যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 09

-তাহলে খারাপ কিছু হয়েছে?
-……………………………….
-তোর ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি এসেছিল???

ভাইয়ার মুখে প্রশ্ন শুনে আর জবাব দিতে পারলাম না। হুহু করে কেদেঁ দিলাম। চোখের সামনে বারবার সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো ভাসছে। এত সুন্দর একটা বিড়াল কে জবাই করার মীমাংস দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে আসছে!! চোখের এতো কাছ থেকে দেখা মৃত্যু টা যেন রুহ আমার এখনো কাপাচ্ছে।।।

ব্যাপার কি!এই নাবিলা কিছুক্ষণ আগেও তো ঘাপলা মেরে বলল বারান্দা দিয়ে আসতে পারবেনা !! সেই জায়গায় ও কেন এইখান দিয়েই আসলো?? ওর কান্নার সুর যেন বলে দিচ্ছে ওকে আবারও ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি ঘিরে ধরেছিল। এই রাতে আমার বাড়িতে আসার এতো বড় কলিজা কার হলো! কেন বারবার নাবিলাকে ক্ষতি করার চেষ্টায় আছে? কারন কি এসব করার! সমীকরণ যে কোনোভাবেই মিলছে না।।

হঠাৎ মনে হলো পিঠে ভেজাভেজা লাগছে। কিছু একটা গড়িয়ে গড়িয়েও পড়ছে…কিন্তু নাবিলা দুহাতে জাপটে রেখেছে সে জায়গায় ভেজাভেজা… এক মিনিট ওর হাত আবার কি…

নাবিলাকে ছাড়িয়ে দেখি ওর বাম হাত থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছে!!মুখের অবস্থা নাজেহাল। নাকের পানি চোখের পানি মিলে একাকার।। ঘামে ভিজে চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। কান্না যেন থামছেই না! আমি দুহাত দিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে বললাম-

-নাবিলা আমার দিকে তাকা। ঠান্ডা হ একদম ঠান্ডা। দেখ এখানে শুধু তুই আর আমি আছি। আর কেউ নেই। ভয়ের কারন নেই। ঠান্ডা হ। আর আমাকে সব আস্তে আস্তে খুলে বল।

সাঈদ ভাই আমার দুগালে হাত রেখে অভয় দিলেন। কিন্তু যতই ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করি ততই যেন ভেতর থেকে নির্মম দৃশ্য গুলো কামড়ে আসে। আমি চাইলেও কিছু বলতে পারছিনা। গলার স্বর আটকে আসছে। সাঈদ ভাই আমার এমন অবস্থা দেখে কোলে তুলে নিলেন। উনি দূর্বল, হাতেও ব্যান্ডেজ করা। তবুও উনি কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে গ্লাসে পানি নিয়ে খাইয়ে দিলেন। ঢোকঢোক পানিটুকু খাওয়ার পর আমার মনে হলো আত্মাটা ঠান্ডা হলো। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা হতে লাগলাম । কিন্তু চোখের পানি পড়া বন্ধ হয়নি। অস্থিরতা কিছু কমলেও চোখ দুটো বেয়ে পানি পড়ছেই।।।

.

.

আমি আমার লাইফে নাবিলাকে এতো ভয় কখনো পেতে দেখিনি। আম্মুর থেকে শুনেছি, ওকে ওর এলাকার সব ছেলেরাই কমবেশি ভয় পায়। কেউ টিজ বা খারাপ কথা বললে ও আস্ত রাখে না। খুব সাহস ওর। লেডি কিলার একটা! আজ সেই মেয়ে এতো ভয়ে কাতরাচ্ছিলো!! তাও এক অজানা ব্যক্তির কারনে।

নাবিলা পানি খেয়ে একটু শান্ত হলেও চোখ আর শান্ত হয়নি। চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেপে উঠছে।বাম হাতটা অনেক খানি কেটে দিয়েছে। ধারালো কিছু একটা দিয়ে টান মেরেছে বুঝাই যাচ্ছে। মনটা চাচ্ছে ওই শয়তানের কলিজাটা টেনে ছিড়ে ফেলি! খালি একবার সামনে পাই! কুটিকুটি করে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিয়ে আসবো!

নাবিলার পাশ ঘেঁষে বসতেই ও আবার বুকে এসে হামলে পড়লো। এতো জোরে জাপটে রেখেছে যে কেউ টানলেও ও আমাকে ছাড়বেনা। বুকে মাথা রেখেই বেগ বাড়িয়ে ফুপাচ্ছে। মাথায় একটু ঠোঁট ছুয়িয়ে হাত দিয়ে মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছি। ফুপানোটা একটু থামলেও নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। ছাড়তে চাইলে আরো জোরে খামচে ধরে। এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতেই বললাম-

-কোনো ভয় নেই। একদম শান্ত হ। আমি আছি। এখন একটু খুলে বল, কী হয়েছিল?
-সাঈদ ভাই…
-হ্যাঁ, আমি আছি তো। কিচ্ছু হবে না, বল।
-রাতে ঘুমাতে গেলে সে আসে…
-হ্যাঁ, কে আসে? দেখেছিস?
-মুমুখোশশ..ধা..ধা..রী ছি..লো
-মুখোশধারী ছিলো, এরপর?
-কালো হু..হুডির পোশ..পোশাক..পা থেথে..থেকে মা..মাথা পযর্ন্ত ঢাকা ছি..লো,
লম্বা ছিলো, সা..সাদা গ্লাভস হাতে, ধারা..ধারা..ধারালো ছুছু..ড়ি হা..হাতে ছিল।
-এরপর?
-ও সে..ইই বি বিড়ালটাকে শি..ষ দিয়ে ডে..ডেকে আ..নে, বি..ড়ালটা হাতে নি..য়ে……
-আহা থামিস না !! বিড়ালটা হাতে নিয়ে?
-হা..তে নিয়ে জ..জ.বাই করে ছুড়ে দেয় আ..আমার দিদি..কে । আমি নি..চে বসে পড়লে ওটা জানা..লা দি..য়ে পড়ে ম…রে যায়। এর..পর জানালা দিয়ে তো..তো..মার রুমে যে..তে নিলে হা.. হা.তে ছুড়ি ব..সিয়ে দেয়,
-ওই কুত্তার বাচ্চাকে যদি খুন না করি! ওর এতো টুকরা টুকরা করবো! যেন কুকুরও খুবলে শেষ করে!
-ভাই ও আমাকে শেষ করে দিবে, ও খু..খুব ভয়ঙ্কর ভাই!!
-চুপ। কাম ডাউন। ওই শয়তান নিজেও জানে না জুনায়েদ সাঈদ কী জিনিস। কার সাথে টক্কর নিতে আসছে ও এখনো জানে না। আমারই ভুল হইছে তোর সাথে কাহিনি করার। আগেই যদি নজর রাখতাম তাহলে আজকে রাতে বাড়িতে ঢুকার পযর্ন্ত সাহস পেতো না।

নাবিলা এখনো প্রচণ্ড ভয়ের মধ্যে আছে। হাতটা কে কেমনভাবে টান দিয়েছে। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি যেদিন আমার সামনে আসবে, ও নিজেও জানে ওর অস্তিত্ব কোথায় ঠায় পাবে! ওর যে কত অংশ করব সেটা আন্দাজ করতে পারলে আজ আমার জিনিসে হাত দেয়ার সাহস স্বপ্নেও পেতো না!!

নাবিলাকে ছেড়ে ওকে ঠিকভাবে বসিয়ে রেখে টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাষ্ট এড বক্স আনতে গেলাম। ও যেন বোবা হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি বক্স এনে হাতটাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগলাম। আমার দুহাতের ব্যান্ডেজ আগেই খুলে ফেলেছিলাম। কারন, বাতাসে সেটার ক্ষত শুকাতে হবে বলে। তাই ওর হাতে ব্যান্ডেজ করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। আস্তে আস্তে স্যাভনল লাগালাম কিন্তু ওর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। স্যাভনলের জলা টা যেন ওর হচ্ছে না। এ্যান্টি সেপটিক দেওয়ার পর রক্ত পড়া বন্ধ হলে কাপড় পেচিয়ে ব্যান্ডেজ করা শেষ করি। ও এখনো ওভাবেই চুপটি করে বসে আছে। চোখ দুটো শান্ত হয়ে কয়েক সেকেন্ড পর পর পানি ফেলছে। ওকে বললাম-

-নাবিলা জানি তোর ভয় কাটবেনা তবুও একটু ঘুমিয়ে নে। তুই বিছানায় ঘুমা। আমি সোফায় শুচ্ছি। চিন্তা করসি না আমি ঘুমাব না। তোর ওপর নজর রাখছি। একটু ঘুমা। প্লিজ!!!

নাবিলা আমার কথা শুনেছে কিনা জানি না ও বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে গেল। আমিও ওর পিছু পিছু যেয়ে দেখি ও দোলনায় বসে আছে। দৃষ্টি বাইরের দিকে। এখনো কাদছে। মাঝেমাঝে কেপেও উঠছে। ওরপাশে বসতেই কাধে মাথা রেখে দিল। চোখদুটো বন্ধ করে নিল। আমি ওকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে নিলাম। আমারও চোখে আর ঘুম নেই। কিছু ক্ষন পর মনে হলো ও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে। এবার দুহাতে জড়িয়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলাম, ফিমা ওর পাশের রুমে থাকে, ও ভালোভাবে জানে ইদানিং নাবিলার সাথে কি কি হচ্ছে, এতকিছুর পরেও ওকে একা ছেড়ে দিল? কেমন বোন !! আল্লাহ ! আম্মু যে বলে শতভাগ ঠিক বলে। নাবিলাকে নিয়ে ওর মনে এতো হিংসা জন্মেছে যে বিপদেও ও ওর পাশে থাকে না। নাহলে কি কেউ নিজের সহোদর বোনকে এমন পরিস্থিতিতে একলা ছাড়ে! নানা চিন্তা করতে করতে কখন যে আমিও ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।

ঘুম থেকে উঠে দেখি নাবিলা এখনো কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে আছে। চোখ দুটো ফুলে শেষ। কোলে নিয়ে বিছানায় ঠিক করে শুইয়ে দিলাম। ঘুমের মধ্যে নাবিলার মুখখানা নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছি। গালদুটো টেনে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু টেনে দিলে যদি উঠে যায়!!

ফ্রেশ হতে গেলাম। রুমে এসেই টিশার্ট চেন্জ করলাম। কালকের গায়ে দেয়া টিশার্টটা হাতে নিতেই দেখি পিঠের দিকটায় রক্তমাখা বামহাতের ছাপ। রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে উপর থেকে লম্বা ভাবে পড়েছে। কিন্তু রক্তের দাগ এখন আর সতেজ নেই। শুকিয়ে গেছে। নাবিলার দিকে একবার তাকালাম, ওর হাতের ব্যান্ডেজটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ওর কালরাতের ভয়ের মুখটা। টিশার্ট টা ভাজ করে আলমারি তে রেখে দিলাম। নিচে গেলাম খাবার আনতে।

.

.
চোখ খুলে দেখলাম আমি ভাইয়ার রুমে শুয়ে আছি। হাতে ব্যান্ডেজ করা। আমার যতটুকু মনে আছে আমি বারান্দায় ভাইয়ার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম। তাহলে এখানে কীভাবে? হয়তো সাঈদ ভাই রুমে এনে শুয়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভাই কোথায়???

ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখি ভাই রান্নাঘরে কি যেন করছেন। কাছে যেতেই দেখি খাবার রেডি করছেন। ডিমচিনির পাউরুটি পোজ সাথে কফি। আমি যেয়ে বললাম-

-ভাই এই সকালে তুমি রান্নাঘরে এগুলো করছো কেন? সার্ভেন্ট রান্না করেনি?
-ওদের সবার ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
-ছুটি?
-হ্যাঁ। এখন বল শরীর কেমন লাগছে?
-প্রশ্নটা তো আমার তোমাকে করা উচিত !!
-আগে যেহেতু আমি করেছি তাই জবাবটাও আমি আগে চাই।
-ভালো। কিন্তু তোমার হাত?…
-দেখছিস না রান্না করছি, হাত এখন আগের থেকে অনেকটা ঠিক আছে। ব্যান্ডেজ খুলে মলম লাগানোর পর থেকে শুকিয়ে গেছে।
-সরি।
-কীসের জন্য??
-কাল তোমার ব্যান্ডেজ খুলতে আসিনি।
-তুই যে আসবি না এটা ডেম সিউর ছিলাম।চল নাস্তা রেডি।
-তুমি এগুলো বানানো কবে শিখলে?
-সিম্পল জিনিস বানাতে টাইম লাগেনা।চল এখান থেকে। এখানে এমনেই গরম।

সাঈদ ভাই হাত ধরে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসালো।সাথে উনিও বসলো। প্লেটে তিনপিস ডিমচিনির পাউরুটি তুলে দিয়ে খেতে বললেন। মগভর্তি কফি ঢেলে দিলেন। আমাকে খাওয়া শুরু করতে বললেন। আমি পাউরুটি একপিস নিয়ে যেই কামড় মারবো তার আগেই ভাই বলে উঠলেন-

-ওয়েট ওয়েট!! তোর খাবারের ফাষ্ট বাইটটা আগে আমাকে খাওয়ানো উচিত। কাল রাতে খাইয়েও দেসনি প্লাস খেতেও ডাকিস নি।

ঠিকি তো কালরাতে বোকার মতো বিহেব দেখাইছি। যেগুলা আমার করা উচিৎ হয়নি। কথামতো পাউরুটি উনার মুখের সামনে দিলে বলে উঠে-

-এই পিসটা খাবোনা। অন্যপিসটা দে।
-অন্যপিস কেন?সব তো একই।
-নো। আমি এই পিস খাব না। অন্যটা দে।

কথা অনুযায়ী হাতের পিসটা রেখে দ্বিতীয় পিস উনার মুখের সামনে ধরলে আবার বলে উঠে-

-এটা খাবো না। ওই যে শেষের পিসটা আছে না, ওটা খাবো। ওটা দে।
-এটায় আবার কি সমস্যা হলো?? সব তো তুমিই বানালে!!
-যেটা বলছি ওইটা কর।

আবারও কথা মেনে শেষ পিসটা উনার মুখে ধরতেই ভাই আমার হাত ঘুরিয়ে আমার দিকে করে, মুখে ধরে বললেন-

-নাবিলা হা কর। খা এখন
-একটু আগে তুমি না বললে ফাষ্ট বাইটটা তুমি খাবে?
-খেতে বলসি!

কামড় বসিয়ে মুখে নিতেই ওই পিসটা নিয়ে ভাইয়া খেতে লাগল। আর বললেন-

-রেডি হ। একটু পর মেজো খালামনির বাসা থেকে গাড়ি আসবে। আমাদের নিতে। ফিমা ভার্সিটি থেকে সোজা খালামনির বাসায় যাবে।ব্যাগ ঘুছানোর দরকার নেই।
-ব্যাগ না ঘুছালে ওখানে পড়ব কি?
-গুলিস্তান মোড় থেকে আশিটাকা দরে লুঙ্গি কিনে দিব। ওগুলা কেটে জামা বানিয়ে পড়িস।
-কি বলছো এসব!! লুঙ্গি দিয়ে কেউ জামা পড়ে নাকি!
-আবার জিগায় !! ফিমাই তো একটু আগে জয়নাল চাচার পুরনো লুঙ্গি গায়ে দিয়ে ভার্সিটি গেল।
-কী আজব! আপু লুঙ্গি পড়ে ভার্সিটি কেন যাবে?
-সেটা ওকেই জিজ্ঞেস কর। ও কেন লুঙ্গি কাপড়ের ড্রেস গায়ে দিয়ে গেল।
-ও আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি ব্যাপারটা। আরে ওটা লুঙ্গির কাপড় না। ওটা এই যুগের মেয়েদের স্টাইলিশ টপস।
-তাই বলে জয়নাল চাচার পুরনো লুঙ্গি পড়বে নাকি। তার মানে ছেলেরা যেটা ইউজ করে শেষ করে সেটা মেয়েরা স্টাইলিশ বলে ট্রেন্ড চালায়!! জোশশ!
-ধুরর! তোমার যা লজিক! তোমার মতোই উটকো!
-ওই !আমি উটকো!
-কই না তো, কে বললো? কারোর কি বলার সাহস আছে নাকি!! ভুল শুনছো।
-যা এখন রেডি হ।

খাওয়া শেষে আমি আর ভাই রুমে গেলাম রেডি হতে। আলমারি থেকে কালো কালারের জামা বের করে পড়ে নিলাম। সাথে লাল ওড়না। চুলগুলো খোপা করে হালকা একটু লিপস্টিক দিয়ে গলায় ওড়না দিয়ে নিচে গেলাম। নিচে যেয়ে দেখি ভাই এখনো আসেনি। মেজো খালামনি অলরেডি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি ফোন হাতে নিয়ে পায়চারি করছি কখন উনি নামবে।

কিছুক্ষন পর ভাই নামলেন নেভি ব্লু শার্ট পড়ে। প্যান্ট ব্ল্যাক। হাতা ফোল্ডেড, ফোল্ডেড অংশটুকু কালো রঙের । চুলখুলো হালকা স্পাইক করা। তবুও সিল্কি চুলের কারনে কপালে চুলগুলো আসছে। ব্ল্যাক আর অফ হোয়াইট কম্বিনেশনে স্নিকার জুতা। হাতে নেভি ব্লু ঘড়ি।বাইরে বেরুলে ভাই সবসময় হোয়াইট গ্লাসের চশমা পড়ে নেন। তাই চোখে স্টাইলিশ চশমা, কাধে গিটার !! এক কথায় পুরো ডেশিং কিলার লুক!!! এই ফর্মে মেয়েরা দেখলে ইয়া বড় এক হা করে হুশ জ্ঞান ছাড়া তাকিয়ে থাকবে , এটা আমি কাগজে সাইন করে দিতে পারব।

চুল হাতরাতে হাতরাতে ভাই বললেন-

-নাবিলা হাও আ’ম লুকিং??
-একদম ফাষ্ট ক্লাস হ্যান্ডসাম!!!

সাঈদ ভাই আমার মুখে তার প্রশংসা শুনে মুচকি হেসে দিলেন। এরপর আমরা বাড়ির মেইন দরজা লক করে গাড়িতে উঠে পড়ি। গন্তব্য মেজো খালামনির আলিসান বাসা!!!

.

.

আজ নাবিলা যে ব্ল্যাক পড়েছে চোখ তো আমি ফেরাতে পারছিনা !! পুরোই যে পাগল করে দিচ্ছে। আমার যে ব্ল্যাক কালার টা ভীষন পছন্দ সেটা কি ও জানে??? আই ডোন্ট থিংক সো!!তবুও মনেই মন যে অস্থির করে তুলছে আমায়!!! বলতেও পারছিনা, কিছু করতেও পারছিনা!!!

এই পাগলি দেখি আবার খোপাও করেছে! চুল কি খোপা করার জন্য নাকি! এখন কী করতে ইচ্ছে করছে ওকে! খোপা করে চুলগুলোর লুকটাই শেষ করে দিচ্ছে! নো, আমি থাকতে এটা পসিবল কখনোই হবেনা।। এই চুলগুলো ছেড়ে রাখতেই হবে। খোপা করা কাম্য নাহ্।।

আস্তে করে চুলের পিনটা টান দিতেই খোপা খুলে গেল। নাবিলা আমার কান্ড দেখে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।
ও চুলে হাত দিয়ে দেখে পুরো চুল খুলে পিঠ ছেয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে চুল গুলোকে এটো করে খোপা করতে লাগল। আমি খপ হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললাম –

-নাবিলা প্লিজ চুলগুলো খোলা রাখ। খোপা করিস না। বাজে দেখায়।
-আচ্ছা।
-বোরিং লাগছে!
-কী করতে পারি?
-কিছু একটা কর তবুও মুডটা ঠিক করে দে!
-আমি তো নিরামিষ। পারিনা কিছু। তুমি বরং একটা গান শুনাও।….এই না না থাক দরকার নেই। সেদিনের মতো সুর তুলতে যেয়ে হাতের বারোটা বাজাবে।
-তুই শুনবি নাকি বল।
-তোমার এই একটা প্রশ্নে সবসময় তুমি আমার কাছ থেকে ” হ্যাঁ ” উত্তর পাবে।
-দ্যাট মিনস, শুনবি!! সামনের সিট থেকে গিটারটা পাস কর।
-…..এই নাও

.

.

ড্রাইভার আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের বোরিং টাইমটা পাসের জন্য একটা উপায় বের করলাম। ভাইয়ের হাত যেহেতু শুকিয়েছে, তাই সাঈদ ভাই গিটার হাতে গান ধরলেন। আস্তে আস্তে সুর তুলতে তুলতে একটু বেগ বাড়িয়ে সুর তুলে গান শুরু করলেন-

“আমার অজানায়
হলো কি,
তোমাকে তা কখনো
বুঝতে দেব না,

বৃষ্টির পানে আকাশে চেয়ে
তোমাকে আমি খুজবোনা,
আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে
“ভালোবাসি” তা বলবো না,,

তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালোবাসবে না,
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবে না,
তুমিও কি আমার মতো করে একটু ভালোবাসবে না…

আগেও তো ভালোবাসতে তুমি
আগেও তো কাছে ডাকতে তুমি
তবে আজ কেন দূরত্বটা সবচেয়ে কাছে
ভালোবেসে কি ভুল করেছি আমি,

তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালোবাসবে না,
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবে না
তুমিও কি আমার মতো করে একটু
ভালোবাসবেনা…….”

মাতাল হয়ে যাচ্ছি সুরে!! নেশা ধরে আসছে। মন বলছে প্রতিটা সুরের উত্তর আজ আমি করি!! বলে দেই সুরের সাথে সুরের মিল, দেখিয়ে দেই সুরের সাথে সুরের তাল!! কিন্তু কোথাও যেন বাধা হয়ে আছে!!! আজও যে তা বলতে পারছিনা।।। সাঈদ ভাই তোমার কন্ঠে এমন কি আছে যেটায় নেশাক্ত হতে ইচ্ছে হয়!! কী আছে এমন আকর্ষণ যেখানে মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়!!!

সাঈদ ভাই মাথায় চাট্টি মেরে বললেন-
-ওরে গাধা! ওঠ এখন। বাসা এসে পড়েছে।

চোখে মেলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সত্যিই তো মেজো খালামনির বাসা এসে গেছে। ভাই, আমি গাড়ি থেকে নেমে দরজায় দাড়াতে না দাড়াতেই দৌড়ে এক অচেনা মেয়ে এসে সাঈদ ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরল। দৌড়ে জাপটে ধরাতে ভাই কয়েকপা পিছালো। মেয়েটার এমন জড়িয়ে ধরার দৃশ্য দেখে রেগেমেগে ওড়নায় হাত মোচড়াচ্ছি! কত্ত বড় বেহায়া মেয়ে! বলা নেই, কয়া নেই, দৌড়ে এসে এক ছেলেকে জাপটে ধরল! সাঈদ ভাই আমার দিকে নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চার মতো তাকিয়ে আছে!!যেন মাত্র ভুমিস্ঠ হওয়া ছোট বাচ্চাটা!

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *