মায়াবিনী

® মায়াবিনী—– পর্ব- ৭

লেখাঃ নিলয় রসূল
অয়নী: একি….? সুপ্ত তোমার কাছে কেনো…..???
কেবিনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অয়নী নীলকে উদ্দেশ্য করে রুক্ষভাবে বললো কথাটা। আর প্রচন্ড রাগের সাথে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে যেনো ওরা সুপ্ত কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো। আর সেসময় ধরা পরে গিয়েছে।
অয়নী বেড থেকে দ্রুতো উঠে সুপ্তকে নিতে যাবে এমন সময় সব নার্সরা তাকে চেপে ধরে রাখলো। সবাই অয়নীকে শান্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করছিলো।
পরিবেশ রীতিমত খারাপ হতে চলেছিলো। অয়নী চিল্লিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু বার বার মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরছিলো। নীল কিছু বলতেও পারছেনা কারণ এখন ও বললে অয়নী আরো রেগে মাথা গরম করবে তাতে বিপদ বাড়বে বৈকি কমবেনা। তারপরও নীল ইতস্তত করতে করতে বললো
নীল: না মানে অয়নী তুমি যা ভাবছো তা নয়…আসলে….
অয়নী: (ব্যাপক জোরে চিৎকার করে) চুপ……! একদম চুপ আর একটা কথা…
অয়নী বাকী কথাগুলো বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। আর বেডের ওপর ধপ করে পড়ে গেলো।
অয়নী হৃৎসপন্দন কমে যাচ্ছিলো। নীল সুপ্তকে সাথীর হাতে দিয়ে দৌড়ে এসে ইনজকশন দিলো। আরো কিছু ব্যাবস্থা গ্রহন করলো….!
টিনাসহ অন্যান্য নার্সরা দ্রুতো এসে অয়নীর হাত পায়ের তালু গরম করার চেষ্টা করছিলো। রক্ত ধীরে ধীরে হিম শিতল হয়ে যাচ্ছিলো। আর কম্পিউটারে বার বার দেখাচ্ছিলো অয়নীর ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে। বার বার ফল করছিলো।
নীল টিনা দ্রুতই বুঝতে পারছিলো সামনে খারাপ কিছু অপেক্ষা করে আছে ওদের জন্য।সাথী শিশিরকেও ডেকে আনলো। সবাই মিলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাঁচানোর। আগত সময়ের কথা ভেবে নীল এর শরীর শিউরে উঠলো। শরীরের লোম গুলো দাড়িয়ে গেলো। সবাই খুব ভয় পাচ্ছে না জানি এখন কি হয়।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অয়নী আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।
আস্তে আস্তে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হলো। একটু পরে ঘুমের ঔষধ দিয়ে নীল চলে গেলো।
ওইদিন আর সামনে আসেনি নীল। রাতে যখন অয়নী ঘুমিয়ে ছিলো তখন এসে অনেক্ষণ বসে ছিলো। সকল প্রকার খোঁজ নিলো। আর দরকারি যাবতীয় কিছু কিনে দিয়ে গেলো। টিনা সারারাত সুপ্তকে কোলে নিয়ে বসে আছে অয়নীর মাথার কাছে। টিনা কিছু বুঝতে পারছেনা কি থেকে কি হচ্ছে কেনে হচ্ছে। “আর এতো কথা এতো ইতিহাস ও লুকিয়ে ছিলো তা তো আমার জানা ছিলোনা। ভাবি তো আমাকে কোনোদিন কিছু বলেনি। অবশ্য বলেনি বললে ভূল হবে বলার জন্য যে সময়, সুযোগ দরকার তার কোনোটাই তো আমরা দিইনি। সারাদিন বড় ভাবির খোটা আর মায়ের অত্যাচার আর ওই জানোয়ারটার মার
আল্লাহ্‌ সত্যিই মানুষের ব্যাপক ধৈর্য্য দিয়েছে নয়তো কিভাবে এতো মার খেয়ে অত্যাচারিত হয়ে ভাবি বেঁচে ছিলো। অবশ্য একে বেঁচে থাকা বলা যায়না। আত্মীক মৃত্যু তো সেই কবেই হয়েছে। টিকে রয়েছে শুধু প্রাণটুকু আর দেহটা। আর এখন সেটাও যেতে বসেছে।
কখোনো ভাবিনী আমার সাথে আমার ভাবি আর আমার প্রাণ সুপ্ত সোনার দেখা হবে।
কিন্তু ও বাড়িতে গেলে তো আর এদের ঢুকতে দেবেনা। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে। আর অপমান এর কথাটা না হয় থাক। কিন্তু ভাবি সুপ্ত সোনাকে নিয়ে কোথায় যাবে…কি করবে…কিভাবে বাঁচবে,,,চলবে কি করে। হায় আল্লাহ্‌ তুমি ওদের হেদায়ত
করো। আল্লাহ্‌ আমি তোমার কাছে কোনোদিন কিছু চাইনি আর চাইবোও না তুমি শুধু এদের মাথার ছাতার ব্যাবস্থাটা করে দিও আল্লাহ্‌…”
সুপ্তের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে টিনার বুকটা ফেটে গেলো। একবারে অয়নীর মতো বড্ড চুপচাপ। সকাল থেকে সেভাবে কিছু খায়নি। কিন্তু কোনো কান্না করেনি। উল্টে টিনার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো কিছুই হয়নি,,খিদা লাগবে কেনো সেটা কি জিনিস…!
টিনাকে পেলে আর কিছুই চাইনা বাচ্চাটার.।
নীল আগেই কিছু খাবার কিনে দিয়েছিলো সুপ্তর জন্য। টিনা সুপ্তকে জাগিয়ে তুলে খাইয়ে দিলো। সুপ্তর আবার সব প্রশ্ন টিনার কাছে।
সুপ্ত টিনার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলছে
” তিনা, মাম্মা ঘুম তেকে উতবেনা…! মাম্মাল কোলে উতবো….!”
টিনা: না শোনা তোমার মাম্মার শরীর খারাপ। ঘুম থেকে উঠবেনা এখন।
সুপ্তত: তিনা, মাম্মাল গায়ে কি লাগানো ওতো। মাতায় থাদা থাদা ওগুলো কি….! মামা ওভাবে থুয়ে আথে কেনো..??”
টিনা সুপ্তর প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলো। ছোটো বাচ্চাটা আজ যে প্রশ্ন করেছে সেটার উত্তর নাই টিনার কাছে,,আর থাকলেও সেটা সুপ্তর কল্পনার জগতের বাইরে….!
টিনা সুপ্তকে নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। একসময় সুপ্ত তার পরম প্রিয়ো জায়গা তার তিনার(টিনা) কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
নীল রাতে বেশ কয়েকবার ফোনে সুপ্তর খোঁজ নিয়েছে…!
সকাল হতেই নীল চলে আসলো। এসে দেখে সুপ্ত টিনার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর টিনা চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। অয়নী ঘুম থেকে উঠে প্রভাতের দৃশ্য দেখছিলো।
চোখ ফেরাতেই দেখে নীল ওর দিকে তাকিয়ে আছে…!
সকালে শান্ত মেজাজ নিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলেও নীলকে দেখে যেনো মনে হলো ক্রোধের আগুন আকাশ ছুলো।
একপ্রকার চিৎকার করে বলো উঠলো,
অয়নী: (চিল্লিয়ে) একি……! তুমিই…..?
নীল চমকে উঠলো। এমন পরিস্থিতির জন্য। মোটেও প্রস্তুত ছিলনা ও। টিনা লাফ মেরে উঠলো এতো জোরে চিৎকার শুনে। দু একটা নার্সও কেবিনে ঢুকে পড়েছে,,,,
টিনা: ভাবি কি হলো…!
নার্স: মেডাম কোনো সমস্যা….! স্যার কিছু কি হয়েছে…!
টিনা: ভাবি…কি হলো এভাবে চিৎকার করে উঠলে যে…!
অয়নী: ও এখানে কি করছে…!( বিরক্তিকরভাবে চিল্লিয়ে উঠলো)
টিনা: মানে…
অয়নী: ও এখানে কেনো….?
টিনা: ভাবি কাল তুমি আবার অসুস্থ হয়েছিলা। উনিই কিন্তু তোমাকে বাচিঁয়েছে…!
অয়নী: চুপ কর টিনা। বাঁচা মরার মালিক আল্লাহ্ এর হাতে। আর তারপর যদি কেও সাহায্য করে তে সেটা ডাক্তাররা…!
টিনা: হুম..তাই তো….
অয়নী: ধুর….!
সাথী: কিন্তু অয়নী…!
নীল সাথীকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো। কারণ অয়নী মেন্টালি ডিপ্রেসড। আর তারওপর আবার মাথায় অপারেশন হয়েছে তাই কোনো রকম রিস্ক নেওয়াটা ঠিক হবেনা।
অয়নী: দয়া করে আপনারা বাইরে যান….আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলবো। টিনা ডাক্তারকে পাঠিয়ে দে….. আর টিনা কোনো মানুষ সম্পর্কে সুনার বা দূর্নাম কোনোটাই করবিনা প্রমান ছাড়া।
একথা বলে অয়নী অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলো..
নীল সবাইকে চোখের ইশারায় চলে যেতে বললো।
সবাই একে একে চলে গেলো বাইরে। তারপর নীল একটা চেয়ার টেনে বেডের কাছে এসে বসলো।
অয়নী চমকে উঠে রাগী চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে বললো,
: কি হলো কি..! সবাইকে চলে যেতে বলেছি। সবাইকে…
: কেনো..!
: কিহ্.. সে কইফিয়ত কি আমি তোমাকে দিবো
: না…
: তাহলে.
: কিছুনা বাদ দেও
: আমি ডাক্তারের সাথে পার্সোনালি কথা বলতে চায় প্লিজ….!
: হুম…বলো
: কিহ্ আমি তোমার সামনে বলবো কোন দুঃখে।।
: কই আমার সামনে তো বলতে বলছিনা…
: মানে কি….কিছুক্ষণ আগে না বললা বলতে…
: হু..তুমি না বললা ডাক্তারকে কি বলতে চাও
: দেখো নীল কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবানা।
: ঘুরাচ্ছিনাতো,,,আমি তে স্থিরই আছি…..!
: কিহ্ তুমি কি ডাক্তার নাকি…আজব সব..
এমন সময় টিনা কেবিনে অয়নীর M.R.I. Scan এর রিপোর্ট নিয়ে ঢুকছিলো আর বলছিলো,
টিনা: হুম ভাবি নীল স্যারই ডাক্তার..তোমাকে যার কথা বলেছিলাম। যে আমাকে বোনের মতো ভালবাসে ইনিই সেই স্যার
অয়নী: মানে কি…!
টিনা: ভাবি জানো স্যারই তোমার অপারেশন করেছে। শেষেরটা নয়তো এতক্ষণে কিছু একটা অঘটন ঘটতো….!
অয়নী:(আশ্চর্যেরর সঙ্গে) কি….! আর হ্যা এক্সিডেন্ট,, কয়েকটা বাজে লোক তাড়া করেছিলো তারপর প্রচুর আলো আর মনে নেই কিছু…টিনা আমার মাথা খুব ব্যাথা করছে…..
নীল: ওরা সব এখন থানায় আছে। আর তুমি এখন রেস্ট নাও…
অয়নী: কিন্তু নীল তুমি….!
নীল: জানি..হাজারো প্রশ্ন তোমার মনের আকাশে উকি মারছে….জানতে চাইছে গহীনে লুকিয়ে থাকা অজানাকে….! তুমি এখন ঘুমাউ। সময় এলে সবকিছু নিজেই বুঝতে পারবে।।।
অয়নী: টিনা সুপ্তকে দিয়ে যা আমার কাছে,,,,
টিনা সুপ্তকে দিয়ে বেরিয়ে আসবে এমন সময় সুপ্ত করুণ চোখে অয়নীর দিকে তাকালো আর বললো,” মাম্মা আমাল তিনা..।তিনা…. তিনা…”
অয়নী বুঝতে পারলো এখন ওকে টিনার কাছে না দিলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। টিনাকে বলল নিয়ে যেতে….
টিনার কোলে উঠেই সুপ্ত বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ” আমাল তিনা…!”
সবাই প্রায় হেসে ফেললো।
টিনার কাছে নীল সব শুনেছে। যা বুঝতে পেরেছে অয়নী হাজার চাইলেও আর ওই বাড়িতে ফিরতে পারবেনা। আবার বাবার বাড়ি যাওয়াটাও সম্ভব নয় এখন। তাহলে অয়নীর যাওয়ার কোনো জায়গা নাই….!
দিনরাত হাসপাতালে থেকে অয়নীর সেবা করেছে। সুপ্তর সাথেও ভীষণ সখ্যতা গড়ে উঠেছে ওর…..!
নীলের ওপর যে রাগের পাহাড় ছিলো অয়নীর তা এখন আর নেই,,তবে তা টিলা তে রুপ নিয়েছে….!
প্রায় দুই সপ্তাহ পর অয়নীকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো..।।
অয়নীর মাথা আজ আবার ব্যাথা করছে, মাথায় এখন হাজারো চিন্তা কোথায় যাবে কোথাও থাকবে।।।কি করবে….
হাসপাতালের। বাইরে এসে দাড়িয়ে আছে এক নিঃস তরুণীর ন্যায়। এমন সময় নীল সুপ্তকে কোলে নিয়ে বাইরে এলো। সাথে সাথি আর টিনাও ছিলো।
অয়নী: নীল সুপ্তকে আমার কাছে দাও। এতদিন তুমি আমার জন্য অনেক করেছো। আর ঋণের বোঝা বাড়াতে চাইনা… এতদিন আমার ট্রিটমেন্ট করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে জানি। আমি মরে গেলেও তা শেধ করতে পারবনা তাই ফালতু কথা বলবনা। আর এসব কিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবনা….! তবে তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
নীল: বক্তব্য দেওয়া কি শেষ,,
অয়নী: কি…
নীল: কি বললাম শুনতে পাওনি,,
অয়নী: এগুলো তোমার কাছে বক্তব্য মনে হলো…!
নীল: তা নয়তে কি।
অয়নী রেগে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে আর নীল মুগ্ধ নয়নে মিট মিট করে হাসছে আর দেখছে….! আর ভাবছে এই রাগী চোখ,,,, তারপরেই মায়বী চোখে তাকানো,গুছিয়ে কথা বলা,, কতইনা পছন্দ করতাম একসময়। ইশ আমি যদি আরেকটু সচেতন হতাম তাহলে আজকেট এই দিনটা হয়তো দেখতে হতোনা…!
সাথী এসে নীলের মাথায় চাটি মেরে বললো,
” ভাই কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে দর্শন দাও…!’
নীল মুখ ফুলিয়ে সাথীর দিকে তাকালে। সুপ্তকে নিয়ে খাবার কিনে আনলো। সুপ্তর হাতে একটা চিপস এর প্যাকেট। ও সেটা নাড়ছে বার বার। চিপস টর প্যাকেট নাড়লে যে কড়মড় আওয়াজ হয় তা বাচ্চারা আবার খুবই পছন্দ করে…..!
নীল: সবাই গাড়িতে আসন গ্রহন করো..!
অয়নী: কিন্তু কেনো..?
নীল: যা বলছি কর..
অয়নী: কিন্তু,,
নীল: কি বললাম,,
অয়নী: আচ্ছা আমি এদের সাথেই পিছনে বসছি
নীল: তোর কি আমাকে ড্রাইভার লাগে অরু
অরু নামটা শুনে অয়নী চমকে উঠেছে। সেই কতদিন আগে এই নামটা শুনেছিলো। আর আজ আবার শুনলো। ভিতরে একটা কেমন যেনো অনুভুতি হচ্ছে…..! নামটা শুনে অয়নীর মনের আকাশে মেঘ জমতে লাগলো,,,,
অয়নী: না… তা না
নীল : মানে কি লোকে আমাকে ড্রাইভার ভাববে তো
অয়নী:কেনো….!
নীল: অরু……!!
নীল: সবাই গাড়িতে উঠো। সাথী আপু আর টিনা পিছনে বসে আর অয়নী সামনে
অয়নী: কিন্তু কেনো…..!
নীল: অতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবনা অরু। যা বলছি তাই কর…
অয়নী : কিন্তু….
নীল : যা বললাম তাই কর
অয়নী: আচ্ছা…
অয়নী আর কথা বাড়ালনা। ইচ্ছে থাকলেও সেটা এখন সম্ভব নয়। অয়নীর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই শুধু রাস্তা আর গাছতলা ব্যাতিতো। তাই হয়তো এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলনা।
নীলকে সে বিশ্বাস করে এই কয়েকদিনে নয় পাঁচ বছর আগে থেকে। আর সাথে সাথীও রয়েছে তাহলে তো আর অতো চিন্তার কিছু নাই। অন্তত কিছুক্ষণ তে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে…! পরে না হয় নীলকে ধরে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে নিবো। ও নিশ্চয় আমার কথা ফেলতে পারবেনা। আর না হলে সাথী আপুর হাতে পায়ে ধরে একটা কাজ এর ব্যাবস্থা করে নিবো।
বিয়ের পর তো পড়তে পারিনী সেভাবে। রেজাল্টও তেমন ভালো নয়। আল্লাহ্‌ ই জানে সামনে কি অপেক্ষা করে আছে…!
আচ্ছা এতদিন হয়ে গেছে নীল তো নিশ্চয় বিয়ে করেছে। ওর স্ত্রী আমাকে কেমন ভাবে নেবে..! আবার ওর জীবনটা ঝামেলাই পড়বে না তো আমার জন্য। না সমস্যা নায় আমি তো আছি ওকে বুঝিয়ে বলে দেবো। কিন্তু আমাকে যদি ঢুকতেই না দেয় তখন কি হবে। বুঝতে পারছিনা…!
এমন সময় গাড়িটির চাকা একটা ছোটো গর্তে পড়ে গিয়েছিলো….তাই গাড়িটি ঝাকি দিয়ে উঠতেই অয়নী চমকে উঠলো…
নীল: এই সরি..সরি..সরি….মাথায় লাগেনি তো,,
অয়নী: না না সমস্যা নাই ঠিক আছে।।
নীল: সমস্যা হলে বল অরু..
অয়নী: আরে না সমস্য নাই। আসলে আমিই একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম ।
নীল: মাথা থেকে সব সমস্যা ঝেড়ে ফেল। ওয়েট একটা গান ছাড়ছি। যাত্রাপথে গান না শুনলে চলে….!
নীল গাড়িতে গান দিলো একটা,,গানের কথাগুলো ছিলো এমন,
” এক ই লা,, একা প্রজাপতি… ভূলে.. যায় উড়ারই কথা..
ডানায়…. তার ভর করেছে….বিষন্ন,,, এক নীরা–বতা…… ”
গানটা শুনছে আর বাইরে তাকিয়ে আছে অয়নী। চোখের কোণে কখন যে জল গড়িয়ে পড়ছে বুঝতে পারেনি ও। একদিকে গান বাজছে আর বাইরে গোধূলী লগ্ন বিরাজমান। এক অদ্ভুৎ পরিবেশ সৃষ্ট হয়েছে….
কিছুক্ষণ নীরবে কাঁদার পর এখন অনেকটা হালকা লাগছে অয়নীর। নীল এটাই চাচ্ছিলো। বুকের ওপর যখন কষ্টগুলো জমাট বেধে পাহাড় গড়ে তোলে তখন দরকার একটা নিরিবিলি পরিবেশে কিছুক্ষণ একা থাকা আর পুরোনো অতীত গুলো মনে করে চোখের ভিতরে ভারি হয়ে থাকা জলগুলো মুক্ত করে দেওয়া….!
আর তারপর অনেকটা হালকা লাগে নিজেকে…..!
সন্ধ্যারর একটু আগে বাসায় আসলো ওরা। যদিও আগে আসার কথা ছিলো। নীল ইচ্ছে করে রাস্তা পরিবর্তন করে যে দিক দিয়ে আসলে সময় লাগবে সেদিক দিয়ে এসেছে। ও চাচ্ছিলো অয়নী একটু নিজের জগৎ এ বিচরণ করুক….!
সবাই গাড়ি থেকে নামছে। অয়নী ভয়ে ভয়ে নামছে ভাবছে নীলের স্ত্রী হয়তো এসে বের করে দেবে…!
বাড়িতে ঢুকলো কিন্তু কোনো মেয়েকে দেখতে পেলনা। আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে..!
সবাই ফ্রেশ হয়ে রাতে যখন খেতে আসার জন্য অয়নীকে ডাকতে নীল আর সাথী এসেছে তখন অয়নী বলছে,
অয়নী: নীল একটা কথা জিজ্ঞেস করবো…?
নীল: হুম বলনা,,
অয়নী: ইয়ে মানে ভাবি কে তো দেখতে পাচ্ছিনা। উনি কি নেই..
এমন প্রশ্ন শুনে নীলের বিষম লেগে গেছে..!
সাথী:ডাইনিং এ আয় পানি আছে
বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো..!
নীল: নাহ্ নেই সে…!!
অয়নী: ওও,,কোথায় গিয়েছেন রে
নীল: আঁ…!
অয়নী: মানে কোথাও কি বেড়াতে গিয়েছেন…??
নীল বুঝতে পেরেছে অয়নী উত্তরটা বুঝতে পারেনি। তই দুষ্টামি করে বললো
নীল: চলে গেছে আমার জীবন থেকে রে..
অয়নী: ওমা কেনো..?
নীল: হা…. সে অনেক বছর আগের কথা। খুব ভালবাসতাম তাকে। সে আমার কোনো কথাই বুঝতে পারেনি। বুঝাতে চেয়েছিলাম যে প্রেমিক না আগে ভালো বন্ধু হবো আমরা। সে বুঝতে পারেনি সেদিন…জীবনের থেকে বেশি ভালবাসতাম তাকে। কিন্তু মানুষের কাজই হলো,, ” প্রলেপ লাগানো মুখোশধারী ব্যাক্তিদের সাথে চলা…! “তাই আমি আর তার সঙ্গী হতে পারিনী। তবে আমি তার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পেরেছিলাম। কিন্তু….! সে কি রেখে গেলো আমার জন্য…
অয়নী: কি…!
নীল: আমার জন্য তার প্রতি আফসোস। আজও খুঁজে ফিরি তাকে,,
অয়নী: পেয়েছিস..
নীল: হু…কিন্তু মনের কথাটা আজও বলতে পারিনী
অয়নী: আচ্ছা আমি কি তাকে কোনোভাবে চিনি….?? মানে আমার পরিচিতো কি সে….!
নীল: হুম..
অয়নী: কে সে,, প্লিজ বল..
নীল: সময় করে একদিন দেখা করাবোনি তোর সাথে…..! এখন খেতে আয়….!
এভাবে কাটছিলো সময়।
অয়নী বেশ কয়েকবার চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সাথী বকা দিয়ে যেতে দেয়নি। অয়নীর ডান হাত ভাঙ্গা, তাই সব কাজ করতে পারতনা। নীল অনেক সাহায্য করতো। আর এদিকে সুপ্ত কোনো নামেই নীল কে ডাকতে পারেনা। তাই ও নিজে থেকেই বাবাই বলে ডাকে….!
অয়নীর এ নিয়ে বকা দিছিলো একবার। সুপ্তর তো জ্বর এসে গিয়েছিলো। নীল রাগ করে কথা বলতনা আর অয়নীর সাথে। সারাদিন সুপ্তর পাশে থেকে ওকে গল্প বলে,, ওর সাথে খেলাধূলা করতো….! আর বাচ্চারা যদি একবার বোঝে যে কে ওকে ভালবাসে তাহলে তো আর কোনো কথায় নেই…!
অয়নী একদিন দেখছে আর ভাবছে,
“মানুষ এতো ভালো হয় কি করে…..! নিজের কেও না অথচ কি ভাবে আগলে রাখে ছেলেটাকে। সারাদিন ওর সাথে হাসি দুষ্টামি করে। সুপ্তও মনে হয় খুব আনন্দ পায়। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। সে তো জানেই না যে কয়েকদিন পরে চলে যাবো তারপর আর নীলের সাথে ওর দেখা হবেনা….!
তখন সুপ্তকে সামলাতে পারবো তো। যতো ভালবাসে নীল কে ও।,,, হুহ্ পারবনা কেনো,,জীবনটাই তো এমন যা চাই তা পাইনা আর যা পাই তা চাইনা…! কয়েকদিন কষ্ট পাবে ছেলেটা কিন্তু ঠিক মানিয়ে নিতে পারবে একদিন…!
কয়েক সপ্তাহ পর,
অয়নী নীলের রুমের সামনে এসে বললো
: নীল,,এই নীল আছিস..
: না থাকার কি আছে,,
: আসবো ভিতরে,,
: নিষেধ তো কেউ করছেনা,,
: কি করছিস,
: ওই সেই পুরোনো অভ্যাস
: কি…?
: ভূলে গেছিস..!
: না, তবে মনে করতে পারছিনা,,
: হা হা হা,,,
: দন্ত প্রদর্শন না করে বল না
: বলছি.. বলছি…
: হুম বল,,,
: আমার সেই পুরোনো অভ্যাসটারে ছাড়তে পারিনি এখনো…!
: আরে কি সেটা বলবি তো
: ওই যে গল্প লেখারর ব্যার্থ্য চেষ্টা….!
: মানে…!
: মানে টানে কিছুনা,, গল্প লিখতে পারিনা বলতে পারিস জানিনা,,,তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি। লাভ না হোক ক্ষতি তো হচ্ছেনা….!
” মরুভূমির মাঝে বসে চাহিয়া রয়েছি তহার প্রতি আমি এক ক্লান্ত পথিক।
সে যে এক মরিচিকা…! স্পর্শ করতে পারবনা জেনেও বসিয়া রয়েছি তাহার ফেরার পথ ধরে…!”
আজ সকালে লেখলাম। কেমন হয়েছে রে..
: ভালো,,
: এখন বল কি বলতে এসেছিস..!
: নীল আমার একটা ব্যাবস্থা করে দে না প্লিজ
: মানে,,
: একটা থাকার জায়গা,,, আর ছোটো খাটো একটা চাকরি,,
: পারবনা,,, সরি..
: প্লিজ নীল,,,তুই তে অনেককে চিনিস একটা মাত্র কাজ….!
: একবার হারিয়েছি তাই বলে বারবার হারাতে পারবনা…!
: মানেহ্,,
: কিছুনা…
: বুঝলাম না….
: সব কথা বুঝতে নেই রে….! কিছু কথা আছে যেগুলো রহস্যের অন্তরালে ডুবে যাওয়য়টাই মঙ্গলকর…!
অয়নী অবাক হয়ে তার মায়বী চোখে নীলের দিকে তাকালো…
এমন সময় সাথী নীল আর অয়নীকে বসার ঘরে ডাকলো।
সাথী অয়নীকে এমন কিছু কথা বললো। শুনে অয়নীর মাথায় ঘুরে উঠলো। আর মনে মনে বলছে, ” হায় হায় সাথী আপু এগুলো কি বলছে….!!!!!”
< <<চলবে>>>