ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 02

আমি যখন চোখ খুললাম দেখলাম একটা ঘরে শুয়ে আছি, ঘরটা তো আমার খুব চেনা মনে হচ্ছে, পাশে চোখ ঘোরাতেই দেখলাম উনি বসে আছে, কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পরতেই আমার মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেলো।
আমি: ব্যাটা বদ, লুইচ্চা, হনুমান, জল্লাদ, যমদূত, আমাকে এতোদিন ভালোবাসি বলে জোর করে বিয়ে করে এখন বলে আমার জন্য ওনার মনে জায়গা নেই! কত্ত বড়ো সাহস? দেখাচ্ছি মজা, জীবন টা ত্যানা ত্যানা না করলে আমার নাম ও মীরা নয় হুহ। (মনে মনে)
__ঠাসসসসস!!
আমার ভাবনা শেষ হতে না হতেই গালে কেউ সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো, আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ, কারণ এ কয়েক মাসে আমি এটার সাথে খুব ভালো ভাবে পরিচিত।
আমি– এই, এই আপনার সমস্যা টা কি হ্যাঁ? আপনি কি আমার গাল টা সরকারি পেয়েছেন? যখন তখন থাপ্পড় মেরে দিলেই হলো নাকি?
আমান– তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার সাথে জোর গলায় কথা বলছো তাও আবার ভুল করে। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি– (মনে মনে ভয় পেলেও বুঝতে না দিয়ে) ভুল আমি করেছি? (বিছানা থেকে নেমে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে)
আমান– উড়নচন্ডীর মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটেই যাচ্ছিলে তো হেঁটেই যাচ্ছিলে, আরেকটু হলে কতবড়ো দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো তার আইডিয়া আছে? আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে না ঘোরালে তোমার চলে না তাই না? (রেগে)
আমি– দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটত তাতে আপনার কি? আপনি তো বললেন এখন আমার জন্য আপনার মনে কোনো স্থান নেই তাহলে বাঁচাতে কেনো গেলেন? আমি মরে গেলে তো আপনাদের সুবিধাই হতো ভালো করে প্রেম করে বিয়ে করতে পারতেন। (কাঁদো কাঁদো গলায়)
আমান– হিন্দি সিরিয়াল এর মেলো ড্রামা শেষ? সারাক্ষণ তো ” আমান জি ” ” আমান জি ” করে বেরাও এখন আবার হিন্দি সিরিয়ালের হিরোইন দের মতো ডায়ালগ দিচ্ছো। গ্রেট!!
আমি– জি তো দুর আপনার নাম টা মনে আসলেই আমার এখন ঘৃণা করছে, আর আমার এই কথাগুলো আপনার ড্রামা মনে হচ্ছে? অবশ্য মনে হবে নাই বা কেনো আপনি ও তো এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার ড্রামা করেই এসেছেন।
আমান– শাট আপ! জাস্ট শাট আপ! ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট ড্যাম ইট! (চিৎকার করে)
ওনার এমন হুঙ্কার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম, কিন্তু আজ আমি দমে যাবে না, উনি কি করে নিজের স্ত্রী থাকতে অন্য একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে পারেন? আমি বললাম।
আমি– আমি আমার লিমিট ক্রস করছি না মিস্টার আমান খান। আপনি আপনার লিমিট ক্রস করেছেন, ঘরে স্ত্রী কে ভালোবাসি বলে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার কথা বলতে লজ্জা করে না?
আমান– ওহ রিয়েলি? তুমি যদি নিজের স্বামী কে ভালোনা বেসে অন্য একজন কে ভালোবাসতে পারো সেটা ঠিক আর আমি করলেই ভুল? তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছো আমি তোমাকে বিয়ে করার পরেই বলে দিয়েছিলাম, ছয় মাসের মধ্যে তুমি আমাকে ভালো না বাসলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দেবো।
আমি– ওনার কথা শুনে আমার বুকের ভিতর টা কেমন ছ্যাৎ করে উঠলো, সত্যি তো! আমি তো ওনাকে ভালোবাসিনি উনি তো আমায় আমার অমতে জোর করে বিয়ে করে নিয়ে এসেছেন, ছয় মাসের মধ্যে মানাতে না পারলে ডিভোর্স দেবেন সেই কথায় রাজি হয়ে আমি এখানে রয়ে গেছি। তাহলে আজ নীতা কে বিয়ে করবেন এটা ভাবতেই আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? তাহলে কি আমি ওনাকে…?? (মনে মনে)
আমান– কি ভাবছো এতো মীর!? (আমার দিকে এগোতে এগোতে)
আমি– আব, কিছু না।

আমান– আমি কি ভুল কিছু বলেছি মীর?
আমি– এই আপনি এগোচ্ছেন কেনো হ্যাঁ?
আমান– তুমি পিছাচ্ছো কেনো মীর?
আমি– আপনি কি সত্যি নীতা কে বিয়ে করবেন?
আমার কথায় উনি থেমে গেলেন আর পিছন ফিরে বললেন।
আমান– হ্যাঁ করবো। তোমাকে ছয় মাস পর ডিভোর্স দিয়ে নীতা কে বিয়ে করবো, তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না ” তুর্য ” কে ভালোবাসো। আমি ডিভোর্স দিয়ে দিলে তুমিও তো ওকেই বিয়ে করে নেবে, সুখে থাকবে, আমি তো তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি। কিন্তু জোর করে ভালোবাসা টা পেলাম না তাই মুক্তি দিয়ে দেবো।
আমি– এখন মনে হচ্ছে আপনাকে ” আমান জি ” বলে কোনো ভুল করিনি আমি, আমি হিন্দি সিরিয়ালের হিরোইন হলে আপনিও হিন্দি সিরিয়ালের হিরো। কি সুন্দর কথা! ” আমি ডিভোর্স দিয়ে দিলে তুমিও তো ওকেই বিয়ে করে নেবে, সুখে থাকবে, আমি তো তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি। ” তা বলি আমাকে জোর করে বিয়ে করার সময় মনে ছিলো না? (প্রচন্ড রেগে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে)
আমান– শা..শাড়ির আঁচল ক..কো..কোমড়ে গুঁজলে কেনো?
আমি– সবে তো শাড়ির আঁচল গুঁজেছি এরপর আপনাকে ঝাঁড়ু পেটা করবো। পিটিয়ে বিয়ের ভুত মাথা থেকে নামিয়ে দেবো।
আমান– আচ্ছা তাই? (শার্টের হাতা ফোল্ড করে) তা তোমার কেনো এতো রাগ হচ্ছে আমি বিয়ে করায়? আমি তো ভালো না, গুন্ডা, বদমাইশ, মাফিয়া, ইভেন ড্রামাবাজ।
আমি– আপনি একটা আস্ত লুইচ্চা, এবার থেকে আপনাকে মিস্টার আমান লুইচ্চা বলে ডাকবো।
আমান– কিইইইইই!!
আমি– জিইইইইইই!!
এতটুকু বলেই আমি ভোঁ দৌঁড় দরজার দিকে, আর এদিকে…
আমান– আমি লুইচ্চা? হোয়াট দ্য…!!
আমি– আরেকটা এড করা বাকি, জল্লাদদদদ। (দরজা দিয়ে উঁকি মেরে)
আমান– তোমাকে তো আমি…!!
আর কে পায় আমাকে, ঐ জল্লাদের সামনে এতো জোর গলায় কথা বলেছি তারওপর ওনাকে ঝাঁড়ু পেটা করবো বলেছি, আজ যে কি টনিক খেয়েছি আমি আল্লাহ জানে।
অন্যদিকে……….
আমান– কি বলে গেলো? লুইচ্চা! জল্লাদ! উফফ রিডিকিয়ুলাস! আল্লাহ এ কেমন পাগল মেয়ের প্রেমে পরেছি আমি। জীবন টা ত্যানা ত্যানা না করে ছাড়বে না মনে হয়। এক মিনিট এক মিনিট (নিজেই নিজেকে) আমি কি বললাম? ত্যানা ত্যানা? ওহ গড! আমি কি করে ভুলে গেলাম এই মেয়েটা আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে। যাই হোক আমান তোর প্লান সাকসেসফুল, এক ঢিলে দুই পাখি, বাট ডোজ টা মনে হয় বেশি হয়ে গেছে, তাই তো নিজের জল্লাদের সামনে উড়নচন্ডী রুপ নিয়েছিল আমার মীর। মীর বেইব আমার ভালোবাসা টা যে একদম অন্যরকম, এতদিন তো তুমি আমার হিংস্রতা দেখোইনি, এবার দেখবে আর আমিও তোমার উড়নচন্ডী রুপ দেখবো। ইউ আর গ্রেট আমান। ইয়াহুউউউউউ।
আমি ওনার রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমার শ্বাশুরি মায়ের রুমে এলাম, উনি আমাকে দেখে বললেন।
— কি রে মা, ঠিক আছিস এখন? তখন ওভাবে অচৈতন্য অবস্থায় আমানের কোলে দেখে ঘাবড়ে গেছিলাম আমি, এদিকে আমানের অবস্থাও তো পাগল পাগল তোর জ্ঞান না ফেরায়।

আমি– কেনো আম্মু! আপনার ছেলে তো অন্য একটা বিয়ে করবে আমি মরলে তার পাগল পাগল অবস্থা কেনো হবে?
— ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দেবো, তুই জানিস না আমার আমান তোকে কতো ভালোবাসে?
আমি– ভালোবাসা না ছাই। সে আমার জন্য সতীন আনার ব্যবস্থা করেছে, উনি নীতা কে বিয়ে করতে চায় আম্মু (কেঁদে কেঁদে)
— নাহ! আমান এমনটা করতে পারে না, আমি জানি ও তোকে কতটা ভালোবাসে, আর যাই হোক ও তোকে কিছুতেই নিজের জীবন থেকে হারাতে দেবে না, নিজের অতীত কে ও কিছুতেই আবার ফিরিয়ে আনতে পারে না, আমি কথা বলবো এক্ষুনি।
আমি– কীসের অতীত আম্মু? কি ব্যাপারে কথা বলছো তুমি?
— সময় হলে সব জানবি, মীরা! আমার একটা কথা রাখবি?
আমি– কি কথা আম্মু?
— আমার ছেলেটাকে ছেড়ে যাস না। তুই তো জানিস নীতা কতবার তোর ক্ষতি করতে চেয়েছিল? শুধুমাত্র এই বাড়ির বৌ হয়ে সম্পত্তির মালিক হবে বলে, আমি জানি না আমান তোকে কি বলেছে, ও যে কি করতে চায় সেটা ওর থেকে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না। আমি কথা বলবো ওর সাথে এমন টাও তো হতে পারে ঐ নীতা বাধ্য করেছে আমান কে।
আম্মু চলে গেলেন কথাগুলো বলে, যাওয়ার সময় উনি যে শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছলেন তা আমার চোখ কে ফাঁকি দিতে পারলো না, আমি আম্মুর কথাগুলো ভাবতে লাগলাম।
আমি– সত্যি কি নীতা কোনো ষড়যন্ত্র করছে? যদি সত্যি এমনটা হয় তাহলে আমি কিছুতেই ওকে জিততে দেবো না, এই সংসার টাকে আমি কিছুতেই ভাংতে দেবো না, যেখানে এসে আমি আমার আম্মু কে পেয়েছি, যার কাছ থেকে আম্মুর ভালোবাসা পেয়েছি তার কথা কিছুতেই ফেলতে পারবো না আমি, তাই তো এতদিন ঐ জল্লাদ টার সাথে রয়ে গেছি।
আমি আম্মুর ঘরে বসে এসব ভাবছি তখনই নীতা রুমে প্রবেশ করলো, ওর ঠোঁটে শয়তানি হাসি, আমি ওর থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই ও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর আমি ও উঠে দাঁড়ালাম।
নীতা– পারলি না তো নিজের স্বামী কে আঁচলে বেঁধে রাখতে? পারবি বা কি করে, না আছে রুপ না আছে গুন, তুই তো আমানের যোগ্যই না।
আমি– আমার সংসার ভাংতে চাইছিস কেনো তুই? ছোটো থেকে তোর আর ফুপির অত্যাচার মুখ বুজে সয়ে আসছি আমি আর আমার বোন, এখন যখন একটা সংসার পেয়েছি তুই আর ফুপি মিলে সেটাও ভেঙে দিবি? আমি কি ফুপি কে টাকা পাঠাই না?
নীতা– টাকার গরম দেখাচ্ছিস কাকে তুই? কান খুলে শুনে রাখ এই বাড়ির বউ হতে চলেছি আমি, তুই যেই টাকার গরম দেখাচ্ছিস কিছু দিন পর সেই টাকার মালিক আমি হবো।

আমি– টাকার লোভে তুই আমান কে বিয়ে করছিস? ভালোবেসে নয়?
নীতা– হা হা হা হাসাস না মীরা। আমি আমান কে ভালোবাসি তো শুধুমাত্র টাকার জন্য, আর আমি যাও ভালোবাসি তুই তো তাও ভালোবাসিস না, আমানের স্ত্রী হয়ে অন্য কাওকে উমম কি জানো নাম…হ্যাঁ তুর্য! তুর্য কে ভালোবাসিস তুই। তাই জন্য একজন বিসনেস টাইকুন ফ্যাশন কোম্পানির মালিক কে কে সবার সামনে অপমান করেছিস। আমান তোদের কলেজে ট্রাস্টি ছিলো, কলেজেও তুই ওকে অপমান করেছিস, এতো কিছুর পরেও ও তোকে বিয়ে করেছে এটাই তোর সৌভাগ্য বাট অ্যালাস! তুই আমান কে নিজের করে রাখতে পারলি না, নো টেনশন আমি রাখবো, লিসেন কেয়ারফুলি আমান ইস মাইন! অনলি মাইন।
নীতা কথাগুলো বলে চলে গেলো আর আমি ধপ করে বসে পড়লাম বেডে আর ভাবতে লাগলাম।
আমি– তারমানে আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটাই সত্যি। নীতা আমার সংসার ভাংতেই এসেছে, ও এসব কি বলে গেলো, ভুল ও তো কিছু বলেনি, উনি কতো স্টাইলিশ আর হবে নাই বা কেনো, একজন ফ্যাশন কোম্পানির ওনার। এতো বড়ো একজন বিসনেস টাইকুন, আমি সত্যি ওনার যোগ্য নই, আমার মতো একটা সাধারন মেয়ের পিছনে উনি কীভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন, অপমান হয়েছেন। মীরা ডুব দিলো তার অতীতে…………………
🌸
🌸
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
বি:দ্র: অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এতটা উৎসাহ দেওয়ার জন্য, আমি ভাবতেই পারিনি গল্পটা আপনাদের পছন্দ হবে, এরম ভাবেই পাশে থাকবেন আর আমিও গল্পটাকে আপনাদের মন মতো করে তোলার চেষ্টা করবো।