ভালোবাসার অন্যরুপ !! লেখাঃ আয়শা
ভালোবাসার অন্যরু
দরজা খুলতেই নিজের স্বামীর কোলে আমার ফুপাতো বোন কে দেখে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু চোখটা স্থির রইলো না, অনবরত পানি ঝরতে লাগলো চোখ থেকে, আমার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা বোধহয় আমার স্বামী আমান জির ভালো লাগলো না, তার মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাঁপ ভেসে উঠেছে। (ভালোবাসার অন্যরুপ)
–কে এসেছে রে বৌমা? আমান নাকি?
শ্বাশুরি মায়ের আওয়াজ কানে আসতেই একটু নড়ে চড়ে উঠলাম, আর কিছুটা সরে গেলাম, আমি সরে যেতেই আমান জি আমাকে পাশ কাটিয়ে আমার ফুপাতো বোন নীতা কে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। আমিও কোনমতে টলমল পায়ে ওনার পিছন পিছন এলাম, উনি ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় মিম কে শুয়ে দিলো আর সেইসময় আমার শ্বাশুরি মা এসে দাঁড়ালেন আর বললেন।
শ্বাশুরি মা– একি আমান? এ যে নীতা আমাদের মীরার ফুপাতো বোন। তুই ওকে এভাবে…কি হয়েছে ওর?
আমি আম্মুর কথা শোনার পর খেয়াল করলাম নীতার শরীরের কামিজ ছেড়া,,,,গলায় খামচির দাগ,,,,চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে,,,আমি আস্তে করে ওর দিকে এগিয়ে যেতেই আমান জি আমাকে ধমক দিলো।
আমান– এক পা এগাবে না তুমি এদিকে। (ধমকে)
আমি ওনার ধমক খেয়ে চুপসে গেলাম,,,আর উনি নীতার কাছে বসে ওর মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলেন যত্ন সহকারে,,,এসব দেখে জানো আমার বুক চিড়ে কান্না আসছে কিন্তু আমি কাঁদতে পারছি না।
শ্বাশুরি মা– একি আমান? এসব কি দেখছি আমি?
আম্মুর কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ডাইনিং টেবিলের থেকে জলের জগ টা নিয়ে এলেন,,,উনি কি করতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছিলাম না,,,আমার বুঝে ওঠার আগেই উনি জগের জল টা নীতার উপর ঢেলে দিলো,,,,নীতা ধড়ফড় করে উঠে বসলে আমান ওর সামনে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় যার ফলে কাঁচের জগ টা ধপ করে পরে যায় আর বিকট একটা শব্দ হয়,,,,আমরা সবাই কেঁপে উঠি আর উনি নিজের রূমের দিকে পা বাড়ায়,,,আমিও কোনো কিছু না ভেবে এগিয়ে যাই আমান জির আর আমার রূমের দিকে। জানতে হবে আমায় উনি কেনো এমন করলেন, যে কি না আমার ক্ষতি করেছে ওনার পরিবারের ক্ষতি করতে চেয়েছে তাকে কেনো নিজের ঘরে নিয়ে এলেন? উনি কি তাহলে সত্যি এখন আমাকে নয় নীতা কে ভালোবাসেন? (ভালোবাসার অন্যরুপ)
(বিঃ দ্রঃ “ ভালোবাসার অন্যরুপ !! লেখাঃ আয়শা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
আমি মীরা! চেহারার গঠন আর কি বা বলবো গায়ের রঙ শ্যামলা উচ্চতাও তেমন নয়,,,কিন্তু চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়েছে,,,সবাই বলে আমার চুল আর চোখ নাকি আমার সৌন্দর্য। গায়ের রং শ্যামলা তো কি হয়েছে আমার মুখ নাকি মায়াবি, কিন্তু আমি তা পাত্তা দি না। আমার মতো মেয়েকে কেই বা ভালোবাসবে? এসবের মাঝেই হঠাৎ করে আমান জি আমার জীবনে আসেন আর বলেন আমাকে নাকি ভালবাসেন আমি বিশ্বাস করিনি তিনি আমায় ভালোবাসেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমার ধারণা বদলে যাচ্ছিল আমি ভেবেছিলাম তিনি আমায় সত্যি ভালোবাসেন কিন্তু আজ? আজ কেনো তিনি নীতা কে ঘরে নিয়ে এলেন? উনি জানেন না নীতা ওনাকে ভালোবাসেন, কতটা মরিয়া ওনার জন্য? তারপরেও কেন?
এসব ভাবনার মাঝেই আমি আমার ঘরে প্রবেশ করলাম, ঘরে প্রবেশ করে দরজা দিতেই মেঝে থেকে আমার পা উঠে গেলো, আমি হাওয়ায় ভাসছি, অন্ধকারের মধ্যে চেয়ে দেখলাম দুটো লাল হিংস্র চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: আ…আমান জি? ( ভালোবাসার অন্যরুপ )
আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই উনি আমায় কোলে করে নিয়ে গিয়ে খাটে ছুড়ে ফেলে দিলেন, আর আমার কিছু বলার আগেই উনি আমার মুখ বন্ধ করে দিলো, আমার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলেন। আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
আমান: আমি নীতা কে বিয়ে করবো মীরা। তোমার জন্য আমার মনে আর কোনো জায়গা নেই।
আমি ওনার কথায় পুরো বোকা বনে গেলাম, তাহলে কি এটাই ওনার শেষ ছোঁয়া ছিলো? আমি আর কিছু না ভেবে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে, রাস্তার মধ্যে এলোপাথারি হাঁটছি ঝুম বৃষ্টি নেমেছে ইতিমধ্যে, কখন যে আমার দিকে একটা গাড়ি ধেয়ে আসছে টেরই পাইনি, নড়ার চেষ্টা না করে দাঁড়িয়ে পড়লাম, বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই আর, কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কেউ একজনের ঝড়ের গতিতে আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি অনুভব করতে পারছি তার হৃদস্পন্দন। এটা যে আমার আমান জি! কিন্তু উনি কেনো আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন? এখানে তো আর আমার জন্য জায়গা নেই। আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম।
আমি: কেনো আপ…!!
কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলেন আর রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম তারপর আর কিছু মনে নেই।
বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে but
বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ আয়শা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…