00

মেঘ বর্ষণের মায়া !! Part- 03

পুরো পার্টিতে একটিবারের জন্যও মেঘ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম না আমি।আমার চোখ বারবার তাকে খুঁজছিলো।যতোবারই তার রুমের দিকে অগ্রসর হয়েছি আমি।কাকিমা কোনো না কোনো কাজে আমাকে ঠেলে দিয়েছেন।পার্টির শেষে সকলে যার যার নিজের রুমে।ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত,,,২টা ছুঁই ছুঁই।গভীর রাতে ঘুমে আচ্ছন্ন সকলে।তাই এটাই মোক্ষম সময়।হাতের সব কাজ সেরে নিলাম।এবার চুপিচুপি একটিবার অন্তত উনাকে দেখে আসতে পারবো।শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে পা টিপে ধীরে ধীরে উনার রুমের দিকে অগ্রসর হলাম।দরজার কাছে এসে হাত রাখতে যাবো তখনি আমার পেটে কারও হাতের শীতল পরস অনুভব করলাম।এই উষ্ণ ছোঁয়ার শিহরণ জাগানো উত্তাপ কার সেটা আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার।আমি কেঁপে উঠলাম।একটানে আমাকে ঘুরিয়ে নিজের বাহুডোরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলেন উনি।উনার পুরোটা শরীর ভিজে চুপচুপ করছে।আমার পড়নের পাতলা শাড়িটা লেপ্টে আছে উনার ভেজা শার্টে।আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।উনি আমার মাথাটা নিজের বুকে ঠেসে ধরে রাখলেন।আমি উনার শার্টের বোতামটাই একটা কামড় বসিয়ে দিতেই কেঁপে উঠে আমাকে কিছু মুহূর্তের জন্য ছেড়ে দিলেন উনি।আমি মুখটা মলিন করে কম্পিত ঠোঁটে উনার শার্টের কলারটা টেনে ধরে আস্তে করে বললাম,
—“এতো রাতে ভিজলেন কিভাবে?”
উনি আমার কোমড়টা চেপে ধরলেন।কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাক ফুলিয়ে বললেন,
—“সাদে ছিলাম।বর্ষায় নিজেকে ভিজিয়ে নিয়েছি।”
খেয়াল করলাম উনার সমস্ত শরীরের গরম উত্তাপ আমার শরীরে এসে পরছে।বিস্ময় নিয়ে উনার কপাল থেকে নিজের কপালটা সরিয়ে নিলাম আমি।কিছুক্ষণ উনার মুখপানে তাকিয়ে থেকে দেখলাম উনি দুলছেন।থর থর করে কাঁপছেন আর দাঁতে দাঁত লাগিয়ে আমাকে আরও শক্ত করে টেনে নিচ্ছেন নিজের বাহুডোরে।আমি উনার গালে হাত রেখে মুখের সামনে মুখটা এনে বললাম,

—“কি হয়েছে আপনার? এমন কেন করছেন?”
উনি ঘুমে টলমল চোখ টেনে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।আমি বুঝতে পারলাম উনার শরীরটা জ্বরে পুরে যাচ্ছে।উনার উত্তরের আশায় না থেকে উনাকে ধরে রুমে নিয়ে আসলাম আমি।ভালো করে তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দিলাম উনার মাথার চুলগুলো।বিছানার উপরে বসিয়ে রেখে আলমারি থেকে কাপড় এনে উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,
—“চেঞ্জ করে নিন।এভাবে ভেজা শরীরে থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”
উনি ভেজা শরীরেই বিছানায় জুতাসহ পা উঠিয়ে দিয়ে ধক করে শুয়ে পড়লেন।আমি উনাকে ডাকতে লাগলাম কিন্তু কোনো কথা বললেন না উনি।আমি জোড় করে বিছানা থেকে টেনে উঠিয়ে উনাকে ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে আসলাম।উনার হাতে কাপড় ধরিয়ে দিয়ে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলাম।দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়ে বললাম,
—“ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নিন।নইলে দরজা খুলবো না।”
প্রায় দশ মিনিট পর ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে নক করলেন উনি।আমি দরজা খুলতে উনি ঢলে পড়তে লাগলেন।আমি ধরে নিলাম।উনাকে এনে জুতা খুলে শুইয়ে দিলাম বিছানায়।থার্মোমিটারে জ্বর মেপে দেখলাম ১০৩°।ওয়াশরুম থেকে পানি এনে পলিথিনের উপরে শুইয়ে দিয়ে মাথায় পানি ঢাললাম কিছুক্ষণ।উনি ঘুমিয়ে পরলে সকালের দিকে চুপিচুপি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি।

সকাল ৮টা।যেখানেই বসছি ঘুম আসছে।খাবার টেবিলে বসেও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঝিমি এসে ডেকে তুললো আমায়।কোনো রকম ড্রেসটা চেঞ্জ করে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ঝিমির সাথে আমি।সারাটা রাস্তায় ঝিমির বকবকানি শুনতে হয়েছে আমার।কালকের পার্টিতে কে কি গিফট করলো সেইসব বলছে ঝিমি।
স্কুল গেইটের সামনে আসতেই একদম থমকে রইলাম।কিছুটা দূরেই গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে আবির।আবিরকে দেখে ঝিমি কথা বলতে বলতে থেমে গেলো।মুখ টিপে হেসে উঠে চলে গেলো সে।আর আবির আমার দিকেই আসছে।আমি ভাবতে লাগলাম আগে কখনো তো আবির এভাবে না বলে আমার সাথে দেখা করতে আসে নি তাহলে আজ কেন? আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আবির আমার সামনে এসে দাড়ালেন।হুট করে আমার কাঁধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বললেন আমায়,
—“কাল থেকে কতোবার তোমাকে ফোন দিয়ে চলেছি যানো? আমার বুঝি চিন্তা হয় না? সেই যে কলটা কেটে দিলে তারপর থেকে তোমার ফোনটা বন্ধ পাচ্ছি।কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ? ফোনটা অফ করে কেন রেখেছো? কস্ট হয় না আমার?”
আবিরের এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি নিজের কাঁধ থেকে আবিরের হাত নামিয়ে দিলাম।মাথাটা নিচু করে আস্তে করে বললাম,
—“ফোনটা ভেঙে ফেলেছি।”
কথাটা শুনে আবির আমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করলেন।আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
—“কেন? কারও উপর রেগে ছিলে নাকি?”
আমি হালকা মাথা ঝাকিয়ে অর্থ না বুঝিয়ে আবার মাথাটা কাত করে হ্যাঁ সম্মতি জানালাম। আবির মুচকি হেসে আমার হাতটা ধরে বসলেন।আমাকে টানতে লাগলেন।আমি আবিরকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
—“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
আবির আমার গাল টেনে বললেন,
—“ফোন কিনতে।চার মাস পর আমাদের বিয়ে। এতোগুলা দিন তোমার সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকবো আমি? তুমি যানো কাল সারাটা রাত জেগে ছিলাম আমি? ভেবেছিলাম কিছু হয়তো হয়েছে তোমার।নয়তো তুমি আমার ফোন কেন তুলবে না!”
আমি আবিরের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
—“যখন বিয়ে হবে তখন দিয়েন।বিয়ের আগে এভাবে আমি আপনার থেকে কিছু নিতে পারবো না।”
—“উফফ তাহলে কথা কিভাবে বলবো?”
—“আমি একটা কিনে নিবো।এখন আপনি যান।”
আবির কিছু একটা ভেবে বললেন,
—“চলে যাবো? সত্যি চলে যাবো? সারারাত জেগে থেকে এখন তোমার সাথে দেখা হলো।তোমার কি মনে হয় না এখন আমাদের একটু সময় কাটানো উচিৎ?”
—“কিছুদিন পরই তো বিয়ে। তখন না হয় সময় কাটাবেন।এখন যান।”
উনাকে কথাটা বলতেই ঘন্টা বেজে উঠলো।আমি উল্টো ঘুরে ছুটতে লাগলাম।স্কুল গেইটের মধ্যে ঢুকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ক্লাসরুমে গেলাম।আর আবির গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।

ওদিকে মেঘ ভাইয়া ঘুম ভাঙলে উঠে বসে কাল রাতের কথা ভাবছেন।আমাকে মনে পরতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো উনার।কাকিমা ঘড় ঝাড়ু দিতে এসে উনার সামনে বলে উঠলেন,
—“আচ্ছা মেঘ; মায়াকে তোর কেমন লাগে? ভাবছি ওকে তোর সাথে বিয়ে দেবো।”
কথাটা শুনেই চমকে উঠলেন উনি।বিছানা থেকে নেমে কাকিমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন,
—“এসব কি বলছো মা?”
—“ঠিকই বলেছি।মায়ার সাথে আমার গতকাল রাতে কথা হয়েছে।”
মেঘ ভাইয়া খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেসা করলেন,
—“মায়া কি বলেছে? আর আবির?”
—“সেটা নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।আবিরের জন্য আমাদের ঝিমি আছে তো।রাজরানি হয়ে থাকবে আবিরকে বিয়ে করলে ঝিমি।”
কথাটা শুনে উনি অনেক খুশি হয়ে গেলেন।
চলবে,,,,