ভালোবাসার প্রতারণা !! Part- 04
তারা প্রভাতের কথা শুনে কিছুই বলল না শুধু প্রভাতকে দেখতেই লাগলো। এই মানুষটা কেন তাকে বিয়ে করলো! এই মানুষটার কাছে তো ওর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাহলে কেন ওকে বিয়ে করতে গেল। তারাকে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে প্রভাত বলল
—– এত তাঁকিয়ে থাকা লাগবেনা আমার দিকে। ব্রেকফাস্ট করে নাও।
—– আমার ক্ষিদে নেই।
—– খেতে হবে ক্ষিদে না লাগলেও খেতে হবেই।
—– আজব! বলছি তো আমার ক্ষিদে নেই। আমি খাবো না।
—– তুমি খাবে না !(চোখ রাঙিয়ে)
প্রভাতের চোখ রাঙানো দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল তাই চুপচাপ খেয়ে নিল। প্রভাত নিজ হাতে তারাকে খাইয়ে দিয়েছে। তারার তখন তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। খুব ছোট বেলায় তার মা মরে যায় তারপর থেকে সে তার বাবার হাতে খেত বাবার সাথে খেলা করতো। আকাশ তারাকে সবসময় বলতো “তারা এখন যেমন তোমার বাবা তোমায় খাইয়ে দেয় বিয়ের পর আমিও তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিব” কথাগুলো মনে করতেই তারার চোখ বেঁয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। স্বপ্ন দেখেছে একজনের সাথে আর না চাইতেও পূরণ করছে আরেক জনের সাথে। এটাই হয়তো নিয়তি। প্রভাত অফিসের কাজে বের হয়ে গেল। বাড়িতে অনেক মানুষজন তারার কিছুই ভালো লাগছে না। করো সাথে কোন কথা বলছে না। প্রভাতের রুমটা খুব বড় ও সুন্দর। দেখেই বোঝা যায় রুচিশীল মানুষ। সৌখিন ও বটে। বারান্দায় অনেক ফুল গাছ তারা ভিন্ন ধর্মী কিছু ফুল দেখলো সুবাস না থাকলেও দেখতে খুবই সুন্দর। গাছগুলোর দিকে তাঁকিয়ে রইলো তারা তারপর পাশে থাকা বড় সোফাটায় বসে পড়লো। চারিদিকে নানান ফুল আর আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে কারণ আজ তারার বৌভাতের অনুষ্ঠান। কিছুক্ষণ পর রুমে কেউ ঢকলো তারাও বারান্দা থেকে রুমের ভেতরে গেল। কয়েকজন মেয়ে আসলো আর তার সাথে প্রভাতের বোন তৃণাও আসলো।
—– ভাবি এরা পার্লার থেকে এসেছে তোমাকে সাজানোর জন্য।
—–ওহ।
—- আচ্ছা তুমি থাকো আমি আসি অনেক কাজ আছে।
—- ঠিক আছে।
তারাকে পার্লারের মেয়ে গুলো সাজাতে লাগলো। তারাকে রেডী করার পর ওনারা চলে যায়। তারাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ। ডার্ক নেভি ব্লু লেহেঙ্গাটায়। তার সাথে ডায়মন্ড অরনামেন্টস। চুল গুলো কার্ল করা ডার্ক মেকআপ আর লাল লিপস্টিক। এক কথায় অসাধারণ লাগছে।
সন্ধ্যায়…….
সবাই চলে এসেছে প্রভাত ও অফিস থেকে এসে পড়েছে। রুমে ঢুকেয় তারাকে দেখেই ক্রাশ খেল। তার বউটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। তারা এতক্ষণ মাথা নিচু করে কি দেখছিল তাই প্রভাতকে দেখে নি। মাথা উপর করতেই প্রভাত একটা ভাব নিয়ে তারার সামনে থেকে চলে গেল। তারপর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো আর তারা বোকার মতো চেয়ে রইলো। তৃণা এসে তারাকে নিয়ে নিচে চলে যায় স্টেজের মধ্যে। প্রভাতও রেডী হয়ে আসে। তারা প্রভাতকে দেখে অনেকক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। প্রভাতের খালাতো বোন লিজা ওর কাছে এসে বলল
—- ওয়াও প্রভাত! কত সুন্দর লাগছে তোমায়।
—-(কিছুই বলল না শুধু একটা মুঁচকি হাসি দিল। সেটাই যেন লিজাকে ঘায়েল করলো।)
—– তুমি কিন্তু এই বিয়েটা করে ঠিক করোনি। তুমি জানো না বেবি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
—– চুপ করো লিজা। এখানে এসব কথা বলবে না একদম। তোমাকে কে বলেছে আমাকে ভালোবাসতে ! আমি তোমায় ভালোবাসি না। আর আমার স্ত্রী আছে এখন। আমি বিবাহিত তুমি আমার পেছনে পড়ে থেকো না আর।
বলেই লিজাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আর লিজা রাগে ফুলতে লাগলো। এই তারাকে তো ও ছাড়বেনা। এদিকে প্রভাত তারার পাশে গিয়ে বসাতে তারা কিছুটা বিরক্ত হয়ে গেল। তাই একটু দূরে সরে বসলো। এখন অনেকেই আসছে ওদের অভিনন্দন জানাতে সাথে গিফ্ট নিয়ে। প্রভাতের একটা জরুরী কল আসায় প্রভাত দূরে কোথাও যায়। তখনি কেউ একজন এসে তারাকে বলল
—- অভিনন্দন মিসেস প্রভাত চৌধূরী।(ফুল এগিয়ে দিয়ে)
—-ধন্যবাদ।(বলেই সামনে তাঁকিয়ে যাকে দেখলো তাকে দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। অস্ফূষ্ট স্বরে বলে উঠলো) আকাশ!
—– হুম। আপনার এক্স বয়ফ্রেন্ড আকাশ চৌধূরী।
আকাশকে দেখে তারা কান্না করে দিল আর ওকে জড়িয়ে ধরলো তখনি প্রভাত ঐখানে চলে আসে আর ওদের এভাবে দেখে থমকে যায়। তারার কোন খেয়াল নেই সে তো শুধু তার আকাশকে পেয়ে সব যেন ভুলেই গেল। প্রভাত এসে তখন ওদের সামনে দাঁড়ালো তারা প্রভাতকে দেখে আকাশকে ছেড়ে দিল। আকাশ তারার দিকে তাঁকিয়ে আছে ঘৃণার দৃষ্টিতে। তারা তার সাথে এত বড় ছলনা করলো কিভাবে! তারই বড় ভাইকে ভাবতেই আকাশের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। আকাশ দৌড়ে উপরে চলে যায়। তার যে এসব দেখতে ভালো লাগছে না। এদিকে প্রভাত তো রেগে আগুন সাথে তারাকে হারানোর ভয়ও ওকে আকড়ে ধরছে। তার তারা কি সত্যিই ওর থেকে দূরে সরে যাবে!
চলবে।