মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-13
তৃষা চুপচাপ শুয়ে ভাবছে সে কি করতে পারে?তৃষা বাসায় আসার পর তার বাবা-মাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে,,সব কিছু শোনার পর তৃষার বাবা প্রচুর ভেঙ্গে পড়েন,,তৃষার মা তৃষার কথা ভেবে একহাতে নিজের মুখে শাড়ির আঁচল চেপে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়,,তৃষা তাদের অনেক বুঝিয়ে শান্ত করতে পেরেছে।তৃষার এখন একটাই লক্ষ্য যে করেই হোক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা আর আকাশকে সেফ করা।মাঝে কেটে গেছে একটা দিন,,পরেরদিন সকালে তৃষা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল,,প্রথমে তাকে হোটেল ব্লু ম্যানশানে যেতে হবে তাকে,,হয়তো কোনো প্রমান পেয়ে যাবে।
তৃষা হোটেল রিসেপশনে দাঁড়িয়ে আছে।একজন মহিলা,,খুব সম্ভবত হোটেলের রিসেপশনিস্ট,,তৃষাকে জিজ্ঞাসা করল-;
-:ম্যাম আমরা আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?
-: আপু বলছি আপনি কি আমাকে একটা তথ্য জানাতে পারবেন।
-:কী তথ্য?
-:বলছি ১৭ ই আগষ্ট আমি এই হোটেলের ২০৭ নম্বর রুমে এসেছিলাম সেই রুমটা কার নামে বুক করা ছিল একটু বলতে পারবেন?
মহিলাটি তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো-;
-:সরি ম্যাম পারশেনাল ডিটেলস আমারা কাউকে দিই না।
-:আপু প্লিজ আমাকে এই সাহায্য টা করুন,,আমি খুব বিপদে পড়েছি।
মহিলাটি কিছুক্ষণ ভেবে বলল-;
-:আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি কাউকে কিছু জানাবেন না নইলে আমার চাকরি চলে যাবে।
-:ওকে আপু।
.
.
.
-:আই লাভ ইউ বেবি।
-:…..
-:বেবি তুমি কথা বলছো না কেন??
-:ডোন্ট টক টু মি রিনা।একেই তো তুমি আমার সাথে ঠিক মতোন দেখা করতে আসো না তার ওপর কাল আমি তোমাকে কতবার কল করেছি জানো?? কিন্তু তুমি আমার ফোন রিসিভ পর্যন্ত করলে না।
-:বেবুউউ তুমি আমার উপর রেগে আছো?কি করবো বলো আকাশকে হ্যান্ডেল করতে হচ্ছিল,,আর কাল আব্বুও প্রচুর রেগে ছিল।
-:উফ্ আকাশ আকাশ আকাশ,,,আই এম টায়ার্ড ওফ দিস রিনা।কবে এই আকাশের চ্যাপটার ক্লোস হবে??
-:প্লিজ রাগ করো না।আগের বার তোমার সাথে একমাস থেকে ছিলাম তো বলো।আর আকাশকে বিয়ে করে ওর সমস্ত পপার্টি নিজের নামে করে নিই তারপর ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমরা বিয়ে করে নেব বেবি।
-:রিনা আমি তোমাকে অন্য কোনো ছেলের সাথে কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না।
-:উফ্ রাসেল বেবি আকাশকে আমি আমার গায়ে টাচ পর্যন্ত করতে দেব না আর এমনিতেই আমাকে সর্ব প্রথম তুমিই স্পর্শ করেছো আর কেউ করেনি।আর আকাশ!!সে তো এত বছরের রিলেশনশিপে আমাকে টাচ করাতো দূর আমার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি।আমার মন বলছে আকাশ এখনও তৃষাকে ভালোবাসে তাই তুমি চিন্তা করো না বিয়ে হয়ে গেলেও ও আমাকে স্পর্শ করবে না।
-:হুম
-:প্লিস বেবি মন খারাপ করো না। তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে আমি তোমার সাথে দু’দিন থাকবো।
-:আকাশ জানতে পারলে।
-:আরে বাবা আকাশ আমাকে কিছু দিন তার কাছে যেতে বারণ করেছে,, তৃষা কে ভুলতে তার নাকি সময় চাই।হাহাহা এবার তো হাসো বেবি প্লিজ।
-: হুম।
.
.
.
তৃষা হোটেল থেকে বেরিয়ে আকাশের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এক্ষুনি আকাশকে জানাতে হবে যে তৃষা তাকে মিথ্যা বলেনি।আকাশের বাসার সামনে দাঁড়াতেই দাড়োয়ান চাচা বলে উঠলো-;
-:ভাবি আপনি?
-:হুম আকাশ আছে??
-:না সাহেব তো অফিসে গিয়েছে।
-:ওও
তৃষা আকাশের অফিসের উদ্দেশ্যে যাবে বলে ঘুরতেই কি যেন মনে করে চাচাকে জিজ্ঞাসা করলো-;
-:আচ্ছা পরশুদিন বিকালে যে ম্যাডাম এসেছিলেন তিনি কি আমি চলে যাওয়ার পর আর এসেছিলেন?
-:না ভাবি।আপনি যেদিন চলে যান ওইদিন উনি একটু রাত পর্যন্ত এখানে ছিলেন তারপর চলে গিয়েছিলেন।আর আসেন নি।
-:ও ঠিক আছে আমি যে এখানে এসেছিলাম সেটা আকাশকে জানাবে না।
-:আচ্ছা ভাবি।
তৃষার মনে একটু সন্দেহ হলো কারণ তৃষাকে বের করে দেওয়ার পর রিনার এখন আকাশের সাথে থাকা উচিত নইলে রিনার রাস্তা পরিষ্কার হবে না,, সেই জায়গায় সে আকাশের সাথে নেই এটা শোনার পর মনে একটা খটকা লাগলো।তাই সে রিনাদের বাসায় এলো কিন্তু ভিতরে ঢুকলো না।দাড়োয়ান চাচাকে জিজ্ঞেস করলো-;
-:আচ্ছা রিনা আপু আছে??
-:না রিনা মামনি তো বাইরে গেছে??
-:কোথায় গেছে জানো?
-:না তো।
তৃষা চাচার সাথে কথা বলছিল এমন সময় রহিম (ড্রাইভার) বাসা থেকে বাইরে এলো,,রহিম কে দেখে চাচা বলে উঠলো-;
-:আরে রহিম তুই রিনা মামনিকে নিয়ে গিয়েছিলি না।
-:হ্যা কিন্তু কেন??
তৃষা বলে উঠলো-;
-:প্লিজ একটু বলুন রিনাপু কোথায় গিয়েছে?আসলে আপুর সাথে খুব দরকারি কথা আছে।
-:আচ্ছা তুই মামনিকে রিনা মামনি যেখানে আছে সেখানে ছেড়ে আয় না।(চাচা)
-: কিন্তু স্যার যদি কিছু বলে??(রহিম)
-:আরে তুই জানিস মামনি কে?ছোটো সাহেবের ভাইয়ের মেয়ে,,এই বাসার ছোটো মেয়ে আর তুই বলছিস সাহেব বকবে?
-:প্লিস আমাকে একটু নিয়ে চলুন আপুর কাছে।
-:আচ্ছা চলুন।
তৃষা যেন হাতে চাঁদ পেল,,মনের কোনে এক আশার কিরণ উঁকি দিল,,হয়তো কোনো প্রুফ পেয়ে যেতে পারে।
.
.
.
আকাশ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না বারবার শুধু তৃষার কথা মনে পড়ছে,,অফিসের কোনো কাজে মন লাগাতে পারছে না।একবার ভাবছে তৃষা এমন কাজ করতে পারে না আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে তাহলে রিনার আনা ছবিগুলো কি সবই মিথ্যে।ইস্ যদি একবার তৃষা নির্দোষ এটা প্রমাণ হতো তাহলে আকাশের থেকে খুশি বোধহয় আর কেউ হত না।
রহিম তৃষাকে একটা বাংলোর কাছে নামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:রিনা মেম সাহেব এখানে নেমেছে।এর আগেও বেশ কয়েকবার রিনা মেম সাহেব এখানে এসেছিল।
তৃষা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো-;
-:রিনাপু এর আগেও এখানে এসেছিল??
-:হ্যাঁ অনেকবার এসেছিল।মেম সাহেব এখানে এসে কদিন করে থাকে,, তারপর আমাকে আবার ফোন করে আমি এসে নিয়ে যায়।
-:ও এখানে কি আপুর কোন আত্মীয় থাকে??
-:সেটা তো জানিনা কিন্তু একটা ছেলেকে এর আগে অনেকবার দেখেছি এই বাসাটায়।আগের বারে এসে তো একমাস ছিলেন এখানে।
-:কি!!!
-:হ্যাঁ
-:আচ্ছা ঠিক আছে,,তুমি চলে যাও।
-:আপনি যেতে পারবেন একা।
-:হ্যাঁ আমি পারবো।
-:আচ্ছা ঠিক আছে।
-:আর শোনো কাউকে বলতে হবেনা আমি এখানে এসেছি।
-:আচ্ছা ঠিক আছে মেম সাহেব।
এই বলে রহিম চলে গেল।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]