সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 17

রেয়ান তার কথা রেখে ছিলেন।উনি রাতে আসেন নি দেখা করতে। ভেবেছিলাম হয়তো আসবেন।তবে আমার ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল!
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আমার প্রথম কাজ ছিল দিহানকে ফোন দেওয়া। তাই-ই করি! দুই-তিন বার রিং হতেই ফোন ধরে দিহান। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অপরপাশ থেকে নরম কঠিন মিশ্রিত কণ্ঠ ভেসে উঠে।
— এতদিন পর মনে হলো আমার কথা মিরু! জানো আমি কতটা টেন্স ছিলাম।এমনটা আমার সাথে না করলেও পারতে।
— আমি কি করেছি?
— তুমি জানো না তুমি কি করেছো? তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম পার্কে?
— তোমার কাছে কি মেসেজ যায় নি? আমি তো বলেছিলাম তোমার সাথে দেখা করতে পারবো না।
— হুম মেসেজ পেয়েছিলাম। তবে আমি তো তোমার জন্য ১ঘন্টা হলেও দাঁড়িয়ে ছিলাম। যদি না-ই আসলে তাহলে আরও আগে বলতে পারতে।আমি যখন ফোন করেছিলাম তখন বলতে পারতে। আমি ভেবেছিলাম তুমি আসবে। কিন্তু আফসোস! তুমি আসো নি।
— সরি দিহান। আমি আসলে এমনটা করতে চাই নি।
— তুমি সবসময় এমনটা করতে চাও না মিরু।কিন্তু হয়ে যায়। আর সেটা প্রতিবারই।
— আচ্ছা সরি তো। আর শুনো আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছি।
দিহান তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে উঠে…
— বাহ্! এটাও শেষ।
— দিহান এখন বাদ দাও এগুলো। রেডি হয়ে বাসায় আসো।আমরা একসাথে ভার্সিটি যাবো।
— আচ্ছা!

ফোন কেটে দিলাম আমি।তবে ভয় লাগছে। রেয়ান তো বলেছিলেন ওর সাথে কথা না বলতে। দেখা তো দূরের কথা! এখন যদি রেয়ান কোনোভাবে জানতে পারেন আমি দিহানের সাথে ভার্সিটি যাচ্ছি তাহলে তো উনি আমাকে মেরেই ফেলবেন। তারওপর দিহানকেও বলে ফেলেছি। আবার মানাও তো করতে পারবো না। উফফ! এই দো’টানায় পিষে গেছি আমি। কিন্তু এবার মনে অনেকখানি সাহস জুগিয়ে ফেলেছি। দিহানের সাথে ভার্সিটি আমি যাবোই। যে করেই হোক। সবসময় রেয়ানের কথাই কি আমাকে শুনতে হবে? একদমই না!
ভেবেই রেডি হতে লাগলাম আমি৷ রেডি হওয়ার ২-৩মিনিট পরই দিহানের কল। সে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমিও তাড়াহুড়ো করে নিচে চলে যাই। মামী, আবদ্ধ আর দীঘিকে বিদায় জানিনে না খেয়েই বের হয়ে পড়ি বাসা থেকে। এমনিতেই অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। নাস্তা খেতে গেলে আরও দেড়ি হয়ে যাবে।
৬.
ভার্সিটিতে গিয়ে হঠাৎ জেনির সাথে দেখা হয়ে গেল আমার। জানতে পারলাম সে নাকি এখানেই পড়ে! আমাকে দেখে তাচ্ছিল্য ভরা কণ্ঠে বলে উঠে….
— তুমি এখানে? পড়ো নাকি?
— হুম!
— বাহ্! তোমার মতো মেয়েরাও দেখি এখন এ ভার্সিটিতে পড়ে।
— মানে? আমার মতো মেয়ে বলতে কি বুঝাচ্ছেন? হয়তো আপনি আমার থেকেও বেশি বড়লোক।কিন্তু আমি কোনো বস্তির মেয়ে না। সো মাইন্ড ইউর লেঙ্গুইজ!
— তোমার মতো ক্ষ্যাত মেয়ের জ্ঞান আমার প্রয়োজন নেই।যে টাকার জন্য ছেলেদের পিছু পিছু ঘুড়ে।
— ও রেইলি? আমি আবার কখন ছেলেদের পিছু পিছু ঘুড়লাম? দেখুন মিস যেই-ই হোন, আমি যথেষ্ট ভদ্র। অনতত আপনার মতো অশ্লীল জামা পড়ে ছেলেদের শরীরের সর্বাঙ্গ দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুড়ি না।
কথায় আছে না “সত্যি বললে সবারই গায়ে লাগে।” জেনিরও তেমনই হলো। রেগে গিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারতে নিবে তার আগেই দিহান জেনির হাত ধরে ফেলে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে…
— হেই মিস! নিজের রাস্তা মাপো তাড়াতাড়ি। আদার ওয়াইজ কি হতে পারে তোমার আইডিয়াও নেই। বলা তো যায় না।ওকে চড় মারার আগে তোমার গালেই চড় বসে যায়। সো গেট লোস্ট!
দমে গেল জেনি। তবে পুরোপুরি না। আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে কি যেন বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল সে। ক্লাসের টাইম হয়ে যাওয়ায় আমি আর দিহানও চলে গেলাম ক্লাসে।

ভার্সিটি ছুটি হতেই দিহান আর আমার কিছু পুরনো বন্ধু-বান্ধুবীরা মিলে বের হয়ে পড়ি রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। তখন বাজে বিকাল প্রায় ৪টা! সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পানি ছাড়া কিছুই খাইনি আমি। পেট যে সইছে আর, কিছু খেতেই হবে এখন। তাছাড়া কেন্টিনের খাবারও অত ভালো লাগে না আমার। তাই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার প্রোগ্রাম!
রেয়ানের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। এতদিন পর পুরনো বন্ধুদের পেয়ে আড্ডায় মেতে উঠি আমি। এসময় মোবাইলে মেসেজের টুংটাং শব্দ বেজে উঠে। রেয়ানের মেসেজ! এবার প্রাণ যায় যায় অবস্থা আমার।মুহুর্তেই মনে পড়ে যায় রেয়ানের সেই থ্রেট দেওয়া মেসেজগুলো। শুকনো ঢোক গিলে মনোযোগ সহকারে মেসেজটা পড়তে লাগলাম আমি….
“আই সোয়ের মরুভূমি! এ মুহুর্তে তুমি যদি বাইরে থাকা গাড়িতে না আসো, আমি এসে ওই ছেলের হাড্ডি ভেঙ্গে দিবো। ইউ নো ওয়াট, আমি কিন্তু আমার কথার খেলাফ করি না।”
মেসেজটা পড়ে কাঁচের দেওয়াল দিয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে তাকালাম আমি। একটা কালো রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। বুঝতে বাকি রইল না এটা রেয়ানের গাড়ি। মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়ালাম আমি। সবার কাছে পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে চলে গেলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে। গাড়িটার দিকে যতই এগোচ্ছি ততই ভয় লাগছে। বুকের ঢিপঢিপানি যেন বেড়েই চলছে। আমি গাড়ির কাছে আসতেই রেয়ান গাড়ির দরজা খুলে দেন৷ যার অর্থ “গাড়িতে বসো”। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়ি।
বেশ কিছু সময় যাওয়ার পরও রেয়ান কিছু বলছেন না। শুধু রাগে ফুসছেন। এদিকে ভয়ে কাঁপাকাঁপি ছুটছে আমার। যতই সাহস দেখাই না কেন রেয়ান সামনে আসলেই কেন যেন আমি ভীতু বিড়াল হয়ে পড়ি। এখনও তাই! কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে কিছু বলতে যাবো তখনই রেয়ান গাড়িতে হাত দিয়ে জোড়ে একটা বারি মেরে উঠেন। কিঞ্চিত কেঁপে উঠলাম আমি। সে তার মতোই রাগে ফুসছে৷ কঠিন গলায় আমাকে বলে উঠে….
— মানা করেছিলাম না তোমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে। এত বার বারণ করা সত্ত্বেও কেন অবাধ্য হলে?
রেয়ানের এমন ধমকে উঠায় আত্তা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম….
— আমি কি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে পারবো না?
— আলবাদ পারবে। আমি কি কখনও মানা করেছি তোমাকে? আমার প্রবলেম তো শুধু ওই ছেলে। কোন সাহসে তুমি ওর সাথে ভার্সিটি যাও।আমি কি তোমার কেয়ার নি না? আমি কি তোমাকে ভার্সিটি দিয়ে আসতে পারতাম না? একটা কল করলে কি হতো তোমার?
— কেন কল করব আমি আপনাকে? আপনি আমার ডক্টর ছাড়া অন্য কিছু নন। আমার পার্সোনাল ব্যপার আমি আপনাকে কেন বলব? কেন বলব আমি আপনাকে ভার্সিটি নিয়ে যাওয়ার কথা?
— তাহলে কাকে বলবে? ওই ছেলেটাকে?
— প্রয়োজন হলে তাই-ই করব।
এতে যেন তেলে-আগুনে জ্বলে যান রেয়ান। গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে বলে উঠেন….
— তাহলে যা ওর কাছেই যা। আমার কাছে আসছোস কেন? দূর হ আমার সামনে থেকে।
বলতে বলতেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনের পথে “সা” করে চলে যান উনি। আমি এখনও অবাক। উনি আমাকে তুই করে বললেন? এ প্রথমবার? তাও আবার এত রাগ নিয়ে? কেন?

মানুষ নদীর পাড়ে আসে কেন? সবুজ ঘাষে বসে একজন অন্যজনের সাথে গল্প করতে কিংবা একটু শান্তির জন্য। অনতত দীঘি এটা মনে করে। তবে আবদ্ধ কি করছে? তাকে নদীর পাড়ে থাকা গাছের নিচে বসিয়ে বসিয়ে পড়াচ্ছে। তাও আবার কোন সাবজেক্ট? গণিত! দীঘির সবচেয়ে অপছন্দের একটি সাবজেক্ট। ভার্সিটি ছুটে হওয়ার পর দীঘিকে স্কুল থেকে নিয়ে এসেই এ কাজে লেগে গেছে সে। কোই একটু বাসায় গিয়ে নিজেও রেস্ট করবে আর তাকেও রেস্ট করতে দিবে, তা না করে আবদ্ধ তাকে পড়াতে এই বিকেল বেলা নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে। দীঘির পড়তে ইচ্ছে করছে না মোটেও। বারবার ইচ্ছে করছে আবদ্ধের ক্লান্তি মাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে। এতে যে আবদ্ধ বিরক্ত। প্রচন্ড রকমের বিরক্ত! দীঘিকে ধমকে বলে উঠে সে….
— কি হয়েছে হ্যাঁ? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? পড়া ফাঁকিবাজ কোথাকার। বিয়ে হওয়ার পর বাসর ঘরে ভালো মতো দেখে নিস আমাকে। মানা করব না। কিন্তু এখন ফাঁকিবাজি করলে সোজা বেতের বারি দিবো!
লজ্জা পেল দীঘি। এভাবে কেউ পাবলিক প্লেসে জোড়ে জোড়ে এসব বলে। এ মানুষটার কিচ্ছু খেয়াল থাকে না। রাগলে তো একদমই না! মুখে যা আসে তাই-ই বলে ফেলে! “অসভ্য একটা!”
.
.
#চলবে🍁