সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 18

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। আকাশ থেকে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি পড়ছে। দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির কয়েক ফোটা শরীরে লাগার সাথে সাথেই এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।এতে মন কার না ভালো হয়? আমার তো বেশ ভালো লাগছে৷ তবে মনটা অশান্ত!
আজ দু’দিন হলো রেয়ানের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আমিও আমার মতো আছি। তবে প্রতিনিয়ত তার কথা মনে পড়ে আমার। ওইদিনের ঘটনা ঠিক মেনে নিতে পারছি না আমি। না বুঝতে পারছি রেয়ানের ওরকম করার কোনো মানে। এত রাগ কেন তার? তাও আবার আমার প্রতি। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কেউ “মরুভূমি” বলে ডেকে উঠলো আমায়। পাশ ফিরে তাকাতেই আমি অবাক! এ প্রথম রেয়ানকে নিচ থেকে বারান্দায় উঠতে দেখছি। মই দিয়ে উঠছেন উনি। কিন্তু মই কোথায় পেলেন? মই তো আমাদের বাসায় থাকার কথা না! তাছাড়া রেয়ানের হাতেও কিসব পেকেট দেখছি। কিসের পেকেট এগুলো? এরমধ্যে হঠাৎ রেয়ান ধমকে উঠেন। দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে উঠেন….
— “এভাবে হা করে কি দেখছো হ্যাঁ? কতক্ষন ধরে পেকেট-টা নিতে বলছি। কানে শুনো না? ধ্যান কোই থাকে তোমার?ধরো এটা!”
এক পলক রেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি পেকেট-টা হাতে নিলাম আমি। উনিও মই থেকে চলে আসলেন বারান্দায়। কিছু না বলেই চলে গেলেন রুমে। বিছানায় আয়েশ করে বসে বলে উঠলেন….

— “এভাবে হাবলার মতো না তাকিয়ে দেখো পেকেটে কি এনেছি।”
— “আমি কেন দেখবো? তাছাড়া আপনার কোনো জিনিস আমি নিবো না।একদমই না! যা এনেছেন নিয়ে যান।”
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালেন রেয়ান৷ মুখে বিরক্তির ছাপ এনে বলে উঠলেন….
— “তোমাকে কিছু দেওয়ার সখও নেই আমার। দেখো পেকেটে বিরিয়ানির বক্স আছে একটা। চুপচাপ হাত ধুয়ে বিরিয়ানি খাইয়ে দাও আমায়।”
নিস্বসঙ্কচ আবেদন! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১১টা বেজে ৫৫মিনিট। আর ৫মিনিট পরই ১২টা বাজবে। এসময় হুট করে কেউ রুমে এসে এ ধরণের আবদার করলে সেটা নিসন্দেহে বিরক্তিকর! অনতত আমার জন্য! রেয়ানকে কিছু কথা ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করছে আমার। দু’দিন আগের ঘটনা ভুলি নি আমি। মোটেও না! তার ওমন ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি খুব। আচ্ছা! সে কি দু’দিন আগের ঘটনা ভুলে গেছে? কিভাবে পারলো আমার কাছে এমন আবদার করতে? না বলল “সরি” আর না আছে তার মুখে অনুতপ্ততার কোনো ছাপ! আমাকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেয়ান আবার বলে উঠলেন…
— “কি হয়েছে? তোমাকে কি বলেছি আমি? যাও তাড়াতাড়ি! প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে আমার।”
কিছু বললাম না আমি। এখন কিছু বলা মানেই কথা বাড়ানো। যা আপাতত আমি চাচ্ছি না। অনেক জেদ, অভিমান, রাগ থাকলেও এখন তা প্রকাশ করছি না। করবই বা কেন? সে কে আমার?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে লেগে গেলাম তাকে খাওয়াতে৷ আমার হাতে আরাম করে খাচ্ছেন উনি। যেন কতদিন তৃপ্তি করে খাবার খান না! তবে তার এ তৃপ্তি ভালো লাগছে না আমার। কিসের অধিকারে এসব বলেন আমাকে। ভালোবাসেন? আবেগের বসে? নাকি অন্যকিছু? হাসলাম আমি। কেন যেন হাসতে ইচ্ছে হলো। হেসে হেসেই তাকে বললাম…
— “আপনি আমার কে হোন ডক্টর?”

আচমকা এমন প্রশ্নে আমার দিকে তাকালেন রেয়ান। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন…
— “প্রশ্ন করে নিজেই তো উত্তর বলে দিলে! তুমি তো জানোই আমি তোমার ডক্টর।”
— “হুম! কিন্তু ডক্টরা তো আর রাত-বিরাতে তাদের পেসেন্টদের দেখতে আসে না। তাকে খাইয়ে দেওয়ার আবদার করে না। এত অধিকারও খাটায় না। তাহলে আপনি কেন করেন এসব? তাছাড়া আমি তো এখন সুস্থ।”
আমার কথার মানে বুঝলেন না রেয়ান। তবে অবাক হলেন। কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন…
— “তুমি কি জানো না কেন অধিকার খাটাই? কেন এসব আবদার করি?”
— “অবশ্যই না! কখনও বলেছেন কি আমায়?”
রেয়ান ক্ষনিকের জন্য চুপ করে রইলেন। পরক্ষনেই বললেন….
— “না! তবে প্রতিনিয়ত আমার আচরণ দিয়ে তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি। এই যে, এখনও বুঝানোর চেষ্টায় আছি। তুমি কি বুঝতে পারছো না?”
— “না! সত্যি বলতে বুঝতে চাইও না।”
— “কেন বলতো? মুখে বলি নি কখনও তাই? তাহলে এখন বলছি। বিয়ে করবে আমায় মরুভূমি!”
— “কথাটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি? ভালোসেন নাকি আবেগ? মোহ নয়তো?”
রেয়ান কিছু বললেন না। উঠে দাঁড়ালেন। আমার কাছে এসে কপালে আলতো উষ্ম ছোঁয়া দিয়ে বলে উঠলেন….
— “ভালোবাসি প্রিয়তমা!”

৭.
দীঘিকে খাইয়ে দিচ্ছে আবদ্ধ। আর দীঘি! ঘুমানোর জন্য মিনতি করছে। যা শুনতে আবদ্ধ নারাজ। ভাত খেয়ে পড়া তারপর ঘুমানো। এর আগে কোনো নিস্তার নেই দীঘির।
খাবার শেষ হতেই আবদ্ধ নিজের পড়ার পাশাপাশি দীঘিকেও পড়াচ্ছে। দীঘিও না চাইতে ঘুমের জন্য ঢুলেঢুলে পড়ছে৷ যা দেখে রেগে যায় আবদ্ধ। দীঘিকে জোড়ে এক ধমক দেয় সে, সাথে সাথে ধড়ফুড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায় আবদ্ধের দিকে।
— “কি হচ্ছেটা কি? তোর না কয়েকদিন পর পরীক্ষা? না পড়ে ঝিমুচ্ছিস কেন?”
আবদ্ধের দিকে করুন চোখে তাকালো দীঘি। কাঁদো কাঁদো সরে বলে উঠল…
— “১২টা বাজে আবদ্ধ! খুব ঘুম পাচ্ছে আমার। এমনিতেই অনেক্ষন পড়েছি। এখন ঘুমাতে যাই প্লিজ।কালকে আবার পড়বো।”
দীঘির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আবদ্ধ। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো….
— “এ কথাটা এ পর্যন্ত কতবার বলেছিস বলতো?”
— “প্লিজ আবদ্ধ…”
— “চুপ একদম! পরীক্ষায় কি আন্ডা মারার ইচ্ছে আছে। আমি এখানে দিনরাত কষ্ট করে পড়াচ্ছি যেন সে ভালো ডাক্তার হতে পারে। আর এ মহারাণী করছে কি? ফাঁকিবাজ একটা। চুপচাপ পড়বি এখন।নো ঘুম! নাহলে আমার হাতের মার থেকে নিস্তার নেই তোর।”
কিঞ্চিত ভয় পেল দীঘি। আবদ্ধ যদি একবার রেগে যায় তাহলে তার সত্যিই নিস্তার নেই। তাই ভদ্র মেয়ের মতো পড়তে লাগলো সে। কিন্তু ঘুম আসলে কি কাউকে ঘুমানো থেকে আটকানো যায়? মোটেও না! সেরকম ভাবেই পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে যায় দীঘি। মাথাটা কাত হয়ে পড়ে যায় আবদ্ধের বুকে। অবাক হয় আবদ্ধ। এ মেয়ে এত ঘুম কাতুরে কেন? এক নম্বর পড়া ফাঁকিবাজ! ভাবতেই হাসলো আবদ্ধ। দীঘির দিকে তাকিয়ে দীঘির মুখের সামনে থাকা চুলগুলো কানে গুজে দিলো সে।
.
.
চলবে