মায়াবিনী

® মায়াবিনী—– পর্ব- ৯

অয়নী: আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু এখনো পেলাম না….!
নীল: কোন প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজছো তুমি..
অয়নী: নীল, তুমি আসলে কে..??
নীল: মানেহ্ কি আবল তাবল প্রশ্ন করছো আমাকে…
অয়নী: না….আবল তাবল না… আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো কে তুমি…?
নীল: (অন্যদিকে তাকিয়ে) আশ্চর্য আমি একজন ডাক্তার,,,,,ডা.নীল আমি….!
অয়নী: উহু….
নীল: মানে..
অয়নী: (জোরে জোরে) তুমি যদি ডাক্তারই হও তাহলে জানলে কি করে যে বাড়ির সামনে আজ এতো বড় অপারেশন হবে…..!
নীল: মানে কি…!
অয়নী: জানলে কি করে আমাকে মারার জন্য ওই লোক গুলোই পাঠানো হবে…!জানলে কি করে দোকানে ওই টাইম বোম্ব ফিট করা ছিলো ওখানে….!!
নীল: কি বলছো তুমি এগুলো অয়নী…..!
অয়নী: বলো…উত্তর দাও..
নীল: আমি কি উত্তর দিবো অয়নী……!
অয়নী: বাব্বহ্… অয়নী….! হঠাৎ অরু থেকে অয়নী….. হা হা হা..!
নীল: তুমি ভূল ব্যাখ্যা করছো অয়নী….!
অয়নী: তাই না, আমি ভূল ব্যাখ্যা করছি….!!
নীল: ওয়েট..ওয়েট..
অয়নী: কি..!
নীল: কি যেনো বললে তুমি..ওই টাইম বোম্ব.
অয়নী: হুম…তো
নীল: ওই লোকগুলো…! তাই না…!
অয়নী: কি বলতে চাইছো তুমি..!
নীল: তুমি জানলে কি করে ওখানে টাইম বোম্ব ফিট করা ছিলো আর কোন টাইম বোম্ব…
অয়নী: মা..মানে,,
নীল: তার মানে তুমি ওই লোকগুলোকে চেনো…নয়তো জানলে কি করে ওরা তোমাকেই মারতে এসেছিলো….বলো অয়নী ওরা কারা….? বলো,,
অয়নী: তার আগে তুমি বলো তুমি আসলে কে…
বিখ্যাত সুনামধন্য ডা. নীল নাকি অন্য কেও….!
যার মুখোশের আড়ালে রয়েছে আরেকটা ভিন্নজগৎ,,,অন্য রুপ..অন্য নীল যাকে কেও চিনেনা….! বলো মুখশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নীল টা কে…! বলো আমাকে,,
নীল: তুমি কি আমাকে কোনো ভাবে সন্দেহ করছো অয়নী….!
অয়নী: না…
নীল: তাহলে
অয়নী: জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা… লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর সত্যটাকে সামনে নিয়ে আসা.. জানতে চাই আমার পাঁচ বছর আগের সেই বেস্ট ফ্রেন্ড যে কিনা আমার জীবনের সব কিছু ছিলো.. আমার নিঃশ্বাস… আমার হৃৎপিন্ডের প্রিতিটা স্পন্দন যাকে কল্পনা না করে একটা ক্রিয়া করতো না,,, যে আমাকে ছায়ার মতো আড়াল করে রাখতো সব বিপদ থেকে..কখোনো কোনো কিছু হলে আগে সামনে এসে দাড়াতো…যে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ভালোবেসে অরু বলে ডাকতো সেই নীল টা আসলে কে…কি তার পরিচয়..কি করে সে আসলে…সত্যিই কি ডাক্তার সে, নাকি এখনো অন্ধকারে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা তথ্য..অজানা ইতিহাস…আর ভয়ংকর রহস্য….আমি জানতে চাই নীল…বলো আমাকে….! তুমি…আসলে….কে…? বলো..
নীল: অরু আমি একজন ডাক্তা…
অয়নী: উহু সেটা আমি জানি…শুধু আমি নয় পুরে বিশ্ব জানে তুমি একজন বিখ্যাতো সার্জারি স্পেশালিষ্ট…. কিন্তু সবাই যেটা জানেনা…কি তোমার আসল পরিচয়….ডাক্তারির পাশাপাশি বা তার থেকেও বড় কোনো একটা পরিচয় আছে তেমার যেটা কেও হয়তে জানেনা…সেইটা জানতে চাইছি আমি…! তোমার অরুকে বলবেনা….!
নীল: ইমোশনালি ব্ল্যকমেল…!
অয়নী: উহু..ব্ল্যাকমেল নয়… বন্ধু হিসাবে জানার অধিকার…..!
নীল : অয়নী…! তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো…..!
অয়নী: উহু কথা ঘোরাবার ব্যার্থ চেষ্টা করোনা….সন্দেহ নয় যার সাথে ১ মাস ধরে একই বাড়িতে আছি তার সম্পর্কে তো আমার এটুকু জানার অধিকার আছে…তাই নয় কি…!
নীল: সরি অয়নী আমি তেমাকে বলতে পারবনা…!
অয়নী: তারমানে তুমি স্বীকার করলে যে তোমার আরো একটা পরিচয় আছে….! কিন্তু সেটা কি…!
নীল: (রেগে গিয়ে) হ্যা….হ্যা..আমার আরো একটা পরিচয় আছে….. তো কি হয়েছে..!
অয়নী: (জোরে জোরে) তো কি সেটা… বলতে কিসের এতো সংকোচবোধ..কিসের এতো বাধা…
নীল: আছে সমস্যা আছে….
অয়নী: কি এমন কাজ করে তুমি যে আমাকে বলতে এতো বাধা….কোনো চক্রে জড়িতে নওতো তুমি…
নীল: অরু…..!!! কি যা তা বলছো তুমি তখন থেকে…
অয়নী: তাহলে বলো তুমি,কে…??
নীল: শুনতে চাও না তুমি আমি কে…?
অয়নী: হ্যা..
নীল: তো শোনো.
অয়নী: শুনছিইতো বলছোনা কেনো….?
নীল: আমি একজন….
এমন সময় কাজের মানুষ এসে বললো
: মামা,, এই সাথী খালা চইলা আইচে,,,খাবার টেবিলে আপনাদের লগে খাবে বইলা বইসা আছে..! আপনাদের কইলে ওহেন যাইতে…! তারতারি চইলা আসেন….!
: যাও আসছি….!
বলেই নীল উনার সাথে বেরিয়ে গেলো..!
অয়নী মনে মনে বলছে, ” এর রহস্য তো আমি কোনো ভাবে উদঘটন করেই ছাড়বো….! আচ্ছা এই নীলটা কে….! হায় আল্লাহ্ কোনো ভাবে এই নীলই সে নয়তো যাকে গত দুইবছর ধরে পাগলের মতে আমি খুঁজে চলেছি….! তাই যদি হয় তাহলে তো….!!!!”
ডাইনিং আওয়াজ আসছে সাথী অয়নীকে ডাকছে খেতে আসার জন্য…!
অয়নী আর সাত পাঁচ না ভেবে চলে গেলো খেতে। অয়নী মনে মনে বলছে,” আর ভাবতে পারছিনা…মাথাট খুব ধরেছে…আপাতত এটা থাক,, এটা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে… অয়নী ডাইনিং এর উদ্দেশ্য পা বাড়ালো…!
সাথী: এই আয় আয় অয়নী বস খেয়ে নে…! সুপ্ত খেয়েছে..?
নীল: হ্যা, আমি খাইয়ে দিয়েছি..
সাথী: জোরে জেরে কথা শোনা যাচ্ছিলো যে,,
নীল: ও হ্যা ওই অয়নী বলছে চলে যাবে তাই,,, এই নিয়ে আর কি,
সাথী: ওও..
নীল: হুম..
সাথী: আজকে নাকি বাইরে কি হয়েছে..কিছু জানিস..!
নীল: ও হ্যা ওই কি যেনো হয়েছে গোলমাল আর কি। বুঝই তো ভোটের আগের রেশ শুরু হয়ে গেছে,,, তাছাড়া কিছু না…
সাথী: ওও,,তাই বল আমি আবার ভাবলাম….
অয়নী চুপ করে বসে আছে..!
সাথী: কিরে অয়নী চুপ করে আছিস যে,,
অয়নী: কই না তো!!
সাথী: খা.. খা..,,
অয়নী: আপু আজ এতিমখানা তে গিয়েছিলেন শুনলাম…
সাথী: হুম
অয়নী: ওখানে গিয়ে কি করলেন,,
সাথী: বাচ্চাদের সাথে কথা বললাম,,, খাবার পায় কিনা ঠিক মতো তা জানলাম,,ওদের বিকেলে বিনোদন দোওয়া হয় কিনা সেটা খোঁজ নিলাম..
মুসলিম বাচ্চাদের পবিত্র কুরআন পাঠ করানো হয় কিনা সেটা শুনলাম আবার অন্য ধর্মের বাচ্চাদের ঠিকমতো তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় কিনা….
এভাবে সাথী গল্প করছিলো সেখানে কি করলো আর ভবিষ্যতে কি করার প্ল্যান আছে,,,
কিছুক্ষণ পর
সাথী: আমার একটা ইচ্ছে ছিলো রে,,,পুরণ হবে কি না জানিনা,,
নীল: কি ইচ্ছা আপু,,
অয়নী: কি আপু..
সাথী: হুম….তোরা দুজনই পারবি সেটা পুরণ করতে…
নীল: মানে কি ইচ্ছে সেটাতো বল.
অয়নী: আমরা….! কি আপু
সাথী: বলছি,,
নীল: হু বল..
সাথী: আমার পাসপোর্ট হাতে এসে গেছে এখন তোর ভাইয়ার কাছে বিদেশে চলে যাবো….ফিরতে অনেক দেরি হবে…!
নীল: তো..
সাথী: তো বাইরে যাওয়ার আগেই আমি নীলের বিয়ে দিয়ে যেতে চাই…!
এ কথা শুনেই নীলের বিষম লেগে গেছে…জোরে কাশছে…অয়নী দ্রুতো পানি এগিয়ে দিলো…!
নীল: কি..!
সাথী: ঠিকই শুনেছিস…
অয়নী: ওয়াও…এ তো ভালে খবর… আপু কবে থেকে মেয়ে দেখা শুরু করবে….!
সাথী: মেয়ে দেখা হয়ে গেছে…!
অয়নী: আমাকে একাবারও জানালেনা আপু
সাথী: হা হা হা
নীল: মানে কি এসবের,,
অয়নী: মেয়ের নাম কি…? কোথায় থাকে…! কি করে..দেখতে কেমন..!
সাথী: দেখতে আল্লহ্ র রহমতে সুন্দর..আর নাম টাম সব বলবো পরে….!
অয়নী: আচ্ছা
সাথী: এই সপ্তাহের ভিতরে বিয়ে সেরে ফেলতে চাই…
নীল: আমি এখানে এখনো বসে আছি…! কেও জিজ্ঞেস করছেনা কিছু,,
সাথী: তুই চুপ থাক,,
অয়নী: আপু তাহলে তো দ্রুতই শুরু করতে হবে..
সাথী: হু….!
অয়নী: তবে আপু তোমাকে নীলের সম্পর্কে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চায়…
নীল: অয়নী প্লিজ এগুলো কি এখন না বললেই নয়
অয়নী: উহু এখনই বলতে হবে….নয়তো সারাজীবন পস্তাতে হবে….!
নীল: প্লিজ পরে বলো…
অয়নী: জ্বী না..
সাথী: কি রে অয়নী….!
নীল: অয়নী প্লিজ..! এমন করোনা….
অয়নী: না নীল সাথী আপুর সব জানা দরকার…!
সাথী: তুই বলতো অয়নী।
অয়নী: আপু জানো নীল না একজনকে খুব ভালবাসে।।আমাকে বলেছে,,,কিন্তু কপাল খারাপ মেয়েটা নীলকে ছেড়ে গিয়েছে..! নাহ্ মেয়েটারই কপাল খারাপ নয়তো নীল এর মতো একজনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারে…..! আর জানো আপু নীল আজও তাকে মনে মনে ভালবাসে…! এখনো তার পথ চেয়ে রয়েছে…!
সাথী: তাই নাকি..!
অয়নী: হুম আপু
সাথী: ভাই সত্যি….!
নীল সাথীর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে রেখে মাথাটা নাড়লো…! সাথী খুব কষ্ট করে হাসি থামিয়েছে…!
সাথী: ওও
অয়নী: তাই আপু ওর কাছ থেকে জেনে নাও কে সে.. নয়তো ও সারাজীবন কষ্টে থাকবে…
সাথী: হু..তা ঠিক..
অয়নী: আপু সম্ভব হলে বিয়ে ভেঙ্গে দাও
সাথী: নারে সম্ভব নয় মেয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে….!
অয়নী: কিন্তু ওই মেয়েটা….!
সাথী: হুম…বিয়েটা কিন্তু ওর সাথেই হচ্ছে…..!
অয়নী: তাই কে সে বলোনা….!
সাথী: শুনবি….!
অয়নী: হু….বলোনা আপু…!
সাথী: তো শোন
অয়নী: হুম
সাথী: নীলের ভালবাসার মানুষ,, আমার পছন্দ করা মেয়েটি,,, আর নীলকে ছেড়ে চলে যাওয়া মেয়ে যে আবার ফিরে এসেছে আর সে কে জানিস।
অয়নী: কে….!
সাথী: হা হা হা….সে আর কেও না রে পাগলী সেটা তুই নিজেই……!!!
অয়নী চমকে উঠলে,,, কি সব শুনছে..মনে হলো ভূলে কিছু শুনলো
অয়নী: কি…!
সাথী: হুম,,,ভাই ঠিক বলেছি না
নীল: ইয়ে মানে আপু…
সাথী: তোর মত নেই…!
নীল: না মানে
অয়নী: না নীল তা হয়না..!
সাথী: কেনো হয়না শুনি….!
অয়নী: আপা নীল এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাক্তি। ওর নিজের একটা ভবিষ্যৎ আছে..জীবন আছে..স্বপ্ন আছে..কতো ইচ্ছা আছে তাকে নিয়ে নিজের মনের কল্পনাতে…! রঙ দিয়ে সেগুলো মনের ভিতরে সাজিয়ে রেখেছে যতনে..! ওরও তো ইচ্ছের দাম থাকা উচিৎ আর আপু আমি এই। অবস্থাতে…না না আপু আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়
সাথী: হা,, হা,,হা,,,
অয়নী: কি হলো আপু হাসছো কেনো,,, আমি কি কিছু ভূল বললাম…!
সাথী: উহু
অয়নী: তাহলে…!
সাথী: বড্ড কথা শিখে গেছিস তুই..!
অয়নী: মানে…!
সাথী: ভূলে যাসনা তোর সাথে আমার সম্পর্ক বা চেনাজানা কিন্তু এই একমাসের নয় আমি তোকে ৫ বছর আগে থেকে চিনি….! আর তুই বদলালেও আমি কিন্তু আগের মতই আছি…! কান টেনে ছিড়ে নিবো কিন্তু…!
অয়নী কিছু বলছেনা গভীর দৃষ্টি দিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে…! মনে হচ্ছিলো যেনো কোনো ক্ষুদ্র জিনিস পর্যবেক্ষণ করছে ও…! তবে কিছুক্ষণ পর পর ওর চোখ কোন দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো নোনা জলরাশির ধারা…..!
অয়নী কিছুই বলতে পারছেনা,, চুপ করে আছে।।
সাথী: অয়নী,,তোর মনে একটা কথা ঘোরপাক খাচ্ছেনা এই একমাস ধরে..,,
অয়নী: ঘোরপাক….! হ্যা…
সাথী: সেটা আমি জানি কিন্তু তোকে,বলিনি কারন আমিও চাচ্ছিলাম এমন একটা দিন আসুক…!
অয়নী: মানে….!
সাথী: তোর কোন বিষয়ে সব থেকে বেশি কৌতুহল,, বা জানার ইচ্ছেটা তীব্র…
অয়নী: হুম….
সাথী: বল তাহলে
অয়নী: নীল আমার সাথে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলো কিন্তু ও ডাক্তার হলো কিভাবে…
সাথী: জানি এটাই তুই ভেবে চলেছিস…কিন্তু উত্তরটা আমি না নীলই বলুক…
নীল: আমি….!
সাথী: হু বল ভাই…!
নীল: না আমি পারবনা…!
সাথী: না ভাই…! তুই বল
নীল::পুরোনো কথা তুলে কি লাভ….!
সাথী: উহু এখনই বলার সময় কারন ওরও জানার দরকার তুই ওকে কতটা ভালবাসেছিলি…আর এখনে ভালোবাসিস…
সাথীর কথা শুনে অয়নী চমকে উঠে বিস্মিত চোখে হাজারো প্রশ্ন নিয়েয়ে তাকালো নীলের মুখের দিকে,,
অয়নী: মানে…! সাথী আপু কি বলছো
এসব…নীল…..!!!
নীল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো…সূর্যাস্তের অন্তীম মুহূর্ত দাড়িয়ে বলা শুরু করলো..
” অয়নী আমি তোমাকে প্রায় ছয় বছর ধরে চিনি..! আর ভালবেসেছি নিজের মনের মতো করে..ভেবেছিলাম প্রেমিক নয় আগে ভালো বন্ধু হবো,,,পাশে থাকবো ছায়ার মতো,, তারপর নিজের মনের কথাটা বলবো.. কিন্তু মন তা চাইলেও ললাট তা সমর্থন করলোনা…! হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকে….
অয়নী: কিন্তু নীল তোমাকে তো আমি কলেজ লাইফ থেকে চিনি তাহলে তুমি ছয় বছর বললা যে..পাঁচ বছর হয়তো,,
নীল: উহু… আমরা তোমার সামনের বাসায় থাকতাম আর তখন থেকে তোমাকে চিনতাম…
অয়নী হা করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। সব কেমন যেনো স্বপ্নের মতে লাগছে….! বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আভা এসে মুখে পড়ছিলো অয়নীর… আর তার মায়বী চোখ গুলো যেনো আরো মায়বী হয়ে উঠেছিলো…অয়নীরর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে নীলল.. সাথী কাশি দিয়ে বললো
সাথী: জানিস অয়নী তুই যখন রাজীবের সাথে চলে গেলি। তখন নীল খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছিলো। সারাদিন বদ্ধ ঘরে একাকি বসে থাকতে। কাওকে ঢুকতে দিতনা। সারাদিন তোর ছবি সামনে নিয়ে পড় থাকতো..
একপর্যায়ে ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। ৫ দিন আই.সি.ইউ তে ছিলো…ও বললো ও নাকি পড়াশোনা করবেনা। আমি কারণ জানতে চাইলে বললো ভার্সিটিতে তোর চারদিকে রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো ওকে পাগল করে তুলেছে…আমিও আর যেতে দিইনি ওকে…পরে পড়ে ও মেডিকেলে চান্স পায়… আর সেখানেই ওর সাথে কয়েকটা বন্ধুর পরিচয় হয়। ওরা নীলকে আস্তে আস্তে সারিয়ে তোলে…সবাই আমাকে বোন বলে ডাকে….মজাই লাগে আমার…
অয়নী চোখ দিয়ে রহস্যদূর্ভেদ্য জল গড়িয়ে পড়ছে… ও বারান্দায় আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
” না আপু। সেটা অনেকদিন আগের কথা। এখন দিন পাল্টিয়েছে সময়ের পরিবর্তন হয়েছে…! ওর মনের ভিতরে পরিবর্তন ঘটেছে…!
আর তারপর আপু আমি এখন সমাজের কাছে একটা ডিভোর্সি হিসাবে পরিচিত। এটা কখোনোই সম্ভব নয় একটা ডিভের্সীর সাথে নীলের বিয়ে….!
ও মান সম্মান বলতে কিছু থাকবেনা…..!
নীল: এই অয়নী আমি এতক্ষণ কোনো নাটক করছিনা। আর জীবনটা ওই স্টার জলসা বা জি বাংলা সিরিয়াল না। এটা মনে রেখো।
ওইসব আবল তাবল জিনিস ওখানেই হয় যে নিজের স্বামীকে আরেকজনের সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া, নয়তো আজাইরা ভূল বোঝাবুঝি করে ডিভের্স অথবা কথায় কথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া….এসব কুরুচিপূর্ণ জিনিস ওখানেই সম্ভব বাস্তবে নয় রে। আর আমি তোকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি…!
সাথী নীলের কথা শুনে হেসে ফেললো।
নীল: কি হলো আপু তোর কি মনে হলো আমি কোনে জোকস বলছি হুমম… যে এভাবে হাসতেছিস
সাথী: রাগ করিস না আসলে আমি তোর স্টার জলসার নাটক গুলোর সারমর্ম শুনে হেসে ফেলেছি..
নীল: বাহ্ ভালো তো..
এমন সময় সুপ্ত এসে বলছে,
সুপ্ত: বাবাই বাবাই আমাকে ভূতেল গল্প থুনাবানা….
নীল: ও হ্যা….আমি তো ভূলেই গেছিলাম
ল বাবাই….চলো আজ একটা বড়ো ভূতের গল্প শোনাবো
সুপ্ত: তলো..তলো
অয়নী: সুপ্ত কতবার বলেছিনা চ কে ত এর মতো উচ্চারণ করবেনা…
নীল: চলোতো বাবাই আমারা গল্প করবো…এরা সব পঁচা…
অয়নী: এতে ভূতের গল্প যে কোই থেকে আসে আল্লাহই জানে
সাথী: দেখলি তো সুপ্ত কতো ভালবাসে ওকে আর নীলও,,তুই রাজী হয়ে যা প্লিজ….!
অয়নী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছে..
সাথী হেসে চলে গেলো…
মাঝরাতে অয়নী পানি খেতে ডাইনিং এ এসে দেখে নীলের ঘরে আলো জলছে। কাছে যেতেই শুনতে পেলো নীল কড়া আর ভারী কণ্ঠে কাকে যেনো ফোনে বলছে,
: আজকের ঘটনাটা কাম্য ছিলোনা
:—–
: তুই সময় চেয়েছিলি দিয়েছিলাম বাট..
:—-
: আর ওকে না সরিয়ে দিলেও পারতিস জানোয়ার…!
:—–
: তোকে হাড়ে হাড়ে পস্তাতে হবে…
: —-
এ যেনো এক অন্য নীলকে দেখছে অয়নী…
উদ্ভট কণ্ঠ,,কথা বলার কেমন ধরন
পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো অয়নী দাড়িয়ে আছে। নীল চমকে উঠলেও তা না প্রকাশ করে বললো,
: কিছু বলবে…কাল শুনবরে…আজা মাথাটা বড্ড ধরেছে আমি লাইব্রেরি রুমে গেলাম.. শুভ রাত্রী
বলেই নীল অয়নীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই….
< <<চলবে>>>