প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 11
রাতে বিয়ের লগ্ন,কিন্তু দুপুরেই ছোট বাবু ফিরে আসলেন।
কাঞ্চন এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুটে গেলো বাংলোয়।
– ছোট বাবু…. আপনি এসেছেন!
– তুমি এখানে? আজ না তোমার বিয়ে শুনলাম!
– আপনি ভাবলেন কি করে এ বিয়ে করবো?
– এখানে কেন এসেছো??
– কেন এসেছি মানে? !!! আপনি কি বলে গিয়েছিলেন ভুলে গেছেন!!?
– রাবিশ! দেখো এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি অই শীতল না কি নাম… ওই ছেলেকে বিয়ে করে নাও।
– ছোট বাবু! কি বলছেন আপনি? আপনার সন্তান আমার গর্ভে! তার স্বীকৃতি দিবেন না?
– কি চাইছো তুমি? ব্ল্যাকমেইল করতে চাও?
– ছোট বাবু!!
কাঞ্চনের চোখ থেকে অবিরত জল গড়িয়ে পড়ছে। এ মানুষটাকে কাঞ্চন চিনে না। একদম বদলে গেছে। অনেক অচেনা লাগছে। এটা ওর ছোট বাবু হতেই পারে না। কাঞ্চন তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– ছোট বাবু, কি হয়েছে আপনার? কেন এমন করছেন আমার সাথে? আমি কি ভুল করেছি?
বাবুর আরেকটু কাছে এগিয়ে যায় কাঞ্চন।
– ওখানে দাঁড়িয়েই কথা বলো।
আজ তোমার বিয়ে। যাও বাধ্য মেয়ের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসো।
– আপনি কি ভেবেছিলেন? এই বিয়ে করবো? কোনো দিন ও না। আপনি যদি এখন না আসতেন তবে গলায় ফাঁস দিতাম!
ছোট বাবুর ঠোঁটের কোনে বিদ্রুপের হাসি।
– আপনার সন্তান নিয়ে আমি অন্য কারো ঘরে যাবার আগে গলায় দড়ি দিতাম।
– তাই দাও! যত্তসব…
কাঞ্চন যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।পা টলছে।
– ছোট বাবু!! ….
….এতো দিনের সব কিছু তাহলে মিথ্যে ছিলো?…….
…. সব নাটক ছিলো….. আপনি…..
….
……… আপনি ভালোবাসার অভিনয় করে গেছেন?? কত স্বপ্ন দেখিয়েছেন! সব মিথ্যে??
– তুমি কি ভেবেছো?
সামান্য কুলির মেয়ে হয়ে মালিকের ঘরের বউ হবে?
এই স্বপ্ন দেখার আগে ভাবোনি কি যোগ্যতা আছে তোমার? কি তোমার পরিচয়? কি তোমার বংশ,কি জাতকুল?? এমন হাজার মেয়ের সাথে আমাদের পরিচয় হয়।তাই বলে হাজার মেয়েকে ঘরের বউ করবো??
ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার আগে ভেবে নিও।
আর… এই…
কি যোগ্যতা আছে তোমার?
বলো.. শুনি আমি? বলো?
উচ্চশিক্ষিতা, উচ্চ বংশের মেয়েদের বাবারা হা করে বসে আছে কার মেয়ে আসবে আমাদের ঘরে! তাদের যেমন রূপ, তেমন বংশ মর্যাদা, তেমনি উচ্চ শিক্ষিত।
কি আছে তোমার? এসবের কোনটা আছে যার জন্য তোমাকে ঘরের বউ করে নিবো??!!
না আছে কোনো মেনার!
জানো কিভাবে চলতে হয় আমাদের সমাজে? তোমাকে নিয়ে আমি কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবো?
পারবো বন্ধুদের সামনে নিতে? পারবো কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে তোমাকে নিয়ে যেতে? কি পরিচয় দিবো নিয়ে?
গাইয়্যা… অশিক্ষিত….. ….
কুলির মেয়ে???!
কাঞ্চন কিচ্ছু বলছে না।শুধু তাকিয়ে দেখছে ওর ছোট বাবুকে আর চোখ থেকে জল পড়ছে।
কাঞ্চন কোনো রকমে বললো- আপনার সন্তান?
– এখানে কিছু দিন থাকতে এসেছিলাম। যাতে বোর না হই,তাই তোমার সঙ্গ নিয়েছি।তার মধ্যে একটা এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে বসবে কে জানতো! এখন সব দায় আমার?
– দায় আপনার হবে কেন বাবু? দায় আমার।
– একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না।তুমি প্রেগন্যান্ট জেনেও ঐ ছেলে বিয়ে করতে চাইছে কেন? নাকি ওই ছেলের সাথেও এমন সম্পর্ক ছিলো? যার কারণে ও বুঝতে পারছে না কার সন্তান??
– ছিঃ ছোট বাবু!!
– এই যাও তো! ছিঃ আমাকে বলছো?? তোমাকে বলা উচিত। বুঝতে পারছি। দুজনে মিলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাও।
সন্তান? ঠিক আছে। ওর দায়িত্ব আমার।
একটু অপেক্ষা করো।
ছোট বাবু ওনার রুমে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পরে এসে বললেন – এই নাও।
কাঞ্চনের মুখের উপর অনেক গুলো টাকা ছুড়ে দিলেন।
– এই টাকা গুলো দিয়ে কোনো হাসপাতালে গিয়ে এবোরশন করিয়ে নিও।আর ভবিষ্যতে আমার সামনে আসবে না।
কাঞ্চন টলতে টলতে বাংলো থেকে বেরিয়ে এলো। ওর মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হয়নি। হাঁটতে পারছে না। কোথায় যাচ্ছে সেটাও জানে।এক সময় বুঝতে পারলো পুরনো জমিদার বাড়ির সামনে চলে এসেছে।
ওর ভালোবাসা এভাবে বিশ্বাসঘাতক করবে তা স্বপ্নেও কখনো ভাবেনি।
ওর জীবনে আর কিছুই রইলো না। শত কলঙ্কের বোঝা বইতে পারতো যদি…
এই কলঙ্কিত জীবন নিয়ে কোথায় যাবে?
আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। কাঞ্চনের কষ্টে আমার কান্না পাচ্ছে।
– তারপর কি হলো?
জয়িতা আমার দিকে বললো – তারপর?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
– তারপর জমিদার বাড়ির সামনে একটা বট গাছ আছে। সেই গাছের একটা ডালে ঝুলে পড়লো!
আর এই দুঃখ সইতে না পেরে শীতল বেচারা পাগল হয়ে গেছে!
– খুব কষ্ট হচ্ছে কাঞ্চনের জন্য। এভাবে শেষ হয়ে গেলো ওর জীবন?!.
– শেষ হয়নি তো!
– শেষ হয়নি?!! বেশ অবাক হলাম জয়িতার কথা শুনে।
– না। এক বছর পরে ছোট বাবু বিয়ে করেন।একদিন বাগানে বউ নিয়ে এসেছিলেন।
আমার ভেতরে কেমন একটা অদ্ভুত লাগছে। কি হয়েছে তারপর জানতে চাই।
– তারপর?
– একদিন রাতে এই পদ্ম পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়! এই পদ্ম পুকুর পাড়ে কত সময় কাটিয়েছে ছোট বাবুর সাথে। এখানেই প্রেমের শুরু হয়েছিলো!
একথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
– মানে… এ..ই… পু…কুরে?.. কিভাবে??
– কাঞ্চন সহ্য করতে পারেনি। ছোট বাবু ওর সাথে বেঈমানি করে সুখে সংসার করবে?তারপর আরও দুজন ম্যানেজারের বউকেও এই পুকুরে মারে।কারণ কোনো বাবু বউ নিয়ে এই বাগানে সুখে থাকতে দিবে না কাঞ্চন!
আমি বুঝতে পারছি না কিছু! এদিকে হঠাৎ খেয়াল হলো আকাশে চাঁদ উঠেছে।চাঁদের আলোয় আমি আর জয়িতা পদ্ম পুকুর পাড়ে বসে আছি। সেই পদ্ম পুকুর…
যেখানে তিন জন মেয়ের মৃত্যু হয়েছে!
– জয়িতা… তোমার ভয় করছে না? চলো এখান থেকে…
জয়িতা আমার কথায় কান দিচ্ছে না।ও বলেই যাচ্ছে
– ছোট বাবু কাঞ্চনকে কি নামে ডাকতো জানো?
বলেই আমার দিকে ফিরলো।
আমার হাত পা অবশ হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি এখন কি হতে যাচ্ছে!!
– জয়িতা???
– হা… মন জয় করেছিলাম যে!! তাই জয়িতা!
আমি আর নড়তেও পারছিনা।
– ওদের কিভাবে মেরেছি দেখবে?
ও আস্তে আস্তে পানিতে নেমে গিয়ে আমার সামনে আসলো।।
আমার শরীর বেয়ে ঘাম ছুটছে এবার।
ও আমার পায়ে ধরে টানতে শুরু করলো।
– আমাকে ছেড়ে দাও… কাঞ্চন…
বাঁচাও… কেউ আছো….???
গলা ফাঁটিয়ে চেঁচাচ্ছি।
– তোকে ও মরতে হবে!.
– আমাকে ছেড়ে দাও…. প্লিজ। আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?
– তুই আমার ক্ষতি করিস নি? জমিদার বাড়িতে আমার উপর দিয়ে পা মাড়িয়ে গেছিস! আর তারচেয়েও বড় অন্যায় তুই ছোট বাবুর বউয়ের মতো দেখতে!
তোকে আমি ছাড়বো না।
কাঞ্চন পা ধরে টেনে পানিতে নামিয়ে নিতে চাইছে!
শরীরের সব শক্তি দিয়ে শেষ বার বাঁচার চেষ্টায় ওকে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে আসি।কোনো রকমে সিঁড়ি গুলো ডিঙিয়ে এলোপাতাড়ি ছুটতে নাকি। কোন রাস্তায় এসেছিলাম জানি না! চাঁদের আলোয় যেদিকে রাস্তা দেখছি দৌড়াচ্ছি।
দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াই।ঘুরে সেই জমিদার বাড়িতে চলে এসেছি!!!
চলবে…..