যে কাল হলুদ!
-কিছু করার নেই ভাই। সব রুমের একই অবস্থা। আমি সবকয়টা রুম চেক করেছি।
-আমি এখানে ঘুমাবো।
-পাগল হইছো নাকি! দেখো না এখানে সব মেয়ে!
-তুই উঠ! ওই কোনায় আয়। এইখানে ঘুমাব না।
-আমি কেন ওখানে আসব, আজব! তুমি যাও তো!
-তোর কোলে ঘুমাব। এট নাও, এটাই একটা মাধ্যম ঘুমানোর। উঠ!
সাঈদ ভাই আমাকে বসা থেকে টেনে দাড় করিয়ে জানালার কাছে বসালো। আমি ঠিক করে বসতেই কোলে মাথা রেখে ভাই ঘুমিয়ে গেলেন। উনি যে মশার জন্য বেশিক্ষন ঘুমাতে পারবেন না এটা একটুপর বুঝবেন। আমি সাঈদ ভাইয়ের কানে কানে বললাম-
-ভাই রুমে অনেক মশা। তুমি ঘুমাতে পারবেনা।আর কাথা অলরেডি সব বুকিং।ঢেকেঢুকেও ঘুমাতে পারবেনা।
-তোর ওড়নাটা দে।
-না, প্লিজ ওড়না না ভাই। তোমার সামনে…ইমপসিবল!
সাঈদ ভাই কোল থেকে মাথা উঠিয়ে তার শার্ট খুলে আমার দিকে দিয়ে বলল-
-শার্ট টা পড়ে নে। সব বোতাম লাগাবি।আর আমাকে ওড়নাটা দে।
বলে রাখি, সাঈদ ভাই টিশার্টের উপর দিয়ে শার্ট পড়েছিলেন। শার্টের বোতামগুলো খোলা রেখে ভেতরে টিশার্ট পড়নে ছিল। উনি শার্ট খুলে আমাকে পড়তে দিয়ে আমার থেকে ওড়না নিয়ে সেটা দিয়ে মাথা থেকে পা পযর্ন্ত ঢেকে নেন এবং কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে যান।।
.
.
সকালে আমার ঘুম থেকে সবার আগে চোখ মেলে। দেখি এখনো সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মতিগতি দেখে মনে হয় বারোটার আগে একটাও উঠবেনা। সাঈদ ভাই এখনো গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমিয়ে থাকলে চলবেনা, সকাল হয়ে গেছে। যদি কেউ সাঈদ ভাইয়ের খোজ লাগায় তখনি খাব এক ঠেলা। ধাক্কা দিয়ে ভাইকে উঠানোর চেষ্টা করছি। তাড়াতাড়ি উঠে যেন নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে। নাহলে বিপদ! আরেক ধাক্কা দিবো তার আগেই ঘুমঘুম চোখে ভাই বললেন-
-নাবিলা আর পাচ মিনিট, প্লিজ!!
-ভাই তুমি এখন না উঠলে সবাই কিন্তু জেনে যাবে তুমি এখানে!
-জানলে জানুক। আমি চুরি করতে আসিনি।ঘুমাতে এসেছি। নাও চুপ! ঘুমাতে দে!
-ভাই তুমি না ভালো!! প্লিজ উঠো !
-ওই বেক্কল! এইগুলার নাক ডাকার স্পিড দেখেও বুঝস না, দুপুরের আগ পযর্ন্ত একটাও উঠবে না! এখন ঘুমাতে দে!
-ভাই তুমি না কিউট।
-দেখ অবস্থা ! এমন সিরিয়াস মোমেন্টে বেক্কলে আমার প্রশংসা শুরু করছে!
-তুমি এইভাবে কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বললে কার না কিউট লাগবে!!
-তো তাকিয়ে তাকিয়ে কথা বলব!
-না থাক। এমনেই কিউট লাগতেছে আবার তাকিয়ে থাকলে….
-তাকিয়ে থাকলে কি?
-কিছু না। তুমি উঠো।রুমে যাও, ফ্রেশ হও, তারপর হলুদের অনুষ্ঠানে রেডি হয়ে আসো।
-কি পড়বি অনুষ্ঠানে?
-দেখি মা ব্যাগে করে পড়ার জন্য কি এনেছে!!যেটা এনেছে ওটাই পড়ব।
-দেখাদেখির দরকার নেই। আমি শাড়ি এনে দিচ্ছি, ওটা পড়বি।
-শাড়ি পড়তে পারি না ভাই।।
-তোর সাথের টার নাম কি যেন হাসনা না স্নেহা জানি ওইটার থেকে পড়ে নিস। আর ওমন হাবিজাবি কিছু ফেসে মাখবি না।
-তুমি সাজিয়ে দিও!!!
-তোর চাকর নাকি! মাসে কতটাকা বেতন দেস!
-কি যে বলো না তুমি। উঠো এখন।
সাঈদ ভাই উনার রুমের দিকে চলে গেলেন। আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলে দেখি ভাই আমার পড়নে তার শার্টটা নিয়ে যেতে ভুলে গেছে। শার্ট খুলে রেখে ফ্রেশ হয়ে চুপিচুপি বড় খালামনির রুমের দিকে যাচ্ছি, শার্ট রাখব বলে। আস্তে করে ধাক্কা দিতেই দেখি দরজা খোলা। খালামনি রুমে নেই। নানা কাজে ব্যস্ত হয়তো। রুমে যেয়ে বিছানার উপর ভাইয়ের শার্ট রেখে এসে সকালের নাস্তার জন্য ডাইনিং টেবিলে সিট বুকিং করে বসে আছি। আম্মু, বড় খালামনি, মেজো খালামনি সবাই রান্নাঘরে খিচুড়ি রান্না করছেন।এমনেই বিয়েবাড়ি তার মধ্যে এত মানুষ, এখন যদি আমি আগে থেকে সিট বুকিং না করি খাবার যে সকালেই জুটবে না ভালো করে জানি। খিচুড়ির হাড়ি টেবিলে রাখতেই কোত্থেকে সব হুড়মুড় করে প্লেট বাড়িয়ে দিল। আমি ভিড় ঠেলে বেশি করে খিচুড়ি এনে, সোফায় বসতেই দেখি হাড়ি খালি। আর এখনো অনেকের খাবার জুটেনি। সাঈদ ভাই ঢুলতে ঢুলতে আমার পাশে এসে বসলেন। ওদিকে স্নেহা ঘুম থেকে উঠে টেবিলে বসে বিস্কুট চিবুচ্ছে। কারোর কিছু করার নেই। যারা আগেভাগে ঘুম থেকে উঠেছে তারাই খিচুড়ি পেয়েছে, আর যারা পরে উঠেছে তারা ডাইনিং টেবিলে রাখা পাউরুটি, বিস্কুট গিলছে। খিচুড়ি অনেক গরম বলে জিরিয়ে নিচ্ছি। তাছাড়া আমার ভাগে খিচুড়ি খুব বেশি, বলা যায় না কার নজরে পড়ে, আবার না জানি খাইখাই করতে চলে আসে। পাশ থেকে সাঈদ ভাই বলল-
-তুই এতগুলা খিচুড়ি খাদকের মতো নিসিস কেন?
-চুপ। চলো এখান থেকে। কেউ এখনো খেয়াল করেনি আমার প্লেটে বেশি আছে। নাহলে হামলে পড়বে।
সাঈদ ভাই আর আমি সবার চোখ ফাকি দিয়ে ছাদে উঠে গেলাম। ছাদে যেয়ে ছাউনি দেয়া বসার জায়গায় বসে নিলাম। সাঈদ ভাইকে খাইয়ে দিয়ে আমিও খেতে লাগলাম। সাঈদ ভাই মোবাইলে কি যেন করছেন। আমি ধ্যান না দিয়ে তাড়াতাড়ি খাইয়ে চলছি। এখনো হলুদের স্টেজ ডেকোরেশন করা অনেক বাকি। ভাই বলে উঠল-
-নাবিলা তোর ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি আর কিছু করেছিল? এখানে আসার পর?
-হ্যাঁ ভাই। কাল সকালে তোমার মামলা রফাদফা করার পর রুমে এসে দেখি ওই আননোন নাম্বার থেকে অনেক গুলো কল করেছে প্লাস মেসেজও দিয়েছে।
-এমনে সামনা সামনি কিছু করেনি?
-না ভাইয়া।কিন্তু জানো ওর মেসেজ গুলো পড়ে মনে হয় ও আমার আশেপাশেই আছে।
-এখানেও?
-হ্যাঁ।
-আমার তো তোর স্যারের উপরই ডাউট। কেমন জানি সোজা মনে হচ্ছেনা। দিপের নাকি এলাকার বন্ধু। কোনো কলিগ বা ক্লাসমেট না।
-ওহ্।
.
.
বাড়ির আঙিনায় অনুষ্ঠান করা হয়েছে।হলুদের অনুষ্ঠানে দিপ, আমি আর কয়েকজনজন দিপের কাজিন মিলে স্টেজটার ফিনিশিং কমপ্লিট করলাম।মেয়েদের দিয়ে স্টেজের ৮০% কাজ করিয়ে আমরা ছেলেরা মিলে ২০% কাজ করে শেষ করলাম। ছেলেরা সবাই রেডি। মেয়েরা আর বড়রা আসলেই হলুদ দেয়া শুরু হবে। দেখতেই দেখতে সব বড়রা চলে এসেছে। মেয়েদের আসা বলতে গেলে শেষ, শুধু নাবিলা আর ওর সাথি স্নেহার আসা বাকি। কিছুক্ষণ পর দেখি স্নেহাও চলে এসেছে কিন্তু নাবিলার আসার কোনো নামসূত্র নেই। স্নেহাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম-
-তুমি স্নেহা না? দিপের কাজিন?
-জ্বি ভাইয়া!! আর আপনি সাঈদ!!!ঠিক না!! দিপ ভাইয়ার কাছ থেকে অনেক শুনেছি আপনার ব্যাপারে!!
-বাহ্ ভালোই তো চিনো দেখছি। আচ্ছা নাবিলাকে দেখছো?
-নাবিলা…কে চিনলাম না তো।
-সরি সরি… আই মিন ফিহা। ওকে দেখছো কোথাও?
-ও না আমার আগেই বেরিয়ে গেল। অনুষ্ঠানে আসেনি এখনো?
-না তো। ও তো নেই। কখন বেরিয়েছে?
-এইতো আধঘন্টা আগে।
-আচ্ছা তুমি যাও। আমি আসছি।
.
.
নাবিলা এখনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়নি। যেই জায়গায় ও কিনা আরো আগে রেডি হয়ে বেরিয়েছে। তাহলে ও কোথাও? ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি… না পসিবল না। বাড়ির মানুষ ছাড়া আর একটা বাড়তি মানুষও এখানে আসেনি। তাহলে কি….?
পুরো বাড়ির সবকটা রুমে নাবিলাকে তন্নতন্ন করে খুজেছি। কোথাও পাইনি। এভাবে একটা জ্যান্ত মানুষ সবার চোখের সামনে থেকে আড়াল হয়ে গেল আর কেউ ব্যাপারটা চুল পরিমানও টের পেলোনা!! জিনিসটা হজম হচ্ছেনা! আমার ডাউট তো ওই একজনের উপরই। নাবিলার মহাশয় “স্যার পন্ডিত”!! এই ব্যাটাকে আগে খুজতে হবে।।
নাবিলার স্যার দিপের হলুদ ফাংশনে নাকি এসেছে। খুজে চলছি এই মহড়া আসলে কোথায়। হঠাৎ দেখলাম সে দিপকে হলুদ লাগানো শেষ করে টিস্যু দিয়ে হাত মুচ্ছেন। আমি তাকে কথার ছলে সাথে করে রুমে নিয়ে যাচ্ছি। বাড়ি পুরো খালি। সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। খালি বাড়িতে, বদ্ধ রুমে নিয়ে আচ্ছা করে এক ধোলাই দিয়ে সত্যটা বের করব!
.
.
কোমর থেকে বেল্ট খুলে দুই ঘন্টা যাবৎ পেটাচ্ছি কিন্তু ফলাফল শূন্য। সে নাকি জানেই না নাবিলা কোথায়। বেল্টের আঘাতে স্যার মহাশয় বেহুশ হয়ে আছে! কিন্তু নাবিলার কোনো লাতাপাতা নেই। সেদিন ওকে আমার সামনে রাখার পরও আঘাত থেকে বাচাতে পারিনি, আর আজ ও কোথায় আছে কেমন আছে কি হালে আছে, কিচ্ছু জানিনা!!আমার নাবিলা যে বড় এক বিপদে পড়ে আছে! আর আমি একদম হাতেহাত রেখে বসে আছি। কি করবো?
-চলবে