অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি

© অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি– পর্বঃ-৭ (শেষ পর্ব)

লেখাঃ শার‌মিন আক্তার ( সাথী )
—আয়াতঃ জা‌নো নিশী বই বের হবার সময় তনয়া পেগ‌নেন্ট ছি‌লো। ইনফাক্ট আমরা দে‌শে আসার সময় তনয়া দু মা‌সের পেগনেন্ট ছিলো। যখন তনয়া প্রথম বই বের হয় তখন তনয়া সাত মা‌সের গর্ভবতী। বই বের করার সব কাজ আমিই কর‌ছিলাম। তনয়া শুধু লি‌খে‌ছি‌লো। ইনফ্যাক্ট অনেক সময় তনয়ার ডায়‌রি দে‌খে দে‌খে আমিও টাইপ ক‌রে দিতাম।
আমা‌দের প্রথম বাচ্চা নষ্ট হ‌য়ে যাবার ছয় মাস পর তনয়া আবার কন‌সিভ ক‌রে। কারন ডাক্তার বল‌ছি‌লো প্রথম বাচ্চা য‌দি কোন কার‌নে এবোশন করা লা‌গে বা মিসক্যা‌রেজ হয় তারপর দ্বিতীয় বাচ্চা তারাতা‌ড়ি নি‌তে হয়। নয়‌ত মা হবার সম্ভাবনা ক‌মে যায়। তনয়া এটা শু‌নে খ‌ুব ভয় পে‌য়ে‌ছি‌লো। বে‌বি কন‌সিভ করার দু মাস পরই আমরা দে‌শে চ‌লে আসি। দে‌শে চ‌লে আসাটা আমাদের চরম ভুল ছি‌লো।
তারপর তু‌মি আবার নতুন ক‌রে আমা‌দের জীব‌নে এলে। কিন্তু আমা‌দের দুজনার ভা‌লোবাসার গভীরতা এত ছি‌লো যে তু‌মি সেখা‌নে ডুক‌তে পা‌রো‌নি। তনয়ার #বই বের হ‌লো আমরা খুব খু‌শি ছিলাম। তার ম‌ধ্যে আমা‌দের মা‌ঝে আবার একজন নতুন অতী‌থি আস‌তে চ‌লে‌ছে তা‌তে আমা‌দের প‌রিবা‌রের সহ আমার আর তনয়া খু‌শি শত গুন বে‌ড়ে গি‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু আমাদের খু‌শির দি‌কে কুনজড় টা তু‌মিই দি‌য়ে‌ছি‌লে।
‌নিশীঃ আমি কেন কুনজড় দি‌বো?
আয়াতঃ চুপ একদম চ‌ুপ। সেই ইন্টার লাইফ থে‌কে তু‌মি আমায় ভা‌লোবাস‌তে। কিন্তু আমি সবসময় তোমার ভা‌লোবাসা ইগ‌নোর ক‌রে‌ছি। কারন আমি তোমায় বন্ধ ব্যাতীত অন্য কিছু কখ‌নো ভা‌বি‌নি। ক‌লেজ শেষ হ‌য়ে যায়। আমি সিডনী চ‌লে যাই আর তু‌মি ডাক্তারি পড়া শুরু ক‌রো। কিন্তু তু‌মি আমাকে ভুল‌তে পা‌রো‌নি যার কার‌নে তু‌মি আমার তনয়া‌কে খুন কর‌ছো।
‌নিশীঃ কি কি কি বল‌ছো কি তু‌মি আয়াত? আমি কিভা‌বে খুন করলাম? তোমা‌দের দুজনার তো এক‌সি‌ডেন্ট হ‌য়ে‌ছি‌লো। যার কার‌নে তু‌মি বাঁচ‌লেও তনয়া‌কে বাঁচা‌নো যায়‌নি।
আয়াতঃ সেটাপ। (ধমক দি‌য়ে) আরেকটা মিথ্যা কথা বল‌লে তোমা‌কে আমি খুন ক‌রে ফেল‌বো। বই বের হবার প্রায় আড়াই মাস পর আমা‌দের ছে‌লের জন্ম হয়। ফুটফু‌টে সুন্দর একটা ছে‌লে। আমা‌দের ঘর খু‌শি‌তে ঝলম‌লি‌য়ে উঠে‌ছি‌লো। দুজন মি‌লে ছে‌লে নাম রাখলাম (আয়ান হাসান তনয়)। আমা‌দের দুজ‌নের না‌মের সাথে মি‌লি‌য়ে। কিন্তু বাচ্চা হবার একমাস পর হঠাৎ তনয়ার শরীর খু্ব খারাপ হ‌য়ে যায়। তনয়া‌কে ডাক্তার দেখানোর জন্য নি‌য়ে যা‌চ্ছিলাম। কিন্তু বাই‌রে তখন বৃ‌ষ্টি থাকায় বে‌বি‌কে নিলাম না কারন ওর গা‌ড়ির বাতা‌সে বা জা‌র্নি‌তে সমস্যা হ‌বে তাই। আমি নি‌তে চাই‌লেও আমার মা নি‌ষেধ ক‌রে মা ব‌লেছি‌লো
(আয়াতের মাঃ এক দেড় ঘন্টার মাধ্যে চ‌লে আস‌বি শুধু শুধু বাবু‌কে কেন নি‌বি? তুই তনয়া‌কে সামলা‌বি না বাবু‌কে সামলা‌মি? তার থে‌কে আমার কা‌ছে থাক তোরা দ‌ুজন ডাক্তার দে‌খি‌য়ে জল‌দি চ‌লে আসিস।)
হয়‌তো ‌সে‌দিন উপর ওয়ালা চাইছি‌লো আমা‌দের বাবুটা বেঁ‌চে থাক তাই ওকে আমাদের সা‌থে নিলাম না। আমি আর তনয়া গা‌ড়ি‌তে ক‌রে যা‌চ্ছি। আমি গা‌ড়ি চালা‌চ্ছি তনয়া আমার কা‌ঁধে মাথা রে‌খে শু‌য়ে রই‌লো।
আয়াতঃ তনয়া তোমার কি বে‌শি কষ্ট হ‌চ্ছে!
তনয়াঃ নাহ তেমন না।
আয়াতঃ মিথ্যা ব‌লো না তোমার চেহারা ফ্যাকা‌শে দি‌য়ে গে‌ছে।
তনয়াঃ হ্যা আস‌লে পে‌টে খুব ব্যাথা করছে।
আয়াতঃ এ জন্যই ব‌লে‌ছিলাম আমা‌দের বে‌বির দরকার নাই।
তনয়াঃ আয়াত তু‌মি এমন কেন? সবসময় এমন কথা ব‌লো! (রে‌গে)
আয়াতঃ কারন আমি তোমার কষ্টটা সহ্য কর‌তে পা‌রি না। দে‌খো একটা বে‌বিই য‌থেষ্ট আর বে‌বির নাম তু‌মি মু‌খেও আন‌বে না। আমি তোমা‌কে বার বার কষ্ট পে‌তে দেখ‌তে পার‌বো না।
তনয়াঃ হুসসস চুপ। বা‌জে ছে‌লে। আমার এখ‌নো একটা মে‌য়ে চাই।
আয়াতঃ আচ্ছা এখন আমি বা‌জে ছে‌লে। ওনি কত ভা‌লো মে‌য়ে। নি‌জের একটুও খেয়াল রা‌খে না। সবসময় কেয়ার‌লেস থা‌কে। নি‌জের শরীর খারাপ ক‌রে। পঁচা মে‌য়ে।
তনয়াঃ তু‌মি পঁচা
আয়াতঃ তু‌মি তু‌মি তু‌মি তু‌মি পঁচা।
তনয়াঃ তু‌মি তু‌সি তু‌মি তু‌মি তু‌মি তু‌মি পঁচা
দুজ‌নেই দুজনার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হে‌সে দিলাম।
আয়াতঃ তনয়া আমরা নি‌জেরাই এখন বাবা মা হ‌য়ে‌ছি এখন আমা‌দের একটা বাচ্চা আছে। আর আমরাই য‌দি বাচ্চা‌দের মত ঝগরা ক‌রি! তাহ‌লে সংসার কিভা‌বে চল‌বে? আর বাবুই বা কি শিখ‌বে?
তনয়াঃ হুমমম ঠিক। হি হি। আই লাভ ইউ বাবুর আব্বু।
আয়াতঃ আই লাভ ইউ টু———।
তনয়া———-আয়াত——–
দুজনার আত্নচিৎকা‌রে যে‌নো নীরব রাস্তাটা কে‌পে ওঠ‌লো। একটা ট্রাকের সা‌থে আমা‌দের গা‌ড়িটার ধাক্কা লা‌গে। যখন আমা‌দের রক্তাক্ত অবস্থায় গা‌ড়ি থে‌কে বের করা হ‌লো তখনও আমার মোটামু‌টি হুস ছি‌লো। কিন্তু নড়ার মত কোন শ‌ক্তি পা‌চ্ছিলাম না। আমি তখনও তনয়ার হাত শক্ত ক‌রে ধ‌রে ছিলাম। ওর পালস তখ‌নো চল‌ছি‌লো। কিন্তু আমা‌দের হাসপাতা‌লে নি‌য়ে আসার পর তু‌মি তনয়ার পালস চেক ক‌রে বল‌লে তনয়া মারা গে‌ছে। অথচ তনয়ার অন্য হাতটা আমার হা‌তের ম‌ধ্যে ছি‌লো। ওর শরীর বেশ গরম ছিলো। ওর হৃদস্পন্দন তখনও চল‌ছিলো আমি অনুভব কর‌তে পা‌রছিলাম। কিন্তু তু‌মি আমার হাত থে‌কে তনয়ার হাতটা ছা‌ড়িয়ে তনয়া‌কে পা‌ঠি‌য়ে দি‌লে ম‌র্গে আর আমাকে নি‌য়ে গে‌লে অপা‌রেশন থি‌য়েটা‌রে। তনয়ার হাতটা আমার হাত থে‌কে ছাড়া‌নোর পর আর কিছু ম‌নে নেই আমার। কিন্তু তনয়া‌কে তখন চেষ্টা কর‌লে বাঁচা‌নো যে‌তো। তু‌মি কেন এমন কর‌লে নিশী কেন?
‌নিশীঃ আয়াত তোমার কোথাও ভুল হ‌চ্ছে। আমি কেন তনয়া‌কে মারবো? তু‌মি বোধয় ভুল অনুভব ক‌রে‌ছো।
আয়াতঃ তনয়াকে নি‌য়ে আমার অনুভু‌তি কখ‌নো মিথ্যা হ‌তে পা‌রে না। আমার সব ম‌নে প‌রে গে‌ছে সব। এমন‌ কি আমার কা‌ছে প্রমানও আছে।
‌নিশীঃ কি‌ কি কি‌সের প্রমান?
আয়াতঃ সে‌দিন তোমার কা‌ছে যে নার্স ছি‌লো সে সব স‌ত্যি কথা ব‌লে দি‌ছে। যে তনয়া তখন বেঁ‌চে ছি‌লো কিন্তু তু‌মিই কোন কিছু না দে‌খে তনয়া‌কে মৃ‌তো ব‌লে ম‌র্গে পা‌ঠি‌য়ে দি‌লে।
‌নিশীঃ মি মি মিথ্যা ব‌লে‌ছে নার্স।
আয়াতঃ স‌ত্যিটা লুকি‌য়ে আর লাভ নাই নিশী। আমি সব জেনে গে‌ছি। তু‌মি জা‌নো আমি তোমা‌কে এখা‌নে কেন বেঁধে রাখ‌ছি?
নিশীঃ কে কে কে‌নো?
আয়াতঃ (রহস্যময়ী আর ভয়ংকর একটা হা‌সি দি‌য়ে) তোমা‌কে খুন করার জন্য।
আয়া‌তের চোখ রক্ত বর্ন হ‌য়ে গে‌লো। রা‌গের চো‌টে শরীর কাঁপ‌তে লাগ‌লো । আয়াত এমন ভাব কর‌ছে যে‌নো এ আয়াত অন্য কোন আয়াত! নিশী আয়া‌তের চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে প্রচন্ড ভয় পে‌য়ে গে‌লো। কাপা কাপা গলায় বল‌লো
‌নিশীঃ কিকক কি বল‌ছো আয়াত? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
আয়াতঃ না মাথা ঠিক নাই। তু‌মি পাগল ক‌রে দি‌য়ে‌ছো। ঠিক যতটা কষ্ট পে‌য়ে আমার তনয়ার মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে তার থে‌কে তিন গুন বে‌শি কষ্ট দিয়ে আমি তোমায় মার‌বো। মর্গে যেমন অনেক লা‌শের ভিতর তু‌মি আমার তনয়া‌কে রাখ‌ছি‌লে ওর তখনও নিঃশ্বাস চালু ছি‌লো। ভয় পে‌য়ে নি‌জের সব থে‌কে কা‌ছের মানুষটাকে কা‌ছে না পে‌য়ে ধু‌কে ধু‌কে কষ্ট পে‌য়ে যেমন ম‌ৃত্যুর কো‌লে ঢলে পড়‌ছে ঠিক তেমনি ক‌রে কষ্ট দি‌য়ে দি‌য়ে তোমায়‌ মার‌বো আমি। এই মুহু‌র্তে তু‌মি কোথায় আছো জা‌নো নিশী?
‌নিশীঃ কো‌কোককক কোথায়!
আয়াত রু‌মের লাইন অন কর‌তেই নিশীর পু‌রো শরীর ভ‌য়ে শিউ‌রে উঠ‌লো। পু‌রো শরীর ঘা‌মে ভি‌জে গে‌লো। কারন ওরা দি‌লো ম‌র্গের লাশ ঘ‌রে। চার পা‌শে বেশ ক‌য়েকজন মৃত লাশ সাদা কাপড় দি‌য়ে ঢাকা। নিশী ভ‌য়ে চিৎকার করা শুরু করলো।
‌নিশীঃ আয়াত প্লিজ আমায় ছে‌ড়ে দাও। এ রুম থে‌কে বের হ‌য়ে চ‌লো। এত লা‌শের ভিতর আমার দম বন্ধ হ‌য়ে আস‌ছে।
আয়াতঃ হুমমমম এইটুকু‌তেই এত ভয় পে‌লে? তাহ‌লে ভা‌বো আমার তনয়ার সে‌দিন কি অবস্থা হ‌য়ে‌ছি‌লো। আর তাছাড়া তনয়া মৃত লোক‌কে ভিষন ভয় পে‌তো। তোমা‌কে এখন একটু একটু ক‌রে কষ্ট দি‌য়ে মার‌বো আমি। আয়াত একটা ধারা‌েলো ছু‌ড়ি নি‌য়ে নিশীর দি‌কে অগ্রসর হ‌তে থাকে।
ভ‌য়ে নিশীর হাত পা ঠান্ডা হ‌য়ে যাচ্ছি‌লো। গলাটা শু‌কি‌য়ে কাঠ হ‌য়ে যাচ্ছি‌লো।
‌নিশীঃ প্লিজ আয়াত আমা‌কে ছে‌ড়ে দাও। ব‌লে কাকু‌তি মিন‌তি কর‌তে থা‌কে।
আয়াতঃ ছে‌ড়ে তো প‌ড়ে দি‌বো তার আগে এই পেপারটায় সাইন ক‌রো আর ব‌লো তু‌মি কেন তনয়া‌কে মরার জন্য ছে‌ড়ে দি‌লে? ব‌লো? (ধমক দি‌য়ে)
‌নিশীঃ বল‌ছি বল‌ছি।
আয়াত নিশীর একটা হাত খু‌লে দি‌লো।
‌নিশী ভ‌য়ের চো‌টে কোন কিছু না দেখেই পেপারটায় সাইন ক‌রে দি‌লো। তারপর বল‌া শুরু কর‌লো।
‌নিশীঃ আস‌লে আমি তনয়া‌কে মো‌টেও পছন্দ করতাম না। কারন তনয়া তোমা‌কে আমার কাছ থে‌কে কে‌ড়ে নি‌য়ে‌ছি‌লো। সেট ইন্টার প্রথম বর্ষ থে‌কে তোমায় ভা‌লোবা‌সি কিন্তু তু‌মি এক‌দি‌নের জন্যও আমায় ভা‌লোবা‌সোনি। তারপর তনয়া‌কে বি‌য়ে কর‌লে মা‌ঝে মা‌ঝে তোমার বাবা মা বা আমা‌দের কমন ফ্রেন্ড‌দের কাছ থে‌কে শুনতাম তু‌মি তনয়া‌কে কতটা ভা‌লোবা‌সো। তখন রা‌গে দুঃ‌খে কান্না করতাম। ঘৃনা কর‌তে লাগলাম তনয়া‌কে। আচ্ছ‌া আয়াত তনয়া কি আমার থে‌কে বে‌শি সুন্দর যে তু‌মি তনয়ার জন্য এমন পাগল হ‌লে। ব‌লো না।
আয়াতঃ তনয়ার মনটা তোমার ম‌নের থে‌কে হাজার গুন বে‌শি সুন্দর। যে ম‌নে আছে অফুরন্ত ভা‌লোবাসা আর মায়া। যা তোমার ম‌নে নেই। তারপর ব‌লো।
নিশীঃ তোমরা দে‌শে আসার পর বি‌ভিন্ন ভা‌বে তোমাদের মা‌ঝে দূরত্ব সৃ‌ষ্টি কর‌তে চাইতাম। কিন্তু সেটা কখ‌নোই পা‌ড়ি নি। বার বার ব্যার্থ হ‌য়ে তোমা‌কে পাবার আশা ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছিলাম। কিন্তু সে‌দিন তোমারা এক‌সি‌ডেন্ট ক‌রে আমার হাসপাতা‌লে আস‌লে। হ্যা তনয়া তখ‌নো বেঁ‌চে ছি‌লো। হয়‌তো চি‌কিৎসা পে‌লে বেঁ‌চেও যে‌তো কিন্তু তখন ভাবলাম এই একটা সু‌যোগ পে‌য়ে‌ছি তোমা‌দের আলাদা করার তাই সেটা কাজে লাগালাম। তনয়া‌কে মৃত ব‌লে লাশ ঘ‌রে পা‌ঠিয়ে দিলাম। সেখা‌নে নেবার কিছুক্ষন পর হয়‌তো তনয়া স‌ত্যি স‌ত্যিই ম‌রে গে‌ছে। আর তোমাকে অপা‌রেশন থি‌য়েটা‌রে নি‌য়ে গেলাম। তোমার মাথায় প্রচন্ড আঘাত পে‌য়ে‌ছি‌লে। অপা‌রেশ‌নের পর তু‌মি তোমার জীবন থে‌কে অনেক স্মৃ‌তি হা‌রি‌য়ে ফেল‌লে। তনয়া, তোমার বাচ্চা সবাই‌কে ভু‌লে গে‌লে। সে সুযোগটা আমি কা‌জে লাগালাম। তোমার বাবা মাকে বললাম এখন তনয়া বা বাচ্চার কথা বল‌লে তোমার মাথায় প্রেশার পড়‌বে আর তু‌মি পাগল হ‌য়ে যা‌বে। তোমার ছে‌লে‌কে তনয়ার বাবা মা লালন পালন কর‌ছে। প্রায় দু‌দিন পর পর তোমার বাবা মা গি‌য়ে তনয়‌কে দে‌খে আসে। আমিও মা‌ঝে মা‌ঝে যাই।
এত সব অন্যায় আমি শুধু মাত্র তোমার জন্য ক‌রে‌ছি আয়াত। কারন তোমা‌কে আমি প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সি। দেখো তোমার কথায় আমি সব স‌ত্যি কথা ব‌লে দি‌ছি। এবার তো তু‌মি আমায় ভা‌লোবাস‌বে আয়াত! ব‌লো?
আয়াতঃ ছিঃ নিশী ছিঃ। তু‌মি না একজন ডাক্তার? আর ডাক্তা‌রের প্রথম কাজ হ‌লো মানুষ‌কে নতুন জীবন দেয়া সে হোক শত্রু বা মিত্র।
‌নিশীঃ আমি অতসব জা‌নি না। আমি শুধু তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি।
আয়াতঃ অন্ধ ভা‌লোবাসায় তু‌মি তোমার হিতা‌হিত জ্ঞান, বি‌বেগ বোধ হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছো। মানু‌ষিক ভা‌বে পাগল হ‌য়ে গে‌ছো।
‌নিশীঃ হ্যা আমি পাগল! তোমার জন্য পাগল। পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সি তোমায়।
আয়াতঃ আমার তো ইচ্ছা কর‌ছে নি‌জের হা‌তে তোমাকে খুন ক‌রে তোমা‌কে আর তোমার ভা‌লোবাসা‌কে চিরত‌রে শেষ ক‌রে দি। কিন্তু আমি তা কর‌বো না। কারন তাহ‌লে আমি তোমার খু‌নের দা‌য়ে জে‌লে যা‌বো তাহ‌লে আমার ছে‌লেটা‌কে কে দেখ‌বে? আর তোমা‌কে খুন কর‌তেও ঘৃনা হয়। তোমার মত ঘৃর্ন মানুষ‌কে খুন কর‌লে আমি আমার তনয়ার কা‌ছে কি জবাব দি‌বো? নিশীর হাত খুলে। অফিসার ব‌লে আয়াত কা‌কে জে‌নো ডাক দি‌লো।
লাশ ঘ‌রের ভিতর বেশ ক‌য়েকজন পু‌লিশ আর ম‌হিলা পু‌লিশ আস‌লো।
আয়াতঃ অফিসার নিশী যা যা বল‌ছে তা সব ক্যা‌মেরায় রেকর্ড হ‌য়ে‌ছে। আমার প্ল্যা‌নে আমার সা‌থে থাকার জন্য ধন্যবাদ। নিশীই যে তনয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী তা তো প্রমান ক‌রে দিলাম। আপনারা ওকে নি‌য়ে যান। ওর যে‌নো ক‌ঠিন শা‌স্তি হয় তার ব্যাবস্থা করুন।
‌নিশীঃ আয়াত আমি তোমা‌কে খুব ভা‌লোবা‌সি আর আমি যা কর‌ছি সব তোমা‌কে নি‌জের ক‌রে পাবার জন্য। আর তাছাড়া আমি তোমার স্ত্রী।
আয়াতঃ হুমমম ভা‌লোবাসা নামক শব্দটা তোমার মু‌খে মানায় না। আর স্ত্রী হা হা হা। ত্রিশ মি‌নিট আগে ছি‌লে এখন নেই। তু‌মি জা‌নো তখন যে পেপা‌রে সাইন কর‌ছো সেটা কি‌সের পেপার?
‌নিশীঃ কিসের?
আয়াতঃ ডি‌ভোর্স পেপার। আধা ঘন্ট‌া আগে আমাদের ডি‌ভোর্স হ‌য়ে গে‌ছে। আমরা এখন আর স্বামী স্ত্রী না। সো তোমার সা‌থে আমার সা‌থে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
জা‌নো নিশী #বই গল্পটা‌তো সে‌দিন পড়‌ছি কিন্তু সব স‌ত্যি আমার আরো দেড় মাস আগে ম‌নে পড়‌ছে। তখন পর্যন্ত আমি জানতাম না যে তু‌মিই তনয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী। কিন্তু এক‌দিন রা‌তে তু‌মি সেই নার্স‌কে টাকা দি‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লে (যে তনয়ার মৃত্যুর সময় তোমার সা‌থে ছি‌লো) তখন আমি লু‌কি‌য়ে তোমা‌দের সব কথা শু‌নেছিলাম। তখন পু‌রো স‌ত্যিটা না জান‌লেও প‌রে ধী‌রে ধী‌রে সব স‌ত্যি জা‌নি। আমার মাথায় সবসময় শুধু একটা কথাই ঘুর‌তো আমি অপা‌রেশন থি‌য়েটা‌রে যাবার আগমুহূর্ত পযর্ন্ত তনয়া আমার হাত শক্ত ক‌রে ধ‌রে রে‌খে‌ছি‌লো। ওর হৃদ‌য়ের আওয়াজ আমি শুন‌তে পা‌চ্ছিলাম। তাহ‌লে তনয়া কিভা‌বে মারা গে‌লো? আমার স্মৃ‌তি ফির‌লেও তোমা‌দের কাউ‌কে বুঝ‌তে দেই‌নি। এমন‌কি তোমার স‌ন্দেহ হ‌বে ভে‌বে আমি নি‌জের ছে‌লেকে দূর থে‌কে লু‌কি‌য়ে চো‌রের মত দে‌খে‌ছি। আজ আমি আমার ছে‌লেটা‌কে বু‌কে নি‌বো। ওকে নি‌য়ে যান অফিসার। পু‌লিশ নিশী‌কে যখন নি‌য়ে যা‌চ্ছি‌লো। তখন নিশী চিৎকার ক‌রে বল‌ছি‌লো
‌নিশীঃ তোমা‌কে আমি নি‌জের ক‌রে নি‌বোই আয়াত।
রাত প্রায় শেষ হ‌য়ে গে‌ছে। আয়াত গা‌ড়ি নি‌য়ে বের হ‌লো উদ্দেশ্য ছে‌লের কা‌ছে যা‌বে। আয়াত যখন গা‌ড়ি চালা‌চ্ছি‌লো তখন আয়া‌তের আবার ম‌নে হ‌লো কেউ একজন ওর কা‌ধে মাথা রে‌খে আছে। তনয়া‌দের বা‌ড়ি পৌছা‌তে পৌছাতে ফজ‌রের আযান দিয়ে দি‌য়ে‌ছে। আয়াত তনয়া‌দের বা‌ড়ি ভিতর ডু‌কে দেখ‌লো তনয়ার বাবা বাগা‌নে হাট‌ছে হয়‌তো নামাজ প‌ড়ে হাট‌ছে। আয়াত এর আগে ফো‌নে নি‌জের বাবা মাকে নিশীর বিষ‌য়ে সব স‌ত্যি কথা ব‌লে দি‌ছে। তনয়ার বাবা আয়াত‌কে দে‌খে হতবাগ হ‌য়ে গে‌লো। আয়াত তার কা‌ছে গি‌য়ে শুধু জি‌গেস কর‌লো
আয়াতঃ আমার ছে‌লে কোথায়?
তনয় তখন ঘুমা‌চ্ছি‌লো। তনয়ার বাবা আয়াত‌কে নি‌য়ে ভিত‌রের রু‌মে গে‌লো। নি‌জের ছে‌লে‌কে এত দিন পর এত কাছ থে‌কে দে‌খে নি‌জে‌কে আর আট‌কে রাখ‌তে পার‌লো আয়াত। ঘুমন্ত তনয়‌কে কো‌লে নি‌য়ে সারা শরী‌রে চু‌মো দি‌তে লাগ‌লো। তনয় জে‌গে উঠ‌লো। আয়া‌তের দি‌কে অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে থে‌কে ব‌লে উঠ‌লো বাবা। তনয় তখন আধো আধো বু‌লি ফুট‌তে শুরু কর‌ছে। আয়াত অবাক হ‌য়ে গে‌লো যে তনয় কিভাবে ওকে চিন‌লো?
তনয়ার মাঃ বাবারে গত এক বছর ধ‌রে তনয় তোর আর তনয়া ছ‌বি নি‌য়েই খে‌লে। কান্না কর‌লে তোদের ছ‌বি দেখা‌লে শান্ত হ‌য়ে যায়। একেই ব‌লে রক্তের টান।
আয়াত তনয়কে কো‌লে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে হুহু ক‌রে কেঁ‌দে উঠ‌লো। আজ যে আয়া‌তের খু‌শির সা‌থে সা‌থে কান্নারও দিন। আজ না কাঁদ‌লে ক‌বে কাঁদ‌বে। এত দিন চে‌য়েও কাঁদ‌তে পা‌রে‌নি। আয়াত তনয়ার বাবা মা আর তনয়‌কে নি‌য়ে বাড়ি গে‌লো। আজ তনয়ের প্রথম জন্ম‌দিন। এক‌দি‌নের ম‌ধ্যেই তনয় আয়া‌তের সা‌থে এমনভা‌বে মি‌শে গে‌ছে যে‌নো কত দি‌নের চেনা। সবাই এটা দে‌খে অবাক হলেও ব‌ুঝতে পার‌লো একেই ব‌লে র‌ক্তের সম্পর্ক , ম‌নের টান একেই ব‌লে।
রা‌তের বেলা আয়াত তনয়‌কে বারান্দায় হে‌টে হে‌টে ঘুম পারা‌চ্ছি‌লো। হঠাৎ একটা শীতল বাতাস এসে আয়াত‌কে ছুয়ে গে‌লো। আয়া‌তের আবার ম‌নে হ‌তে লাগলো কেউ ওর হাত ধ‌রে হাট‌ছে। আয়াত জা‌নে এ ছায়ামানবী কে? আয়াত বির‌বির ক‌রে বল‌ছে
আত্না বল‌তে কিছু হয় কিনা আমি জা‌নি না?
মানুষ ম‌রে গে‌লে তার অস্তিত্ব থাকে কিনা আমি তাও জা‌নি না?
শুধু এটা জা‌নি তু‌মি আছো তনয়া।
সবসময় আমার কা‌ছে আমার পা‌শে
হয়‌তো শীতল বাতাস হ‌য়ে,
হয়‌তোবা কোন আ‌লোক র‌শ্নি হ‌য়ে,
হয়‌তোবা তোমার বই‌য়ের গ‌ন্ধে
হয়‌তো বা চাঁ‌দের আড়া‌লে মে‌ঘের পা‌শে
হয়‌তো আমার স্মৃ‌তি‌তে
হয়‌তো আমার অনুভু‌তি‌তে
আ‌মি শুধু এটাই জা‌নি
ত‌ু‌মি আছো আমার সারাটা জু‌ড়ে
আর থাক‌বে সারা জীবনধরে।।
আয়া‌তের এক কা‌ঁধে তনয় ঘু‌মি‌য়ে পড়‌ছে অপর কা‌ঁধে ম‌নে হ‌চ্ছে কেউ তার মাথা দি‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে আছে। হয়‌তো সে মানু‌ষের নজ‌ড়ের বাই‌রে কিন্তু ভালোবাসার অনুভু‌তির বাই‌রে সে নয়। কারন সে‌তো নি‌জেই ভা‌লোবাসার অনুভু‌তি।
থাকনা কিছু ভা‌লোবাসা অদৃশ্য,
থাকনা কিছু ভা‌লোবাসা লোক নজ‌ড়ের আড়া‌লে
ক্ষ‌তি কি তা‌তে?
ভা‌লোবাসা সে তো শুধুই ভা‌লোবাসা।
‌হোক সে অদৃশ্য বা দৃশ্য
#সমাপ্ত#
গল্পটা কেমন লাগ‌লো জানা‌বেন। আর হ্যা ভুলত্রুটি ক্ষমার চো‌খে দেখ‌বেন।