ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 05

আম্মু কে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম, কিন্তু ঘরে ঢুকতে যাবো ঠিক সেই সময় যা দেখলাম তা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো আমার। আমান শুধু একটা ট্রাউজার পরা আর ওর খালি বুকে মাথা রেখে আছে নীতা! কি সুন্দর ভাবে আমান ওর মাথায় নিজের বাম হাত রেখেছে, আমার চোখের সামনেই নীতা কে কোলে তুলে নিলো আমান, তারপর বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই আমি আর সহ্য করতে পারলাম না ঘুরে বেরোতে যেতেই হাত লেগে কাঁচের ফুলদানি টা পরে গেলো, আমি সেটাকে পাশ কাটিয়ে বেরোতে নিলেই উনি ডাকলেন।
আমান– মীরা!!
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম আর বললাম।
মীরা– স্যরি ভুল সময়ে এসে পরেছি আমি, আসলে বুঝতে পারিনি আপনি আপনার উড বি ওয়াইফের সাথে প্রাইভেট মোমেন্ট স্পে…।
আমান– শাট আপ ড্যাম ইট!! নীতার শরীর খারাপ করছে আবার।
ওনার কথা শুনে ওদের দিকে ফিরতেই দেখলাম নীতা শুয়ে ওনার হাত ধরে আছে, আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি নীতার দিকে তাকাতেই ও শয়তানি হাসি দিলো, আমি বুঝে গেলাম এটা নীতার চালাকি। কিন্তু উনি তো সেটা দেখতেই পাচ্ছেন না, নীতা কে বিশ্বাস করছেন আর নীতা আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করছে।
আমান– তুমি দাঁড়িয়ে কেনো আছো? যাও নীতার জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসো, গোওও। (একটু জোরে)
মীরা– আমি কেনো আনবো? আপনার উড বি কে আপনি এনে খাওয়ান যত্ন করে। (অভিমানী কণ্ঠে)
আমান– প্লিজ স্টপ ইউর ড্রামা। নিজের বোনের সাথে এমন বিহেভ কি করে করতে পারছো তুমি?
মীরা– (নীতা আমার সাথে কি করেছে তা আপনি এতো সহজে ভুলে গেলেন আমান? ও যে আমাদের মাঝে দুরত্ব চায় এটা আপনি কেনো বুঝছেন না? আপনি তো আমায় ভালোবাসেন। ওহ না না আপনি তো এখন আর আমায় ভালোবাসেন না, আমি তো ভুলেই গেছিলাম) মনে মনে।
নীতা– ছাঁড়ো না আমান। আমি ঠিক আছি। (বিছানা থেকে উঠে আমানের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে)
আমান– লেট ইট বি। আমি যাচ্ছি, নীতা তুমি রেস্ট করো ওকেই? (নিজেকে ছাড়িয়ে)
আমি নিজের চোখের পানি মুছে বললাম।
মীরা– আমি নিয়ে আসছি। আপনি বসুন ওর কাছে।
আমি পিছন ফিরে একটু এগোতেই আমার পায়ে কাঁচ ফুটে গেলো আর আমি সামান্য চিৎকার করে উঠলাম।
মীরা– আহহহহ!!
আমান– ওয়াট হ্যাপেন মীরু!! (আমার কাছে এসে)
মীরা– ক..কিছু না। আমি ঠ..ঠিক আছি।
আমান– তোমার পায়ে তো কাঁচ ফুটে গেছে। (নীচের দিকে তাকিয়ে)
মীরা– ওহ কিছু হবে না। এমন অনেক ব্যাথা আমি পেয়েছি, এখন সয়ে গেছে। (ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে)
আমি কথাটা বলে নীতার দিকে তাকালাম আর তারপর এগোতে নিলেই উনি আমায় হ্যাঁচকা টান মেরে কোলে তুলে নিলেন নীতার সামনে, আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকালেন আর আমি ওনার গলা জড়িয়ে ধরলাম নাহলে আবার ধমক দেবেন। উনি আমাকে বেডে বসিয়ে আমার পায়ে হাত দিতে নিলেই আমি বাঁধা দি।
মীরা– একি কি করছেন আপনি? পায়ে কেনো হাত দিচ্ছেন?
আমান– পায়ে হাত না দিলে ব্যান্ডেজ করবো কীভাবে?
মীরা– আমি করে নিতে পারবো। আর তেমন কিছু লাগেনি।
আমান– মীরু রক্ত বের হচ্ছে, তোমার খুব পেইন হচ্ছে নাহ? ইউ নৌ না আমার তোমার পেইন সহ্য হয় না তাও এমন কান্ড কেনো করো?
উনি আমার পা টা নিজের কোলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কাঁচ টা বাড় করতেই ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।
মীরা– আহহ!!

আমান– তুমি ইচ্ছে করে নিজেকে হার্ট করো যার জন্য আমি হার্ট হই তাই না? (চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পরলো)
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, সামান্য কাঁচ ফুটে যাওয়ায় উনি এমন পাগলামি করছেন? এই এক মাসে অনেক রকম পাগলামি উনি করেছেন কিন্তু এতটাও নয়। কিন্তু মনে মনে খুব আনন্দ হলো এই ভেবে যে নীতা এই সময় এই ঘটনার সাক্ষী, আমি নীতার দিকে তাকাতেই দেখলাম ও রাগে কটমট করছে।
নীতা– হেই আমান। জাস্ট চিল ওকেই। ওর তেমন কিছু হয়নি জাস্ট একটু কাঁচই ত…
আমান– ইউ জাস্ট শাট আপ!!!! তোমাকে এর মধ্যে কে কথা বলতে বলেছেএএ? গো ইউর ওন রুম ড্যাম ইট!! (চিৎকার করে)
ওনার এমন হুংকার শুনে আমিও কেঁপে উঠলাম, নীতা তো পুরোই ঘাবড়ে গেছে তাই এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে ও রুম থেকে চলে গেলো আর আমি বললাম।
মীরা– ওকে এভাবে তারিয়ে দিলেন কেনো? নিজের উড বি ওয়াইফের সাথে কি কেউ এমন বিহেভ করে?
আমান– আমি কার সাথে কেমন বিহেভ করবো না করবো সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে। (ঝাঁঝালো কণ্ঠে)
মীরা– তাও অবশ্য ঠিক এখন তো আপনার সব কিছুর কথা শুধুমাত্র আপনার উড বি ওয়াইফ নীতাই ভাববে।
আমান– মীরু তোমার পেইন হচ্ছে? দেখো আমি ঠিক করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি আর পেইন হবে না, তুমি কিন্তু বেড থেকে এক পা নামবে না, নামলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
মীরা– (বেটা ধমকবাজ আমার কথার পাত্তাই দিলো না, দ্বারা ব্যাটা।) মনে মনে।
আমান– আমি আসছি।
মীরা– আমাকে যেতে দিন নাহলে নীতা কে যত্ন করবো কি করে? ও তো অসুস্থ।
আমান– আগে নিজের খেয়াল করা শেখো তারপর অন্যের টা করবে।
মীরা– আমি নিজের টা নিজেই পারি, আমাকে যেতে দিন, আপনাকে ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে।
আমান– আর কিছুদিন পর তো তোমাকে নিয়ে তোমার ভালোবাসা ভাববে। আমাকে জানো আর বেশিদিন তোমাকে সহ্য না করতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করছি। তারপর তুমি তোমার তুর্যর সাথে হ্যাপি থাকবে আর আমি…
মীরা– নীতার সাথে তাই না?
আমান– ইয়াহ!!
মীরা– তাহলে যান এখনও ওর কাছেই যান, আমার কোনো খেয়াল যত্ন আপনাকে করতে হবে নাআআ। কিছুদিন পর তো নিজের টা নিজেকেই করতে হবে তাহলে এখন এসব ঢং করতে হবে না আমার সাথে, লুচু ব্যাটা একটা। লজ্জা করছে না আমার বোন কে বিয়ে করতেএএ?? দুর হন আমার চোখের সামনে থেকেএএএএ।
চিৎকার করে বলে উঠতে গেলেই উনি আমাকে টান দিয়ে ওনার কোলে বসিয়ে মাথার পিছনে চুলের মধ্যে হাত গলিয়ে শক্ত করে ধরে আমার ঠোঁটে ওনার ঠোঁট চেপে ধরে। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আমার হাত টাও শক্ত করে ধরে ফেলেন। আমি নিরুপায় হয়ে বসে থাকি। কিছুক্ষণ পর আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বললেন।
আমান– আমি কোনদিন তোমার চোখের সামনে থেকে যাবো না মীরু বেইবি। তুমি না চাইলেও আমাকে তোমার চোখের সামনে বার বার দেখতে পাবে, আমার থেকে দুরে সরে যেতে চাইলে আমি আরো বেশি তোমাকে আকড়ে ধরব। এটা যে কতদিন থেকে চলছে তার আইডিয়া ও নেই তোমার। সো টেক ইট ইসি।
কথা বলতে বলতে কখন যে উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়েছেন আমি বুঝতেই পারিনি, ওনার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম, এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে ওনার চোখ জোড়ায়, যখনি তাকাই হারিয়ে যাই। ওনার কথা শেষ হতেই উনি আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। আর উঠে যেতে লাগলেন, ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে ফেললাম।
মীরা– কোথায় যাচ্ছেন?

আমান– চেঞ্জ করবো না আমি? তুমি বললে এভাবেই থাকতে পারি।
মীরা– নাআআ (বালিশ দিয়ে চোখ ঢেঁকে)
আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে ট্রাউজার ছাড়া উনি কিছুই পরেননি, খালি গায়ে ছিলেন। ইশ কি লুচু বেটা, নীতার সামনে ওভাবে ছিল, বদমাইশ। ধ্যাত! উনি কেনো বদমাইশ হবে, সব কিছুর মূলে তো ঐ নীতা।
আমান– তুমি যদি এক পা মাটিতে রাখো তাহলে কিন্তু আমি তোমার কি করবো আমি নিজেও জানি না। (শাসিয়ে)
মীরা– (ধুর ধমক বাজ একটা। সারাক্ষণ ধমকায়। আমাকে ঘরে আটকে রেখে এখন লুইচ্চামি করতে যাচ্ছে। হুহ! অতো সহজ? আমি কিছুতেই দেবো না।) মনে মনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমি আস্তে আস্তে বেড থেকে নেমে আম্মুর রূমের দিকে যেতে লাগলাম, নীতার রূমের পাশ দিয়ে যেতেই শুনতে পেলাম নীতা কাওর সাথে কথা বলছে।
নীতা– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সব ম্যানেজ করে ফেলেছি। চিন্তা করার কিছু নেই। খুব তারাতারি আমরা আমাদের লক্ষ্যে সফল হবো।
……………
নীতা– হমম এখন রাখছি পরে ফোন করবো।
নীতা ফোন রেখে পিছনে ফিরতেই আমাকে দেখে চমকে উঠলো আর বললো।
নীতা– ত..তুই?
মীরা– এতো ভয় কেনো পাচ্ছিস নীতা?
নীতা– ভ..ভয় পাওয়ার মতো তো কিছু হয়নি, ভয় কেনো পাবো?
মীরা– কেনো এসেছিস এখানে? কি উদ্দেশ্যে?
নীতা– আমি কোনো উদ্দেশ্যে আসিনি, তোর বর জানে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি, ও যেই ভালোবাসা টা চায় সেটা ও আমার কাছ থেকে পাবে, তোর কাছ থেকে নয় তাই আমায় নিয়ে এসেছে।
মীরা– মিথ্যে কথা কম বল!! তুই যে ওকে তোর কথার জালে ফাঁসিয়েছিস সেটা আমি খুব ভালো ভাবে জানি।
নীতা– তুই তো তুর্য কে ভালোবাসিস তোর এতো গায়ে লাগছে কেনো? তোর মনে নেই তুর্যর সাথে আমান কীভাবে তোকে দেখেছিল? কাজ ফাঁকি দিয়ে তুই প্রেম করছিলিস।
মীরা– নীতাআআ!!

আমি ওর গালে থাপ্পড় মারতে গেলেই ও আমার হাত ধরে নেয় আর বলে।
নীতা– আমাকে মারার ভুল করিস না! আমান কখনোই জানতে পারবে না, আমি এইসবের পিছনে ছিলাম, আমিই তোর থেকে কার্ড নিয়ে তোর ডিজাইন চুরি করে নিয়ে ওর কোম্পানি তে গেছি, আর তুই সেই সময় তুর্যর কাছে বসে কাঁদছিলিস, হা হা হা হা।
মীরা– সত্য কখনো চাপা থাকে না।
নীতা– তোর মতো নষ্টামি তো আর করছি না আমি, তুই যেভাবে তুর্যর সাথে ছিঃ ছিঃ।
মীরা– কি একদম বাজে কথা বলবি না, তোকে তো আমি…
নীতা– আমাননননন!! দেখো না মীরা আমাকে মারতে চাইছে।
নীতার এমন কথা শুনে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম, আমি তো শুধু এগিয়েছিলাম ওর দিকে, পাশে তাকিয়ে দেখি আমান দাঁড়িয়ে আছে রক্তবর্ন চোখ নিয়ে। এদিকে নীতা আমানের কাছে দৌঁড়ে চলে গেলো আর জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো।
নীতা– আমি বসে ছিলাম সেই সময় মীরা এসে হুট করে আমাকে বলে আমি নাকি তোমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে এসেছি আমি নাকি খারাপ নষ্ট, এই বলে চড় মারতে যায় আমি ওর হাত ধরে নিয়ে বলি ও নষ্টামি করে আমি নই, স্বামী থাকতেও ওর লাভার আছে, তাই আমাকে মারতে আসছিল।
মীরা– আমান আমি এস…
আমান– ব্যাসসসস!! আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না। ইনফ্যাক্ট তোমার মুখ টাও দেখতে চাই না আমি!! সাহস কি করে হলো তোমার আমার উড বি ওয়াইফের ওপর হাত তোলার? হু দ্য হেল আর ইউ? আর কিছুদিন পরেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। ৬ মাস হওয়ার আগে এমন কোনো বাড়াবাড়ি করো না যাতে তোমাকে আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে হয়। আর লিসেন আই লাভ নীতা। আমি ওকে ভালোবাসি তাই নিয়ে এসেছি।
কথাগুলো বলে উনি নীতার কোমড় জড়িয়ে ধরে চলে যেতে লাগলেন, মাঝে থেমে আবার আমার দিকে ঘুরে বললেন।
আমান– এখন থেকে দশ হাত দুরে থাকবে তুমি নীতার কাছ থেকে, নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
ওনার কথা গুলো আমার বুকে তীরের মতো বিঁধলো, এতই যদি নীতা কে ভালোবাসেন তাহলে কিছুক্ষণ আগে এতো কেয়ার কেনো করলেন? কেনো ওসব বললেন? ওহ! দয়া করছেন আমার উপর? আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না অঝোরে কান্না করতে লাগলাম।
🌸
🌸
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]