বজ্জাত বস রোমান্টিক হাজবেন্ড !! Season -3 !! Part- 33
সকাল হয়ে যায় সকালে পুরো বাটি মাথায় সবাই আজ অনেক ব্যস্ত তিথি ঘুম থেকে উঠে চারপাশে তাকিয়ে দেখে সে বারান্দায় ঘুমিয়ে গেছে তার মানে আবর আসে নাই তার সাথে দেখা করতে,,,, কথাটা মনে পড়েই তার যেন কান্না আসছে,,
তিথি বাহিরে গিয়ে দেখে সবাই আজ অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,,,কেউ হলুদ ভাটছে,,আর কেউ গান বাজনা নিয়ে ব্যস্ত,,,,কেউ নানা রকম নাস্তা বানাতে ব্যস্ত,,,
তিথিঃ মামানি এতো নাস্তা কেন?
মামানিঃ আরে বাসায় কত মেহমান দেখছিস না,,শুন তাড়াতাড়ি নাস্তা করে শাড়ি পড়ে আয়,,তোর বিছানার উপর হলুদে শাড়ি রাখা আছে,,,,,তাড়াতাড়ি খেয়ে যা পড়ে আয়,,,
তিথি মাথা নিচু করে আছে,,,
মামানিঃ কিরে যা,,
তিথিঃ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না,,,,পরে খাবো,,,
মামানিঃ চুপচাপ খেয়ে নে,,,আয় আমি খাইয়ে দেই তোকে,,,
তিথি না চাইতে খেয়ে নেয়,,,মামানি নিজের হাতে যে খাইয়ে দেয়,,,,,
আবিরের মা ও আসে,,তিথিফ আবিরের মাকে দেখে কিছু টা খুশি হয় এই ভেবে যে আবিরের ব্যাপারে হয়তো কিছু জানবে,,,
মামানিঃ তিথি এইবার গিয়ে শাড়ি পড়ে নে,,,
তিথিঃ মামানি আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না,,,তুমি পড়িয়ে দাও
মামানি তিথির সাথে যেতে লাগে তখনই ডাক পড়ে,,,মহিলারা মিলে মামানিকে ডেকে নিয়ে যায়,,,আবিরের মা তিথির কাছে এসে বলে
আবিরের মাঃ তোমার যদি সমস্যা না থাকে তাহলে আমি কি তোমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারি,,,,
তিথিঃ অবশ্যই আন্টি,,আসুন আমার রুমে
আবিরের মা তিথিকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে আর বলছে
আবিরের মাঃ জানো তিথিফ আমার ছেলেটা কখনো কান্না করতে দেখি নাই যা সে এই তিন বছরে প্রতি রাতে করেছে,,,,কখনো কাউকে এতো ভালোবাসে নাই যতটা তোমাকে বেসেছে,,,,আমি জানি না কেন তুমি ওকে ছেড়ে অই দিন চলে আসলে,,,কিন্তু ওই দিন তুমি শুধু আসো নাই সাথে নিয়ে এসেছো আমার ছেলেটার হাসি,,খুশি সব,,,,,শুধু তাকে দিয়ে এসেছো চোখের পানি,,,
তিথি চুপ করে আছে,,,নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে আবিরের মায়ের কথা শুনে,,,
আবিরের মাঃ আমার ছেলে তোমার জন্য কত রাত জেগেছে তা শুধু আমি জানি,,,,কোথায় না খুজেছে,,,,যে ছেলের দিন রাত ছিলো বন্ধু আড্ডা ফাজলামি পার্টি এই সেই,,,,সেই ছেলে আমার কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলো,,,কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতো না,,,,সারাদিন তোমাকে খুজতো আর রাতে তোমার ছবি নিয়ে বারান্দায় বসে বসে চোখের পানি ফেলতো,,,,,
তিথিঃ আন্টি আ,,,মি আ,,,,সলে ওই দিন,,,,,,,,,,।।
আবিরের মাঃ অই দিন কি?
তিথিঃ আন্টি অই দিন আমি ইচ্ছে করে এই সব করি নাই,,,,অই দিন,,,,,,,,,
তিথি আবিরের মাকে ওই দিনের ব্যাপারে বলতেই যাবে তখন মামানি এসে যায়,,,
মামানিঃ তিথি হয়েছে তোর,,,
মামানি এসে দেখে তিথির শাড়ি পড়া শেষ,,মামানি এসে তিথিকে নিয়ে যায়,,,,
আবিরের মাঃ উফফ একটু পরে আসলে কি হতো?? কি হয়েছে অই দিন যার জন্য তিথি আবিরকে ছেড়ে গেছে,,,কোনো কারণ তো আছেই যা তিথিকে এমন কাজ করতে বাধ্য করেছে,,,,,কিন্তু কি?
তিথিকে এনে সব মহিলারা এক এক করে হলুদ লাগায়,,,মামানি আবিরের মাকে ও লাগাতে বলে,,,আবিরের মা হলুদ লাগাতে লাগাতে বলে
আবিরের মাঃ এমন কিছু করিও না তিথি যা পরে আফসোস করতে হয়,,,এখনও সময় আছে প্লিজ নিজের মনের কথা শুনো,,ভুল কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ো না,,,
আবিরের মা উঠে যায়,,,তিথি ভাবতে থাকে কি করবে সে,,,,গোসল করে নিজের রুমে যায়,,,,আজ কেন জানি মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে,,,মায়ের ছবিটা নিয়ে বলে
তিথিঃ মা তুমি তো জানো কেন আমি এমন করেছি,,,,কি হয়েছে তিন বছর আগে,,,সব কিছু শেষ হয়েছে অই দিন,,৷ কিন্তু মা কেন জানি মন বলছে আবির এমন নয়,,৷ কেন মা এমন মনে হচ্ছে,, আজ আন্টির কথা গুলো কেন আজ আমাকে অপরাধী মনে হয়ছে শুনে,,,তুমি তো জানো অই দিন,,,,,,,
তিথি কান্না করতে থাকে,,,কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,রাত হয়ে আসে চারপাশে আজ অনেক টা খুশির আলো,,, মামানি অনেক ব্যস্ত তার আদরের মেয়েটার যে বিয়ে,,,,মামানি তিথির কাছে এসে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,,,তিথি মামানিকে জড়িত ধরে বলে
তিথিঃ তোমার কোলে ঘুমাতে খুব ইচ্ছে করছে মামানি,,,,,
মামানি তিথির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে
মামানিঃ পাগলী আমার,,,,আমার ঘরটা যে খালি হয়ে যাবে তোকে ছাড়া,,,,তুই যে আমাদের নয়নের মনি,,,কি ভাবে থাকবো তোকে ছাড়া,,,
মামানি কেঁদে দেয়,,,,মামানি তিথিকে জড়িয়ে ধরে,,,তিথির চোখে যেন ঘুম নেই,,খুব ইচ্ছে করছে আবিরকে এক নজর দেখতে আবিরের যে কোনো খবর ও নাই,,,তিথির খুব খারাপ লাগছে,,,
সকাল হয়ে যায়,,,আজ তিথির বিয়ে চারপাশে অনেক আয়োজন পার্লারের মেয়েরা ও এসে গেছে,,,তিথিকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,,তিথি চোখ শুধু আজ খুজছে আবিরকে,,,,মেয়েরা সাজানো শেষ করে গহনা পড়াতে যাবে তখন একটা আওয়াজ আসে,,
আবিরঃ আপনারা যেতে পারেন,,,
পার্লারের মেয়েঃ স্যার এখনও গহনা পড়ানো হয় নাই,,,,
তিথি পিছনে তাকিয়ে দেখে আবির,,,,আবিরকে দেখে তার বুকটা যেন জুড়ে যায়,,চোখে পানি এসে যায়,,,,,আবিরের সামনে এসে ধমক এর সুরে বলে
তিথিঃ কই ছিলেন এই দুইদিন,,,এতো কেয়ারলেস কি ভাবে হয় কেউ৷,
আবিরঃ আপনারা যান আমি পড়িয়ে দিবো,,,
তিথিঃ আপনাদের যেতে বলছে যাবেন এ না দাঁড়িয়ে আছেন কেন,,,(প্রচুর রেগে)
পার্লারের মেয়েরা চলে যায়,,,আবির তিথিকে নিয়ে আয়নার সামনে বসায়,,,,
তিথিঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি.কই ছিলেন এই দুইদিন
আবিরঃ এতে তোমার তো হেপ্পি হওয়ার কথা ছিলো,,,, আমি না থাকলে তো তুমি অনেক খুশি,,,
তিথিঃ আমি বলেছি একবার ও আপনাকে এই কথা(ধমক দিয়ে,, চোখের কোণায় পানি এসে জমে যায়,,,
আবিরঃ যদি এক ফোঁটা চোখের পানি পড়ে না তাহলে কষে চড় দিবো,,,
আবির তিথিকে নিজের হাতে রেডি করিয়ে দেয়,,,হাতের চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে
আবিরঃ বউ তুমি সেজেছো সত্যি আজ অনেক সুন্দর লাগছে,,,,
তিথিঃ আপনার এতে সমস্যা হচ্ছে না??
আবিরঃ আমার কেন সমস্যা হবে???আজ তুমি বউ ঠিক সেজেছো কিন্তু কার তা সময় এলে বুজবে,,,
তিথিঃ মানে?
আবিরঃ তুমি রেডি পুরো চলো সবাই অপেক্ষা করছে,,,
তিথিকে আবির কিছু বলতে দেয় না,,,,তিথি যাই বলে আবির কথা ঘুরিয়ে দেয়,,,
তিথিকে আবির ওড়না পড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে
আবিরঃ আমার মিষ্টি বউটা কে অনেক সুন্দর লাগছে(আস্তে করে)
তিথিঃ কিছু বললেন??
আবিরঃ কই না তো চলো,,,,,
তিথির হাত ধরে আবির সবার সামনে নিয়ে আসে,,তিথি অনেক অবাক আবিরের এমন রুপ দেখে,,,আবির তো চাইতো না এই বিয়ে হোক তাহলে তাকে সাজিয়ে কি ভাবে বিয়ের জন্য নিয়ে আসে সবার সামনে,,,,,সবাই তিথিকে দেখে পুরো অবাক,,,,পুরো লাল পরী,,,,লাল বেনারসি শাড়ি,,, গহনা,,,,আর সুন্দর করে সাজিয়েছে পুরো পুতুল লাগছে,,,,
মামানি আর আবিরের মা তিথিকে নিয়ে আসে,,,সবাই অপেক্ষা করছে নিরবের,,,
আবির তার মায়ের কাছে এসে বলে
আবিরঃ রেডি থাকো মা তোমার ছেলের বউকে ঘরে তুলতে,,,
আবিরের মাঃ কি করেছিস তুই?
আবিরঃ যা করার তাই করেছি মা,,,
কাজি সাহেবঃ বর কই?
মামানি নিরবের বাসায় কল দেয় কেউ ধরে না,,অনেক বার কল দেওয়ার পর ও না,,তার কিছু ক্ষন পর একটা ছেলে এসে বলে
ছেলেটিঃ আন্টি নিরব ভাইয়া বাসা থেকে পালিয়ে গেছে আজ দুদিন,,,,এই বিয়ে নাকি সে করতে পারবে না একটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয়,,,
মামানি বসে পড়ে,,,আশেপাশের লোকজন কথা বলাবলি শুরু করে দেয়,,,তিথি মনে মনে কেন জানি খুশি,,,আবির পকেটে হাত দিয়ে তার নাকে বলে
আবিরঃ বললাম না মা যা করার করে ফেলছি,,,
আবিরের মা মুচকি হেসে আবিরকে বলে
আবিরের মাঃ আমি জানতাম তুই এমন কিছু করবি,,,,
মামানি প্রচুর কান্না করে,,,আশেপাশের লোকজন নানা রকম কথা বলতে শুরু করে দেয়,,,তিথি মামানির কাছে গিয়ে বলে
তিথিঃ মামানি প্লিজ কান্না বন্ধ করো,,,
মামানিঃ এখন আমার মেয়েটার কি হবে,,, কে বিয়ে করবে ওকে,,,অমানুষ টা পালিয়ে গেছে আগে বললে তো হতো,, নিজে এসেছে আমার মেয়েটার হাত চাইতে আর সে আমার মেয়েটাকে বউ সাজিয়ে পালিয়ে গেছে,,,
প্রতিবেশীরাঃ কি কপাল এই মেয়ের,,,বিয়ের দিন কিনা বর পালিয়ে ছে,,,ছেলেটা তো প্রায় এখানে আসতো দেখতাম আর এখন পালিয়ে গেছে,,,
আবিরঃ আপনাদের শুধু একটা কারচাই তাই না কথা বলার(ধমক এর সুর)
আবির মামানির কাছে গিয়ে বসে,,মামানির হাতটা ধরে বলে
আবিরঃ মামানি তোমার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই,,,আমার জীবন সাথী করতে চাই,,,,আমাকে কি তোমার মেয়ের হাতটি দিবে প্লিজ কথা দিচ্ছি তোমার মেয়েকে আজীবন সুখে রাখবো কখনো তার চোখে পানি আসতে দিবো না,,,,কষ্ট কে তার কাছে যাওয়ার আগে আমার উপর দিয়ে যেতে হবে,,
তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে,,,মামানি আবিরের কপালে চুমু দিয়ে বলে
মামানিঃ আমার মেয়ের ভাগ্য অনেক ভালো যে তোমার মত জীবন সাথী পাবে,,,,আমার মেয়েটা যে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে,,,,
আবিরঃ কথা দিচ্ছি আর পেতে দিবো না,,,,
আবিরের মা পিছন থেকে বলে উঠে
আবিরের মাঃ আমার ছেলের বউ আমি চাই না তিথিকে,,,
সবাই আবিরের মায়ের দিকে তাকায়,,,মামানি কিছু টা ঘাবড়ে যায়,,
আবিরের মাঃ আমার মেয়ে হিসেবে নিয়ে যেতে চাই তিথিকে আমার ঘরে,, দিবেন ভাবি আমার মেয়েটাকে,,,
মামানি এসে আবিরের মাকে জড়িয়ে ধরে,,
মামানিঃ আমার মেয়েটার ভাগ্য আসলে অনেক ভালো যে আপনাদের মত পরিবার পাচ্ছে,,
আবিরের মাঃ এখন কান্না না করে বিয়ে টা শুরু হোক কি বলেন,,,
তিথি কিছু বলে না,,,আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আবিরের মুখে যে হাসি তার মনে হচ্ছে
তিথিঃ(আমি সউর আবির কিছু করেছে,, আবির হার মানার ছেলে তো নয় তা আমি জানি,,সিউর কিছু করেছে,,)
আবিরঃ(তুমি যা ভাবার ভাবো,,,,প্রমেস করেছিলাম তুমি বপু হবে কিন্তু আমার দেখো আজ তুমি আমার বউ হতে যাচ্ছো)
কাজী সাহেব বিয়ে শুরু করে দেয়,,কাজী সাহেব আবিরকে কবুল বলতে বলে
আবিরঃ কবুল কবুল কবুল
কাজী সাহেব আর সবাই ঃ আলহামদুলিল্লাহ
তিথিকে বলতে বলে তিথি চুপ করে আছে,,মামানি তিথির কাছে গিয়ে বলে
মামানিঃ কি হলো বল
তিথি মামানির দিকে তাকিয়ে বলে
তিথিঃ কবুল কবুল কবুল
সবাইঃ আলহামদুলিল্লাহ
বিয়ের কাবিন নামায় আবির সাইন করে তারপর তিথি,,,ইসলাম অনুযায়ী আইন অনুযায়ী আবির আর তিথি স্বামী স্ত্রী,,,আবির তিথির দিকে মুচকি হেসে ইশারা করে ফ্লাই কিস দেয়,,,তিথি ভেংচি দিয়ে অন্য পাশে তাকায়,,
চলবে,,,,,,