ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 14
ফোন কেটে প্রভাত একবার পেছন ফিরে তারার দিকে তাঁকায় তারপর মুখে একটা বাঁকা হাঁসির রেখা টেনে চলে যায়। তারা অবাক হয়ে যাচ্ছে আসলেও লোকটা অনেকটাই ভালোবাসে তারাকে। সেটা জোর করেই হোক ভালোবাসে তো। তারার মন থেকে তবুও প্রভাতের প্রতি রাগটা গেল না। এতো সহজে প্রভাতকে ক্ষমা করবেনা। তারাও নিজেকে ঠিকঠাক করে নিচে যায় গিয়ে দেখে আকাশ আর অদ্রিজা বসে বসে মোবাইলে লুডু খেলছে। তারার কাছেও খুব ভালো লাগে লুডু খেলতে বিশেষ করে যখন কাটাকাটির ব্যাপারটা ঘটে তখন তো সেই রকম লাগে কারো গুটি যখন এক্কেবারে ঘরের সামনে পৌঁছে যায় সেই মুহূর্তে তা কেটে দিয়ে একটা পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে।
(কাল আমার একটা ছোট্ট ভুল হয়। আমি তাড়াহুড়োর বশে সবটা লিখতে পারিনি। আসলে অদ্রিজার ব্যাপারে যে আপুরা বলেছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি নিজেও ভুলে গিয়েছিলাম এখন সেই ব্যাপারে বলছি। অদ্রিজা হলো প্রভাতের চাচুর মেয়ে একবছর আগে ওনারা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় যার ফলে ও এখন আকাশদের বাড়িতেই থাকে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসে নিজের মেয়ে/বোনের মতো।)
আকাশ খেলার সময় হঠাৎ চোখ যায় তারার দিকে। ব্যাস ট্রল করে দিল এক ডাক
—ভাবি ও ভাবি ভাবি গো!
আকাশের এমন ভাবে ডাকাতে তারা রেগে গেল আর লজ্জাও পেল কারণ আকাশের মা আর অদ্রিজা ফিক করে হেঁসে ফেলে। আকাশের কাছে গিয়ে বলে
—বেশি করছো কিন্তু!😡
—যাহ বাবা আমি আবার কি করলাম ভাবিকে ভাবি বলবো না তো কি বলবো?
—হুম। আমিও তাহলে ইলিয়ানার কথা বলছি।
—এই না না। সরি আর এমন মজা করবোনা।
—মনে থাকবে তো?
—হুম।
—ভাবি আসো সবাই মিলে এক ম্যাচ খেলি।(অদ্রিজা বলে উঠল)
—ঠিক আছে টুনি।
টুনি শুনে তো অদ্রিজা রেগে আকাশের দিকে তাঁকালো এই আকাশই একমাত্র যে ওকে টুনি ছাড়া কথা বলেনা। কারো সাথে দেখা হলে যখন বলে এই পরিচয় করিয়ে দেয় তখন আকাশ বলে “আরে এ হলো আমার ছোট বোন টুনি।” অদ্রিজার বুঝতে বাকি রইল না যে এটা কার কাজ। তারা অদ্রিজাকে এমন চুপচাপ দেখে জিজ্ঞেস করে
—টুনি তুমি রাগ করেছো?
—আবারো সেই টুনি আবার বলে রাগ করেছো হায় আল্লাহ এই টুনি নাম থেকে কি নিস্তার পাবোনা!(মনে মনে) আরে ভাবি না কি যে বলো! আসো খেলি(দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে)
—-এই মেয়ে বড় ভাইয়ের দিকে চোখ তুলে তাঁকানোর সাহস কোথায় পেলি? আদব কায়দা কিছু নেই না তোর মধ্যে।
—না নেই।
—আরে থামো তো তোমরা চলো শুরু করি আজ যে জিতবে তাকে আইসক্রিম খাওয়াবে আকাশ।
—-আর যদি আমি নিজেই জিতে যাই তাহলে?
—-তাহলেও খাওয়াবে।
তারপর সবাই হাঁসতে লাগলো। ম্যাচে তারা জিতে তারপর আকাশ তারা আর টুনির জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসে। টুনির আইসক্রিম টুনির রুমে দিয়ে আসে তারারটা নিয়ে তারা আর প্রভাতের রুমে যায়। এখন প্রভাত নেই এটাই রাইট টাইম তারার সাথে কথা বলার। আকাশ রুমে ঢুকে দেখলো তারা নেই তারপর বারান্দায় গিয়ে দেখলো তারা এক দৃষ্টিতে আকাশের সুন্দর চাঁদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আকাশ তারার পাশে দাঁড়ালো তারপর বলল
—আইসক্রিম!
—-ধন্যবাদ।
তারার আইসক্রিম খুব ভালো লাগে তাই আকাশের হাত থেকে নিয়েই খাওয়া শুরু করলো। আকাশ এবার খুব সিরিয়াস হয়ে তারার দিকে তাঁকালো তারপর বলল
—-তারা বিয়ের পর পালিয়ে যাওয়ার কারণ কি?
—(নিশ্চুপ)
—-আজকে চুপ করে থেকো না আমাকে বলো আমার জানা দরকার।
এবার তারা আর কোনো কথা না বলে প্রথভ থেকে সব বলল। আকাশ চুপ তার ভাই এতো নিকৃষ্ট কাজ করেছে ভাবতেই অবাক হচ্ছে। তারাকে জোর করেছে বিয়ের জন্য তাও আবার তারার ভাইকে কিডন্যাপ করে মারার হুমকি দিয়েছিল। ছি ছি কিভাবে পারলো এমনটা করতে! তারপর ভাবলো ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে করে ফেলেছে হয়তো। ভালোবাসার জন্য তো মানুষ সব করতে পারে। তারা একবার সুজোগ দেয়া দরকার প্রভাতকে।
—ভাই যা করেছে ভালোবেসেই করেছে তারা। একেক জনের ভালোবাসা একরকম হয়। একবার তুমিও ভালোবেসে দেখোই না হয়তো এমন কিছু পাবে যা কখনো পাওনি।(আকাশের সাদা মনে কাঁদা নেই তার কাছে ভালোবাসা পবিত্র জিনিস। তার ধারণা এটা নিয়ে কেউ ছলনা করবেনা। কিন্তু আসলেও কি তাই!)
—-আকাশ!
—আমি শুধু আমার মতামত পোষণ করলাম। এখন তোমার হাতেই বাকি সব কিছু তাতে আমি কোনো প্রকার জোর করবোনা।
আকাশ চলে যায় আর তারা ভাবতে থাকে সুযোগ দিবে কি দিবেনা!
এদিকে প্রভাত তৃধার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আর দুজনেই তারার ব্যাপারে কথা বলছে আর ওকে নিয়ে হাঁসাহাসি করছে।
—মেয়েটা বড্ড বোকা সেটাও বলবো না। তবে এটা বলবো যে ইমোশোনাল খুব বেশিই। এই বেশি ইমোশোনালই ওর কাল হয়ে দাঁড়াবে।
—-জান আমি যে তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছিনা। ঐ মেয়েটার চাপটার ক্লোজ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসো।
—-হুম। আসবো তো খুব জলদি। আচ্ছা শুনো আমি যাই গিয়ে ড্রামা শুরু করে আসি।
অনেক বেশি রাত করেই প্রভাত বাড়ি ফিরে আসে। তারা অপেক্ষা করেছিল প্রভাতের জন্য দেরি হওয়াতে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রভাত রুমে ঢুকে তারার দিকে একবার তাঁকিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। এসে দেখে তারা শুয়ে আছে তারার দিকে তাঁকিয়ে মনে মনে বলতে লাগে
—তোমার মায়া ভরা মুখটা যখন দেখি তখন আমার তোমার প্রতি থাকা সব রাগ চলে যায় কেন? তোমার প্রতি আমার অদ্ভুত এক টান আসে। ইচ্ছে করে ভালোবাসতে কিন্তু আমি তা করবোনা। কেন করবোনা তা আমি নিজেও জানি না।
প্রভাত বেখেয়ালি মনেই তারার কপালে একটা চুমু দেয়। তারপর তারার পাশে শুয়ে পড়ে। তারা মুচকি হাঁসে প্রভাত যখন ওয়াশরুমে যায় তখনিই ওর ঘুমটা ভেঙে যায়। তাও চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করে।
বেশ কদিন কেটে যায়। তারার প্রভাতের প্রতি থাকা যত রাগ আছে সব কেটে যায়। এখন তারাও প্রভাতকে ভালোবাসে। না বেসে কি উপায় আছে! প্রভাতের কেয়ারিং তারার কথা বাধ্য হয়ে শুনা সবকিছুই ওকে দুর্বল করে তুলেছে। কিন্তু ও কি জানে যে খুব শীগ্রই ওর পতন আসছে। ভুল মানুষকে ভালোবাসা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
একদিন তারা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তখন ডাক্তার ডেকে আনে ডাক্তার যখন বলে তারা মা হতে চলেছে তখন প্রভাত চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে।
তাহলে কি দুইটা জীবন নষ্ট করবে প্রভাত?
চলবে।