ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 13
প্রভাত তারার কাধে একটা লাভ বাইট দিল। তারা আউচ করে উঠল প্রভাত হেসে বলল
–কি হলো জান!
–আমাকে এসব ফালতু নাম ধরে ডাকবেন না।
–ভালোবেসে ডাকলে তোমার কাছে সেটা ফালতু মনে হয়?
–হ্যাঁ হয়। আপনার দেওয়া সবকিছুই খারাপ নিকৃষ্ট। আপনার প্রতি আমার কোনো রকম ভালোবাসা নেই কখনো হবেওনা। আপনি তো একটা ধর্ষক। লজ্জা করেনা জোর করে নিজের অধিকার খাটাতে! আপনি হলেন একটা কাপুরুষ কোনো সুপুরুষ আপনার মতো এমন জঘন্য কাজ করবেনা। আপনি একটা লম্পট দুশ্চরিত্র।
আর কিছু বলার আগেই ঠাশ করে প্রভাত তারাকে একটা থাপ্পর মারলো। তারপর চুল চেপে ধরে বলল
–আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দিকে দেখ। বিয়ের দিন রাতে পালিয়ে গিয়ে অন্য পুরুষের সাথে ছিলি তোর চরিত্র কতোটা ভালো?
তারার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এই প্রথম কেউ তার চরিত্র নিয়ে কথা বলল। ছি আজ নিজের কাছেই তারা ছোট হয়ে গেল। ওর মনে তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না! এই নরক থেকে পালাতে চেয়েছিল। তার জন্য আজ তার চরিত্র নিয়ে কথা উঠল।
–আমার ছোয়া তোর খারাপ লাগে তাই না! যা কথা দিলাম আজকের পর থেকে আমি তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো ফিজিক্যাল রিলেশনে যাবো না।
তারাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল নিজের কাছ থেকে। রুমে গিয়ে প্রভাত বিছানায় শুয়ে পড়লো। তারা ঠায় বারান্দায় ছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই নেয়।সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বেডে আবিষ্কার করলো। রাতে তো বারান্দায় ছিল তাহলে এখানে কিভাবে! তারপর বুঝলো যে এটা প্রভাতের কাজ। শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে প্রভাতের মা খাবার নিয়ে বসে আছে। তারা প্রভাতের মাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল বকা ঝকা করবেনা তো ! এই ভেবে।
–কিরে দাঁড়িয়ে গেলি যে! আয় এদিকে এসে বস সেই কখন থেকে বসে আছি তোর তো বের হওয়ার কোনো নাম নেই। আর চুলের পানিও তো ঠিক মতো মুছিস নি। দে টাওয়াল দে আমি মুছে দিচ্ছি।
তারার থেকে টাওয়াল নিয়ে তারাকে বেডে বসিয়ে দিল।
তারা অবাক চোখে ভদ্রমহিলাকে দেখছে। ওনার হয়তো তারার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করার কথা ছিল তারাকে বকতো বা দু একটা কথা শুনিয়ে দিত। সেখানে কিনা এই মহিলা ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। এখন চুল মুছে দিচ্ছে।
—অবাক হচ্ছো তাই তো?
—(নিশ্চুপ। অবাক চোখে প্রভাতের মায়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।)
—দেখ প্রথমত একটা কথা বলি আমি শ্বাশুড়ি খারাপ হলেও মা ভালো। তোমাকে আমি বউমা হিসেবে নয় নিজের মেয়ে হিসেবে দেখি। আমার মেয়ে নেই অনেক শখ ছিল মেয়ের মা হওয়ার কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের দুই ছেলে দিয়েছেন। তাতেও আমরা খুশি তবে ঐযে মনের সাধনা আশা আকাঙ্খা বলে একটা জিনিস আছে না! তাই আল্লাহ যখন মেয়ে দিলেন না তাই মনে মনে আশা রেখেছি ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা মমতা দিয়ে আগলে রাখবো। এক রকম জামা পড়বো একসাথে ঘুরতে যাবো দুজনে বৃষ্টির দিনে একসাথে বসে চা খাবো আর গল্প করবো মাঝে মাঝে ফুসকা খাওয়ার জন্য বের হবো। তোমাকে যেদিন নিয়ে আসার কথা ছিল আমি সেদিন সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে অধীর আগ্রহে তোমার জন্য বসে ছিলাম। কিন্তু
তারার চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি পড়লো এমন শ্বাশুড়ি পাওয়া যে ভাগ্যের বিষয়। তারার এখন প্রভাতের মাকে নিজের মা মনে হচ্ছে। ইশ কতো বড় ভুলটাই না করলো ঐদিন। একজন মানুষকে এভাবে অপেক্ষা করিয়ে রাখলো! এখানে থাকার কোনো কারণ ছিলনা তারার কাছে কিন্তু এখন আছে আর সেটা হলো তার শ্বাশুড়ি মা যে কিনা একটা মেয়ের জন্য মরিয়া হয়ে আছেন।
—কিরে কিছু বলছিস না কেন! রাগ করলি নাকি?
–না মা রাগ করিনি।
মা ডাক শুনে প্রভাতের মায়ের কি যে খুশি। তারাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল তারপর দুজনে মিলে গল্প গুজক করলো গল্প করার মাঝ দিয়েই প্রভাতের মা বলে উঠল
—এই যা! বাবুই আসবে তো একটু পরে আমি লান্চ রেডি করিনি এখনো।
—বাবুই!
—আরে বাবুই হলো আমার প্রভাত মানে তোর বর। আদর করে আমি বাবুই বলি।
কথাটা শুনে তারার মাথা ঝিম ধরে গেল। প্রভাত হলো সেই ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটি। দুজনেই কি তাহলে একজন! তারা তো এহসান নামেই জানে।
—মা ওনার নাম তো এহসান!
—হুম। এহসানুল চৌধূরী প্রভাত তবে সবাই প্রভাত চৌধূরী নামেই জানে।
তারার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা এসবের মানে কি! এটা কোনো সাজানো চক্রান্ত নয় তো!
—তারা তুই রেস্ট নে আমি বরং রান্না করে আসি।
—আচ্ছা।
তারার এখন শ্বাশুড়িকে সাহায্য করার মতো শক্তি নেই তা মনের দিক থেকেও বাহিরের দিক থেকেও। সব কিছু ওর মাথায় ঘুরছে কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝছেনা।
প্রভাত রুমে এসে দেখে তারা শুয়ে আছে। একবার তাঁকিয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। দরজা লাগানো শব্দে তারার ঘুম ভাঙ্গে তখন উঠে বসে প্রভাতের বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। প্রভাত বের হয়ে দেখে তারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ওর দিকে। প্রভাত তাতে কিছুটা বিচলিত হয় আর কেমন একটা ভয় কাজ করে ওর মনে। তারার এমনটা করার কারণ কি তা জানতে প্রভাত বলে
—বেশি তাঁকিয়ে থেকো না প্রেমে পড়ে যাবে। প্রেম জিনিসটা বড্ড খারাপ তার থেকেও বেশি খারাপ ভালোবাসা। কারণ তুমি যখন কাউকে ভালোবাসো তখন তার থেকে পাওয়া ছোট্ট একটা ধোকা তোমাকে ছিন্ন বিন্ন করে দিবে।
—তা ঠিক বলেছেন মি. প্রভাত চৌধূরী।
তারার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে যায় প্রভাত। তাহলে কি তারা সবটা জেনে গেল!
—আপনিই সেই ব্যক্তি যে আমাকে ফোন করতো তাই না!
—কি বলতে চাইছো তুমি ?
—আমি কি বলতে চাইছি তা আপনি ঠিকই বুঝেছেন। এখন আর না পেঁচিয়ে সরাসরি বলুন এমনটা করার মানে কি? খুব বেশি প্রয়োজন ছিল আমার ফিলিংস নিয়ে খেলার! বলুন।
—যখন জেনেই গেছো তখন আর গোপন করে কি লাভ! হ্যাঁ আমি তোমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছি তার কারণ তুমি নিজেই।
—আমি!
—হুম। আমার প্রতি তোমার যত রাগ অভিমান আছে তা দূর করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একটু হলেও ভালোবাসবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসোনি আর বাসবেওনা তার কারণ কি জানো? তার কারণ হলো আরিয়ান। আরিয়ানকেই তো তুমি ভালোবাসো। আমারই ভুল হয়েছে জোর করে তোমার জীবনে এসে তোমার জীবন নরক করে দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করো পারলে।
আর এক মুহুর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আর একটা ডেভিল স্মাইল দিল। তখনিই কেউ ফোন করলো প্রভাত রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো যে কিনা আদুরে গলায় প্রভাতকে বলল
—জান তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো!
—তৃধা এসব কি বলছো! তোমাকে আমি ভুলে যাবো? তুমি তো জানোই আমি এখন কতোটা ব্যস্ত।
—ঐ মেয়েটার জন্যে আজ তুমি আমার থেকে কতো দূরে। ইচ্ছে তো করছে ওকে মেরেই ফেলি। আর কতোদিন এই গেমটা তুমি খেলবে?
ওকে একেবারে মেরে ফেললেই তো হয়।
—এতো সহজে! ও প্রভাত চৌধূরীর ইগো হার্ট করেছে আমি ওকে তার জন্য ভালোবেসে অনেক বড় সাজা দিব।
—কিভাবে?
—জোর করে না হোক ইমোশোনালি অনেক কিছুই করা যায় বেবী।(ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল)
চলবে।