সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 31

৩২.
রাহুল আহমেদ একেবারে দুপুরে খাবার খাইয়ে বাসার ঠিকানা নিয়ে তবেই বিদায় দিলেন আমাদের। এদিকে বিকাল হয়ে গেছে প্রায়। আবদ্ধ কল দিয়ে বলেছে মেহমান সবাই এসে গেছে। বৌভাতের অনুষ্ঠানও শুরুর দিকে প্রায়! অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে হয় আমাদের।
.
তাড়াহুড়ো জিনিসটা আসলেই খারাপ। যেখানে এ জিনিসটা ব্যবহার করা হবে সেখানে দেড়ি হবেই। যেমন এখন আমার সাথে হচ্ছে। জেমে বসে আছি প্রায় আধাঘন্টা যাবত। বিরক্তির চরম পর্যায় আমি। কিন্তু রেয়ানের মনে একরাশ আনন্দ। হবেই না কেন? বিয়ে ঠিক হয়েছে তার। আনন্দ হওয়ারই কথা! গাড়ির রেডিও-তে গান ছাঁড়লেন রেয়ান। মনের সুখে গুনগুন করছেন উনি। জানালা থেকে মুখ সরিয়ে তার দিকে তাকালাম আমি। বললাম…
— “দিহানের সাথে কখন দেখা করব আমরা রেয়ান? আবদ্ধের বিয়ের দিন আপনি বলে ছিলেন ওকে বোঝাবেন। নতুন করে জীবন শুরু করতে বলবেন।”
চমকালেন রেয়ান। মুখের গুনগুন বন্ধ হয়ে গেছে ততক্ষনাত। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি। পরক্ষনেই রেডিও বন্ধ করতে করতে বললেন…
— ” আবদ্ধর বিয়ে হয়েছে আজ এক কি দুই দিন। আমাদের বিয়েটা হোক তারপর যাবো।”
— “না! তখন গেলে ব্যাপারটা ওর ক্ষেত্রে নেগেটিভ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় আরও আগে যাওয়া উচিত।”

— “কখন?”
— “কালকে কিংবা পরশু। আপনি ফ্রি থাকলে।”
— “কালকে না। ব্যস্ত থাকবো আমি। একজন পেসেন্টের বিভিন্ন টেস্ট করতে হবে। রাতের আগে ফ্রি হবো না। তারচেয়ে পরশু দিন বিকাল বেলা দেখা করব। চলবে?”
— “হুম।”
হাসলেন রেয়ান। বললেন…
— “আমি একটু আসছি। তুমি বসো।”
— “কোথায় যাচ্ছেন?”
আবারও হাসলেন রেয়ান। মুখ থেকে “আসছি” শব্দটা বের করেই গাড়ি থেকে নেমে যান উনি। প্রায় মিনিট কয়েক পর আবার এসে হাজির হোন রেয়ান। গাড়িতে বসেই হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে এক গুচ্ছ তাজা গোলাপ এগিয়ে দেন। আবেগী কণ্ঠে বলেন…
— “তোমার জন্যে।”
অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে। বললাম…
— “কোথায় পেলেন?”
— “রাস্তার ওপরপাশে ছোট্ট পিচ্চি মেয়ে ফুলগুলো বিক্রি করছিল। আমার ইচ্ছে হলো তোমাকে দিতে তাই নিয়ে আসলাম।”
হাসলাম আমি। ঘামে রেয়ানের নাক,গাল লাল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে তার নাকটা টেনে দিতে। আর বলতে- “আপনি অনেক কিউট রেয়ান!” তবে করলাম না সেটা। তার থেকে ফুলগুলো নিয়ে নিলাম মাত্র!

____________
বাসায় আসতে আসতে বিকাল ৪টা বেজে যায়। তখন দীঘির বৌভাত শুরু হয়ে গেছে। দীঘিকে মাঝখানে বসিয়ে তাকে ঘিড়ে আছে মেহমানরা। পাশেই আবদ্ধ, মামী আর শারমিন দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি আর রেয়ান ড্রইংরুমে ঢুকতেই আমার দূরসম্পর্কের চাচী মামীকে বলে উঠেন…
— “মিরার সাথে এটা কে রে?”
মামী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রেয়ান বলে উঠলেন…
— ” আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আমি মিরার হবু বর রায়হান আহমেদ।”
নাকমুখ ছিটকালেন চাচী। কোনো রকম সালামের প্রতিউত্তর দিয়ে কর্কশ কণ্ঠে পাশের মহিলাকে বললেন…
— “বিয়ের আগেই এমন ঘোড়াঘুড়ি। না জানি আর কি কি করেছে। এখনের প্রজন্ম আসলেই অনেক বাজে হয়ে গেছে বুঝলি।”
রেগে গেলেন রেয়ান। চাচীর কথার মানে বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন উনি। তবুও চাচীর দিকে তাকিয়ে রক্তিম চোখে হাসলেন উনি। তাচ্ছিল্য নিয়ে বললেন…
— “আন্টি অন্যের মেয়ের দিকে তাকানোর আগে নিজের সন্তানের দিকে প্রথমে তাকানো উচিত। অনেক মা আছেন জানেন তো, যারা অন্যের দোষ ধরতে গিয়ে নিজের সন্তানের দোষ ধরতেই ভুলে যায়। পরবর্তিতে দেখা যায় সে অন্যের মেয়ের নামে যে যে বদনামী করেছে তা নিজের সন্তানের সাথেই ঘটছে। আসলে ওগুলো সমাজের নিচু জাতের মানুষ বুঝেছেন। ইউ নো ওয়াট আন্টি, আমার মতে জেলে দেওয়া উচিত ঐসব অসভ্য মহিলাদেরকে।”
কথাটা বলেই হাসলেন রেয়ান। রেয়ান যে চাচীকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছেন সেটা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন চাচী। মুহুর্তেই মুখ কালো হয়ে গেল তার। মুখ থেকে আর একটা শব্দও বের করলেন না।এদিকে রেয়ানের এরুপ কথায় আবদ্ধ, মামী, শারমিন আর দীঘি বেশ খুশি হলো। চাচী প্রথম থেকেই দীঘির অনেক দোষ ধরছিলেন। যার প্রতিবাদ আবদ্ধ করলেও চাচী যেন আরও উত্তেজিত হয়ে যায়। কটু কথা বলার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন উনি। তাই বাধ্য হয়ে আবদ্ধ চুপ হয়ে যায়। কিন্তু রেয়ানের কথায় যে চাচী নামক মহিলাটি দমে গেছে, সেটা ভেবেই আনন্দ লাগছে আবদ্ধের। লাজ-লজ্জা সব ভুলে আবদ্ধ এবার দীঘির পাশে ধপ করে বসে পড়ল। দীঘি তো অবাক। চোখ বড় বড় করে আবদ্ধের দিকে তাকাল সে। পরক্ষনেই চোখ নামিয়ে ফেলল সে। লজ্জা লাগছে তার। ভীষণ লজ্জা! কোনোমতে ফিসফিসিয়ে সে বলল…
— “লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছেন নাকি? এভাবে আমার পাশে বসার মানে কি? সবাই হাসছে তো!”
— “হাসুক। তাতে কি? আমি আমার বউয়ের পাশে বসেছি।”

— “আপনি আসলেই নির্লজ্জ আবদ্ধ।”
আবদ্ধ আড়চোখে দীঘিকে দেখলো মাত্র। কিছু বলল না। আশেপাশের সবাই হাসছে তাদের এমন কান্ড দেখে। আমি আর রেয়ানও হাসছি। হঠাৎ রেয়ান আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন…
— “বিয়ের পর এর চেয়েও দ্বিগুণ নির্লজ্জ হয়ে যাবো আমি মরুভূমি। সামলাতে পারবে তো?”
তার দিকে তাকালাম আমি। তার মুখে বাঁকা হাসি। চোখ ফিরিয়ে নিলাম আবার। বললাম…
— “অসভ্য!”
.
.
.
#চলবে…