Adorable Love

আরাধ্য প্রেম (Adorable Love) !! Part- 07

আমান ঈশিকাদের বাড়ির বেশ খানিকটা আগে গাড়ি থামালো। নোভাকে আসার পথে কল করে আগেই সেখানে আসতে বলে রেখেছিলো সে। দেখলো রাস্তার একটু আগে নোভা দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে। ওরা যে এসেছে সেটা হয়তো খেয়াল করেনি। আমান ঈশিকার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরেটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। এখনি চলে যাবে মেয়েটা। আবার কবে একটু এতো কাছে পাবে কে জানে! এই কিছু সময়ের মধ্যেই মেয়েটার নেশা আরো তীব্রভাবে ঝেঁকে ধরেছে তাকে। নাহ! এবার তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিকাকে ডেকে ঘুম থেকে তুললো আমান। তারপর ঈশিকার ব্যাগ আর ফোনটা হাতে দিয়ে নরম গলায় বললো,
—-” নিয়মমাফিক খাবে। খাওয়ায় যেনো কোনো গাফিলতি না হয়। আর মনে করে মেডিসিন নেবে৷ পা পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভার্সিটি যাবার দরকার নেই। কল করলে কল ধরবে৷ ফোন বন্ধ রাখবে না।”

ঈশিকা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ কিন্তু মুখে কিছু বললো না। তার ভেতরেও কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করছে। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ই আমান ঈশিকার হাত ধরে কিছুটা কাছে টেনে এনে কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বললো,
—-” নিজের খেয়াল রেখো লক্ষীটা!”
ঈশিকা “হুম” বলে মাথা নিচু করে রইলো।

এরইমধ্যে হঠাৎ নোভা আমানের গাড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে নোভাকে দেখে আমানের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালে আমান বললো,
—-” আমি আসতে বলেছি ওকে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। গাড়ির ডোর খুলে নামলে নোভা কাছে এসে ধরলো। বললো,
—-” কিরে পায়ের কি অবস্থা?”
—-” আগের থেকে কিছুটা ভালো।”
তারপর আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আসছি…!”
আমান মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে ফের পেছনে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
—” ভালো থাকবেন।”
বলে আর দাড়ালো না। নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো। আমানও ঈশিকার যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফস করে একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। উফ! এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে!!!

প্রথম কথাটা নোভাই শুরু করলো।
—-” ব্যাপারটা কি বলতো? আমান ভাইয়া কাল হুট করে এসে অমন করে নিয়ে গেলো তোকে। আবার কল করে আমাকে বললো আন্টিকে বলতে যে তুই আমার বাসায় থাকবি দুদিন। আবার আজকেই বললো তোদের বাড়ির কাছে আসতে তোর নাকি পায়ে চোট! মানে বুঝলাম না! কাহিনি কি?”

ঈশিকা থেমে গিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” পরে সব বলবো তোকে। আপাতত বাসায় এ ব্যাপারে কিছু বলিস না।”
—-” আচ্ছা ঠিকাছে। আর সে তো আমি এমনিতেও বলবো না। ভাইয়া আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। ভেতরটা হঠাৎ ই গুমোট মেরে আছে!
.
.
.
ঈশিকা কলিংবেল চাপতেই কাজের মহিলা দরজা খুলে দিলো। ঘরে ঢুকতেই আফসানা চৌধুরী এগিয়ে এলেন। ঈশিকাকে দেখে হাল্কা রাগ মেশানো গলায় বললো,
—-” কি? বেড়ানো শেষ? তা আজকেই এলে কেনো? দু’দিন না থাকার কথা ছিলো?”
ঈশিকা উত্তর না দিয়ে নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে সোফায় বসতে নিলে আফসানা চৌধুরীর চোখ যায় পায়ের দিকে। ভ্রু কুচকে বললো,
—-” একিরে! পায়ের আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ কিসের?”
ঈশিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না। নোভাই কিছু একটা ভেবে আমতা আমতা করে বললো,
—-” আসলে আন্টি…বাথরুমে পা পিছলে পরে গেছিলো। তাই আঙ্গুলে একটু চোট পেয়েছে৷”
—-” একটু চোট পেলে ব্যান্ডেজ কেনো!? আর হ্যাঁ রে…তুই কি কোনো কালেও নিজের খেয়াল রাখতে শিখবি না? এতো বড় মেয়ে…”
—-” আন্টি থাক না…মেজর কিছুনা। আর ইচ্ছা করে তো আর পরেনি। এক্সিডেন্ট ছিলো মাত্র৷” বাধা দিয়ে বললো নোভা। আর ঈশিকা বকা শুনে মুখ হাড়ি বানিয়ে আছে৷ সব দোষ ওই লম্বু শয়তান টার।

আফসানা চৌধুরী আর কিছু বললো না। বিরক্তি নিয়ে নোভা কে বলে ঈশিকাকে ঘরে নিয়ে যেতে বললেন। এরমধেই ঈশিকার ভাই ইয়ান ফুটবল খেলে এসে মাটি পা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার আফসানা চৌধুরীর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। লেগে পরলো তার পিছনে। ঈশিকার ওপরের রাগ যেনো তার ওপর ঝারছে।
.
.
.
.
আমান বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার একটু আগে। আমানকে দেখে আরমান আহমেদ আর রাজিয়া বেগম অবাক ই হলেন। ছেলের তো দু’দিনের আগে বাড়ি মুখো হওয়ার কথা ছিলোনা। হঠাৎ আজকেই ফিরে এলো! আরমান আহমেদ কারণ জানতে চাইলে আমান অন্য বাহানা দেখিয়ে কাটিয়ে দিয়ে ওপরে চলে গেলো। রাজিয়া বেগমও আর বিশেষ কিছু বললেন না। খুব রাগ অভিমান জমে আছে ছেলের ওপর। বয়স আটাশ এর কোটায় অথচ খাম খেয়ালি পনা গেলো না। আগে তো বিয়ে থার কথা বললে কাটিয়ে যেতো আর এখন তো…! সব কিছুতেই নিজের মর্জির মালিক সে।
.
.
রাতে অফিস থেকে ফিরে ইফতেখার চৌধুরী মেয়ের পা এর খবর শুনে ছুটে এলেন মেয়ের ঘরে৷ মেয়েটা তার বড্ড আদরের৷ আরো চেহারাখানা তার মায়ের মতো হয়েছে কিনা? মেয়েটাকে দেখলেই মায়ের কথা মনে পরে যায়। কিন্তু এসে দেখলেন ঘুমিয়ে গেছে ঈশিকা। তিনি আর জাগালেন না তাকে। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে গায়ে চাদর টেনে বাতি নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
.
.
আমানের ঘুম ভেঙে গেলো রাত এগারোটার দিক। ভীষন টায়ার্ড লাগায় এসেই ফ্রেস হয়ে খেয়ে শুয়ে পরেছিলো। তার আগে যদিও দুবার ঈশিকাকে কল করেছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ তার৷ এতো পই পই করে বলে দিলো ফোন বন্ধ না রাখতে অথচ কে শোনে কার কথা? সে আর তার ঘুম একদিকে তো বাকি দুনিয়া আরেকদিকে। কে জানে পায়ের কি হাল? খেলো কিনা ঠিকমতো? নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। খাওয়া নিয়ে যে ঝামেলা করে বাচ্চাদের মতো!!

ঈশিকাকে একবার কল করার কথা ভেবেও করলো না আমান। এখন ফোন অন থাকলেও নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পরেছে। সেদিন রাতের কথা পরতেই হাসি পেয়ে গেলো আমানের। কেমন ভুতের ভয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে তার বুকের সাথে সেটে শুয়ে ছিলো! আমান আনমনে হেসে পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরেই বিড়বিড় করে বললো,

” সারাজীবনের জন্য এই বুকের পাজরের ভেতর রেখে দিতে চাই তোমায় ঈশু! বড্ড ভালোবাসি যে লক্ষীটা!”
.
.
.
চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *