বদনাম !! লেখাঃ শারমিন আক্তার { সাথী }
—-আমি আমার স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে এসেছি।
তাই বলে আজ আমি বে*** বদনামের ভাগিদার। সবাই এটা জেনেছে আমি পালিয়ে এসেছি কিন্তু কেউ এটা জানতে চায়নি আমি কেন পালিয়ে এসেছি? বা কারো সাথে প্রেম করে পালিয়েছি কিনা? নাহ আপনি যা ভাবছেন তা না। আমার স্বামী আমাকে কোন রকম শারীরিক, মানুষিক অত্যাচার করতো না বা তার অভাবের সংসারও ছিলো না। কথা গুলো বলে আপন মনেই চোখের বহীত জলটাকে মোছার চেষ্টা করছে তনয়া
আয়াতঃ তাহলে পালালেন কেন? আপনার স্বামী কি আপনাকে ভালোবাসতো না?
তনয়াঃ ভালোবাসা! হুমম নাম শুনলেও ভয় করে এখন। যে ভালোবাসা আমাকে নিঃশ্বেষ করে দিয়েছে সে ভালোবাসা! যে ভালোবাসা আমার সাজানো জীবনটাকে কালো অভিশাপ্ত ঘন মেঘে ঢেকে দিয়েছে সেই ভালোবাসা! এমন ভালোবাসাকে ঘৃনা করতেও ঘৃনা লাগে!
আয়াতঃ দেখুন ভালোবাসা কখনো কারো ঘৃনার কারন হয় না! ঘৃনার কারন হয় ভালোবাসার মানুষ গুলো। বললেন নাতো আপনার স্বামীকে ফেলে কেন পালালেন?
তনয়াঃ যে স্বামী নিজের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর ঘরে পর পুরুষ ডুকিয়ে দেয় ভালোবাসার জন্য এমন ভালোবাসা আর স্বামীকে ছেড়ে এসে কি খুব বড় পাঁপ করেছি?
তনয়ার কথা শুনে চমকে ওঠে আয়াত। গাড়িটাকে হঠাৎ করে ব্রেক করে। ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না? গলাটা ধরে আসছে আয়াতের। ঢাকা থেকে নিজের কাজ সেরে বরিশাল বাড়ি ফিরছিলো আয়াত। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো। হেড লাইটের আলোতে দেখতে পাচ্ছিলো কিছু ছেলে একটা মেয়ের সাথে নোংড়ামি করার চেষ্টা করছে। গাড়িটা থামিয়ে ছেলে গুলোর কাছে গিয়ে মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু ছেলে গুলো আয়াতকেও বাঁজে কথা বলছিলো। তাদের সাথে কোন মতে হাতাহাতি করে মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে গাড়ি টান দিয়ে অনেক দূর এসে জিগেস করলো।
আয়াতঃ কি নাম আপনার? কোথায় যাবেন?
মেয়েটা নিথর চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। চোখ থেকে অশ্রু বৃষ্টি ঝড়তে ছিলো। ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আয়াতের কথায় ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো। একটা মানুষ নিজের মহামূল্যবান জিনিস হারাতে বসলে ঠিক যেমন করে ঘোরের মধ্যে থাকে মেয়েটিও তেমন ছিলো। আয়াত গাড়িতে থাকা পানির বোতলটা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো নিন চোখে মুখে পানি দিয়ে নিন। মেয়েটা পানিটা নিয়ে ঢক ঢক করে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললো। মনে হয় কত দিনের তৃষ্নার্ত। আয়াত আবার জিগেস করলো।
আয়াতঃ আপনার নাম কি?
মেয়েটিঃ তনয়া।
আয়াতঃ কোথায় যাবেন?
তনয়াঃ জানি না!
আয়াতঃ মানে?
তনয়াঃ মানে বরিশাল।
আয়াতঃ ওহ। আমিও বরিশাল যাচ্ছি । আপনার অসুবিধা না হলে আপনি আমার সাথে যেতে পারেন! তার আগে বলুন এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন?
তনয়াঃ আসলে আমি বাসে করে বরিশাল যাচ্ছিলাম । পিছনের বাসস্টপে বাস থামলে আমি ওয়াশরুমে যাবার জন্য নামি। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় বাস আমাকে ফেলেই চলে যায়। ওখানে আর কোন বাস ছিলো না। কাল সকালের আগে নাকি পাবো না। ওখানের এক চাচা বললো সামনে থাকার হোটেল আছে। সেখানেই যাচ্ছিলাম কিন্তু পথে ছেলে গুলো আমাকে সেই রকম মেয়ে ভেবে বাজে কথা বলছিলো। আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আয়াতঃ না না ধন্যবাদ দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মেয়েরা হচ্ছে উপরওয়ালার নেয়ামত মায়ের জাতি, তাদের অসম্মান হতে কিভাবে দেখি বলুন? আপনি বলুন কেন আপনার স্বামী এমন নোংড়া কাজ করছিলো।
তনয়াঃ সে প্রশ্নের উত্তর তো আমারও অজানা। কেন অভি এমনটা করলো? কারন আমাদের বিয়ে হয়েছে এক মাসের বেশি হলো । এক মাসে ও অামার সাথে সামান্যতম খারাপ ব্যবহার করেনি। আমার অনেক খেয়াল রেখেছে। কিন্তু কেন যে ও এমন জঘন্য কাজ করলো তা এখনো বুঝতে পারছিনা!
আয়াতঃ আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ নাকি এ্যারেঞ্জ?
তনয়াঃ এ্যারেঞ্জ। কিন্তু বিশ্বাস করুন পারিবারিক বিয়ে হলেও আমাদের মাঝে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। বিয়ের পর থেকেই ও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। আমার অনেক খেয়াল রাখতো। কিন্তু সপ্তাহ খানিক আগে একদিন অভি অফিস থেকে এসে বললো রাতে একজন অতীথি আসবে ভালোভাবে রান্না করো। সেদিন অভির বাবা মা বাড়ি ছিলো না। তারা তাদের এক আত্নীয়ের বাসায় গেছিলো। রাতের বেলা একজন লোক আসলো তাকে খাওয়ানোর পর অভি আমার রুমে এসে বললো—–
অভিঃ তনয়া তোমার কাছে আজ কিছু চাইবো, না বলবে না তো?
তনয়াঃ আমার সবকিছুই তো তোমার নতুন করে কি আর দিবো! বলো কি চাই?
অভিঃ আসলে তনয়া——
তনয়াঃ প্লিজ অভি এভাবে মনে সংকোচ নিয়ে কথা বলো না। তুমি যা বলার সরাসরি বলো আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো।
অভিঃ যে লোকটা এসেছে আজ রাতে তোমাকে সেই লোকটার সাথে রাত কাটাতে হবে।
অভির মুখ থেকে এমন কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমি মাটির নিচে ডুকে গেছি। কথা বলার মত বাঁকশক্তি হারিয়ে গেলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। বহু কষ্টে মুখে কথা এনে বললাম—–
তনয়াঃ কককক কি বলছো অভি ? আমি কি ভুল শুনছি? আমি তোমার স্ত্রী।
অভিঃ না তুমি ঠিক শুনছো। তনয়া ব্যাপারটা আমাদের তিনজনের ভিতরই থাকবে কেউ কিছু জানবে না প্রমিজ। তোমার ওনার সাথে এক রাত কাটানোর বদলে আমার অনেক লাভ হবে। প্লিজ তনয়া না করো না! একটা রাতেরই তো ব্যাপার। আর আমি তোমার নিজের স্বামী হয়ে যখন মানতে পারছি তখন বাঁধা কোথায়?
হঠাৎ করে আমার শরীরে কোথা থেকে যেনো অনেক শক্তির সঞ্চার হলো। সর্বশক্তি দিয়ে কষে অভিকে একটা চড় মারলাম। রাগে আমার মাথা ঠিক রাখতে না পেরে বললাম।
তনয়াঃ তুমি আমায় কি বাজারের মেয়ে ভাবো নাকি? তুমি নষ্টা ছেলে হতে পারো আমি তোমার মত নষ্টা মেয়ে নই। সারা জীবন নিজের সম্মানটাকে সবার থেকে বড় ভেবেছি। বিয়ের আগে কারো সাথে সম্পর্কে পর্যন্ত জড়ায়ইনি, শুধুমাত্র নিজের সম্মানের খাতিরে। আর সেই তুমি আমাকে এমন নোংড়া প্রস্তাব দিচ্ছো? ছিঃহ সাহস কি করে হয় তোমার?
অভি এতক্ষন নিজের গালে হাত দিয়ে ছিলো। হয়তো ভাবতে পারেনি যে আমি ওকে চড় মারবো? তারপর নিজের গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বললো
অভিঃ তুমি যাই বলো আর করোনা কেন, আজ রাতে তোমাকে আমার কথামতই থাকতে হবে। সেটা জোড় করে হোক বা পোষ মানিয়ে।
তনয়াঃ আমি তোমার ঘরে আর থাকবো না। এক্ষনি আমি আমার বাড়ি চলে যাবো। এটা বলে আমি রুম থেকে বের হতে নিলে অভি আমার হাত ধরে আমার গালে দুটো চড় বসিয়ে দেয়। চড় খেয়ে চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। তারপর আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ও রুম থেকে বের হয়ে যায় । চড়ের কারনে মাথাটা ঝিম ধরে ছিলো কিছুক্ষন। বিছানায় শুয়ে কান্না করছিলাম আর আল্লাহর নাম ডাকছিলাম তিনি যেনো আমায় রক্ষা করে। কিছু সময় পর অভি লোকটাকে নিয়ে আমাদের রুমে এসে লোকটাকে বললো
অভিঃ স্যার আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। হারামজাদির অনেক অহংকার। আজ ওর অহংকার ভেঙে গুরিয়ে দিন তারপর দেখবো কোথায় থাকে ওর সম্মান!
অভি দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলো। লোকটার নোংড়া চাহনীতে নিজের উপর বড্ড ঘৃনা হচ্ছিলো। এত বছর ধরে গড়া সুন্দর সংসারের স্বপ্নটা নিমিষেই চোখের সামনে ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে দেখছিলাম। লোকটা আমার গায়ে স্পর্শ করার আগেই আমি টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটা উঠিয়ে তার মাথায় আঘাত করলাম। লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেলো। অভিদের বাড়ির জানালায় কোন গ্রিল না থাকায় জানলা দিয়ে কোন ভাবে বাইরে এলাম। কিন্তু উচু জানলা থাকায় পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছিলাম। তারপরও নিজের সম্মান বাঁচানোর খাতিরে প্রান পনে ছুটছিলাম। আমার কাছে কোন ফোন ছিলো না যে পরিচিতো কাউকে ফোন দিবো। আর এত রাতে একা একা কোথায় যাবো? তখন সামনে একটা হাসপাতাল দেখলাম। ভাবলাম রাতটা কোন রকম হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়ে দিবো। আমার কাছে ফোন থাকলেও বিশেষ কোন লাভ হতো না কারন আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে সেটা হচ্ছে কারো ফোন নাম্বার কেনো যেনো মনে রাখতে পারি না। সে রাতটা হাসপাতালের একটা বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিলাম।
পরের দিন সকালে বাড়ি যাবো কিন্তু আমার কাছে কোন টাকা ছিলো না। কিন্তু আমার কানে একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল ছিলো। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা স্বর্ণের দোকানে গেলাম। কানের দুল দুটো বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা পেলাম। কোন মতে বাসে উঠে বাড়ি গেলাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে——
তনয়া আর কোন কথা বলতে পারছে না। গলাটা আটকে আসছে। তনয়ার কথা শুনে আয়াত চোখ বড় বড় করে হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো। তনয়ার দিকে আবার পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললো
আয়াতঃ নিন পানি খেয়ে নিন। আগে একটু শান্ত হন তারপর সব শুনবো। বরিশাল তো প্রায় এসে গেছি। আপনি কোথায় যাবেন বলুন ? আমি নামিয়ে দিয়ে আসছি।
তনয়াঃ এক বান্ধবীর বাসায়। কিন্তু এখনোতো সকাল হতে বাকি। এত সকালে কিভাবে ওর বাসায় যাবো? ওর পরিবার কিভাবে ব্যাপারটা নিবে বুঝতে পারছি না।
আয়াতঃ দেখুন আপনার আপত্তি না থাকলে আমার বাসায় যেতে পারেন। সকাল হবার পর না হয় বান্ধবীর বাসায় চলে গেলেন। ভয় নেই আমার পরিবার আমার সাথে থাকে। ভরশা রাখতে পারেন।
তনয়াঃ ভরশা ! হুমমম! (একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস) ঠিক আছে।
আয়াত তনয়াকে নিয়ে সোজা নিজের বাড়িতে চলে গেলো। বাড়িতে গিয়ে ডোরবেল বাজালো। দরজা খুললো অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। দড়জা খুলেই রাগি চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়াত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে বললো
আয়াতঃ স্যরি মাই লাভ। প্লিজ রাগ করো না বলে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বললো দেখো কে এসেছে? তনয়া সি ইজ মাই লাভলি বিউটিফুল ওয়াইফ তুলি! তুলি ওনি তনয়া! ভিতরে চলো তারপর সব বলছি।
তুলি হাসি মুখে তনয়াকে নিয়ে ঘরের ভিতরে গেলো।
চলবে———