যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 10

কত্ত বড় বেহায়া মেয়ে! বলা নেই, কয়া নেই, দৌড়ে এসে এক ছেলেকে জাপটে ধরল! সাঈদ ভাই আমার দিকে নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চার মতো তাকিয়ে আছে!! যেন মাত্র ভুমিষ্ঠ হওয়া ছোট বাচ্চাটা! ওলে!কিচ্ছু বুঝেনা!

মনটা চাচ্ছে ওই মেয়েকে ধরে দেয়ালে দেই কয়েকটা ঢুয়া!! ফালতু! থার্ড ক্লাস! বেহায়া ! ক্লাস লেস ! বেশশরম মেয়ে! চুলের মুঠিটা ধরে একটা আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে!
দেখতো কত্ত বড় বেহায়া! এখনো ছাড়ছেনা! ধ্যাত! আমিই চলে যাই! তারা দুজনে দরজায় দাড়িয়েই রোমান্স করুক!

.
.
ওহ্ সিট!! নাবিলা তো রাগে কটমট করতে করতে চলে গেল!! না জানি এখন কত নম্বর বিপদ সংকেত সামলাতে হবে।। আমার চেয়ে বেশি এই নাবিলার রাগ ভাঙাতে আমার হাড়গোড় এক হয়!!

আমাকে জাপটে ধরা মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে দেখলাম, দিপের বান্ধবী ইথিলা। ও সিটট! এই মেয়ে তো চুইংগামের মতো আমার সাথে লেগে থাকে! এইখানে আসলেই পারেনা ,বাথরুমের দরজা ধরে বাইরে দাড়িয়ে থাকে! ছেসড়া মেয়ে একটা! ওহ্ গড !! কই ফাসলাম! হঠাৎ ইথিলা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল-

-সাঈদ তুমি জানো, আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি??? বারবার দরজায় তাকিয়ে অপেক্ষা করছি কখন আসবে, কখন তোমাকে দুচোখ ভরে দেখব, কখন তোমাকে জড়িয়ে ধরব!!! তোমার জন্য কত অস্থিরতা কাজ করছিল জানো!!
-ইথিলা একটু দূরে সরে দাড়া! আমি দিপেরও বড়। “ভাই” বলে ডাকবি! আরেকবার যদি সাঈদ বলতে শুনি ! কান ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দিব।।
-প্লিজ.. তুমি সবসময় আমার সাথে এমন করো।। তোমাকে একটু ছুয়ে দেখব বলে সেই সকাল থেকে না খেয়ে দাড়িয়ে আছি।
-তোর ছোয়ার সাথে না খাওয়ার কী সম্পর্ক!
-এটাই সাইন্স!!! জানু!!

ঠাসসসসস… এক থাপ্পড় ইথিলার গালে বসিয়ে দিলাম। ফাউল মেয়ে কোথাকার! সেন্স নেই, কিছু নেই। লজ্জা শরম তো নেই! এইসব বাজে মেয়েগুলার জন্য আমার মেয়েজাতিকে সহ্য হয়না!

-লিসেন! ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু কল মি “জানু”! শেষবারের মতো বলে দিলাম ! দিপের ক্লোজ ফ্রেন্ডবলে ছেড়ে দিলাম। নেক্সট টাইম ছাড়বোনা!তুলে এক্কেবাড়ে আছড়ে ফেলব। বি এলার্ট।। বায়।

ইথিলা গালে হাত দিয়ে ওখানেই দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি আমার দিকে। সো হোয়াট! আমার কি! আমি এসব উল্টা পাল্টা মেয়েদের পছন্দ করিনা। যাদের গলার ওড়নাটাও বুকে রাখেনা।
ভেতরে ঢুকতেই মেজো খালামনি জড়িয়ে ধরলো। কেমন আছি, আসতে সমস্যা হয়নি তো, ঠিকমতো এসেছি কিনা, জিজ্ঞেস করলেন। দীপ এসে পিঠে কিল মেরে হাসিমুখে কোলাকুলি করল।

হঠাৎ, আমার আম্মুর দিকে চোখ পড়তেই দেখি, সে চোখ রাঙিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বোধহয় আমি কোন্ বড় অপরাধ করে এসেছি। আমি ধীরেসুস্থে আম্মুর কাছে গেলাম।যেতেই আম্মু ঠাসস করে সবার সামনে এক থাপ্পড় গালে বসিয়ে দিলেন। থাপ্পড়ের শব্দে সবাই হাসিখুশি অবস্থা বন্ধ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কিছু বলতে যাব, তার আগেই আরেকদফা থাপ্পড় গালে এসে পড়ল। টোটাল দুইটা পড়ল।চোখ বন্ধ করে আছি। জানিনা আম্মু কেন সবার সামনে এভাবে মারলো। গালের চামড়া আগুনের মতো জ্বলছে। আম্মু কিছুক্ষন পরে বলে উঠলেন-

-তুই যে আমার ছেলে বলতেও লজ্জা হয়!
-কি করলাম আবার?
-কাজ যখন করছিস! ভুলটা জানার কথা!
-সিরিয়াসলি আম্মু আমি জানি না, কেন তুমি সবার সামনে থাপ্পড় দিলে???
-ফিহাকে কি বলেছিস!
-কই কিছুই তো বলিনি।
-আমার সামনে কান্না করতে করতে ছাদে গেছে!
-আরে কি এক ঝামেলা! বললাম তো কিছুই বলিনি। ও কেন কান্না করলো সেটা আমি কীভাবে বলব!
-বুঝছি! তুই এভাবে সত্যটা বলবিনা। দাড়া ওকেই ডাকছি! ওই দিপ যা তো ছাদে, ফিহাকে একটু ডেকে নিয়ে আয়।

.

.

ছাদে দাড়িয়ে আছি। ভালো লাগছে না। মা বাবার আসতে আরো দু তিন ঘন্টা সময় লাগবে। আপু এসেছে কিন্তু কোনো খোজ-খবর নেয়নি।তা না হলে মনটা কিছুটা হলেও ঠিক থাকতো। এমনেই এখানে আসি না।খুব ছোট থাকতে এসেছি। কেমন যে লাগছে। তার উপর সাঈদ ভাই হয়তো ওই মেয়ের সাথে এখনো লুতুপুতু করছে। করবেই না কেন, মেয়েটা অনেক সুন্দর। দুধের মতো ফর্সা গায়ের রঙ। চরম স্টাইলিশ। হাতাকাটা শর্ট টপস পড়া। চুলাগুলাও রঙিন। একদম নায়িকাদের মতো সিল্কি স্মুথ চুল। ওরকম একটা মেয়ে পেলে কার না মন ফুরফুরে হবে!!

বলে রাখি আমার মেজো খালামনির সাথে দেখাটা নানুবাসায় হয়। উনার বাসা কক্সবাজার। বেশ দূর বিধায় আমাদের যাওয়া আসা বলতে গেলে নেই বললেই চলে। শুধু কুরবানির ঈদে দেখাসাক্ষাত হয়। দিপ ভাইয়ার কোনো বোন নেই। ছোট সদস্য বলে দিপ ভাইয়াও অনেক আদর করেন।

হঠাৎ দিপ ভাইয়া হুরহুর করে ছাদে এসে আমাকে বললেন-
-ফিহা জলদি নিচে চল, বড় খালামনি তোকে ডেকেছে।
-মাত্রই দেখা করে আসলাম।
-আরে চল নিচে, খালামনি নালিশ বসিয়েছে।।

দিপ ভাইয়ার পিছু পিছু নিচে নেমে দেখি, সবাই গোল আসর করে বৈঠক বাধিয়েছে। চোখ গেল সাঈদ ভাইয়ার গালের দিকে, পাচঁ আঙ্গুলের ঘোর ছাপ দুগালে পড়ে আছে। টসটসে ফর্সা গাল দুটোর ওপর ওভাবে থাপ্পরের ছাপ বেমানান। কিন্তু মারলো কে? সাঈদ ভাই মাথা নুয়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগলে রেখেছে মেজো খালামনি। সামনে দাড়িয়ে বড় খালামনি। কি এক অবস্থা !! যেন যুদ্ধের ময়দানে কল্লা নামানোর জন্য সবাই উপস্থিত। আমি বড় খালামনির পাশে যেতেই সাঈদ ভাইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন-

-ফিহা, এই অবাধ্য সন্তান কি তোকে কিছু করেছে!
-না তো খালামনি। সাঈদ ভাই তো কিছুই করেনি।
-এই বদমাইশের সামনে ভয় পাবি না ফিহা। সত্যি টা বল!
-আরে না, কী বলছো এসব? ভাই কেন আমাকে কিছু করতে যাবে?
-ও যদি কিছুই না করে তাহলে ওভাবে চোখ মুছতে মুছতে ছাদে কেন দৌড়ে গেলি?
-ইয়া আল্লাহহ!! খালামনি তুমি কি থেকে কি ভাবছো?? আরে গাদা ফুলের পাপড়ি উড়ে এসে চোখে পড়েছিল। সেটার কারনে ওভাবে মুছতে মুছতে যাচ্ছিলাম। তুমি তিল থেকে তাল বানিয়ে সাঈদ ভাইকে এভাবে মারলে!

খালামনি আমার কথা শুনে চিপসের প্যাকেটের মতো চুপসে গেল। উনি যে শুধু শুধুই নিজের ছেলেকে চড় মারলেন এতক্ষনে সেটা হারে হারে টের পাচ্ছেন। সাঈদ ভাই তখনো মাথা নুয়িয়েই আছে। হঠাৎ মেজো খালামনি আহ্লাদী সুরে বললেন-

-আপা তুমি শুধু শুধু সাঈদকে মারলা। এভাবে অত বড় ছেলেকে সবার সামনে মারে নাকি! ছেলে বড় হইছে, বিয়াশাদি দিলে বাবা হবে, সেই ছেলেকে সবার সামনে অপমান করলা!!

বড় খালামনি আর উত্তর করলেন না। চুপচাপ হাটা দিলেন কাজের মধ্যে। মেজো খালামনি সবাইকে যার আর কাজে ব্যস্ত হতে বলে নিজেও কাজে জড়িয়ে পড়লেন। সাঈদ ভাই সবার যাওয়া দেখে নিজেও টিপটিপ করে সিড়ি বেয়ে রুমে চলে গেলেন। আমি রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে কয়েকটা বরফ ওড়নায় পেচিয়ে দিলাম এক দৌড় সাঈদ ভাইয়ের রুমের দিকে।

কপালে হাত দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে আছেন সাঈদ ভাই। আমি রুমে ঢুকলে হঠাৎ চোখ বন্ধ রেখেই বললেন-

-দরজা লাগা।
-দরজা কেন লাগাব? আমি তো বরফ দিতে আসছি।
-একটু আগে যা হলো তা কিন্তু ভুলিনাই।
-আচ্ছা লাগাচ্ছি।

দরজা ঠেলে দিয়ে মাথার কাছে বসলাম। ওড়নায় নেওয়া বরফ টুকরা গালে লাগিয়ে দিতেই ভাই হাত ধরে ফেললেন। আর বললেন-
-নাবিলা সামনে থেকে সর। চলে যা এখান থেকে।
-কি হলো? আমি আবার কি করলাম?
-আজ তোর জন্য আম্মু সবার সামনে আমাকে ইনসাল্ট করলো! জাষ্ট অনলি ফর ইউ! কী ভুল করেছি আমি, আমাকে এভাবে থাপ্পড় খাওয়ালি! নাকি সেদিন তোকে দেওয়া থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিলি! কোনটা!
-ভাই তুমি নিজেই জানো আমি কখনো তোমার সাথে এমন কিছু করব না। বিশ্বাস কর। আমি নিজেও জানি না কখন খালামনি ভুল দেখলো।
-চলে যা সামনে থেকে। আর কক্ষনো সামনে আসবি না!

বলার সাথে সাথেই সাঈদ ভাই ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলেন। আচমকা ধাক্কা দেওয়াতে উল্টে নিচে পড়লাম। হাতে ভর রেখে পড়ে যাওয়াতে আবার কাল রাতে ছুড়ি বসানো হাতে ব্যাথা করতে শুরু করল। আস্তে করে উঠে রুম থেকে চলে এলাম। পিছন ফিরে একবার তাকালাম সাঈদ ভাইয়ের দিকে, উনি আরামসে শুয়ে আছেন।পরম শান্তিতে।হয়তো আমার কষ্ট টা উনি দেখতে ইচ্ছুক না।

বিয়েবাড়ি বলে এখানেও যে রুম নিয়ে গাদাগাদি হবে নিশ্চিত ব্যাপার। আমি রেষ্ট নিতে গেলে দেখি রুমের মধ্যে আগে থেকেই তিনজন ঠাই নিয়েছে। সবাই দিপ ভাইয়ার চাচাতো বোন আর ভাবি। আমি রুমে যেয়ে দাড়াতেই সবাই আমার দিকে আছেন জিজ্ঞাসাসুরে। তাদের মধ্য থেকে একজন বললেন-
-তুমি কি দিপ ভাইয়ের কিছু হও?
-হ্যাঁ। দিপ ভাইয়া আমার খালাতো ভাই হন।
-ও আচ্ছা আচ্ছা। এবার চিনেছি তুমি কে। আরে ভেতরে আসো, ভেতরে আসো।।
-আপনি আমাকে চিনেন?
– অবশ্যই চিনব। কেন চিনব না!! তুমি দিপ ভাইয়ার ছোট খালামনির মেয়ে। ঠিকনা?
-হ্যাঁ, আপনাকে তো ঠিকমতো চিনলাম না যে!!!
-আমি দিপ ভাইয়ার ফুপাতো বোন, স্নেহা। তোমার নাম কি??
-ফিহা। আপনি কিসে পড়েন?
-ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ, তুমি?
-আরে আমিও তো!!! বাহ্ আমরা দেখি সেম সেম ক্লাস!!
-তাহলে তো আপনি তুমি ডাকলে চলবে না!! তুই করে ডাকা উচিত !! কি বলো?
-একদম। তবে তুই করেই ডাকি।।।

স্নেহা আমাকে রুমে থাকা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দিপ ভাইয়ার একটা চাচা। ফুপিও একজন। চাচার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। দুই ছেলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্নেহা আমার বয়সী। আমরা এই চারজনই আপাতত একরুমে গাদাগাদি করে থাকব। কিন্তু বিকেলের দিকে তার ফুপির ফ্যামিলির চোদ্দ গোষ্ঠী এসে ভিড়বে। এরপর কি অবস্থা হবে জানা নেই!!

.

.

বাড়ি এখন বিয়ের আমেজে জমজমাট। সবাই কাজ নিয়ে হৈচৈয়ে মেতে উঠেছে। সবাই কোনো না কোনো কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত। আমি, স্নেহা আর ছোট ভাবি রুমে বসে আছি। বড় ভাবি এসে জানালেন আমার বাবা-মা আর ফুপির ফ্যামিলি এসে পড়েছে।ছোট ভাবি নাকি ক্লান্ত, তাই রেষ্ট নিবেন। আমি আর স্নেহা উঠে দেখা করতে গেলাম।

ড্রয়িং স্পেসে ফুপির ফ্যামিলি এসেছে। মনে হচ্ছে কেবল যুদ্ধে নামার জন্য সেন্য উপস্থিত। স্নেহা আর আমি হা করে আছি এতো মানুষ !! স্নেহা পাশে দাড়িয়ে এক দুই তিন করে একেএকে গুনতে লাগল। গুনা শেষে বুঝলাম, পুরো পচিশ জন।ফুপি,ফুপা। সাত ছেলে, তাদের বউ। মেয়ে দুইটা, তাদের বর।ছেলেদের মধ্যে চারজনের পাচজন ছেলেমেয়ে। মেয়ে গুলোর এখনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। হঠাৎ মেজো খালামনি সবার মধ্যে আমাকে এনে দাড় করিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পর্ব শেষে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করলাম। দেখা শেষে স্নেহার সাথে আবার রুমে এসে বসলাম। স্নেহা খুব মজার মানুষ। ওর সাথে সময়টা বেশ কাটাচ্ছি। প্রচুর হাসাতে পারে ও। বড় ভাবি কাজের জন্য ডাকলে স্নেহা রুম থেকে চলে যায়। ছোট ভাবি শুয়ে থেকেই আমাকে বললেন-

-ফিহা তোমার ব্যাগ থেকে না ফোন বাজছিলো। অনেকগুলো কল করেছে। তোমাকে ডেকেছি কিন্তু হৈ হুল্লোড়ে শুনোনি। দেখো তো কে দিছে।
-আচ্ছা ভাবি দেখছি।

ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি সেই থ্রেট দেয়া আননোন নাম্বারটা! প্রায় পনেরটা মিসড কল। দেখার সাথেসাথে কল ব্যাক করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। কয়েকটা মেসেজও এসেছে। ঠিক এরকম- “তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। প্রেমে তোমায় ছুতে ইচ্ছে করছে।”
” তোমার খোলা চুলগুলো মারাত্মক, খোলা অবস্থায় হেব্বি লাগে ” “সরি সুইটহার্ট ওইদিন তোমাকে ওভাবে ছুড়ি বসাতে চাইনি, কিন্তু কি করি বলো তুমি ওই জুনায়েদ সাঈদের কাছে চলে যাচ্ছিলে। সরি জান”

মেসেজগুলো এবার ঠান্ডামাথায় পড়লাম। কোনো ভয় পেলাম না। কারন, রিয়েকশন দেখালেই স্নেহা সহ ভাবিও থতমত খাবেন। তা আরেক ঝামেলা বাধবে। খালামনিকে কালরাতের ব্যাপারে কিচ্ছু বলা যাবেনা। বাবা-মা কে জানালে এই আমেজটা নষ্ট করা হবে। বর্তমানে আমার চুপ থাকাটাই মঙ্গল।।

.
.

স্নেহা রুমে ঢুকে অন্যমনষ্ক হয়ে মিটিমিটি হাসছে।ওকে জিজ্ঞেস করলাম-
-কিরে তুই নিজেনিজে হাসছিস কেন?
-আরে কিছু না।
-“কিছু না” বলতেও তো আবার হাসলি। তাড়াতাড়ি বল হাসছিস কেন?
-শুনবিইইইই
-ইয়েসসসস
-দোতলার রুমে একটা ছেলে শুয়ে আছে। দেখতে খুব সুন্দর। সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম!! এত্ত কুল এন্ড অস্থির দেখতে ইশশশ আমি তো ফিদা ফিহা!!!
-দোতলার কোন রুমে দেখলি?
-কোনার রুমটায় শুয়ে আছে। চিনিস নাকি?
-না চিনি না। ওখানে কেন গেছিলি?
-বড় ভাবি কাজে পাঠিয়েছিল।

আমি ভালো করেই বুঝেছি স্নেহা যে সাঈদ ভাইয়ের কথা বলছে। ও যে সাঈদ ভাইয়ের উপর ক্রাশ বুঝা শেষ! দেখা যাক পানি কতটুকু গড়ায়।অবশ্য দিপ ভাইয়ার বিয়ে পরশু। কাল হলুদ।

দিপ ভাইয়া রুমে এসে আমাদের খবর জানিয়ে গেলেন যে সন্ধ্যা থেকে কাল সকাল পযর্ন্ত ছাদে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।। দিপ ভাইয়ার সব ভাইবোন যেহেতু একসাথে, এজন্য সবাই একত্রে আজ ছাদে ছোটোখাটো একটা পার্টি করা হবে।

পার্টির কথা শুনে স্নেহা তো পারে না আমাকে কয়েকশ চুমু একবসাতেই দিতে থাকে। আমি, স্নেহা চরম এক্সাটেট!! এবার জমবে মজা!!!দিপ ভাই সবার ড্রেসের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। দিপ ভাইয়ের রুম থেকে বড় ভাবি আমাদের ড্রেসটাও এনে দিয়েছেন। বড় ভাবি আর ছোট ভাবিকে দেয়া হয়েছে লাল কালার গোল্ডেন পারের শাড়ি । স্নেহা আর আমাকে দেয়া হয়েছে গাউন। ড্রেস একই, জাষ্ট কালার ভিন্ন।
ওরটা সবুজ কালার আর আমারটা মেরুন কালার।

সবাই রুমের মধ্যে কি সুন্দর করে সাজছে।আর আমি বসে বসে তাদের সাজুগুজু দেখছি। কারন আমি সাজতে পারি না।এইকারনে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে বসে আছি। ড্রেসটাও পড়িনি। বড় ভাবি ছোট ভাবি বারবার তাগাদা দিচ্ছেন জলদি রেডি হওয়ার জন্য। আর অন্যদিকে স্নেহা তো জিদ করে কথা বলা বন্ধ করে আছে। দেখতে দেখতে ভাবিরা রেডি। আর আমাকে রেডি হতে বলে উপরে চলে গেলেন। স্নেহা রুম থেকে বেরুবেনা যতক্ষন পযর্ন্ত আমি রেডি না হবো। স্নেহা আবার গরুরগাড়ির মতো ঠেলতে ঠেলতে বলল-
-যাস না, যা না রেডি হতে!! যা না ! যা না ! যা না!! ওই যা না ! ফিহু, তুই না ভালো যা !!
-আমি সাজতে পারি না!
-আমি বুঝি উল্টিয়ে পারি!
-আমি যাব না। তুই যা।
-ওয়েট!!! পেয়ে গেছি!!
-কি পেলি??
-মেকআপ আর্টিস্ট!!!
-কই?
-দিপ ভাইয়ার বেষ্টফ্রেন্ড, ইথিলা আপু!!
-কই এই মানুষ?
-সকালে তো দরজায় দাড়িয়ে কার জন্য জানি অপেক্ষা করছিল। এরপর থেকে দেখিনাই।নো প্রবলেম!! ইথিলা আপু, পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে। উনাকে ডেকে নিয়ে আসি। ততক্ষণে তুই ড্রেসটা পড়ে নে।যা।।।।।

স্নেহা ইথিলা আপুকে আনতে গেলে আমি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে যাই। প্যাকেটটা খুলে ড্রেসটা দেখতেই দেখি একটা ছোট চিরকুট নিচে পড়ে গেল। ড্রেসটা ঝুলিয়ে রেখে চিরকুটটা নিয়ে খুলে দেখি কিছু লিখা- “গাউনটা পড়িস। চুলগুলা খোপা করবিনা। হালকা সেজে আসবি”। সাঈদ ভাই ইঙ্গিত দিয়েছেন কীভাবে পার্টিতে আসব। চিরকুটটা ওয়াশরুমের ছোট জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম। চটপট ড্রেসটা পড়ে বের হলাম। আয়নার সামনে চুল আচড়াচ্ছি তখনই স্নেহা ওই “বেহায়া ” বলা মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকল। আমি চিড়ুনি হাতে পিছন ফিরে তাকালে স্নেহা বলে-
-ফিহা দেখ এই হচ্ছে দ্যা মোস্ট বিউটিফুল লেডি ইথিলা!! সে অনেক সুন্দর মেকআপ করতে পারে।
-স্নেহা, তুমিও না!!! আমি এতোও সুন্দর না। হাহা!!

আমি ইথিলা আপুকে দেখে মনেমনে হাজারটা গালি দিলেও এখন হাসিখুশি খোশগল্প করছি। কেননা সাজতে হবে।আমরা সম্মানের খাতিরে আপুকে আসতে বললে উনি না করে দেন। উনার না করার কারনটা কি সেটা জানি না। ইথিলা আপু খুব স্পিডে মেকআপ শেষ করলে স্নেহা আর আমি ছাদে পার্টির জন্য চলে যাই। অবশ্য সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ আমাদের দিকে তাকানোর পযর্ন্ত সময় পাচ্ছেনা।

.

.

ছাদে ঢুকতেই দেখি গান বাজানোর জন্য ডিজে আনা হয়েছে। ছাদের একপাশটা জুরে স্টেজ করা। বলা উচিৎ, ছাদটা অনেক বড়। স্টেজ করার পরও আরো একশ জন অনায়াসে উপস্থিত হতে পারবে। ছেলেদের সাইড আলাদা, মেয়েদের সাইডও আলাদা। সব সাইডে সবাই উপস্থিত। শুধু মেয়েদের সাইডে নাকি আমি আর স্নেহা বাকি ছিলাম। দিপ ভাইয়া এসে মাইক হাতে গান স্টার্ট করতে বললেই ধুমসে শুরু হয় গান বাজা। গান শুরু হলে সবাই দুইসাইড উপেক্ষা করে একসাথে নাচা শুরু করে। ফিমা আপুও উপস্থিত এখানে, বেশ সুন্দর লাগছে।।স্নেহা তো আগেই নাচতে চলে গেছে। অনেক ডেকেছিল বাট যাইনি।

আমি যে এখানে একজনকে খুজে চলছি!!! তাকে যে এখনো দেখতে পাচ্ছিনা!! সেই দুপুর থেকে তাকে একপলকও দেখার সুযোগ পাইনি। চোখ যে তাকেই খুজছে। আজ সে কেমন ফর্মে আসতে পারে সেটাই চিন্তা করছি!! যে ফর্মেই আসুক না কেন তাকে দেখে সবাই একবার হলেও বলবে “আমি শেষ” “আমি ফিদা!!

সবার ধুমিয়ে করা মাতামাতি দেখছি। সবাই নাচছে। স্টেজও ফুল। সাঈদ ভাইকেই কোথাও দেখলাম না। সে নাকি আজকে জমিয়ে এসেছে আবার সবার মাঝে নাকি নাচছেও। খালি আমিই একা এক ব্যক্তি যেকিনা কোল্ড ড্রিংক হাতে এককোনায় দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ মনে হলো কেউ পিছন থেকে ডাকছে। আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি স্যার!!কি আজব! স্যার এখানে কেন??
স্যার আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলেন-

-কী অবস্থা ফিহা? এখানে কেন তুমি??
-স্যার এটা তো আমার কাজিনের বাসা। কিন্তু আপনি এখানে।
-আমার ফ্রেন্ডের বাসা এটা। নাম কি তোমার কাজিনের?
-দিপ।
-আমার ফ্রেন্ডও তো দিপ!! তার মানে দিপ তোমার কাজিন। ওয়াও!!
-জ্বি স্যার। দিপ ভাইয়া আমার খালাতো ভাই।
-নাও আই সি!! বায় দ্যা ওয়ে লুকিং প্রিটি ফিহা। এই উছিলায় আবার দেখা হলো।
-জ্বি স্যার। এন্ড থ্যাংকস ফর দ্যা কমপ্লিমেন্ট।
-চলো, সবাইতো নাচছে। এখানে একা একা থেকো না।
-না স্যার, আপনি যান পরে আসছি।
-আমার স্টুডেন্টকে একা রেখে কিভাবে যাই? তুমি মাইন্ড না করলে এখানে থাকতে পারি?
-হ্যাঁ স্যার থাকুন, আমার সমস্যা নেই।

.

.

ঘন্টাখানিক পর দিপ ভাইয়া স্টেজে উঠে ডিক্লেয়ার করলেন রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই যার যার খাবার এনে খেতে লাগলেন ছাদে বসার জায়গায় যেয়ে। এদিকে স্নেহার কোনো হদিস নেই, কই যে বসে খাচ্ছে! আল্লাহই জানে। পুরো নাচার মধ্যে একবারো সাঈদ ভাইকে খুজে পাইনি। উনি যে কোথায় !! উনার জন্য এই গরমের মধ্যেও চুল খোলা রেখে সেজেছি, তার মধ্যে উনিই নেই!!

স্যার নিজের খাবার এনে আমার জন্যও খাবারটা এনে দিলেন। আমি আর স্যার টুলে বসে খেতে লাগলাম। চেয়ার,টেবিল,মাদুর সব বুকিং। বাকি ছিলো শুধু টুল। না পারতে টুলে বসেছি। স্যারের আগে আমি খাওয়া শেষে করলে হাত ধুতে নিচে যাই।

ওয়াশরুমে যেয়ে হাত ধুতে নিলে কেউ দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দেয়। পেছন ঘুরে দেখতে যাব তার আগেই আমার মুখ চেপে দেয়ালে ঠেসে ধরে,

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *