ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 20

অর্নিলের হাত থেকে টপ টপ করে রক্ত পরছে আর চোখ থেকে পানি। ইসমির সকাল থেকেই ফুপির করা অত্যাচার গুলো ভেবে মাথা গরম আর মন খারাপ। তার মধ্যে অর্নিলের কাছে আসা। ইসমি নিজেকে স্বাভাবিক করে অর্নিলের দিকে ফিরতেই ও আতকে উঠলো।
ইসমি দেখলো মেঝেতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পরে আছে, চোখ উঠিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই নজরে এলো দরজার থেকে একটা ধারালো অংশ বেরিয়ে আছে আর সেটাতে রক্ত লেগে আছে।
ইসমি– রাগের মাথায় অর্নিল কে এভাবে ধাক্কা দেওয়াটা উচিত হয়নি আমার। এই জায়গাটাতেই মনে হয় হাত টা কেটে গেছে। কি করবো এখন?? কোথায় চলে গেলো ও?? এখানেই তো ছিলো।
.
.
.
মীরা– আপনার হাত পুড়ল কীভাবে??
আমার প্রশ্নে আমান কেমন জানো হকচকিয়ে গেলো, আর আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ঘর গোছ করছিলাম সে সময় আমান পিছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে, আমি হাত টা ছাড়াতে যাবো ঠিক সে সময় দেখলাম ওনার হাতের কব্জির কিছু অংশ লাল হয়ে রয়েছে। গতকাল তো আমি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলাম, আর ঐ জায়গায় তো কফি পড়েনি তাহলে পুড়ল কীভাবে?? এটা মনে আসতেই ওনাকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম।
আমান– ও এ..এমনি কিছু না।
মীরা– এমনি এমনি আপনার হাত পুরে গেলো?? কি করে হলো বলুন??
আমান– বললাম তো কিছু হয়নি।
মীরা– দেখি হাত টা?? দেখান আমায়।
আমি ওনার হাত টা দেখতে যেতে নিলেই উনি আমাকে অনেক জোরে ঝাড়ি দিলেন।
আমান– বললাম তো কিছু হয়নিইইইই!! একটা কথা কতবার বলবোওওও!!
আমি ওনার ধমক খেয়ে চুপ করে গেলাম কিছু বললাম না, উনি রেগে মেগে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। ওনার যেতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো, কোনদিন এভাবে আমার সাথে কথা বলেননি। ধমক দিতেন কিন্তু সেটা ভুল করলে, এমন বিনা কারণে কেনো এমন ব্যবহার করলেন?? ভীষণ অভিমান হলো ওনার উপর। এ ভালোবাসার কোন রুপ?? একবার কাছে টেনে নেয় তো আরেকবার দুরে সরিয়ে দেয়। আমি এসব কথা ভাবছিলাম তখনই উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা আমার পায়ের কাছে এসে বসে পড়লেন।

আমান– মীরু আই অ্যাম স্যরি। আমি শুধু শুধু তোমার উপর রিয়াক্ট করে ফেলেছি। অ্যাকচুয়লী একটু প্রেসারে ছিলাম, আজ সকালে রান্নাঘরে পানি খেতে গেছিলাম তখন আনমনে গ্যাসের কাছে যেতেই গ্যাসে বসানো কড়াইয়ে ছ্যাঁকা খেয়ে গেছিলাম। স্যরি মীরু!!
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ওনার সামনে থেকে উঠে চলে এলাম।
আমান– (মনে মনে– তোমাকে আমি আমার আসল রুপ দেখালে যে তুমি আমার থেকে দুরে সরে যাবে মীরু! যেটা আমি চাই না। আমি জানি তুমি হিংস্রতা ভয় পাও আর তুমি যেমন হিংস্র ভয় পাও ঠিক তেমনই হিংস্র আমি। তাই তোমার সামনে কখনো এটা প্রকাশ পাবে না।) আরেহ! কি করছো??
মীরা– চুপ করে বসুন!! (ঝাড়ি দিয়ে)
আমার ঝাড়ি খেয়ে উনি চুপ করে গেলেন, আমি তখন উঠে অয়েটমেন্ট আনতে গেছিলাম, কিন্তু উনি মিথ্যে কেনো বললেন বুঝতে পারছি না। আমি খুব ভালো করেই জানি উনি সকালে রান্নাঘরে যাননি। থাক! উনি যখন বলতে চায় না তখন জিজ্ঞেস না করাটাই ভালো।
আমান– নীচে চলো একটা সারপ্রাইজ আছে।
মীরা– কি সারপ্রাইজ?? কার জন্য??
আমান– সারপ্রাইজ টা নীচে গেলেই জানতে পারবে আর নাম অর্নিলের কাম আমার।
কথাটা বলে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলেন, আমি বেকুবের মতো বসে আছি ঠিক তখনই আবার এসে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে তারপর গালে ঠোঁট বুলিয়ে কানের কাছে বললেন।
আমান– এতো ভেবো না মাই ডিয়ার কলিজা। ইউ আর মাই লাভ অ্যান্ড মাই বিহেভিয়ার ইস অ্যানাদার ফ্রম অফ লাভ। (ফিসফিসিয়ে বলে চলে গেলেন।)
মীরা– (মনে মনে– নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় আমার। ওনার কথাটা সত্যি বারংবার আমার মন ছুঁয়ে যায় ” ইউ আর মাই লাভ অ্যান্ড মাই বিহেভিয়ার ইস অ্যানাদার ফ্রম অফ লাভ। ” আমি ওনার ভালোবাসা আর ওনার ব্যবহার হলো #ভালোবাসার_অন্যরুপ।)
আমিও সামান্য হেসে ওনার পিছন পিছন চলে গেলাম নীচে। নীচে নামতেই দেখলাম আমান আম্মু আর অর্নিল দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সুমি কোথায়??
মীরা– সুমি কোথায়??
আমান– নীল সুমি কোথায়??
আম্মু– সুমির খোঁজ আজ কাল নীল রাখছে নাকি (মিটিমিটি হেসে)
অর্নিল– আমি জানি না আম্মি।
এদিকে ইসমি অর্নিল কে সারা বাসায় কোথাও না পেয়ে বাধ্য হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো, ড্রয়িং রুমে আসতেই ইসমির অর্নিলের দিকে চোখ পরলো, অর্নিল নিজের ডান হাত পকেটে ঢুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অন্যদিকে মুখ করে।
মীরা– ঐ তো সুমি! কি রে কোথায় ছিলিস তুই??
অর্নিল– ভাই তোমার কিছু বলার ছিলো?? তারাতাড়ি বলো আমি রুমে যাবো। টায়ার্ড লাগছে ভীষণ।
ইসমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নিল কথাটা বললো, আমান আমার দিকে আর আমি আমানের দিকে তাকালাম কথাটা শুনে। অর্নিলের কথাটা কেমন জানো ঠেকলো আমার কাছে।

আমান– আচ্ছা বলছি। অ্যাকচুয়লী আমি আজকে বিকালে আমাদের পুরোনো বাগান বাড়ি তে যাওয়ার প্লান করেছি। অর্নিল তুই তো জানিস আমি ওখানে একটা জমি দেখেছি আমাদের কোম্পানির জন্য, তাই ওখানে আমাকে যেতে হবে।
অর্নিল– হম তোহ??
আমান– আমি চাইছিলাম আমার সাথে মীরা তোকে আর ইসমিকে নিয়ে যেতে। ঘোরা ও হবে আবার আমার কাজ ও হবে। তুই ও আমাকে হেল্প করতে পারবি।
ইসমি– জিজু!! আমি যেতে পারবো না। আমাকে তো বাসায় ফিরতে হবে।
মীরা– সুমি তুই চুপ কর। আইডিয়া টা মন্দ নয় কিন্তু সবাই মিলে একসাথে সময় কাটানো যাবে। (অর্নিলের দিকে তাকিয়ে)
অর্নিল– হমম ভাবি আইডিয়া টা ভীষণ ভালো বাট আমি যেতে পারবো না স্যরি।
আমান– মানে?? কেনো যাবি না??
অর্নিল– ভাই আমার কিছু অ্যাসাইনমেন্ট কম্পলীট করতে হবে সো আমার যাওয়াটা হবে না। আর আমি চাই না আমার যাওয়ায় কাওর প্রব্লেম হোক। (ইসমির দিকে তাকিয়ে)
ইসমি– গেলে সবাই একসাথেই যাবো যেমন টা জিজু বললো। এদের মধ্যে একজন যদি না যায় তাহলে কাওর যাওয়ার দরকার নেই। (অর্নিলের দিকে তাকিয়ে)
আমান– অর্নিল এটা আমার ডিসিশন যে আমরা চারজন মিলে যাবো। ইটস মিন যাবোই! নীল তুই খুব ভালো করে জানিস আমি আমার ডিসিশন চেঞ্জ করি না।
অর্নিল– ওকে ভাই। (রুমে চলে গেলো)
মীরা– কি হয়েছে তোদের মধ্যে?? (সুমির পাশে দাঁড়িয়ে)
সুমি কোনো উত্তর না দিয়েই অর্নিলের পিছু পিছু চলে গেলো, আমি সুমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি ঠিক সেই সময় আমার গালে কাওর ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম, পাশে তাকাতেই দেখি আমান বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। না চাইতেও এই হাসির উপর বার বার আমি ক্রাস খেয়ে বসি।
আমান– নিজের বরের উপর মনে মনে ক্রাস খাচ্ছো নাকি বউ??
মীরা– ক..ক..কি ব..ব..বলছেন আপনি এসব??
আমান– মিথ্যে বলে লাভ নেই আমার কাছে। (আমার অনেক কাছে এসে)
আম্মু– উহুঁ উহুঁ! (কেশে) আমি এখানে উপস্থিত এটা কি তুই ভুলে যাচ্ছিস আমান??
আমান– দিলে তো মুডের বারো দুগুনে চব্বিশ টা বাজিয়ে?? দেখছো ছেলে ছেলের বউ রোম্যান্স করছে সেখানে তুমি গুরুজন হয়ে দাঁড়িয়ে আছো?? আম্মু তোমার লজ্জা করলো না নিজের ছেলের রোম্যান্স এ বাঁধা দিতে??
আমি হা! এ কেমন ছেলে আল্লাহ! নিজের আম্মু কে কি সব বলে যাচ্ছে, লজ্জায় মরে যেতে মন চাইছে এবার আমার।
আম্মু– তবে রে বেয়াদোপ! দাঁড়া আজকে তোর হচ্ছে।
আম্মু আমানের দিকে তেড়ে যেতে নিলেই আমান টুপ করে আম্মুর গালে একটা চুমু দিয়ে বসে আর সঙ্গে সঙ্গে ধা। আমি আমানের এমন বাচ্চামু দেখে হেসেই ফেললাম। তখন আম্মু আমার কাছে এসে বললো।
আম্মু– এটা আমনের পুরোনো স্বভাব জানিস তো মীরা। যখন আমি রেগে যেতাম তখন ও আর আ…
মীরা– কি বলছিলে আম্মু??

আম্মু– হ..হ..হ্যাঁ হ্যাঁ আমান এভাবেই রাগ ভাঙাতো আমার। আমি আসছি হ্যাঁ।
মীরা– এমন কেনো মনে হলো আম্মু এড়িয়ে গেলেন আমায়। কিছু বলতে গিয়েও কেমন জানি থেমে গেলেন। যাই ঘরে যাই।
আমি আর কিছু না ভেবে ঘরে চলে এলাম, ঘরে এসে দেখি উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছেন আর কানে ব্লুটুথ। বুঝলাম আজ অফিস যাবেন না, ঘরে বসেই মিটিং গুলো হ্যান্ডেল করবেন আর এমন সময় কফি নাহলে ওনার হয় না। তাই রান্নাঘরে এসে কফি বানাতে লাগলাম।
.
.
.
ইসমি– হাত টা দেখি??
অর্নিল একমনে সোফায় বসে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো তখনই, ইসমির গলার স্বর শুনে অর্নিল অবাক হয়ে তাকালো আর বললো।
অর্নিল– আপনি এখানে??