00

মেঘ বর্ষণের মায়া !! Part- 02

মেঘ ভাইয়ার ছোট বোন ঝিমির জন্মদিন আজ।ঝিমি আমারই ক্লাস মিট।সন্ধ্যার পর একটা ছোট করে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বাড়িতে।মনটা ভারি হয়ে আছে আমার। ইচ্ছে করছে না পার্টিতে যেতে।ওদিকে সব ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে।ঝিমির জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে গেলাম আমি।আলমারি থেকে অনেক খুঁজে একটা নীল রঙয়ের শাড়ি বের করলাম।ঝিমি বলে গেলো সকলে শাড়ি পড়েছে আমাকেও পড়তে হবে।তাড়াহুড়ো করে রেডি হতে গিয়ে দরজাটা লাগাতেই ভুলে গেছি আমি।পেটিকোট পড়ে ব্লাউজের হুক লাগাচ্ছিলাম।এমন সময় দরজা খুলে হুট করে রুমের ভেতর ঢুকে পরলেন মেঘ ভাইয়া।উনার পায়ের শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।দরজা খোলার আওয়াজ কানে আসতেই রুমের আলোটা নিভিয়ে দিলাম।ধীরে ধীরে উনি রুমের মধ্যে অগ্রসর হচ্ছেন আর আমার বুকের ভেতরটা ধুপ ধুপ করছে।অন্ধকারে শাড়িটা কোনো রকমে সারা শরীরে পেচিয়ে রুমের আলোটা জ্বালিয়ে দিলাম।আমার দিকে চোখ পরতেই থমকে গেলেন উনি। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে দেখে নিলেন।ধীরে ধীরে আমার দিকে আগাতে লাগলেন।উনি যখন আমার খুব কাছে চলে আসলেন।আমি পিছনে সরতে গিয়ে শাড়ির আঁচলে বেঁধে পরে যেতে লাগলাম।উনি আমার কোমড়ে হাত পেচিয়ে কাছে টেনে নিলেন।আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেখলাম উনার গাল বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল।খুব ইচ্ছা করছিলো উনার অশ্রুভেজা আঁখিদ্বয় নিজ হাতে মুছিয়ে দিতে।ঠিক তখনই মোবাইল ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো।কেঁপে উঠলাম আমি।বিছানার বালিশের উপরে ফোনটা বেজে চলেছে।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম ইংরেজিতে বড় অক্ষরে আবির নামটি ভেসে উঠেছে।মুহূর্তে ধ্যান ফিরলো আমার।উনার বুকে হাত বাঁধিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালালাম।উনি আরও শক্ত করে টেনে ধরলেন আমায়।নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে আচারে ইঙ্গিতে বোঝালেন দূরে না যেতে।আমি নিজেকে সামলে নিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম।এগিয়ে গিয়ে আবিরের কলটা রিসিভ করলাম।আবিরকে বললাম,
—“আমি এখন বিজি আছি।সামনে এসএসসি পরীক্ষা।পড়ার অনেক চাপ।পরে ফোন দিন।”
কথা শেষ হতেই ঘুরে তাকালে মুখের সামনে উনাকে দেখতে পেলাম।চোখদুটো রাগে রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছেন উনি।কিছু না বলেই আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন।আছড়ে ফোনটা দূরে ছুড়ে মারলেন।দুই তিন ড্রপ খেয়ে ফোনটা দরজার কাছে গিয়ে তিন খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে রইলো।আমার হাতটা মুচড়ে ধরে উল্টো ঘুরিয়ে বললেন উনি,

-“তোর মতোন মেয়েকে দেখলেই আমার ঘৃণা হয়।কেন ভালোবাসলাম তোকে আমি?”
আমাকে টেনে নিজের সামনে আনলেন।নিজের বুকে হাত রেখে আমাকে নাড়িয়ে বললেন,
-“এই বুকে যেই আগুন জ্বালিয়েছিস তা কোনো দিনও নিভবে না।ভালোবাসার অভিনয় করেছিস আমার সাথে তুই।আমার ভেতরের কস্টটা কি তোর ওই চোখে পরে না? খুব কস্ট হয় আমার তুই কি বুঝিস না?”
আমার গালে হাত রেখে হালকা মাথা ঝাকিয়ে বললেন,
-“দেখ মায়া।আমি তোকে কখনো বকবো না।কখনো কস্ট দেবো না।ভালোবাসি না আমি তোকে? সব ভুলে যাবো আমি।আবির নামের ওই ছেলেটাকে তুইও ভুলে যা।আমি তোকে বিয়ে করবো।আগের মতো ওইভাবে ভালোবাসবো।তোকে অনেক ভালো রাখবো আমি দেখিস…”
উনার কথা শেষ হবার আগেই আমি উনার শার্টের কলারে হাতের আঙুল পেচিয়ে টেনে ধরলাম।উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে আস্তে করে বললাম,
-“ভুলে যান না আমাকে।আমিও তো চেস্টা করছি আপনাকে ভুলবার।এমনটা নয় যে আমার কস্ট হচ্ছে না।খুব কস্ট হচ্ছে আমার।কিন্তু আমি পারছি না।বিশ্বাস করুন আবিরকে আমার বিয়ে করতেই হবে।ও আমার ভবিষ্যৎ।যেভাবেই হোক আমাকে আপনি ভুলে যান।”
কথাটা বলে উনাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাড়ালাম আমি।পেছন থেকে কিছু ভাঙার
আওয়াজ কানে এলো আমার।আমি পেছনে ঘুরে তাকালাম না।কিছুক্ষণ পর আমার হাতে টান পরতেই পেছনে ঘুরে দেখতে পেলাম রুমের কিছু জিনিসপত্র ভেঙে পরে আছে।কাকিমা আমার সামনে দাড়িয়ে চোখদুটো রাগে গজগজ করছে।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে আমার গালে পড়ল এক চড়! গালে হাত দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি কাকিমার দিকে।কাকিমা আমার মাথা চাপড়ে বললেন,

—“নবাবের বেটি হয়েছো না? রুমের জিনিসপত্র ভেঙে চুরে রেখেছো।বাড়ি ভর্তি মানুষ জন।তাদের দেখাতে হবে না রেগে গেলে তুমি কি করো? তো কার উপর রাগ দেখিয়ে এসব ভেঙেছো তুমি? আমার উপর? সবাইকে দেখাতে চাও তোমার কাকিমা তোমায় কি অত্যাচারটাই না করে? তোমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করায়।তোমার বুদ্ধি দেখে আমি অবাক হচ্ছি।ইচ্ছা তো করছে মেরে মেরে গায়ের ছাল চামড়া সব উপরে ফেলি।তখন তো আবার বলতে পারো তোমার বাড়ি, তোমার সব।মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিলাম তোমায়।এর মধ্যে পুরো ঘড় পরিষ্কার করে হাসি মুখে পার্টিতে এসে এটেন্ড করো।পার্টির মধ্যে খাবারে হাত দেবে না এটাই তোমার শাস্তি।”
একটু থেমে বললেন,
“কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছো কেন তুমি? এভাবে দাড়িয়ে না থেকে যা বললাম তাই করো।পার্টির শেষে এতো এতো কাজ কে করবে শুনি? তোমার মায়ের মতোন টাকা দিয়ে বাড়িতে কাজের লোক পুষার মতোন মেয়ে না আমি।টাকা বাঁচাতে ভালোবাসি আমি।এতে তোমারই লাভ।তোমার বাবার সব সম্পত্তি তো এখন তোমারই।ভাবছি পরীক্ষাটা শেষ হলে মেঘের সাথেই তোমার বিয়ে দেবো।না হলে সব সম্পত্তি কার না কার হাতে যাবে বলা তো যাই না সে কেমন হবে!”
কাকিমা থামলে বললাম আমি,

—“আমার বাবা আবিরের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখে গেছিলেন আমার।”
কাকিমা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে।অধির আগ্রহ নিয়ে বললেন,
—“তো কি হয়েছে? আবিরের বাবারও তো অনেক সম্পত্তি তাই না? ভাবছি ওর সাথে আমার ঝিমির বিয়ে দেবো।মেয়েটা আমার রাজরানি হয়ে থাকবে সারাটা জীবন।আচ্ছা একটা কথা বলো আমার ছেলেটা কি কোনো অংশে কম? ওকে বিয়ে করলে তোমার বাড়ি, তোমার ঘড়, সব তোমার থাকবে।কোথাও যেতে হবে না এসব ছেড়ে তোমাকে।”
আমি গম্ভির গলায় বললাম,
—“বিয়ে করলে আমি আবিরকেই করবো।আমার বাবা যখন চেয়েছে তখন আবিরকেই আমার বিয়ে করতে হবে কাকিমা।আমার এই সম্পত্তি। ঘড়, বাড়ি কিচ্ছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু যেখানে আমার বাবা কথা দিয়ে ছিলেন আবিরের বাবাকে সেখানে আমি তার কথা রাখবো।জীবনে যখনই আমার বাবা কাউকে কথা দিতেন সেই কথা অবশ্যই রাখতেন।তার শেষ প্রতিশ্রুতি টুকু আমি কিছুতেই মিথ্যা হতে দিতে পারি না।”
কথা শেষ করে তাকিয়ে দেখলাম কাকিমা দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে আছে।পারলে আমাকে মারবে এমন ভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রুম পরিষ্কার করতে লাগলাম।কাকিমা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে ধড়ফড়িয়ে বেড়িয়ে গেলেন।
চলবে,,,,