মেঘ বর্ষণের মায়া !! লেখাঃ মস্ত লিজা
মেঘ বর্ষণের মায়া
আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃস্টি পরছে। ছুটির পর স্কুল ব্যাগটা মাথায় নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটছিলাম আমি।আচমকা এক টানে আমার হাত থেকে কেউ স্কুল ব্যাগটা কেড়ে নিলেন।আমি মুখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম মেঘ ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন।চোখদুটো রাগে রক্ত বর্ণ ধারণ করে।আমি কিছু ভেবে উঠার আগেই আমার গালে পরলো এক চড়! আমি গালে হাত রেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।কোনো কথা বললাম না।আমাকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিলেন উনি।আমার গালটা শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,
—“আমার ফোনটা তুই ভেঙেছিস?”
আমি নিশ্চুপ। আমার কোনো উত্তর না পেয়ে আমার হাতটা টেনে ধরলেন। টানতে টানতে আমাকে বাড়িতে নিয়ে এলেন।ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে কোমড় থেকে বেল্ট খুলে মারবার জন্য উঁচু করলে আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলাম।আমার মুখের উপর এক গ্লাস পানি ছুড়ে মেরে বললেন আমাকে,
—“আমার কোনো জিনিসপত্রতে তুই আর হাত দিবি না।”
কথাটা বলে রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন উনি।আমি পিছনের থেকে উনার হাতটা টেনে ধরে বললাম,
—“মেঘ ভাইয়া! মলি কে? যে আপনাকে ফোন দেয়?”
উনি ঘুরে তাকিয়ে আমার গালটা চেপে ধরে বললেন,
—“কোনো অধিকার আছে তোর আমার পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলার?”
আমি মাথাটা ঝাঁকিয়ে না সম্মতি জানালে ধরফরিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।ওদিকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ হচ্ছে।অনেকটা দেরি হয়ে গেছে ভাবতেই বুকের ভেতরটা ধুপ করে উঠলো আমার।স্কুল ড্রেসটা চেঞ্জ করে ছুটে রান্নাঘরে এলাম আমি।দেখলাম কাকিমা আবল তাবল বকছেন আর শব্দ করে থালা বাসন আছড়ে ফেলে মাজছেন।আমি কাঁপা কাঁপা গলার কন্ঠস্বরে আস্তে করে বললাম তাকে,
—“কাকিমা, আমি এসেছি করে দিই?”
কাকিমা আমার হাতটা মুচড়ে ধরলেন।আমাকে উল্টো ঘুরিয়ে পিঠে ধাক্কা দিয়ে বললেন,
—“নবাবের বেটি হয়েছো না? বাবা-মা মারা গেছে।এতো এতো সম্পত্তির মালিক তুমি।গোটা রাজ্যের কাজ করে আসলে। লেখাপড়াও করবে! ঘড়ের কাজ করার সময় কি আছে তোমার?”
কথাগুলো গম্ভীর গলায় বলে আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি নিশ্চুপ হয়ে রইলাম।কোনো কথা বললাম না। আমার টলমল দু’চোখের পাতা বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ খুললাম।সামনে তাকিয়ে বাইরের দিকে চোখ যেতে দেখতে পেলাম মেঘ ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।ভেবেছিলাম উনি কিছু বলবেন।কিন্তু উনাকে দেখে মনে হলো কিছু দেখেও দেখতে পেলেন না উনি।আমাকে রান্নাঘরের সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন কাকিমা।
আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই,
আমি মায়া।যৌথ পরিবারে বড় হয়ে ওঠা আমার।বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলাম আমি।ছোটবেলা থেকে অনেক আদর পেয়েছি।যখন যা চেয়েছি তখন তাই পেয়েছি।সব কিছু হাতের মুঠোয় ছিলো আমার।আজ থেকে এক মাস আগে বাবা-মা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন।তারপর থেকে শুরু হলো কাকিমার স্বভাবের এমন বদল।মেঘ ভাইয়া! মানুষটা খারাপ না।বড্ড ভালোবাসে আমায়।বাবার ইচ্ছে ছিলো তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিবে আমার।আমি যেদিন কথাটা জানতে পারলাম সেদিনই বাবা-মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।সেদিন আমি নিজেকে নিজে কথা দিয়েছিলাম বাবার ইচ্ছাটা পূরণ হবে।এটা শুনে মেঘ ভাইয়া অনেক বকেছিলেন আমায়।ভেবেছিলেন হয়তো মজা করছি আমি।কিন্তু যেদিন তার কোনো বাঁধা না মেনে আবিরের সাথে দেখা করতে গেলাম।আবিরের পাঠানো শাড়িটা পড়ে, চোখে কাজল দিয়ে ভারি সাজে গিয়ে দেখা করলাম।সেদিন থেকে উনি আমায় যখন যেভাবে পারে অপমান করে।উনার কাছে আমি এখন ছলনাময়ী এমনকি দুশ্চরিত্রা।অথচ একটা সময় আমাদের সম্পর্কটা ছিলো খুনশুটিময়।কখন যে রাগ, ঝগড়ার মাঝে ভালোবাসাটা চলে এলো বুঝতেই পারলাম না।আমাকে শাপলা ফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিলেন উনি।প্রচন্ড রেগে ছিলাম আমি উনার উপর।মাথার সব চুল ছিড়তে মন চাইছিলো উনার।প্রথমবার অফিসে জয়েন করে সবার জন্য কিছু না কিছু এনে ছিলেন শুধু আমি ছাড়া।আমি রাগে টগবগ ছিলাম। সারাদিন কথা বলি নি উনার সাথে।মাঝ রাতে ভয়ংকর শব্দ পেয়ে লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলেই দেখতে পেলাম বাড়ির সকলে মিলে একসাথে দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। জন্মদিনের উইস করেছিলো সবাই আমায়।উনি দূরে দাড়িয়ে ছিলেন।সেটা দেখে আমার আরও ভীষণ রাগ হচ্ছিলো।পরেরদিন যখন স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম আচমকা কোথা থেকে এসে আমাকে টেনে উনার গাড়িতে উঠালেন।আমাকে নিয়ে আসলেন বাইপাস রোডের একটা প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে।গাড়ির উপরে উঠিয়ে আমায় কাঁধে মাথা রেখে বসে ছিলেন উনি।আমার রাগ এখনো ভেঙেছে কিনা জানতে চাচ্ছিলেন।দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো একটা মস্ত বড় পুকুর।উনাকে হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলেছিলাম শাপলা ফুল লাগবে আমার।এনে দিন তাহলে রাগ ভাঙবে।কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন উনি।কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছুটে গিয়ে পুকুরে দিলেন এক ঝাপ।আমি হা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।শাপলা হাতে পুকুর থেকে উঠে কাদা মাখা পায়ের গোরালি ধুচ্ছিলেন উনি।আমি এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বললাম উনাকে,
—“সত্যিই কি আপনি এটা করলেন?”
উনি আমাকে টেনে নিজের সামনে এনে ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট উল্টিয়ে কোমড়ে ডান হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমাকে অবাক করে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পরলেন। মুঠো বন্দি শাপলা ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
—“তুই কি আমায় ভালোবাসবি?”
আমি কিছু না বলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।উনি শার্টের পকেট থেকে একটা কাগজে মোড়ানো আংটি বের করলেন।আমি উনার হাত থেকে ফুল নিতেই উনি মুচকি হেসে আমার হাতটা টেনে ধরলেন।আমার কপালে উনার কপাল ঠেকিয়ে আদুরে গলায় বললেন,
—“বড্ড ভালোবাসিরে তোকে।তুই কি আমার বউ হবি? আমাকে ভালোবাসবি? আমার জন্য নীল পরী সাজবি? আরে উত্তর দে না।কতোক্ষণ ভেজা শরীরে দাড়িয়ে আছি সর্দি জ্বর হবে তো আমার।”
আমি মাথাটা হালকা উপর নিচে ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।আর আমার হাতে আংটিটা পড়িয়ে দিলেন উনি।হাতের সেই আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। আচমকা উনি আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমাকে কিছু না বলে হাতটা টেনে ধরলেন।আমার হাত থেকে আংটিটা টেনে খুলার চেস্টা করলেন উনি।আমি কিছুতেই উনার থেকে হাত ছাড়াতে পারছি না।উনি জোড় করে আমার হাত থেকে আংটিটা খুলে ফেললেন।লাল হয়ে যাওয়া চোখদুটো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আংটিটা উঁচু করে আমার সামনে ধরে বললেন,
—“এটা তোর হাতে রাখার কোনো যোগ্যতা নেয়।তোর মতো ছলোনাময়ী, দুশ্চরিত্রা মেয়ের হাতে আমার ভালোবাসার চিহ্ন থাকতে পারে না।”
আংটিটা আমার পায়ের কাছে ছুঁড়ে মেরে রান্নাঘরের দরজাটা আওয়াজ করে আছড়ে ফেলে চলে গেলেন উনি।
চলবে,,,,,
বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে
বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ মস্ত লিজা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!