ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 09
প্রভাতের বাড়ির লোকেরা যে গাড়িতে ছিল সেই গাড়ি অনেক আগেই পৌঁছে গেছিল। প্রভাতরা একি রাস্তায় আসছিল কিন্তু ওরা যখন আসে তখন জ্যাম থাকার ফলে গাড়িটা আটকা পড়ে। তারা দেখলো যে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কোনো প্রকার সমস্যা হবে না যা হবে তা ম্যানেজ করা যাবে। তারা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো তারপর প্রভাতকে বলল
–আমি পানি খাবো।
–পানি!
–কেন? আমি পানি খেতে পারিনা।
–না পান করতে পারো। (মুচকি হেঁসে)
তারা ভাবতে থাকলো কত সুন্দর হাঁসি অথচ লোকটা কতটা খারাপ, নির্দয়, নিষ্ঠুর প্রকৃতির।
—ড্রাইভার পানিটা দাও তো!
—স্যার পানি তো নেই। আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।
—না থাক তুমি বসো। পরে ট্রাফিক ছেড়ে দিলে সমস্যা হবে আমি বরং যাই তুমি গাড়ি সনে নিয়ে আসো।
—জ্বী স্যার।
প্রভাত গাড়ি থেকে নেমে গেল সামনেই একটা দোকানে। একটু দূরেও বলা যায় তারা তখন সুজোগ পেয়ে গেল। গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার বলল
—ম্যাডাম আপনি নামছেন কেন কোনো দরকার হলে আমাকে বলুন।
—আসলে উনি গেছেন তো তাই আমিও একটু বাহির হলাম। তাছাড়া গাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগছেনা।
—-আচ্ছা ম্যাডাম।
তারা আস্তে আস্তে গাড়ির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর সুযোগ বুঝে দৌড় দিল। কোথায় যাবে সেটাও ভাবে নি। শুধু দৌড়াচ্ছে একসময় দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলো।
গাড়িতে থেকে তখন একজন সুদর্শন পুরুষ নেমে এলো। তারা হাপাচ্ছে আল্লাহর রহমতে কোনো ক্ষতি হয়নি।লোকটি তারাকে অবাক চোখে দেখছে আনমনেই বলে দিল
—মিষ্টি পাখি!
তারা মাথা তুলে যাকে দেখলো তাতে পুরোই অবাক হয়ে গেল। সামনে থাকা ব্যক্তিটি হলো আরিয়ান শেখ। আরিয়ান একজন নাম করা ডাক্তার। কলেজ লাইফে এই ছেলেটা তারাকে প্রপোজ করেছিল। তারার ছয় বছরের সিনিয়র। তারা সেদিন না বলে দেয় কিন্তু আরিয়ান হতাশ না হয়ে ঠিকই চেষ্টা চালিয়ে যায় তখন নিজের মেডিকেলের পড়ার থেকেও খুব বেশি তারার জন্য ব্যস্ত ছিল যার ফলে তারা খুব মন খারাপ করে। সে চায়না ওর জন্য কারো ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাক তাই সেদিন সবার সামনে আরিয়ানকে অনেক অপমান করে আর বলে যদি ও দ্বিতীয়বার ওর সামনে আসে তাহলে তারা নিজেকে শেষ করে দিবে। তারা যে আরিয়ানকে অপছন্দ করতে তা নয় সেও পছন্দ করতো তবে ভালোবাসতো না। আজ নিয়তির কোন খেলায় আরিয়ান আবারো তার সামনে এসেছে তা ওর অজানা। আরিয়ানকে যে এভাবে দেখবে কখনো ভাবতেই পারেনি।আরিয়ান ভালোবেসে তারাকে মিষ্টি পাখি বলে।
—-আপনি এখানে?
—-তুমি এখানে কেন! আর দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছো।
—-প্লিজ আপনি আমার কথা কাউকে বলবেন না। আমার যে করেই হোক অনেক দূরে চলে যেতে হবে।
—-কিন্তু কেন?
—এত কিছু বলার সময় আমার হাতে নেই আমাকে যেতে দিন।
—-তোমাকে খুব দুর্বল লাগছে। তুমি এখন কিভাবে যাবে আর কোথায় বা যাবে?
—-জানি না তবে আমাকে যেতে হবে।
তারা দৌড়াতে পারছেনা আস্তে আস্তে হাঁটছে অনেক্ষণ না খেয়ে তারপর এতোটা পথ দৌড়ানোর ফলে ও দুর্বল হয়ে গেছে। তাই ঐখানে জ্ঞান হারালো পড়ে যেতে নিলেই আরিয়ান ধরে ফেলে তারাকে।
প্রভাত এসে দেখে তারা নেই। রাগী চোখে ড্রাইভারের দিকে তাঁকায় আর গর্জন করে উঠে।
—-তারা কোথায়?
—-স্যার ম্যাডাম তো আপনার পিছু পিছু গেল।
—মানে?
ড্রাইভার প্রভাতকে সব খুলে বলল। আর প্রভাত তো সেই রকম রেগে গেল ড্রাইভারকে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো।
—-ইউ ইডিয়ট। তুমি যেতে দিলে কেন ওকে?
—-স্যার আমি ওনাকে কিভাবে আটকে রাখবো!
—-তোমার চাকরী খেয়ে নিব আমি। আগে আমার তারাকে খুজতে হবে।
প্রভাত নিজেই ড্রাইভ করে চারিদিকে তারাকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না পুরো শহরে ওর লোক লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু কেউ কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। রাস্তাঘাট খেলার মাঠ ওর আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কারো বাড়িতেই পেল না। শেষে ফোন ট্রেকিং করে আর দেখে সেটা ওর বাড়িতেই আছে। সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখে ও ফোন রেখেই গিয়েছিল। রাগে প্রভাতের নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। এতো বড় বোকামিটা না করলেই পারতো। পানি খাওয়াটা যে একটা অযুহাত ছিল মাত্র।
সকালে,,,,
তারা চোখ খুলে দেখে সে একটা বড় বেড রুমে শুয়ে আছে। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো একটা ঘর।উঠে বসতেই কেউ বলে উঠে “গুড মর্নিং”
—-আপনি ?
—-হুম। আমি সেই আরিয়ান যাকে একদিন তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
—-আপনি এখনো ওসব নিয়ে পড়ে আছেন?
—-আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট তুমি। তোমাকে এত সহজে ভোলা যে আমার পক্ষে দুষ্কর।
—-কাল রাতে কি হয়েছিল আর আমি এইখানেই বা কেন?
—-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে। আমি চাইলেই তোমাকে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিতাম কিন্তু তোমার তখনকার কথা শুনে বুঝলাম তুমি সেখানে যেতে চাও না। অনেক বিপদে পড়েছো আর ভালোবাসার মানুষকে বিপদে দেখে উদ্ধার না করে উল্টো আরো বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো মানুষ বা প্রেমিক কোনোটাই নই। তাই আমার বাড়িতেই নিয়ে এলাম।
—-আপনি এখনো আমায় !
—-তুমি আমাকে ভালোবাসোনি তো কি হয়েছে আমিতো বেসেছি। তাই তোমাকে ভুলিনি এখনো ঠিক ততোটাই বালোবাসি যতটা আগে বাসতাম।
—-মিথ্যে।
—-এখনো তোমার কাছে মিথ্যে মনে হচ্ছে এসব!
—-ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। এটা ধোকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।
—-তোমার এমনটা মনে হয় কেন? ভালোবেসেছো কাউকে!
কথাটা শুনে তারা থমকে যায়। এই কথাটা শুনার জন্য তারা রীতিমত অপ্রস্তুত ছিল।
চলবে।