সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 20

আজ ভার্সিটিতে “নবীন বরণ” অনুষ্ঠান। ভাবছি শাড়ি পড়ব। যেই ভাবা সেই কাজ। সাদা রঙের সাথে সবুজ রঙের কাজ করা একটা শাড়ি পড়ে নিলাম। সাথে টুকটাক সাজগোজ! হঠাৎ চোখ গেলো ডান হাতের অনামিকা আঙুলে থাকা আংটি-টার দিকে। এখনও খুলি নি আংটি-টা। খুলবো কি খুলবো না সেই দ্বিধায় পরে গেছি। একবার ভাবছি খুলবো আরেকবার ভাবছি খুলবো না। অবশেষে আংটি না খুলেই বেরিয়ে গেলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
আবদ্ধ, দীঘি, দীঘির মা আর মামী বসে বসে গল্প করছেন ড্রইংরুমে। দীঘির মা কালকে সন্ধ্যার দিকে এসেছেন আমাদের বাসায়৷ এতটুকু সময়ে বেশ ভাবে মিল হয়ে গেছে মামীর সাথে তার। যেন কতদিনের বান্ধবী তারা৷ তাদের এ-ই ঘনিষ্টতা দেখে আবদ্ধ দীঘির কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে…
— “দেখ শ্বাশুড়ি মার সাথে কিভাবে মিল হয়ে গেছে মার। তুই এখন থেকে দিন গুণতে থাক। তোর পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ে করমু তোরে। তারপর ডাইরেক বাসর বুঝলি।”
ভেঙ্গচি দিলো দীঘি। আবদ্ধের চোখে চোখ রেখে বলে উঠল- “অসভ্য লোক!”

১০.
আমি আর আমার বেস্টু আফরিন মিলে গল্প করতে করতে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুচকি হেসে বললো…
— “আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু! কেমন আছেন? আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
ভালো ভাবে মেয়েটার দিকে তাকালাম আমি। চেহারা চেনা চেনা লাগলেও ঠিক কোথায় দেখেছি তা মনে পড়ছে না আমার। কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে সৌজন্যতার খাতিরে বলে উঠলাম…
— “ওয়ালাইকুম আসসালাম। তবে আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। নামটা বললে ভালো হয়!”
— “আপু আমার নাম কুহু। ও-ই যে ট্রেনে দেখা হয়েছিলো আমাদের। আপনি আপনার হাসবেন্ডের সাথে ছিলেন আর আমি আমার হাসবেন্ড তন্ময়ের সাথে।”
এবার কিছুটা হলেও চিনতে পারলাম মেয়েটাকে। তবে পুরোপুরি ভাবে না! এদিকে আফরিন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার জানা মতে আমার তো এখনও বিয়ে হয় নি, তাহলে হাসবেন্ড আসলো কোথা থেকে? কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেললাম আমি। চোখের ইশারায় বললাম- “কিছু বলিস না”। ও চুপ হয়ে গেল। আফরিন থেকে চোখ সরিয়ে এবার কুহুর দিকে তাকালাম আমি। হেসে বলে উঠলাম…
— “কেমন আছেন?”
— “আল্লাহ যেমন রেখেছে।”
— “আপনার হাসবেন্ড কেমন আছেন?”

মুহুর্তেই মুখ মলিন হয়ে গেল কুহুর। চোখে পানি চিকচিক করছে তার। কোনোমতে কান্না আটকিয়ে বলে উঠলো…
— “এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর। ১০দিন যাবত কোমায়। ডাক্তার বলেছেন বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। আপনার হাসবেন্ড-ই তো ওর চিকিংসা করছেন।”
বলতে বলতে কেঁদে দিলো কুহু। আমি কিছু বললাম না৷ স্তব্ধ রুদ্ধবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
আমি আর আফরিন ভার্সিটি পৌঁছাতেই দেখলাম অনুষ্ঠান প্রায় শুরু হয়ে গেছে। স্টেজের কাছেই একটা চেয়ারে বসে পড়লাম আমি। আফরিন আমার পাশেই বসেছে। বারবার জিজ্ঞেস করছে- “তোর বিয়ে হলো কবে? হাসবেন্ড কি সত্যি আছে তোর?” তবে আমি এখনও নির্বাক। কানের কাছে মনে হচ্ছে কুহুর কথা গুলো বাজছে৷ কতটা অসহায় এখন মেয়েটা। কতই না কষ্ট পেতে হচ্ছে তার। ঠিক এই কারণেই আমি রেয়ানের থেকে দূরে দূরে থাকি। মনের মধ্যে একটা ভয় জেঁকে বসেছে। সাহস হয় না আমার কাউকে ভালোবাসতে। হাড়ানোর ভয় যে প্রবল ভাবে গেঁথে গেছে মনে আর মস্তিষ্কে। এর মধ্যে হুট করে দিহান এসে আমার পাশে বসে পরে। ডান হাতে রেয়ানের দেওয়া সেই আংটি-টাকে উদ্দেশ্য করে বলে…
— “তোমার হাতের আংটি-টা অনেক সুন্দর। ভাবছি আমিও আমার জিএফ কে এমন একটা আংটি দিবো।”
আংটিটার দিকে একবার তাকালাম আমি। হাত থেকে খুলে ফেলে ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বললাম…
— “তোমার বুঝি জিএফ আছে? কোই দেখাও নি তো।”
— “সামনেই তো বসে আছো। তুমিই তো আমার জিএফ।”
কথাটা বিড়বিড় করে বলল দিহান। ফলে শুনতে পেলাম না আমি। ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম…
— “কিছু বললে?”
— “কোই না তো? আচ্ছা আজকে কি আমি তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারবো তোমার বাসায়?”
— “না আমি যেতে পারবো!”
— “কিন্তু মিরু অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় ৫টা। দেন আমরা ফ্রেন্ডরা রেস্টুরেন্টে যাবো। সেখান থেকে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তোমাকে একা কিভাবে যেতে দি? তাছাড়া গাড়িও আনো নি তুমি।”
— “দিহান আই উইল মেনেজ! তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।”
কিঞ্চিত মন খারাপ হলো দিহানের। মাথা নিচু করে বসে রইলো সে।
১১.
সবশেষে বাসার দিকে রওনা দিলাম আমি। তখন বাজে প্রায় ৭টা ৫৩ মিনিট। তাও আশপাশটা একদম জন-মানবহীন। এদিকটায় মানুষ জন থাকে না বললেই চলে। সন্ধ্যা হতেই যে যার বাসায়! তারওপর একটা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে গুনগুন করতে করতে বাসার পথে হাঁটছি আমি। হঠাৎ চোখ যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর দিকে। দূরে থাকা সত্ত্বেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ছেলেগুলো কেমন ঢুলেঢুলে হাঁটছে। মাতালরা যেমন হাঁটে, ঠিক তেমনি। বুঝতে বাকি রইলো না ছেলেগুলো এ এলাকার বাজে ছেলেগুলোর মধ্যে কয়েকজন। খুব তো বলেছি একা একা বাসায় যেতে পারবো, এখন যে ভয় লাগছে আমার। যতই এগোচ্ছি ততই যেন ভয়টা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। ওদের অনেকটা কাছে আসতেই মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিবো তখনই একটা ছেলে বিশ্রী ভাবে হেসে অন্য মাতাল ছেলেদের বলে উঠে…
— “দেখ মামা কি মাল যাচ্ছে সামনে দিয়ে। আজকে তো পার্টি হবে।”
— “ঠিক বলছিস মামা। এই সুন্দরী তোমার রেট কত হ্যাঁ?”

আমি কিছু বললাম না। সামনের পথের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে দিলাম এক দৌড়। পাশাপাশি ছেলেগুলোও আমার পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলো। আর বিভিন্ন থ্রেট দিতে লাগলো আমায়। এদিকে রেয়ান আমার ভার্সিটির রাস্তা দিয়েই তার হাসপাতালে যাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করে মাঝরাস্তায় একটা মেয়ে দৌঁড়াচ্ছে৷ তার পিছু নিচ্ছে প্রায় তিন-চার’টে ছেলে। একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাতেই বুঝতে পারলো এটা তার মরুভূমি। সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষলো রেয়ান। গাড়ি থেকে নামতেই দৌঁড়ানো অবস্থায় তার সাথে ধক্কা খেলাম আমি। ভয়ে ভয়ে মাথা উঁচু করে রেয়ানের মুখ দেখতেই জানে পানি আসলো আমার। তবে শরীর একদম অসার হয়ে গেছে। কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারলাম না। ঢলে পরলাম রেয়ানের বুকে। রেয়ানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। তখনই মাতালদের মধ্য থেকে একটা ছেলে বলে উঠে…
— “এই ছেলে। এখানে কি তোর হ্যাঁ? এই মাল আমাদের।এটা আমাদের শিকার! চুপচাপ মেয়েটাকে দিয়ে দে। নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে চলে যা।”
রেয়ান কিছু বললেন না৷ একবার রক্তিম চোখে ছেলেগুলোর দিকে তাকালেন। আমাকে কোলে তুলে গাড়ির পেছনের সীটে শুইয়ে দিলেন উনি। কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে উঠলেন…
— “ভয় নেই মরুভূমি। আমি আছি তো।”
ব্যাস! এতটুকু বলেই চলে যান উনি। গাড়ির ভেতরে থাকায় কি হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। তবে শুনতে পারছি ছেলেগুলোর এক একটা অর্তনাদ। আর রেয়ানের কথাগুলো…
— “অনেক সখ না মেয়েদের সাথে রাত কাটানোর। তোদের এই সখ আমি মিটাচ্ছি। আজ তোদের এমন অবস্থা করব আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও ভুলে যাবি তোরা। কি বলেছিলি যেন? আমার জান তোদের মাল? শিকার ও তোদের? সাহস কিভাবে হয় আমার জানের দিকে হাত বাড়ানোর। তোদের যদি আজকে না মেরে ফেলি আমি…”
আর কিছু শুনোতে পেলাম না আমি। ঝাপসা চোখ যেন আরও ঝাপসা হয়ে গেল। মুহুর্তেই আমার চোখের চারপাশটায় গভীর অন্ধকার ছেঁয়ে গেল!
.
.
.
#চলবে🍁