বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 10

শুভাকে বসার ঘরের সোফায় হাটু মুড়ে বসে রুটি আলুভাজি খেতে দেখে রিনা বুয়া বিস্মিত হয়।
“-তুমি এখানে এভাবে বসে খাচ্ছ যে?
“- আন্টি আমি তো এভাবেই খাই।
“- ভাইজান না রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনলো?
“- হুমম আনছে তো! দিয়ে এসেছি খাচ্ছে উপরে।আন্টি আপনাদের জন্যও রান্নাঘরে রেখে এসেছি।এনে দেব?
“- না! পরে খাবো।আচ্ছা শুভা তুমি এতো সরল কেন?
“-হি!হি!হি! আন্টি কি বল্লেন? আমি সরল? তাহলে গরল বলবেন কাকে?
“- মস্করা না শুভা।সত্যি তুমি সরল মেয়ে।অন্যের কথা ভাবো নিজের কথা বাদ দিয়ে।
“- এটাই তো উচিত।আজ মরলে কাল দুদিন আন্টি কোনো কিছু নিজের নিজের করবো তো করবো কোন ভরসায়।
“-বয়স কত তোমার মেয়ে।এইটুকুনি তো বয়স।এখনি মরা মরা করো
“- আজরাইল সাহেব কি বয়স দেখে আসবে আন্টি? মৃত্যু কথা বেশি বেশি স্মরণ করলে পাপ কম করবো।
“- কি যে বলো বাপু বুঝি না কিছু।রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবার বাদ দিয়ে এসব খাচ্ছ কেন?
“- ওসব বড়লোকি খাবার আমার পছন্দ না।গরিব মানুষ গরিব খাবারই অমৃত আমার কাছে।
“-কে গরিব? তুমি?হাসালে?এতোবড় কোটিপতির বউ হয়েও এমন কথা সত্যি হাস্যকর শুভা।
“- হাস্যকর না বাস্তবতা আন্টি। আমি তার কাছে বসন্তের ফুলের মতো যার গন্ধ সমুধুর কিন্তু স্থায়িত্ব স্বল্পকালের।দুদিন পর যখন তার দুয়ারে অতীত এসে হানা দেবে দেখবেন সে ভুলে যাবে এই ফুলের সুবাস।
“- আর তুমি তা হতে দেবে?
“- কেন দেবো না।যে আমার সে আমারই থাকবে। যে আমার নয় তাকে কোনো বাঁধনেই আমি বাঁধতে পারবো না।অযথায় কেন কষ্ট পুষবো বলেন? এজন্যই তো বললাম আমি সরল নই গরলে ভরা মানুষ।
“- নিজের অধিকার ছেড়ে দেবে শুধুমাত্র ভাইজান মিরা আপাকে ভালোবাসতো সে অজুহাতে?
“- অজুহাত আমার নয় একদিন সেই দেবে।মিলিয়ে নিয়েন।আমার শুধু এটুকুই জানার কেন এতো অভিনয় এই অসুন্দর মেয়েকে নিয়ে আপনার ভাইজানের? কেন?
“- সে অভিনয় করে না শুভা।তারে আমি বহুদিন ধরে চিনি।আগেও বলেছি মানুষ হিসেবে শতভাগ ভালো না হলেও তুমি যেমন ভাবছ তেমন সে নয়।তারে বেঁধে রাখো পস্তাবা না বরং জীবনের হারিয়ে যাওয়া অর্থ খুজে পাবা তোমরা দুজন।একটু ভেবে দেখো। যাই জ্যাককে নিয়ে তৈরি করি গোসলের জন্য।
শুভার গলায় শুকনো রুটি আটকে গেল।দৌড়ে রান্নাঘরের বেসিন ধরে কাঁদতে লাগলো। এমন কাওকে কি করে ভালোবাসা যাই যখন জানাই আছে তার মনে অন্য কেউ।সে তো শুধু শারীরিক সম্পর্ক করতে চাই এর বেশি নয়।যেদিন সুবাস ফুরাবে তার মনের দরজা ঘরের দরজা ঠিক বন্ধ হয়ে যাবে শুভার জন্য। না শুভা তুই তার প্রতি দূর্বল হবি না।সে যা ইচ্ছা বলে বলুক।তুই গুরুত্ব দিবি না।তার প্রয়োজন ফুরালে নিরবে চলে যাবি।শুভা চলে যাওয়ার কথাটা ভাবতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।চলে যাওয়া বললেই কি যাওয়া যায়? সর্বাঙ্গ জুড়ে যে তারই পরশের দাগ।মনের কোনেও তার ছাপ পড়ছে ক্রমশ। নিজের মন কে কি দূরে রাখবে নীলের থেকে ভেবে পায় না শুভা।
চোখ মুখ ধুয়ে পানি খেয়ে বসার ঘরে আসতেই দেখে নীল ফুল প্যান্ট পাল্টে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে নামছে।গায়ে সেই কালো শার্ট। শুভার চোখে চোখ পড়তেই নীলের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটা নিভে যায়।ভ্রু কুচকে তাকাতে তাকাতে নামে।
শুভা বিষয়টা আচ করতে পেরে তাড়াতাড়ি সোফার কুশন ঠিক করতে থাকে।
“- শুভা!
“- জ্বী!
“- সাথে আসো।
“- আচ্ছা!
“- জ্যাক মাই বয়।কাম হিয়ার।কাম বেবি।নীল বাইরে গিয়ে জ্যাককে দেখে এক হাটু মুড়ে বসে ডাকতে থাকে।শুভা ঢোক গিলে পিছিয়ে দরজা ধরে দাঁড়ায়।
“- ওলে মাই বয়!ড্যাড কে কিসি দাও। জ্যাকের লোমশ গলায় হাত বুলাতে বুলাতে আদর করে বলে নীল।জ্যাকও মুখ উচু করে নীলের গালের চুমো দিয়ে গলা চাটতে থাকে।পেছনে দাড়ানো শুভার তাই দেখে পেট মুচড়ে বমি আসার ভাব।নীল ঘাড় ঘুরিয়ে শুভার অবস্থা দেখে মুচকি হাসে ঠোঁট কামড়ে।ঘার সোজা করে দাড়িয়ে পানির পাইপ হাতে নিয়ে জ্যাককে নিজের হাতে গোসল করাতে ব্যস্ত নীল।
“- শুভা!
“- জ্বী!
“- জ্যাকের গা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করো তো?
“- ইয়াক! ছি! পারবো না আমি।
“- মাইর দিবো পারবো না বললে? আসো
“- সব করতে রাজি আছি কিন্তু এটা করবো না।কোনোদিনও না।বলেই শুভা ঘরের ভেতর চলে আসলো।নীল পাইপ টা ফেলে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে শুভার সামনে দাঁড়ালো। তা দেখে তো শুভা মুখটা অসহায় বানিয়ে বললো,
“- দেখুন পায়ে পড়ি। ঐ কুত্তারে আমাকে গোসল করাতে বলবেন না।কুত্তা বিলাই আমার পছন্দ না।নীল দাঁত কটমট করে তাকিয়ে শুভাকে কোলে তুলে নিল।
“- আমি কিন্তু গলায় ফাস দিব এসব যদি করান।সত্যি সত্যি
“-ওকে ডান!
“- কি!
শুভাকে জ্যাকের পাশে দাড় করিয়ে পাইপটা নিয়ে আবার দাড়িয়ে গেল।ইশারা করলো জ্যাককে সাবান লাগাতে।কিন্তু শুভা তো শুভাই। ত্যাড়া চোখে জ্যাকের দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।
“- শুভা!
নীলের ধমকে চমকে ওঠে শুভা।নীলের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকাতেই নীল তীক্ষ্ণ নজরে রেগে তাকায়।শুভা সেই রাগ কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে এসে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।দরজা লাগিয়ে হা হা হা করে হেসে ফেলে।নীল বিস্ময়ের চরম লেভেলে পৌঁছায় শুভার দৌড় দেখে।জ্যাক একবার দরজার দিকে একবার মালিকের দিকে তাকিয়ে উুউু করে ভেজা মাটিতে বসে পড়ে।জ্যাককে কাদায় বসতে দেখে নীল চেচিয়ে ওঠে,
“- ইউ ব্লাডি ডাস্ট! স্টান্ড আপ! কাম ওন।জ্যাক টপ করে দাড়িয়ে যায় মাথা নত করে।নীল রাগে গজগজ করতে করতে জ্যাককে গোসল করিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এসে দেখে শুভা ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে।নীল ইচ্ছা করে শব্দ করে দরজা লাগায়।শব্দ শুনে শুভা বালিশ খামচে চোখ মুখ চেপে শুয়ে থাকে।অনেকক্ষণ শুয়ে থেকেও যখন নীলের সাড়াশব্দ পায় না পিটপিটিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ঘরে নীল নেই।শুভা এবার লাফ দিয়ে বিছানার উপর উঠে বসে।হাসি আসছে নীলকে রাগাতে পেরেছে দেখে।ব্যাটা সবসময় জ্বালিয়ে মারে।আজ শুভা তাকেও জ্বালাতে পেরেছে ভেবে খুশি হয়।
“- তা মহারানীর এতো খুশির কারন?
“- কে! রে!শুভা উকি ঝুকি মারতেই দেখে রুমের জানালার বাইরে বেলকনিতে বসে নীল এদিকেই ক্রুর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।গলা নামিয়ে ঢোক গিলে আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে নামতেই দেখে নীল এদিকেই আসছে।শুভা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে ফ্লোরের কার্পেটের উপর পড়ে।কাঁদো কাঁদো চোখে তাকাতেই নীলের পা দেখতে পায়।নীল হাত বাড়িয়ে দিতেই শুভা ভয়ে ভয়ে নীলের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। নীলের বুক আর শুভার নাক বরাবর রয়েছে। শুভা মুখ উঠিয়ে নীলে দিকে তাকায় না।ভালো করেই জানে তাকালেই ব্যাটা উল্টো পাল্টা কিছু করবে।তারচেয়ে এভাবেই দাড়িয়ে থাকা ভালো।নীল কিছুক্ষণ পর বিছানায় পা মেলে বসে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,
“- ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না ইদুরনী!তোমার বয়স কম তাই ছাড় দিচ্ছি নয়তো ঠিক ষোল আনাই শাস্তি দিতাম। সমস্যা নাই ১৮ পূর্ণ হোক সব সুদে আসলে ফিরিয়ে দেব।এখন আমার সামনে থেকে যাও।শুভা মাথা নাড়িয়ে চলে যেতেই নীলের ডাকে আবার ফিরে তাকালো
“- আরেকটা পার্সেল ছিল খুলে দেখেছ?
“- না!
“-আজাইরা সময় তো বেশি বোঝো। সঠিক সময়েই কম বোঝো কেন? প্যাকেটে কিছু পেইন কিলার আর ওষুধ আছে। খেয়ে নিও।আদার্স কোনো সমস্যা হলে বুয়া কে বলবে।আমি তো তোমার শত্রু আমাকে না বললেও চলবে।
“- আমি কি বলেছি আপনি আমার শত্রু।
“- চুপ কর! যাও আমার সামনে থেকে।অসহ্য একটা।যাও! চিৎকার করে ধমকে ওঠে নীল।
শুভা ভয়ে বের হয়ে আসে।
“-এমন কেন এই বদ লোকটা এমন কেন? উফ!হে মাবুদ! এই বদকে ভালো বানিয়ে দাও মাবুদ।
“- শুভা দরজার সামনে থেকে যাও বলছি।
“- বাল যাইতাসি। চিল্লাইয়া গলা ফাটাইস না।শুভা বিরবির করতে করতে নিচে নেমে আসে।প্যাকেটটা খুলে পেইন কিলার খেয়ে নেয়।সকাল থেকেই শরীর ব্যথা শুভার।জ্বরটাও আছে বোধহয়। লোকটা ওতোও খারাপ না।শুভার না বলা কষ্ট গুলো বোঝে।কিন্তু থেকে থেকে জ্যাকের মতো ঘেউ ঘেউ করে কেন কে জানে? জীনের আছর টাছর আছে নাকি আল্লাহ মালুম।বিকালে নীল দাদীকে দেখতে হাসপাতালে গেছে।এই সুযোগে শুভা বড় মা সহ বাড়ির সবার সাথে কথা বলে নেয়।নীল রাবুর চিকিৎসার খরচ দেবে শুনে খুশিতে শুভার চোখে জল চলে আসে।নীল মনিরাদের মাসিক খরচপাতির জন্য মনিরার নামে ২০ লাখ টাকার ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিয়েছে কথাটা শুনে বিস্মিত হয় শুভা।বড় মা এও বলেছে এসব নীল বড় মার হাজার মানা উপেক্ষা করেই করেছে।শুভার চোখে জল ভরে আসে।কৃতজ্ঞ চিত্তে নীলকে স্মরণ করে।সাথে সাথে মনে এ প্রশ্নও জাগে কেন করছে উনি? কেন এতো করছে আমার জন্য? আজ শুভা জিজ্ঞেস করবেই করবে।রাতের জন্য নীলের প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে নীলের পছন্দের পাস্তা কার্বোনার,প্যানজেনেল্লা,মারগরিটা পিজ্জা,মাশরুম রিসোটো সব তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে নীলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।ঘড়িতে রাত ১২ টার কাটা ছুই ছুই।নীলের অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে শুভা টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেল।হঠাৎ প্লেট চামচের টুংটাং আওয়াজে কপাল কুচকে ঘুম জড়ানো চোখে সামনে তাকাতেই দেখে নীল হাসি মুখে সব গুলো খাবার একটু একটু করে নিয়ে খাচ্ছে।শুভাকে উঠতে দেখে হাসিটা আরও প্রশস্ত হলো নীলের।
“- ওয়াও! দারুন টেষ্টি হয়েছে তো।খুব ক্ষুধা পেয়েছিল বুঝলে?
শুভা নীলের কথা প্রতিউত্তর না দিয়ে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল।কান্না আসছে খুব শুভার।খুব খারাপ লাগছে।শুভা খেয়েছে কি না জিজ্ঞেস ও করলো না।স্বার্থ পর লোক একটা।শুভা চুপচাপ শুয়ে পড়লো।নীল কিছুক্ষণ পর প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে উপরে আসলো।প্লেটটা একপাশে রেখে শুভার শিওরে বসলো।
“- শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে?
“- জানি না! নীলের হাত টা কপাল থেকে সরিয়ে বলে।এতে নীলের রাগ উঠে যায়।এক টানে শুভাকে টেনে বিছানায় মুখোমুখি বসায়।
“- সমস্যা কোথায়! এমন বিহেভ করছ কেন?
“- আপনি রাবুর চিকিৎসার টাকা কেন দিচ্ছেন? কেন বড় মার নামে ২০ লক্ষ টাকার ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়েছেন?
“- ওহ! এর জন্য এমন করছ? পাগলী একটা।তুমি আমার কে হও? বউ তাই না? তো তোমার পরিবার আমারও তো পরিবার।আমি আমার পরিবারের জন্য এই টুকু করতে পারবো না?
“- না পারবেন না।আমি আপনার নামের বউ।আসল তো ঐ মিরা।
“- আরেকবার ওর নাম আমার সামনে বললে চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব তোমার।উঠে খেয়ে নাও।চলো
“- না!
“-সোজা ভাবে কাজ না হলে এই নীল কি করতে পারে আজ দেখাব তোমাকে? খুব বেশি লাফাচ্ছ দেখছি।নীল কথাটা শেষ করেই শুভার ঠোঁট দখল করে নিল।শুভা আছড়ে বিছড়েও নীলের কবল থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারে না।বেশ কিছুক্ষণ পর নীল শুভাকে ছেড়ে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।যেতে যেতে বলে যায় খেয়ে নিতে নয়তো নীল আরও খারাপ কিছু করবে।শুভা ঠোঁটে ফুলিয়ে হাজার টা বকা দিয়ে খেতে বসে।এই খাবার খেতে ইচ্ছা করছে না তবুও ভয়ে ভয়ে খেয়ে নেয়।রাতে শুভাকে একহাতে জড়িয়ে শুভার গলায় মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নীল।এভাবে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ৪ টা মাস কেটে যায় শুভা নীলের সংসার। সময় সুযোগ পেলেই ইদুর বিড়ালের মতো লাগে দুজন কিন্তু শেষ হাসি নীলই হাসে।আর তাতেই চটে যায় শুভা কিন্তু বেচারি কি আর করবে পেরে ওঠে না নীলের সাথে।আজ সকাল সকাল কলেজের জন্য বের হয়ে যায়।ক্লাস টেস্ট আছে।রাত ২টা অব্দি পড়িয়েছি নীল শুভাকে।পড়ার টেবিলে রাগী মাস্টার হয়ে যায়।শুভার মনে হয় বউ না স্টুডেন্ট নীলের ও।বিন্দুমাত্র ভুল হলেই হইছে স্কেলের বাড়ি একটাও ফ্লোরে পড়ে না।পড়া শেষ হলেই মাইর খেয়ে নাক ফুলিয়ে বসে থাকে।কিন্তু নীলের অত্যাচারে সেটাও বেশিক্ষণ সম্ভব হয় না।পরীক্ষা ভালোই হয়েছে শুভার।পরীক্ষা শেষে শর্মির সাথে কথা বলতে বলতে বেরুচ্ছিল তখনই দেখে সাদা টিশার্ট চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে এদিকে দৃষ্টি মেলে।
“-কি রে জা! ভাসুর আমার তো পুরাই বউ পাগলা।২ টা ঘন্টা বউ ছাড়া থাকতে পারে না।কি মজা খাওয়াছোস দোস্ত
“- সর! কি কস এগ্লা?আমাদের মধ্যে তেমন সম্পর্ক নাই।
“- কস কি? একবারও হয় নাই।এতো সুন্দর পোলারে এমনেই ছাইড়ে দেস?
“- হয়েছিল শুধু বিয়ের রাতেই।তারপর আর না।ছি! কি ভাষা তোর?
“-আরে ভাষারে মার গুল্লি! তারপর আর হয় নাই কেন তাই ক?
“- জানি না।
“- জিগাস নাই।
“- তুই জিগা গা।ছেরি আমার কি লজ্জা নাই আমি তারে এসব জিগামু।
“- সত্যি আমি জিগামু!
“- হ! সাহস থাকলে জিগা!
“- না থাক গা রিস্ক নেওনের কাম নাই।পরে তার ভাইয়ের লগে বিয়া ক্যান্সেল করে দিব আমার।
“- শালী চালাক কতো।
“- দেখতে হইব না বান্ধবী ডা কার?
“- আর যার হস আমার তো না।শুভার কথা শুনে শর্মি শুভার গাল টেনে ধরে।গলা জড়িয়ে হাজির হয় নীলের সামনে।
“- দুইদিন পর বাচ্চার মা হবা অথচ তোমার মধ্যে বাচ্চামি ভাব গেল না।
“- আয় হায় শুভা তোর কি নয় মাস চলছে? আল্লাহ! নীল ভাইয়া এই অবস্থায় ওকে একা ছেড়েছেন কেন?
“- একা কই ছাড়লাম। এই যে নিতে এসেছি।
“- কি রে! পেটে পেটে বাচ্চা নিয়া ঘুরস আমি জিগাইলেই হরতাল।শুভার পেটে চিমটি দিয়ে ফিসফিস করে বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে শর্মি।শুভা রাগে নীলের দিকে কটমটিয়ে তাকাতেই নীলও দাঁত বের করে হেসে বা চোখ টিপ দেয়।
“- চুপ কর বদ ছেরি।ভাসুরের সামনে এভাবে হাসিস কেন? বেশি হি হি হি করলে আমার দেবরের বউ তোরে কোনোদিন করবো না দেখিস?
“- শর্মি এসব ইদুরনীর কথায় কান দিবা বুঝছ।আর শোনো কাল ভাগ্নে ভাগ্নিকে দেখতে চলে এসো কেমন?
“- ভাগ্নে ভাগ্নি!টুইন হবে নীল ভাই? ওয়াও।আমি কিন্তু মেয়ে বাবুটার নাম,,,
“- শর্মি বাচ্চা চুপ কর কিন্তু। আপনি কি শুরু করেছেন? আমি কিন্তু রেগে যাবো দেইখেন।
“- রাগো! রাগলে কি ট্যাক্স দেওয়া রাগবে নাকি যে হুঁশিয়ার করছ? হা! হা! হা!শর্মিও তাল মিলিয়ে হেসে শুভার ফুলানো গাল টেনে দৌড় দেয়।
“- গাড়িতে ওঠ! এভাবে রোদে দাড়িয়ে থাকলে আমার স্কিন খারাপ হবে।সামনে ফোটোসেশন আছে ম্যাগাজিনের জন্য। পিক ভালো না হলে মেয়েরা হতাশ হবে।
“- যাবো না আপনার গাড়িতে।লুচু, অসভ্য, ইতর একটা।
“- আআ! কি করলাম।কিস কুস কিছুই তো করি নাই।আজাইরা চিল্লাচ্ছ কেন?
“- ফালতু লোক।অ্যাআআ শুভা চোখ মুছতে মুছতে কান্না জুড়ে দেয়।
“- আরে সিনক্রিয়েট করছ কেন? লোকে দেখলে কি বলবে?উশশশ
“-ব্যাটা আমাকে জ্বালাস! মানুষ চিনোস নাই।হুদাই আমার নাকের পানি চোখের পানি এক করোস।আজ তোরে মজা দেখামু।কলেজের দাড়োয়ান দিয়া পিডানি খাওয়ামু খাড়া( মনে মনে)
“- আপনি সব সময় আমাকে ডিস্টার্ব করেন? কেন করেন? জানেন না ঈভ টিজিং করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
“- আরে নাটকী!শুভা বেশি হয়ে যাচ্ছে।
“- দাড়োয়ান আঙ্কেল! ও দাড়োয়ান আঙ্কেল
দাড়োয়ান এতোক্ষন দূরে দাড়িয়ে শুভার কান্না দেখছিল।শুভার ডাক শুনে দৌড়ে ছুটে আসে।
“- কি হয়েছে আম্মা! কান্দো কেন?
“- এই ব্যাডা আমারে ইভটিজিং করতাছে গো আঙ্কেল। আমার মতো অসহায় মেয়ে পেয়ে কি সব বলছে শুনেন।আল্লাহ রক্ষা করো এই জালিম থেকে।
“- ঐ মিয়া কলেজের সামনে দাড়ায়া কলেজের মাইয়ারে এসব করেন? আপনারে তো পুলিশে দিমু খাড়ান।
“- ইস্কিন খারাপ হইয়া যাইবো।মাইয়ারা হতাশ হইবো।তোরে এমন শিক্ষা দিমু আইজ নীলের বাচ্চা নীল।( মনে মনে)
“- আরে চাচা! এই মেয়ের মাথার স্ক্রু ঢিলা।
“- কি কন? দেখতে তো ভালাই দেহা যায়।
“- তাই না বলেন? আমাকেও ঠকায়ইছে আপনার মতো।বলেছে মেয়ে ভালো কিন্তু দেখেন কেমন স্ক্রু ঢিলা মেয়েকে গছিয়ে দিয়েছে আমার কপালে।চাচা! বউ যদি এমন আধ পাগলি হয় তার কি অবস্থা হয় আপনি তো বোঝেন তাই না চাচা?
“-হ বাজান বুঝি!তয় এই মাইয়া তোমার বউ হয় নি? কি সাংঘাতিক মাইয়া।জ্বামাইরে পুলিশে দিবার চাই মিথ্যা কথা কইয়া।
“- আরে কিসব বলছেন আপনি? ভালো হচ্ছে না কিন্তু। নীলের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে।
“- চাচা আপনার এখনও ডাউট আছে আমরা যে স্বামী স্ত্রী তাই না?
“- না! না!
“- আরে আছে আমি বুঝেছি।এই দেখেন আমার বউকে আমি চুমা দিবো ও কিছুই বলবে না।শুভার দিকে নীল এগোতেই শুভা একদৌড়ে গাড়িতে উঠে চুপ করে বসে থাকে।
নীল হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে দারোয়ানকে বিদায় জানিয়ে ড্রাইভ শুরু করে।
“- আমার সাথে চালাকি? আমাকে ফাসানোর বয়স হয়েছে নাকি তোমার মতো এক আঙুলের ইদুরনীর?বাসায় চলো আজ মজা দেখাবো।জ্যাককে কোলে করিয়ে সারাদিন বসিয়ে না রাখছি।
“- এই না! না! প্লিজ।মাফ চাই।আর করবো না।দেখেন কানে ধরছি।
“- তোমার কান কামড়ে ছিড়ে নেব আমি। যদি আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করছ।
শুভা হাত দিয়ে কান ঢেকে ভীরু চোখে ঠোঁট উল্টে চুপচাপ বসে থাকে।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *