ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 11
প্রভাত শুয়ে আছে তখন তার রুমে আকাশ প্রবেশ করলো। আকাশকে দেখে প্রভাতের রাগ চড়ক গাছে উঠল। আকাশ কিছু বলবে তার আগেই প্রভাত শোয়া থেকে উঠে আকাশের কলার চেপে ধরলো প্রভাতের আচমকা এমন অদ্ভুদ কাজে আকাশ অনেকটা বিচলিত হলো। প্রভাত স্বাভাবিভাবে যখন আকাশের করা কাজের জন্য রেগে যায় তখন এমন উদ্ভট কিছু করে বসে। কিন্তু এখন তো তেমন কিছুই করলোনা। তারার বিরহে হয়তো পাগল হয়ে গেছে। আকাশ প্রভাতকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওর রক্তচক্ষু দেখে ভয় পেয়ে গেল।
“এমনটা কেন করলি?”
“আমি আবার কি করলাম ভাই!”
“তারা কোথায়?”
“তারা কোথায় সেটা আমি জানবো কি করে? আর জানলে কি তোমাকে জানাতাম না!”
“না জানাতি না।”
আকাশ প্রভাতের কথা শুনে রেগে গেল তাও শান্ত আর বিস্মিত সুরে বলল
“কেন জানাতাম না?”
” কারণ ও তোর গার্লফ্রেন্ড।”
“হোয়াট!”
“ইয়েস।”
“তোমার মাথা ঠিক আছে! তারা আমার গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে কেন ও তো আমার বেষ্টফ্রেন্ড।”
“তুই কি বলতে চাইছিস আমি মিথ্যুক!”
“না। তুমি ভুল বুঝছো। এই দেখ ইলিয়ানা আমার গার্লফ্রেন্ড(বাধ্য হয়ে ইলিয়ানার ব্যাপারে আর তারার সাথে ফ্রেন্ডশিপের ব্যাপারে সব বলল। তা না হলে প্রভাত যে ভুল বোঝাবুঝির মধ্যেই থেকে যেত।)
“আমি তাহলে তারা আর তোকে নিয়ে মিথ্যে সন্দেহ করছিলাম!”
“হুম।”
” তারাকে আমি খুব বেশি হার্ট করেছি তাই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”
“মানে?”
“কিছুনা তুই যা।”
“ওকে।”
আকাশ চলে গেলে প্রভাত ভাবনায় ডুবে যায়। অজান্তেই তারাকে ভুল বুঝলো আর শাস্তিও দিল। তাও তারার প্রতি জমে থাক রাগ আর নিজের ইগো ওর মধ্যে অনুতপ্ত বোধের জন্ম নেয় নি।
রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। গন্তব্য প্রিয় বন্ধু আরিয়ানার বাসা। আরিয়ানই পারে এই মুহুর্তে ওকে সাহায্য করতে। তাছাড়া আরিয়ানের বোনের হাজবেন্ট একজন পুলিস কর্মকর্তা। তার মাধ্যমে যদি কিছু জানা যায়। আরিয়ানের বাড়ির সামনে প্রভাত গাড়ি থামালো উপরের দিকে চোখ পড়তেই একটা মেয়েকে দেখলো। পেছন দিকটায় দেখা যাচ্ছে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বউ বউ লাগছে কিন্তু কার বউ! আরিয়ান তো বিয়ে করেনি সেই যে ছ্যাকা খেয়েছিল আর কখনো মেয়েদের দিকে চেয়েও দেখেনি।
দরজায় কলিংবেল বাজাতেই একটা মেয়েলি কন্ঠ “আসছি” বলে উঠল। গলাটা যে তার চিরচেনা মনে হচ্ছে। তারার কন্ঠ কিন্তু তারা এখানে কি করবে!
আরিয়ানকে দরজা খুলতে দেখে প্রভাত কিছুটা অবাক হলো কিছুটা হতাশ হলো। মনের অজান্তেই অন্য কাউকে আরিয়ানের জায়গায় আশা করে বসে ছিল হয়তো।
“কিরে তুই হঠাৎ!”
“কেন আসতে পারিনা?”
“আমি আবার কখন সেটা বললাম!”
“এই যে বললি?”
“আরে সেটা বলার পেছনে তো কারণ আছে নাকি! ঘরে নতুন বউ ফেলে কেউ এভাবে বাড়ি থেকে বের হয়? তোর গন্তব্য তো আমার বাড়ি না হয়ে হানিমুনে যাওয়ার জন্য কোনো সুন্দর জায়গা হওয়ার কথা ছিল।”
“আমাকে ভেতরে যেতে বলবি নাকি এমন ভাবে বাহিরেই দাড় করিয়ে রাখবি!”
“আরে তা কেন করবো? আয় ভেতরে আয়।”
প্রভাত আর আরিয়ান সোফায় গিয়ে বসলো তখন বুয়া এসে কি খাবে জিজ্ঞেস করলে আরিয়ান বলে লান্চ রেডি করতে। এমন অসময়ে লান্চের কথা বলাতে বুয়া আর প্রভাত দুজনেই অবাক হলো।
“তোর মাথা খারাপ এখন লান্চের টাইম নাকি!”
আরিয়ান প্রভাতকে পাত্তা না দিয়েই বুয়াকে বলল
“বুয়া যা বলছি তাই করো আর বেশি গরম করবে না প্রভাত বেশি গরম কিছু খেতে পারেনা।”
“আরিয়ান এসব কি?”
“কিছুই না। আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয় ব্রো।”
“মানে?”
“তুই না খেয়ে আছিস দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাসও নি ঠিক মতো। এর কারণ কি তা না হয় খাওয়ার পর বলিস”
ডাইনিং থেকে বুয়ার আওয়াজ “খাবার তৈরী” আসলে আরিয়ানকে প্রভাতকে নিয়ে টেবিলে বসে। টেবিলে বসে প্রভাত দেখে এ যে এলাহি কান্ড। নানান আইটেম পোলাও, সাদা ভাত, মুরগীর রোষ্ট, চিংড়ী, গরুর কালাভুনা যা প্রভাতের খুব প্রিয় খাবার তাছাড়া টক চাটনী আছে। প্রভাত আর দেরি না করে হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়লো। প্রভাত তৃপ্তি করে খাচ্ছে আসলেই খুব মজা তবে অবাক করা বিষয় বুয়া তো এসব রাঁধবে না। কারণ আরিয়ান নিজের মা আর বোন ছাড়া কারো হাতের খাবার খায় না। বুয়ার হাতের তো কোনোমতেই না। আরিয়ানের বোন তো এখানে নেই আর ওর মা লন্ডন তাহলে এত মজার রান্না করলো কে? ব্যাটা আরিয়ান তো খুন্তিটাও নাড়ে না। তখনিই মাথায় সেই বারান্দায় দেখা মেয়েটি আর ভেতর থেকে আসা মিষ্টি কন্ঠে আসছি বলা মানুষটির কথা এলো।
চট করে আরিয়ানের দিকে তাকালো আরিয়ান আরামসে কফি খাচ্ছিল প্রভাতকে এইভাবে তাঁকাতে দেখে ঘাবড়ে গেল। চোখের ইশারায় কি হয়েছে বললে প্রভাত বলে উঠে
“তুই বিয়ে করেছিস!”
“মানে?”
“যেটা বলছি সেটার জবাব দে।”
“হো ভাইজান ভাইয়ে বিয়া করছে। ভাবি যে কি সুন্দর কি আর কমু দেখলেই বুঝবেন। এইসব তো ভাবিই রাঁধছে।”
প্রভাত এবার আরিয়ানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাঁকালো। আরিয়ান রাগি চোখে বুয়ার দিকে তাকালে সে দৌড়ে চলে যায়।
‘—এতটাই পর ভাবিস যে নিজের বিয়ের কথাও জানালি না!”
—-কি করবো বল? সব খুব দ্রুত হয়ে গেছে।
—-সে যাই হোক তোর ওয়াইফকে আমি দেখতে চাই।
আরিয়ান কাঁশতে লাগলো প্রভাত পানি এগিয়ে দিয়ে বলল
—-বিষম খাওয়ার মতো কিছুই বলিনি। খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে তোর বউকে দেখে তারপর যাবো।
—–আগে খেয়ে নে।
—হুম।
প্রভাত খেয়ে উঠল তারপর সোফায় গিয়ে বসলো। তার মনে যে একটাই ইচ্ছা আরিয়ানার বউ কে তা দেখার। ছটফট করছে খুব মনে হয় যেন সে তারাকে দেখতে চাইছে। আরিয়ান প্রভাতকে অনেক বোঝাচ্ছে কিন্তু ও কিছু শুনতে চায় না সে তার কথায় অনঢ়।
এদিকে তারা বেহুশ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। কারণ তাকে সেন্সলেস করা হয়েছে ইন্জেকশন পুশ করে।যাতে প্রভাতের কাছে না যেতে পারে। প্রভাত যখন এসেছিল তখন আরিয়ান ওর বেডরুমের জানালা থেকে ওকে দেখে ফেলে। তাই তাড়া হুড়োর বশে কিছু না পেয়ে তারাকে অজ্ঞান করার পদক্ষেপ নেয়।
“কি হলো ঘামছিস কেন? যা ভাবিকে ডাক।”
“আসলে মানে”
“কি আসলে মানে করছিস ঠিক করে বল যা বলার।”
আরিয়ান কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। আজ যদি প্রভাত তারাকে দেখে ফেলে তাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।
আরিয়ান প্রভাতকে বলে উপরে যায় তারাকে ডাকতে কিছুক্ষণ পর এসে বলে ও ঘুমোচ্ছে। তারপর প্রভাতকে বলে “আরে ভাই চিল কর পরে দেখে নিস।” তারপর আবার বলে “আমার বউকে দেখার জন্য তুই এত মরিয়া হচ্ছিস কেন? তোর বউ যদি জানে তাহলে তো তোকে আস্ত রাখবেনা।”
এবার প্রভাত ভেবে দেখল আসলেও ব্যাপারটা ঠিক নয়। তারপর আর জেদ ধরেনি। আরিয়ানকে এসেছিল তারার ব্যাপারে বলতে পরে না বলেই সেখান থেকে চলে গেল। তারাকে একবার হাতের মুঠোয় পেলে ওর কাছ থেকে পালানোর জন্য উচিত শিক্ষা দিবে মনে মনে সেটাই স্থির করে রাখলো।
আরিয়ানের বাসা থেকে বের হতেই প্রভাতের মোবাইলে একটা কল আসে রিসিভ করতেই একজন বলে ওঠে
“স্যার ম্যামকে শেষ কোথায় দেখা গেছে তা আমরা জানতে পেরেছি”
চলবে।