বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 07

শর্মি অনেক অনুনয় বিনয় করায় অয়নের রিকুয়েষ্টে নীল ওকে নির্ঝর ক্যান্টনমেন্টর গেটের সামনে নামিয়ে দেয়।শর্মি নেমে মুখটায় বিষন্নতা এনে বলে,
“- নীল ভাইয়া! শুভা?
“- ওর চিন্তা ভুলে যাও।ও আমার বাসায় যাবে।তুমি তো সব জানোই তাই না? কাল চলে এসো অয়নের সাথে।ঐ অয়ন তুইও নাম।
“- ভাই বাসায় নামিয়ে দিস আমাকে?
“- পারবো না।খুবই জরুরী কাজ আছে।নাম।
নীলের হালকা ধমক শুনে অয়ন মুখটা বেজার করে নেমে পড়ে।নীল গাড়ি আবার স্টার্ট দেয়।গাড়ি চলছে সড়কের উপর দিয়ে।নীল নিরবে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। শুভা বেশ ভয়ে আছে।শর্মি নেমে পড়ায় ভয় টা আরও বেড়ে গেছে।পাশের লোকটাকে এক বিন্দু বিশ্বাস করে না শুভা।অবিশ্বাসই লোকের সাথে আর যাহোক সাচ্ছন্দ্যে পাশাপাশি বসা যায় না।নীল পুরো রাস্তা কোনো কথা বলে নি।গাড়ি বাসার ভেতর ঢুকতেই গাড়ি থেকে নেমেই নীল বাসার ভেতর চলে যায়।শুভা ধীরে সুস্থে গুটি গুটি পায়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করে।না! নীল এখানে নেই।শুভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে চলে আসে।রান্নাঘরটা কাল যেভাবে রেখে গিয়েছিল ঠিক সেভাবেই আছে।শুভা তারপরও ভালো করে ধুয়ে মুছে নেয় আরেকবার।
“- শুভা! কখন এলে?
“- আন্টি! এই তো একটু আগে।
“- সকালে আসো নাই কেন? তোমাকে ছাড়া এখন বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে আমার।একা একা ভাল লাগে না।
“- একটু সমস্যা ছিল তো তাই।
রিনা বুয়া নানা কথা জুড়ে বসলো শুভাকে পেয়ে।এরমধ্যে নীলের গলার আওয়াজ শুনে রিনা বুয়া রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।
শুভা কান খাড়া করে নীল কি বলে সেটা শুনতে চেষ্টা করলো।
“-বুয়া! রাধূনী কই?
“- শুভা তো রান্নাঘরে আছে।কেন কিছু লাগবে?
“- আচ্ছা তুমি জ্যাক কে দেখে আসো আমিই গিয়ে বলছি আমার কি লাগবে?
রিনা বুয়া শুভার নীল ভীতির কথা মনে করে আবার বললো,
“- আপনি শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেন? আমিই বলে দিচ্ছি। আপনি রুমে যান।
“- বুয়া! রিনা বুয়া নীলের চোখ রাঙানি দেখে চুপচাপ বাইরে চলে গেল।নীল দরজায় এসে দাড়াতেই দেখে শুভা পরিষ্কার প্লেট আবার মুছছে। আর আড়ে আড়ে নীলের দিকে তাকাচ্ছে। নীল মৃদু হেসে শুভার পেছনে গিয়ে দাড়ালো,
“- কফি বানাও তো! কফি খাবো।শুভার কানে কথাটা ধাধা করে লাগলো।বুকটা ধড়ফর করছে নীলের উপস্থিতিতে।কাপা হাতে শুভা দুধ বসিয়ে দিয়ে গরম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।দুধ গরম হয়ে গেলেই শুভা কফি বানিয়ে দেয়।মগে ঢেলে কাঁপা কাপা হাতে নীলের সামনে ধরে আছে।
“- ভুতকে চা দিচ্ছ? পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে নীল পাশে দাড়ানো।অথচ শুভা ভেবেছে নীল সামনে দাড়িয়ে আছে।চোখ তুলে না তাকিয়েই মগটা তখন এগিয়ে দিয়েছিল।শুভা লজ্জা পায়।
“- এদিকে নিয়ে আসো।শুভা কফির মগটা নীলের হাতে দিতেই নীল শুভার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।শুভার বুকের ভেতর ঝড় উঠে যায়।এদিক ওদিক দৃষ্টি নাড়িয়ে আন্টিকে খোজে।
“- যাকে খুজছো সে নাই।কথাটা বলামাত্রই শুভা আহ! করে আর্তচিৎকার করে ওঠে।আঙুলটা মনে হয় জ্বলে পুড়ে শেষ গেল।শুভা সেদিক তাকাতেই নীলের দিকে রেগে ছলছল চোখে তাকায়।নীল শুভার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে শুভার আঙুল টা টুপ করে মুখে পুরে ঠোঁটে দিয়ে চেপে রাখলো।শুভার মনের ভেতর ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব শুরু হয়েছে।তছনছ হয়ে যাচ্ছে ভেতরটা ভয়ে।নিঃশ্বাস জোরে জোরে টানছে চোখ বন্ধ করে।জড়োসড়ো হয়ে নত মস্তককে দাড়িয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নীলের জিহ্বার অত্যাচার থেকে আঙুল টাকে বাঁচানোর।শুভা চোখের পাতা উঁচু করে তাকাতেও পারছে না কারন নীল ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শুভা মনে মনে ভাবে এভাবে লোকটাকে ভয় পেলে লোকটা আরও খারাপ পর্যায়ে কিছু করবে।কিছু কর শুভা!সাহসী হ।
“- আন্টি! শুভার মুখে আন্টি ডাক শুনে নীল তড়িৎ গতিতে শুভার আঙুল মুখ থেকে নামিয়ে নিজে দূরে সরে যায়।লজ্জিত নয়নে দরজার দিকে তাকাতেই মেজাজ গরম হয়ে ওঠে। শুভার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই শুভা দৌড়ে পালাতে যায়।কিন্তু পারে না।নীল তার আগেই শুভার কোমর ধরে দেয়ালের সাথে একদম চেপে ধরে।
“- বাহ! আমার ইঁদুরনীর তো বড্ড সাহস বেড়ে গেছে।আমাকে ধোঁকা দাও!
“- দেককখুউউন।
“- দেখছিলামই তো! তুমিই তো ডিস্টার্ব করলে।
“- আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন আমার সাথে।ছাড়ুন আমাকে।শুভা নীলের হাত খামচে খুমচেও নিজের কোমর ছাড়াতে পারছে না।কান্না আসছে এবার শুভার।
“-বাড়াবাড়ি কাকে বলে দেখবে? চলো দেখাই।নীল কথাটা বলেই শুভার ঠোঁটের দিকে ঝুকতে লাগলো।শুভা নাকে চোখে স্পষ্ট নীলের নিঃশ্বাস ভারি হওয়ার আভাস পাচ্ছে। হৃদপিণ্ড বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে শুভার।ঠিক সেদিন নীলের ঘরের বিছানায় যেমন খারাপ লেগেছিল তেমনটা লাগছে এখন।শুভার মাথা ঘুরছে।প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি হচ্ছে। না আর চুপ থাকা যাবে না।শুভা আগ পিছ চিন্তা না করে ঘুরিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল নীলের গালে।নীল ঘূর্নাক্ষরেও কল্পনা করেনি এই ভীতু মেয়েটা এমন অঘটন ঘটাবে।নীলের গালে চড় মারার সাহস নীলের পিতার মাতা,দাদী ছাড়া কারও নেই। সেখানে এই ইঁদুরনীর এতো সাহস?নীল কিছুক্ষণ দম নিয়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে হাত মুচড়ে ধরে শুভার।
“- এতো সাহস তোমার? আমাকে চড় মারো?
“- আপনার এতো সাহস কেন আমাকে উল্টো পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করছেন?।ছাড়ুন আমার হাত।নীল শুভার চোখের জল আর ঝাঁঝালো গলার আওয়াজ শুনে শুভার হাত ছেড়ে দেয়।শুভার মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।
“-আপনি ধর্ম না মানেন আমি তো মানি।আপনি আমার কাছে বেগানা পুরুষ। বেগানা পুরুষ হয়ে আমাকে স্পর্শ করতে চাইলেই আমি এমন করবো।হতে পারেন কোথাকার কোন লাট সাহেব তাতে আমার কি? আমার কাছে আগে আল্লাহর বিধান তারপর বাকি দুনিয়া।আর কোনোদিন যদি ছুঁয়েছেন আমাকে।শুভা আঙুল তুলে নীলের দিকে রাগী চোখে তাকায়।
“- কি করবে তুমি? নীল আবার রেগে ওঠে শুভার আঙুল তুলে কথা বলা দেখে।শুভা নীলের লাল চোখ দেখে ভয় পেলেও ঢোক গিলে আবার বলে,
“- কি করবো নমুনা তো দেখলেনই।আরও অনেক কিছুই করতে পারি।মেয়ে বলে কি দূর্বল ভেবেছেন নাকি? এতোটাও দূর্বল আমি নই।আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে মেয়েদের দূর্বলতা ঢাল হয়ে সামনে রুখে দাঁড়ায়।মনে রাখবেন তাহলে আর,,নীলের গালটা দেখে থমকে কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে যায়।ফর্সা গালে শুভার হাতের আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে।ইশ! শুভা মনে মনেই কষ্ট পায়।নিজেকে সামলে বলে,”-আমি এখনি এই বাড়ি ছেড়ে আপনার কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। যেখানে একটা নারীর সম্মান নেই সেখানে এই শুভা পা ও রাখে না।শুভা কথাটা বলেই চলে যাচ্ছিল নীল আবার ওর হাতটা ধরে বসে।
“- কোথাও যাবে না তুমি।এক পা ও না।অনেক বেশি বলেছ আমাকে তুমি।
“- আবার ছুঁয়েছেন? আপনি দেখছি ভালোকথার লোক না।আরও বেশি বলবো যদি এমন করেন।
“- সরি! ছেড়ে দিলাম।বাট যাবে না তুমি।
“- একশ এক বার যাবো।আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের অধীনে কাজ করলে আমাকে পাপী হয়েই মরতে হবে।সরুন!
“- রাধূনী অতিরিক্ত করছ কিন্তু। এর খেসারত কিন্তু তোমার জন্য ভারি হয়ে যাবে।
“- ভয় পাইছি! আল্লাহ এখন কি হবে আমার? আপনার হুমকিতে আমি মোটেও ভয় পাইনি।আমার জীবনে আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল।আপনি অনেক জ্বালিয়েছেন।আর সে সুযোগ পাবেন না।গায়ের রং ফর্সা না হোক,সুন্দর না হই কিন্তু মানসম্মান আছে অনেক আছে।আসি। আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন।শুভা ঘুরে দাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে জোরে চাপ দিয়ে ভো দৌড়ে একবারে মেইন রোডে চলে আসে।খিলক্ষেত গামী গাড়িতে উঠে যে হাতে নীলকে থাপ্পড় দিয়েছিল সে হাতটা দেখে বুকের সাথে চেপে ধরে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাফাচ্ছে।ঘেমে চুপচুপ হয়ে গেছে পুরো শরীর।এই সাহসটা অনেক কষ্টে করেছে শুভা।করতে হতোই ওকে।ভয়ে ভয়ে মরার চেয়ে প্রতিবাদ করে মরাও ভালো।শান্তি আছে তাতে।শুভা দৌড়ে বের হওয়ার পরেও নীল রক্ত চক্ষু ধারন করে থম মেরে দাড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় আসলেই রাধূনী বলে চিৎকার করে ওঠে।পুরো বাড়ি কাঁপে সেই চিৎকারে।
অয়নের সাথে শর্মির এখন সব মিটমাট।দুজনের ভালোবাসা দেখলে কেউ আচ করতে পারবে না কালকেও এরা ঝগড়া করেছিল।
আশিক অনেক চেষ্টা করেও শুভার সাথে একান্তে কথা বলতে পারছে না।শুভা স্কুলে পড়াকালীন শুভার অংক ইংরেজি শিখানোর জন্য যা একটু কথা বলার সুযোগ পেতো।এখন সেটাও পারছে না।মেয়েটা সারাদিন ঘরে কি এমন করে কে জানে?আশিক দরজার বাইরে দাড়িয়ে এসব ভাবছিলো তখনি মনিরা ভরা বালতি সহ বাইরে বের হলো।
“- খালা!কি হয়েছে? মুখটা ওমন দেখাচ্ছে কেন?
“- আর বলিস না বাপ! শুভার আজ দুদিন ধরে আবার জ্বর। কাল গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছিল।
“- হঠাৎ এমন কেন হলো?
“-মনে হয় ভয় পেয়েছে কিছু নিয়ে।রাতে কি সব বিরবির করে বলছিল ভয়ে ভয়ে।ওর নাকি গলা শুকিয়ে আসে একটু পর পর।মনিরার মুখটা বিষন্নতায় ভরে উঠলো।
“- ডাক্তার ডেকে আনি খালা?
“- না থাক! ওষুধ আনছি কালই।এখন একটু ভালো আছে।
আশিকের খুব ইচ্ছা করছিল শুভা গিয়ে দেখার কিন্তু গেল না।শুভা এই অবস্থায় কোনোদিন পরপুরুষের সামনে আসবেও না আবার কেউ যাবে সেটাও পছন্দ করবে না।আশিক মন খারাপ করে ঘরে চলে গেল।শুভা ভয় পেলেই গা কাঁপিয়ে জ্বর ওঠে।নীলের ভয়ে এই নিয়ে দুবার জ্বর এলো।
খান মঞ্জিলে থমথমে ভাব।বসার ঘরের সোফায় পুরো বাড়ির সদস্যরা চিন্তিত হয়ে বসে আছে।সবচেয়ে চিন্তিত নীলের দাদী।বয়সের কারনে কপালের ভাজ পড়া চামড়টা আরও ভাজ হয়ে গেছে।ফর্সা গালটা রাগে লাল হয়ে আছে।বসার ঘরের থমথমে ভাবটা কেটে গেল মিরার মায়ের বাজখাঁই গলার আওয়াজে,
“- মা কিছু বলছ না কেন?আমার মিরার কি হবে? সোসাইটিতে মুখ দেখাবো কি করে?
“- মালা চুপ কর! দেখছিস তো মা এমনিতেও চিন্তায় আছে।তাছাড়া ভাইজান তো বলেছে তিনি এ বিয়ে হতে দেবেন না।
“- ভাইজান বললেই কি হবে? তার বদরাগী,একরোখা ছেলে কি তাকে মানে? রাশেদুর ইকবাল খানের কানে বোনের ব্যঙ্গ করে বলা কথাটা বিষের মতো লাগলো।নীলের সাথে ১০ বছর হলো কথাবার্তা তেমন হয় না।তিনি সেধে কথা বললেও নীল জবাব দেয় না।ছেলের কাছে রাশেদুর ইকবাল খান শুধুই জন্মদাতা তার বেশি কিছু না।রাশেদ চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়াতেই মালা ঢোক গিলে মায়ের পাশে বসলো।মেহেরুন খাতুন তাতে প্রচন্ড বিরক্ত হলেন।
“- মালা! চিন্তা একা তোর না আমাদেরও।আর তুই এখন এসব বলছি কোন মুখে? তোর মেয়েকে যখন নীল বিয়ে করার জন্য বললো তোর মেয়ে তো পালিয়ে গেল।
“- দেখ ভাইজান! মেয়ে আমার ছোট। ছোট মানুষ একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে এমনভাবে বলবা? ও তো বলেই ছে চারমাসের মধ্যেই ফেরত চলে আসবে। তোমার ছেলেই তো মানছে না।
“-ছোট মেয়ে!তোর ছোট মেয়ে তো ছোটদের মতো চলে না। ওর কথা কি নীল শুনেছে? যাকে বোঝানো শুনানোর তাকেই যখন বোঝাতে পারে নি তবে আমাদের কেন দোষ দিচ্ছিস?
“- মা! দেখ ভাইজান কি বলে? আমার মিরার কি হবে মা? কিছু তো করো?
‘- আহ! মালা চুপ কর।রাশেদ বউ মা কে বল নীলকে যেন আজই এ বাড়িতে ডাকে।বিয়ে কি বললেই হলো? আমি মেহেরুন খাতুন কি এমনি এমনি বসে থাকবো? এ বাড়ির নিয়ম নীতি বলে কিছু তো আছে নাকি?ডেকে পাঠা ওকে।
“- জ্বী মা!
বাড়ির সবাই এখন বড় রকমের ঝামেলার ইঙ্গিত পাচ্ছে। একদিকে জেদি নাতী অন্যদিকে বংশ মর্যাদার গরিমা রক্ষায় অনড় দাদী।কি হবে আল্লাহই জানে?

শুভা জ্বর জ্বর মুখে পেয়ারা খাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না খেতে।৪দিন হয়ে গেলেও জ্বর জ্বর ভাব যাচ্ছে না।নীলের উপর রাগ করে করে কামড় দেয় পেয়ারায়।এমন সময় শর্মি দৌড়ে এল।শুভার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
“-কেমন আছিস?
“-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
“- একটা ঘটনা শুনবি?
“- তোর আর অয়ন ভাইয়ের হলে শুনবো না।জ্বরে এমনিতেও মাথা ঝিমঝিম করছে।মাথা ব্যথা করতে চাই না।
“- আরে ছেরি ভাব নিস না।অন্য ঘটনা তোর ফেভারিট মানুষের ঘটনা।
“- আমার আবার কে ফেভারিট?
“- কেন? কুত্তাওয়ালা ব্যাডা।আমার ভাসুর।
“- ঐ চুপ যা।আমি ঐ বদের কোনো ঘটনায় শুনতে চাই না।ব্যাডা আমার জীবনে জ্বরের মিসাইল নিয়ে আসছে।বইন আমি এমনে জ্বরে ভুগে মরতে চাই রে।
“- আরে ধ্যাৎ পুরোটা শোন তোর জ্বর মুহুর্তেই ঠিক হয়ে যাবে।
“- আরে কি কস? ঐ বদটার নাম শুনলেই জ্বরের টেম্পারেচার তরতর করে বাড়ে আর ঘটনা শুনলে আল্লাহ জানে কি হয়?থাক বইন রিস্ক নিমু না।তুই বলিস না।
“- আরে ভঙ্গি কম কর।শোন আগে! তোর কুত্তাওয়ালা সাহেবের বিয়ে ঠিক।পরশু বিয়ে।
“- কি! সত্যি? সিরিয়াসলি?
“- আরে হ! অয়ন বললো।এ নিয়ে পেপার পত্রিকায় ও আর্টিকেল বেরিয়েছে।সফল ও ফেমাস বিজনেসম্যান তো তাই।মজার বিষয় কি জানিস?
“- কি?
“- অয়নদের বাড়িতে এ নিয়ে বিশাল ঝামেলা হচ্ছে। নীল ভাইয়ের নাকি অলরেডি তার ফুপাতো বোনের সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে আছে।তাদের নাকি একসময় রিলেশনও ছিল।৬ মাস আগে নীল ভাই মেয়েটাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতেই মেয়েটা হুট করে না জানিয়ে কানাডা চলে যায়।এতেই চটে যায় হিরো।সেই জেদেই নাকি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে।তবে কাকে বিয়ে করছে সেটা মিডিয়া, পরিবার কেউ জানে না।
“- শর্মি রে!
“- কি!
“- এতো ভাল্লাগছে কেন রে? আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।শাখে শাখে পাখি ডাকে। কতো ফুল ফোটে।আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।কি যে মজা লাগছে রে।আয় এই খুশিতে তোরে একটা চুম্মা দেই।আয়! আয়।শর্মির মুখটা চেপে গালে জোরে একটা চু্ম্মা দেয় শুভা।খুশিতে ক্লাসিক ড্যান্স দিতে ইচ্ছা হচ্ছে এই মুহুর্তে শুভার।
“- দেখলি তো জ্বর চলে গেছে খবর শুনে।
“- হ রে! ঐ মাইয়ার কপাল ভালো বদটার থেকে আগেই ভাগছে।বেচারা বউ।আহা! কি দূর্ভাগ্যই না মেয়েটার।এমন বদ মার্কা জ্বামাই পাইবো।বউটার জন্য একটু কষ্ট হচ্ছে রে শর্মা।
“-কেন?
“- এই টা কি মাল! তা তো আর জানে না ঐ বউ।জানলে জীবনেও বিয়ে করতো না।আহারে বউটা! ওর জীবন তো পুরাই শেষ।
“- হুমম।আমারও তাই মনে হচ্ছে।
শর্মি শুভা অট্টহাসি দিয়ে গলাগলি করে ঘরে ঢুকলো।শুভার এখন ভয় ডরহীন জীবন।বিয়ে করা বউ রেখে তো আর শুভার পেছনে আসবে না নীল?শুভার খুশি আকাশ ছোঁয়া নীলের বিয়ের কথা শুনে।সেদিন সাহস দেখিয়ে কথাগুলো বলে তাহলে ঠিকই করেছে ভেবে নিজেকেই নিজে বাহবা দেয়।

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *