না চাইলেও তুই আমার !! Part- 08
মিহান মিরাকে কোলে নিয়ে চোরের মত বাড়ি থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে যায়।মিরা তো বারবার মিহানের কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু মিহান মিরাকে কোল থেকে না নামিয়ে বাড়ির পাচিলের পাশে নিয়ে গিয়ে মিরাকে কোল থেকে নামায়। মিরা রাগি চোখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : আমাকে এত রাতে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?
মিহান হাসি মুখে বলে।
মিহান : এখান পাচিল টপকাবো। তারপর তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো?
মিরা অবাক হয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে।
মিরা : গেট থাকতে পাচিল দিয়ে?
মিহান : হ্যা এটা প্রেমের একটা পার্ট। লুকিয়ে চুরিয়ে চোরের মত প্রেম করার এক অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়।
মিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
মিরা : আমি কি আপনার সাথে প্রেম করতে এসেছি? আমার ঘুম পাচ্ছে আমি গেলাম।
মিহান মিরার হাত ধরে মন খারাপ করে বলে।
মিহান : চলো না জান সকালের আগে নিয়ে আসবো।
মিরা মিহানের আবদার উপেক্ষা করতে চেয়েও উপেক্ষা করতে পারে না রাজি হয়ে যায় মিহানের কথায়।মিরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে মিহান খুশি হয়ে যায়।মিহান আর কিছু না ভেবে লাফ দিয়ে পাচিলের উপর উঠে পরে মিরার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মিরা মিহানের ধরে আস্তে আস্তে পাচিলের উপর উঠে। মিরা অনেক কষ্টে পাচিল টপকাতে সক্ষম হয়।রাস্তার পাশে মিহানের গাড়িতে উঠে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলে।
মিরা : নিজের বাড়ি থেকে চোরের মত বের হতে হলো শুধু মাত্র এই পাগল ডাক্তারের জন্য।
মিহান মিরার কথা শুনে মুচকি হেসে ওর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।মিহান মিরার হাতের দিকে দেখে ওর মায়ের হাতের চুড়ি মিরার হাতে। মিহানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে মনে মনে বলে।
মিহান : মমের হাতের চুড়ি তাহলে ওর সাথে মমের দেখা হয়েছে। মমের বউমার হাতে বেশ মানিয়েছে চুড়িগুলো।
মিরা খেয়াল করে মিহান তখন থেকে নিজো ভাবনায় মগ্ন। মিরা বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে।
মিরা : আমরা এত রাতে এখান কোথায় যাবো?
মিহান : আমার পছন্দের চায়ের দোকানে। সেখানে চা একবার খেলে আবার খেতে চাইবে। আমি কলেজ লাইফ থেকে ঐখানে চা খাই। যেদিন হসপিটাল থেকে রাত করে ফিরি সেদিন ওখান থেকে চা খেয়ে নিজের মুড ঠিক করে আসি। তোমারও ভালো লাগবে।
মিরা মনে মনে বলে।
মিরা : এ কি করে ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ করেছে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। না হলে রাত প্রায় তিন টা বাজতে চললো এখন চা খাওয়ার জন্য আমাকে জোর করে নিয়ে আসে।
মিরার ভাবনায় ছেদ ঘটে হঠাৎ করে গাড়ি থামার কারনে। মিহান গাড়ি থেকে নেমে দেখে গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে যায়। মিহান রাগে ফোস ফোস করছে। এই প্রথম মনের মানুষকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে আর আজকেই এটা হতে হলো। মিরা গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির অবস্থায় দেখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : এখন কি করবো? এত রাতে তো আর কোনো গাড়িও পাবো না।
মিহান : কি আর করবো চলো হেটে হেটে যাবো।আর যদি সামনে কোনো কিছু পাই কি না। চলো হাটি!
মিরা আর কিছু না বলে ওর সাথে হাটতে শুরু করে। মিহান আর মিরা টুকিটাকি কথা বলতে বলতে হেটে চলেছে জোছনা রাতে।মিরা পরিবেশ টা উপভোগ করছে। নিঝুম রাতে নিজন রাস্তার কপত কপতি হেটে চলেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর মিহান দাঁড়িয়ে যায়। মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।
মিহান : এক মিনিট আমি এখনি আসছি!
মিরা কিছু বলার আগে মিহান দৌড়ে সেখান চলে যায়।মিরা অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু মিহানের আসার নাম নেই। মিরা একা একা বিড়বিড় করতে থাকে।
মিরা : এই লোকটা কি? যখন তখন তার পাগলামি শুরু করে দেয়। আমাকে এই রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখে কোথায় চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মিহান হাসি মুখে এসে মিরার সামনে দাঁড়িয়ে দুহাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয়। মিরা তাকায়ে দেখে মিহানের হাতের মুঠোয় বকুল ফুল। অত বছর বিদেশে থেকেও চিনতে অসুবিধা হয় নি। মিরা নানু বাড়ির পিছনে একটা বকুল ফুল গাছ ছিলো। ছোট বেলায় প্রচুর খেলেছে এই ফুল দিয়ে মিরা। মিহানের হাতে তার পরিচিত ফুলগুলো দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে।
মিরা : বকুল ফুল!
মিহান : তুমি চিনো এই ফুল?
মিরা : ছোট বেলায় অনেক খেলা করেছি এই ফুল দিয়ে। না চেনার কি আছে। আচ্ছা আমি নিবো এই ফুলগুলো?
মিহান : তোমার জন্য তো এত কষ্ট করে নিয়ে এলাম।
মিরা খুশি হয়ে ফুলগুলো হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে বলে।
মিরা : আপনি জানলেন কি করে এখানে বকুল গাছ আছে?
মিহান : অনেকক্ষণ ধরে মৃদু বাতাসে বকুল ফুলের মাতাল করা গন্ধটা পাচ্ছিলাম। এখানে এসে বুঝে যাই গাছটা আশেপাশে কোথাও আছে। তাই তোমাকে দাঁড় করিয়ে ছুট লাগাই বকুল ফুলের সন্ধানে।
কিছুক্ষণ এইভাবে কথা বলার মাঝে মিহানের ফোন
বেজে উঠে। মিহান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে।
মিহান : মম ফোন করেছে!
মিহান ফোন রিসিভ করে Speaker দিয়ে কথা বলতে শুরু করে।
মিহান : হ্যালো মম।
মায়া : রাত কত হলো তোর খেয়াল আছে। আমি তো এখনো তোর জন্য ওয়েট করছি।
মিহান : সরি মম কিছুক্ষণ আগে হসপিটালের কাজ শেষ হয়েছে। এখন তোমার বউমার সাথে নিয়ে আমার প্রিয় চায়ের দোকানে যাচ্ছি।
মায়া : তুই এত রাতে ওকে কোথায় পেলি?
মিহান : ওর বাড়ি গিয়ে নিয়ে এসেছি। ও আসতে চায়নি কিন্তু আমি ওকে জোর করে বাড়ি থেকে চোরের মত নিয়ে এসেছি।
মায়া : এই না হলে আমার ছেলে!
মিহান : মম শোনো না তুমি আমাদের জন্য একটা গাড়ি পাঠিয়ে দেও। আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে।
মায়া : তাহলে তোরা কি করে পৌঁছলি?
মিহান : কি করে আবার হেটে হেটে। কি রোমান্টিক অনুভূতি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না মম।
মায়া : হা হা হা। ঠিক আছে আমি দেখছি। এখন তুই প্রেম কর আর আমি বরং রাখি।
মিহান : আচ্ছা মম।
মিরা এতক্ষণ হা করে সব শুনছিল মা ছেলে যে এমনভাবে কথা বলা।
মিরা : আপনি কি সব সময় আপনার মায়ের সাথে এইভাবে কথা বলল?
মিহান : হ্যা। মম আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমার জীবনে এমন কিছু নেই যে মম জানে না। জানো পাপা সব সময় বলে, আমি না কি একদম মমের মত হয়েছি।
মিরা একা একা বিড়বিড় করে বলতে থাকে।
মিরা : একদম ঠিক বলেছেন উনি। না হলে উনার ছেলে আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। তা নিয়ে উনি খুশি হচ্ছেন। আমি আরো তাকে বলে এলাম তার ছেলে যেনো আমার পিছনে আর না ঘুরে। আর তিনি আমার সাথে উনার ছেলেকে ভালো ভাবে প্রেম করতে বলছেন। উফ আল্লাহ এ আমি কেনো পাগলদের পাল্লায় পড়লাম।
চলবে… 🍁