ভালোবাসার প্রতারণা !! Part- 05
প্রভাত ধীরে ধীরে তারার দিকে এগুতে লাগলো। তারা তো এখন আর ভয় পাচ্ছে না তার বারবার মনে হচ্ছে এখন তার একটা সম্ভল আছে। প্রভাত তারাকে কিছু বলতে যাবে তখনিই প্রভাতের মা ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল
—–বাবুই ছোটনকে (আকাশ) আমি আসতে বলেছি।
—— তুমি!
—— হুম।
——ওর সাথে তোমার কথা হলো কিভাবে ? ওর ফোন তো বন্ধ ছিল তাছাড়া ও লন্ডন ছিল মম।
——না। ও লন্ডন যায়নি।
—– যায়নি মানে কোথায় গিয়ে ছিল ও?
—– একটা অডিশন দিতে সিলেট গিয়ে ছিল। তুই তো জানিস ওর গানের খুব নেশা। বড় হয়ে একজন গায়ক হতে চেয়েছিল। ঐদিন লাস্ট ডেট ছিল তাই ও গেছে।
—– মম ও কি পাগল! কেউ কারো বিয়ের দিন এভাবে নিজের বউকে ফেলে গানের অডিশনে যায়!
—— আমিও কিছু বুঝতে পারছি না। বাবুই তুই যে বললি ও লন্ডন!
—— আমার ফোনে মেসেজ আসে ওর নম্বর থেকে। আমি তো ভাবলাম সত্যি কারণ তখন ঐ রকম সিরিয়াস মোমেন্টে ও মজা করবে কেন?
——–আমি জানি না। আর শুন তোর আর তারার বিয়ের কথা শুনে ও যে একটা বড় শক পেয়েছে। আমি এখন কি করবো ও যে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। তারা আর ও একসাথে থাকলে অনেক সমস্যা হতে পারে। আমি এখন কি করবো! তোর বাবাও খুব রেগে আছেন। তাকে সামলাবো কিভাবে!
——মম ও কি তারাকে আমার থেকে নিয়ে যাবে!(চোখ টলমল করছে)
—— আমাকে ও কথা দিয়েছে এমন কিছু করবে না আর শুন ও তোকে খুব ভালোবাসে নিজের ভাইয়ের সংসার ও ভাঙ্গবেনা।
—– মা ও তো তারাকেও খুব ভালোবাসে!
—– ভালোবাসলে কি হবে দোষ ওর ও কেন বিয়ের দিন নিজের হবু বউকে ছেড়ে যায়!(পেছন থেকে প্রভাতের বাবা আরমান সাহেব বলে উঠল)
—–ড্যাড!
—— তুমি চুপ থাকো। আর শুনো আমি আকাশকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। ঐখানে গেলে 1,2 বছর থাকলে ও সব ভুলে যাবে।
—— আপনি এসব কি বলছেন নিজের ছেলেকে এভাবে দূরে পাঠিয়ে দিবেন(মা)
—– ও যা করেছে তার জন্য এই শাস্তি কোন বড় কিছু নয়। শুনো এখন পুরো বাড়ি অতিথিতে ভরা সবাই যাক তারপর কাল সকালে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাবুই তুমি গিয়ে তারার পাশে বসো।
—– হুম।
তারপর যে যার মতো চলে গেল। এদিকে আকাশ রুমে গিয়ে ভাঙ্গচুর শুরু করে দিল। হঠাৎ তারার একটা ছবি দেখে ও ঐটা হাতে নিয়ে বলল
—–‘ প্রতারক আমি তোকে কখনো ক্ষমা করবো না। এই ছিল তোর ভালোবাসা! এতটা ঠুনকো? আমি আকাশ চৌধূরী আমি কথা দিচ্ছি তোকে আমি সুখে থাকতে দিব না। আমার জীবন যেমন নষ্ট করে দিলি আমিও তোর জীবন নষ্ট করে দিব। ছাড়বোনা তোকে ছাড়বোনা।
বলেই দেওয়ালে একটা ঘুসি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মিসেস রেবা কিছু বলতেও পারছে না তার ছেলেটা দুষ্টু প্রকৃতির ঠিকই কিন্তু যখন রাগ উঠে তখন তা প্রভাতের সমান না হলেও প্রভাতের মতোই অনেকটাই হিংস্র হয়ে যায়।
অনুষ্ঠান শেষ। যে যার মতো নিজের রুমে চলে গেল আর অতিথিরা নিজেদের বাড়ি। প্রভাত আর তারাও রুমে এসে চেন্জ করে নাইট আউটফিট পরে নিল। আজ অনেক টায়ার্ড আর টেনশনে থাকার কারণে প্রভাত অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেল। তারা তো আকাশ আর প্রভাতকে নিয়ে ভাবছে। একদিকে তার ভালোবাসা অন্য দিকে তার স্বামী। এখন সে কি করবে? ইচ্ছা তো করছে মরেই যেতে। আজ হয়তো তার ভুলের জন্যই এমন হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই জানালার দিকে নজর গেল তখনিই পর্দার আড়াল থেকে কেউ সরে গেল। ছায়ামূর্তি টা কে তারার বুঝতে সময় লাগলো না তাই সেও পেছন পেছন গেল। তখনিই কেউ একজন ওর হাত টান দিয়ে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। সে আর কেউ নয় আকাশ।
—— ছলনাময়ী, মিথ্যেবাদী,প্রতারক। কেন ঠকালি আমাকে! বল কেন ঠকিয়েছিস? কি ক্ষতি করেছি আমি তোর! শুধু ভালোবেসেছি এতে ভুল কি ছিল! বল কি ভুল ছিল।
—– আকাশ আমার কথাটা শোন
—– কি শুনবো আর ! তুই খুব ভালো করেই জানিস যে এসব তোর জন্য হয়েছে।
—- আকাশ !
—— তুই নষ্টা মেয়ে। আমার সাথে প্রেম করে বিয়ে করলি আমার ভাইকে !
——চুপ করো আকাশ। আমি নষ্টা মেয়ে না আমার সম্বন্ধে এটা তোমার ভুল ধারণা।
—— তুই কি বলতে চাইছিস আমি মিথ্যুক! এর মধ্যে তোর কোন হাত নেই।
—– হ্যাঁ হ্যাঁ। মানছি আমি ভুল করেছি। এই পরিস্হিতি আজ আমার জন্য হয়েছে। এসবের পেছনে আমি আছি। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আমি প্রভাতকে বিয়ে করতে চেয়েছি। আমি নিজেইতো ভাবিনি ওনার সাথে আমার বিয়ে হবে। বিশ্বাস করো আকাশ! (জড়িয়ে ধরে)
—— Wow.. (হাত তালি দিতে দিতে)
—– ভাইয়া তুই!
——কেন আমার আসাটা বুঝি ঠিক হয়নি! এতরাতে নিজের ভাইয়ের বউকে জড়িয়ে ধরে আছিস তোর লজ্জা করছে না?
—— ভাইয়া আসলে…….
——- আমি কিছু শুনতে চাইনা। যা হওয়ার তা কাল সকালেই হবে সবার সামনে। তারা এসো।
বলেই টানতে টানতে তারাকে নিয়ে গেল আর আকাশ সেদিকে তাঁকিয়ে রইলো।
চলবে।