বিনিময়ে তোমায় চাই !! Part- 13 (Last-Part)
রনিয়া ওয়াহিদ কিছুটা হাসলো। তারপর সবাই এক সাথে খেতে বসলো। রিফা আনাফের সাথে বসতে নিলে আরিফা কোথা থেকে এসে আনাফের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। তাই রিফা মনে মনে আনাফ আর আরিফাকে ইচ্ছেমতো গালাগাল করে মিতার পাশে গিয়ে বসলো। রিফার এমন ফেস দেখে আনাফের খুব হাসি পাচ্ছে। খাওয়ার সময় আরিফা আনাফকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাচ্ছে। এতে আনাফ বিরক্ত হলেও রিফাকে এমন রেগে থাকা দেখে খুবই আনন্দ পাচ্ছে৷ আর রিফা সে তো মনে মনে আরিফাকে গনধোলাই দিয়ে দিচ্ছে। এসব আর সহ্য করতে না পেরে রিফা তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো। রিফার এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া দেখে আনাস ওয়াহিদ অবাক হয়ে বললো,
আনাস- কি হলো আনাফ বউমা এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে চলে গেলো কেন?(অবাক হয়ে)
আনাফ- তা তো জানিনা বাবা হয়তো ওর এটা অভ্যাস।
আরিফা- এতো কুরুচির অভ্যাস ছিহ বড়দের সম্মান কি করে দিতে হয় সেটাও জানেনা দেখছি।
আরিফার কথায় আনাফ রেগে বললো,
আনাফ- ওহ তুই বুঝি সম্মান দিয়ে উল্টিয়ে ফেলেছিস। তোর আমার সাথে এতো ঘেষাঘেষির জন্যই চলে গেছে।
রনিয়া- কি বলছিস তুই আর আরিফা তোকে আমি আগেও বলেছি এখন আনাফ বিবাহিত ওর বউ আছে আনাফের সাথে বেশি মিশবি না আর তুই কিনা? আরেকবার যদি এসব শুনি আমি ভুলে যাবো তুই আমার বোনের মেয়ে মনে রাখিস।(রেগে)
বলেই রনিয়া ওয়াহিদও উঠে চলে গেলো।
মিতা-(ঠিক হয়েছে বারবার শুধু ভাইয়ার সাথে লাগিস তাইনা এখন বোঝ কেমন লাগে হুহ।)
তারপর খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেলো। আর আনাফও কিছু কাজে বাইরে চলে যায়। রিফা রুমে বসে বসে ভাবছে কখন আনাফকে শায়েস্তা করবে। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আনাফ আসে না।
রিফা- ওহ না আসার কারণ বুঝেছি ওই কুত্তির সাথে ঢলাঢলি কুরতে ব্যস্ত দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
তখনই মিতা রুমে ঢুকলো। মিতার সামনে রিফা নিজের রাগ প্রকাশ করলো না মুচকি হেসে বললো,
মিতা- কি হলো ভাবি একা একা কি করছো?
রিফা- নাহ তেমন কিছু না। ওহ তোমার নামটাই তো জানা হলোনা।
মিতা- ওহ কাম অন ভাবি এতো কথা হলো অথচ নাম জানো না??
মুক্তা- ওকে বলে লাভ নেই যেই বসের পিএ ছিলো তার নাম পর্যন্ত জানেনি।
মুক্তার কথা শুনে রিফা আর মিতা দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিধি আর মুক্তা দাঁড়িয়ে আছে।
মিতা- কি বলো আপু ভাইয়ার নামই জানতো না??(অবাক হয়ে)
নিধি- হ্যা তা আর কি বলবো।
রিফা- তোরা এখানে?(অবাক হয়ে)
মুক্তা- উমমম হুম আমরাই।(হেসে)
রিফা- কিন্তু….
আনাফ নিধি আর মুক্তার পেছন থেকে বললো,
আনাফ- আমি এনেছি এই রাগি বউ টাকে শান্ত করার জন্য।
আনাফের কথায় সবাই হেসে দিলো সাথে রিফাও। হাসি থামিয়ে নিধি বললো,
নিধি- রিফা এগুলো কি শুনি তুই নাকি খিটখিটে মেজাজি হয়ে গেছিস।
রিফা- এই বজ্জাত টার জন্য বাধ্য হয়েছি।(ভেঙচি কেটে)
আনাফ রেগে বললো,
আনাফ- কি বললা আমি বজ্জাত??(রেগে)
রিফা- বজ্জাতের কারখানা পুরোই।
আনাফ অনেক রেগে গেলো এবং সেখান থেকে চলে গেলো। আনাফ চলে যেতেই চারজন মিলে অনেক গল্প করতে লাগলো আর আরিফা কে শায়েস্তা করার প্লেনও করলো।
রিফা- তাহলে এইটাই ফাইনাল।
মিতা- হুম ভাবি একদম।
মুক্তা- আমার কাছে আছে জিনিস টা।
রিফা- ওয়াও দোস্ত তুই তো কাজের কাজ করে দিলি।
মুক্তা- হু দেখতে হবে তো শালিটা কার।(ভাব দেখিয়ে)
রিফা- হইসে এতো দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই।
তারপর ৪জন মিলে আরিফার রুমের সামনে আসলো। আরিফা ফেসিয়াল করছে আর বলছে,
আরিফা- আজ তো আমায় আনাফ দেখে হার্টফিল করবে এতো সুন্দর করে সাজবো না সবাইকে পাগল করেই ছাড়বো আর ওই মেয়েকে উচিত শিক্ষা দিবো লা লা লা।(গান গাচ্ছে)
রিফা-(আগে নিজে তো বাচ তারপর আমার সাথে লাগতে আসিস।)
বলেই হাসতে লাগলো মনে মনে। তারপর যখন আরিফা চোখে শশা গুলো রাখলো ওমনি রিফা পা টিপে টিপে আরিফার রুমে ঢুকলো আর বিছানার কাছে যেয়ে হাতের রাবারের সাপ টা আস্তে করে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
রিফা-(ব্যাস এর দিন দুনিয়া ক্ষতম আমার সাথে লাগা তাইনা এবার বুঝবা এই রিফা ওয়াহিদ কি জিনিস।)
ভেবেই চারজন মিলে রুমে চলে আসে। প্রায় ঘন্তা খানিক অপেক্ষা করতেই চিৎকার শোনা গেলো আরিফার। রিফারা তো এই সময়ের অপেক্ষা তেই ছিলো। ওরাও বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। আরিফা নিচে গিয়ে চিল্লাচ্ছে সাপ সাপ বলে। মুখে সেই ব্লেক ফেসিয়াল তো আছেই। রিফারা চারজন মিলে আরিফার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়েছে। তারপর অনেক
কষ্টে হাসি থামিয়ে চারজনই নিচে চলে গেলো।
রনিয়া- সাপ কোথা থেকে আসবে পাগল নাকি তুই?
আরিফা- খালামনি বিশ্বাস করো সত্যি আমি সাপ দেখেছি সেটা আমার বিছানাতেই।
আনাফ- আর ইউ ম্যাড?এ বাড়িতে তাও তোর রুমে সাপ মজা নিচ্ছিস??(রেগে)
আরিফা- আনাফ বিশ্বাস করো আমি সাপ দেখেছি প্লিজ চলো আর সাপটাকে বের করো।
আনাফ- ওকে চল দেখা সাপ কোথায়।
বলেই সবাই মিলে উপরে গেলো আরিফার রুমে। রুমে গিয়ে কোনো সাপ না পেলো না। এতে আনাফ রাগাম্বিত হয়ে বললো,
আনাফ- ফাজলামো ভালো কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছুই না।
বলেই আনাফ চলে গেলো নিজের রুমে। আর রিফা ভেতরে ভেতরে খুশিতে মরে যাচ্ছে। রনিয়া ওয়াহিদ যেতেই চারজন আরিফাকে ঘিরে ধরলো।
নিধি- সত্যিই সাপ ছিলো?
আরিফা- হ্যা সত্যিই ছিলো কিন্তু এখন কেন নেই?
রিফা- হয়তো সেটা সাপরূপি ভূত ছিলো।
আরিফা- ক..ক..কি ভূ..ভূত??
রিফা- হুম আবার আসতে পারে তাই যত তাড়াতাড়ি পারো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও নইলে আজই তোমার শেষ দিন।
আরিফা- নায়ায়ায়ায়া আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না এক্ষুণি আমি সব গুছিয়ে বাসায় চলে যাবো।
মুক্তা- হু তাড়াতাড়ি।
বলেই ৪জন রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।তখন আরিফা নিচে যেতেই মুক্তা আরিফার রুমে গিয়ে সাপ টা সরিয়ে ফেলেছিলো তাই কেউ পায়নি।তারপর চারজন মিলে লাঞ্চ করে যে যার রুমে চলে গেলো। আরিফাও কোনো রকমে বাড়ি থেকে বিদায় হয়েছে।রিফা রুমে ঢুকতেই আনাফ রিফাকে হেচকা টান মেরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
রিফা- কি হচ্ছে টা কি ছাড়ুন আমায়।
আনাফ- উহু আমাকে বজ্জাত বলার শাস্তি দিবো।
রিফা- বাজে কথা কম বলুন।
আনাফ- বাজে কিথা তাইনা বোঝাচ্ছি মজা।
সাথে সাথেই আনাফ রিফাকে কিস করে বসলো।
এভাবেই কাটতে লাগলো দিন রিফাকে সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারে আনাফ। একবারের জন্যেও সে ইমনের কথা রিফাকে মনে করতে দেয়না। রিফাও ভুলে যায় ইমনকে আর ভালোবাসতে শুরু করে আনাফকে। প্রায় ৩মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বুঝতে পারে সে আনাফকে ভালোবেসে ফেলেছে তখন থেকে ভাবতে শুরু করে কিভাবে তাকে বলবে। এইদিকে নিধিকেও নাহিদ ভালোবেসে ফেলে এবং তাদের বিয়েও সম্পূর্ণ হয়।
একদিন,
আনাফ বাসায় এসে দেখলো সারা বাসা অন্ধকার। বারবার ডাকার পরেও কেউ সাড়া দেয়নি।তাই সে আস্তে আস্তে শিরি দিয়ে উঠে দেখতে লাগলো সব রুমই ফাকা। নিজের রুমে গিয়ে দেখলো বিছানার উপর একটা চিরকুট রাখা আর সেটার পাশে কেন্ডেল যেটা রুমকে কিছুটা আলোকিত করেছে। আনাফ গিয়ে চিরকুট টা নিলো। সেটাতে লেখা আছে “ছাদে এসো”। আনাফও আর দেরি না করে ছাদে চলে গেলো। আনাফ যেতেই একটা ঘন্টা বেজে উঠে আর সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠে চারপাশে। সকল আলোর মাঝে রিফা একটা লাল জর্জেট শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে লাভ বেলুন নিয়ে। রিফার পেছনে আনাফ খেয়াল করে দেখলো বিশাল আকারে লেখা হেপি বার্থডে মাই লাভ। আনাফ এতো বড় সারপ্রাইজ দেখে স্তব্ধ। সে ভাবতে পারেনি রিফা এভাবে তাকে উইশ করবে। রিফা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো,
রিফা- জানিনা আপনাকে কিভাবে বলবো তবে এটা বলবো আপনায় আমি আমার হৃদয়ে স্থান দিয়েছি। আমার সমগ্র জুড়ে শুধু আপনিই আছেন। ভালোবাসি আপনাকে আনাফ। খুব বেশি ভালোবাসি এই সব কিছুর বিনিময়ে তোমায় চাই আমি কি তোমার হতে পারি?? হেপি বার্থডে ভালোবাসা।
আনাফ তো খুশিতে রিফাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আনাফ- হ্যা আমার ভালোবাসা আমি যে শুধুই তোমার। আজ আমি জিতেছি আমি আমার ভালোবাসার মর্যাদা পেয়েছি। শুকরিয়া তোমাকে আমার জীবনে আসার জন্য। আই লাভ ইউ রিফা।
রিফা- টু।
রিফার টু বলাতে আনাফ রিফাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,
আনাফ- টু মানে?
রিফা- পুরোটা বলতে শরম করে।🙈
রিফার কান্ডে আনাফ হাসলো এবং বললো,
আনাফ- পাগলি।
রিফা- আপনার।
এভাবেই বেচে থাকুক রিফা আর আনাফের ভালোবাসা।ভালো থাকবেন সবাই।
সমাপ্ত❤
(গল্পটা ভালো হয়নি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তবুও জানাবেন কেমন লাগলো। তোর_মাঝে শেষ করে খুব শীঘ্রই শেষ করে নতুন গল্প নিয়ে আসবো আপনাদের মাঝে আর হ্যা গল্প টা যাদের ভালোলাগেনি তাদের কাছে দুঃখিত। তবে সামনে থেকে চেষ্টা করবো ভালো গল্প দেওয়ার।
বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ লাবিবা ওয়াহিদ ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!