ভালোবাসার প্রতারণা

ভালোবাসার প্রতারণা !! Part- 10 ( শেষ পর্ব 10 )

তারা নিজের হাতে লিজাকে সাজিয়েছে। লাল লেহেঙ্গায় খুব সুন্দর লাগছে লিজাকে। তারা তো বলতে গেলেই কোনো সাজ সজ্জা করলোই না। একটা সিম্পল পার্পেল কালারের শাড়ি পড়েছে মুখে কোনো মেক আপ না থাকলেও ঠোঁটে হালকা করে একটু গোলাপী রঙের লিপস্টিক দিয়েছে তাতেই খুব ভালো লাগছে। তার সিল্কি স্ট্রেইট লম্বা কালো ঘন চুল গুলো ছড়িয়ে আছে তার সারা পিঠে। আজ প্রভাতের চোখ বরাবরের মতোই তারার দিকেই আছে। আকাশতো সেই কখন থেকে তারার দিকে তাঁকিয়ে আছে। এখন তার নিজের কাছেই গিল্টি ফিল হচ্ছে। আকাশ সব জানে যে তারা এখন প্রভাতকে ভালোবাসে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছাড়তে যে কতোটা কষ্ট আকাশ তা খুব ভালো ভাবেই জানে। এখন সে তো নিজেকেই দোষ দিচ্ছে। আজ যা কিছু হয়েছে সব কিছুর জন্য আকাশ নিজেকেই দায়ী করছে। সে ভাবছে ভালোবাসার জন্য কত মহান মানুষরাও আত্নত্যাগ করেছে। সে করলে এমন কি হতো! হয়তো ইতিহাসে তার নাম লাইলি মজনু বা সেলিম আনারকলির মতো কিংবা রোমিও জুলিয়েটের মতো স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবেনা। তার প্রেমের ত্যাগ তার অসীম ভালোবাসা হয়তো স্থান পাবেনা এইসব সেরাদের মাঝে। কিন্তু তার আত্না এই ভেবে তো শান্তি পাবে সে নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য কতো বড় সেক্রিফাইস করেছে। আকাশ এইসব ভাবছে আর তারাকেই দেখছে। হঠাৎ তার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেল। পেছন ফিরে দেখলো তার মা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে পরশ পরম আবেশে। মাকে এভাবে দেখে কেন জানি কান্না পেয়ে গেল আকাশের। মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।

—-ছোটন তুই কান্না করছিস? জানিস না ছেলেদের কাঁদতে নেই!

—–মম আমি কি করবো? আমি তারাকে ভালোবাসলেও সে তো আমায় আর ভালোবাসে না ঘৃণা করে।মম তারা ভাইকে ভালোবাসে আমাকে নয়। আমি হয়তো তার জীবনে এখন কোনো কিছুই না। মম আমার পক্ষে তারাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সে যে আমার ভাইয়ের ভালোবাসা আর তাঁছাড়া ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে ওদের মধ্যে আমি এসে এতো বড় পাপ করতে পারবোনা। যেই পাপ করেছি তার শাস্তি তো এখনো বয়ে যাচ্ছি আর বইতে পারবোনা।

—–কি বলছিস বাবু! প্রভাত আর তারা একে অপরকে ভালো……

—–হুম। আমি হলাম তাঁদের পথের কাটা আমি চাইনা আমার জন্য কারো কোনো অসুবিধা হোক।

—–কি বলতে চাইছিস তুই?

——আমি চলে যেতে চাই মম।

—–মানে তুই এই ভাবে নিজের মমকে ছেড়ে চলে যাবি?

—–না মম। তোমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা তো আমি ভুলেও ভাবতে পারিনা। আমি শুধু ভাই আর তারাকে ছেড়ে চলে যেতে চাই।

—-কি করবি তুই ?

—- মম আমি কিছুদিনের জন্য কানাডা যেতে চাই কাকুর বাসায়। এদিকে সব ঠিক হলেই ফিরে আসবো তাছাড়া কানাডায় একটা কনর্সাট আছে আমার।

—–বাবুই তো লিজাকে…..

——হবেনা এই বিয়ে।।

—-মানে ?

—-খুব সিম্পল লিজার সাথে ভাইয়ের বিয়ে হবেনা আর যার সাথে হবে সে হলো তারা।

—–আর ইউ সিউর ? দেখ এসব চিন্তা ঝেরে ফেল মাথা থেকে লিজা আমার একমাত্র বোন আলিজার মেয়ে। আমি আলিজাকে কথা দিয়েছি এই বিয়ে হবে। দেখ ছোটন আমি এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারবোনা। আমরা যদি এখন এমন করি লিজার সাথে অন্যায় হবে। তাই আমি বলি তুই আর এসব নিয়ে ভাবিস না আর তারার ব্যাপারটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। আমি তারাকে বুঝিয়ে বলবো তাহলেই হবে।

—-কি বোঝাবে? যে আমার এক ছেলে কে পাওনি তো কি হয়েছে আরেক ছেলে আছে তাই তো!

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে থমকে গেল মিসেস চৌধূরী।






বাসরঘরে মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা টেনে বসে আছে নববধূ। লজ্জা লাগছে খুব এক্ষুনি হয়তো তার স্বামী চলে আসবে। ভাবতেই বুক ধড়পড় করছে। তখনিই দরজা লাগানোর শব্দে সে ভয় পেয়ে যায়। এই বুঝি এল সে!

—–লিজা!

মাথা উপরের দিকে না তুলেই লিজা হুম বলে উঠল। কিন্তু তার বরের কন্ঠ অন্যরকম শুনে সে নিজেই একটু ঘাবড়ে গেল। এতো প্রভাতের গলার স্বর নয়। এটাতো আকাশের,,,,, না আর ভাবতে পারলোনা। চট করে মাথা তুলে দেখে আকাশ গোল্ডেন কালার শেরওয়ানী পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পুরো বর বর। কিন্তু যেখানে প্রভাতের থাকার কথা সেখানে আকাশ কি করছে। লিজা খাট থেকে নেমে আকাশের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এই সেই আকাশ যে একদিন লিজাকে রিজেক্ট করেছিল। সেই রাগে ক্ষোভে লিজা আকাশকে চ্যালেন্জ করেছিল এই বাড়ির বউ হয়ে দেখিয়ে দিবে কিন্তু সেটা তো এভাবে নয়। প্রভাতকে বিয়ে করে কিন্তু প্রভাতকে যে ভালোবাসেনি তা নয় সে প্রভাতকে পছন্দ করতো কিন্তু ভালো তো আকাশকেই বাসতো। চ্যালেন্জের কথাটা ভুলতে পারেনি তাই প্রভাতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কারণ ও তো এটাই চেয়েছিল যে আকাশকে দেখিয়ে দিবে সে এই বাড়ির যোগ্য বউ। আকাশ লিজাকে পছন্দ করতো না তার প্রধান কারণ সে তারাকে ভালোবাসতো। আর তাছাড়া লিজা খুব বেশিই মডার্ণ আর একটু গায়ে পড়া স্বভাবের ছিল যা আকাশের বিন্দু মাত্র পছন্দ ছিল না। তাই লিজাকে এড়িয়ে চলতো আর একদিন লিজা ওকে প্রোপোজ করলে ও লিজাকে অনেক অপমান করে আর বলে তুই আমার বউ হতে পারিস না এই বাড়ির যোগ্য বউ হতে পারিস না। ব্যাস সেই থেকেই লিজা প্রভাতের পিছে পড়ে রইল। ভাবতো আকাশ হয়তো জেলাস ফিল করবে কিন্তু তা কখনো হয়নি। কিন্তু এভাবে প্রভাতের পিছে পড়ে থাকতে থাকতে লিজার কাছে প্রভাতকে ভালো লাগতে শুরু করে। তবে আজ এইভাবে আকাশকে দেখে কিছুই বুঝে উঠছেনা লিজা। আকাশকে কিছু জিজ্ঞাস করার আগে আকাশ লিজাকে বলে

—-আমায় কি এখনো ভালোবাসো?

—– মানে !

—-সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর দাও।

কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিল

—- না। আর তাছাড়া এসব কথা এখন হচ্ছে কেন এখন যদি ভালোবাসিও করার তো কিজুই নেই আমি এখন অন্য কারোর স্ত্রী তোমার ভাবি।

—–হা হা হা😄

—–হাঁসছো কেন?

—–শুনো আজ তোমার সাথে ভাইয়ের না আমার বিয়ে হয়েছে।

—-‘মানে ?

——মানে হলো আমিই তোমার স্বামী।

—–আকাশ তুমি কি?

—–তোমার কি মনে হয় এত সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে আকাশ চৌধূরী মজা করবে?

—-না।কিন্তু এখন করছো

—”আচ্ছা একবার পুরো রুমটা ভালোভাবে দেখ।

লিজা চারিদিকে তাঁকিয়ে দেখলো আকাশের ছবি গিটার অন্যান্য জিনিস পত্র। আর আকাশের রুম তো ও চিনেই তখন আসলে ঘোমটার জন্য কিছুই দেখেনি ঠিক করে। আর আকাশের ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে লিজাকে এই ঘরে নিয়ে আসা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে যে আকাশের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে। না চাইতেও কিছুটা খুশি হয়েছে লিজা। কিন্তু প্রভাত কোথায় ? সে কিভাবে এত বড় ধোকা দিল!

—-আকাশ আমার সাথে তো প্রভাতের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল

—-হুম হয়েছে আমার সাথে।

—-প্রভাত আমাকে ধোকা দিল!

—–না এসব কিছু আমি করেছি।

—-কিন্তু কেন?

—–সবার ভালোর জন্য যদি এইবিয়েটা হতো চারটা জীবন নষ্ট হয়ে যেত।

—-চারটা?

—-হুম আমার তোমার তারার আর ভাইয়ের। কারণ ভাই আর তারা একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু আমার জন্য আজ তারা দুজন আলাদা হয়ে যাচ্ছিল।

—মানে!

এরপর আকাশ লিজাকে সব খুলে বলল আর লিজা কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে ছিল।

—-অনেক বড় ভুল করেছো আকাশ। এবার তার শাস্তি পেতে হবে।

—-কি শাস্তি!

—-আমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে হবে। তা নাহলে আমি কিন্তু আবার প্রভাতের কাছে চলে যাবো।

—- পরপুরুষের কথা বলতে নেই।

এরপর দুজনেই হাসতে লাগলো।

☆☆☆☆☆☆

এদিকে তারা আর প্রভাত রাস্তায় একজন আরেকজনের হাত ধরে হাটছে। খুব বেশি দেরি হয়ে গেল তাঁদের অনেক আগেই এভাবে নিজেদের হাত ধরা উচিত ছিল। সেই জন্যেই হয়তো আজ এত কিছু হয়ে গেল। প্রভাত ল্যাম্প পোষ্টের নিয়ন আলোয় তারার মায়াবি মুখখানা দেখছে। আজ কতোদিনের সাধ তার পূরণ হলো তার তারা এখন তার হাত ধরেই হাঁটছে। যা সে রোজ চাইতো উপরওয়ালার কাছে।

—–তারা খুব বালোবাসি তোমায়

—-‘আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে।

—-”কখনো ছেড়ে যাবেনা তো ?

—-কখনোই না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই হাত ছাঁড়ছিনা ।

—-আমিও।

তারপর দুজনেই আবার হাটতে থাকে। আজ যে কতো কথা জমে আছে তাদের। সব বলতে হবে তো।

Flashback

তখন মিসেস চৌধূরী আকাশের কথাশুনে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলতে থাকে

—-আকাশ আমি কথা দিয়েছে আলিজাকে এখন যদি!

—-কি কথা দিয়েছো?

—-‘আমার বাড়ির পুত্র বধূ করে আনবো লিজাকে।

—-‘ তাহলে তাই হবে।

—–তারমানে এই বিয়েটা হচ্ছে।

—-হুম। তবে আমার আর লিজার বিয়ে।

—–কি বলছিস আকাশ তোর মাথা ঠিক আছে।

—- হুম। মা লিজা আমাকে ভালোবাসে আমি জানি ও ভাইকে বিয়ে করছে কেন।

—কেন?

আকাশ লিজার ব্যাপারে তখন সব খুলে বলে আর তখন ওর মা গিয়ে তারার সাথে কথা বলে। প্রভাতকে আকাশ সব বুঝিয়ে বলে আর এটাও জানায় যে তারাও প্রভাতকে ভালোবাসে তখন প্রভাত ছুটে যায় তার তারার কাছে এতো বড় অন্যায় সে তার তারার সাথে করবেনা। সে লিজাকে বিয়ে করবেনা। পরিস্থিতি ঠিক রাখতে তখন লিজাকে কিছু জানানো হয়নি। আর বিয়েটাও ভালোভাবে মিটে যায়। প্রভাত তারার কাছে ক্ষমা চায় ডিভোর্সের জন্য। তারপর দুজনে সেখান থেকে কাজি অফিস যায় আবারো বিয়ে করে নেয়। প্রভাত তো তারাকে রাগানোর জন্য বলে ইস্ ভেবেছিলাম লিজার মতো সুন্দর একটা মেয়েকে বিয়ে করবো আর এখন কিনা আবারো সেই পুরোনো বউ আমার গলায় ঝুললো। ব্যাস তারা রাগ করে গাড়িতে না উঠে হাটতে থাকে প্রভাত ও তার প্রেয়সীর পেছন পেছন যায়। তারপর কি হলেন তা তো জানেনই।






আকাশ বারান্দায় বসে আছে। লিজা ঘুমোচ্ছে। আকাশ একটা গান ধরলো গান শেষ করে বলতে লাগলো প্রতারণাটা নাহয় আমি শুরু করেছি কিন্তু শেষ তো তুমিই করলে।

{সমাপ্ত}

(এতদিন আমার সাথে আর আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। জানি শেষটা কারো ভালো লাগেনি কিন্তু কি করবো আপনারা অনেকেই শুরু থেকে গল্পটার নানান সমালোচনা করেছিলেন। আর কিছু মানুষ তো পরের পর্বে কি হবে না হবে সেটাই ধরে নিয়েছেন। আপনাদের একজনের একটা ইচ্ছা তাই আমাকে গল্পের থিমটা মাঝখান দিয়ে নষ্ট করতে হলো। ভেবেছিলাম শুরু থেকেই নিজের মতো করে লিখবো। আপনাদের জন্য তা না করে আপনাদের মন মতো লিখেছিলাম তাতেও আপনারা খুশি হন নাই। সমালোচনা ঠিকই করেছেন। তাই আর গল্পটাকে বেকার না করে নিজের মতো যেভাবে যা পারলাম সেভাবেই শেষ করলাম।

কারো খারাপ লাগলে আমায় ক্ষমা করবেন আপনাদের মনে কষ্ট দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছি আমার নাই।
আমার নতুন গল্প “ভালোবাসবো” আমি আপনাদের মাঝে আনতে চাই আপনাদের মত থাকলে ঠিকই আনবো। ধন্যবাদ)

One thought on “ভালোবাসার প্রতারণা !! Part- 10 ( শেষ পর্ব 10 )

  • ভালোবাসা এমন ও হয় সিজন 3 কবে আসবে

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *