প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 15

রেহান ভয়ে দুইহাত পিছনে সরে আসলো!
দিয়ার ভাবভঙ্গি ভালো লাগছে না। ওর আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন কারো চোখ এড়ায়নি।
আমাকে দেখা মাত্র ছুটে এসে দু’হাতে আমার গলা টিপে ধরলো! পিছনে সরতে সরতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার। কিন্তু কেউ ওকে ফিরিয়ে রাখতে পারছে না।
সবাই অনেক কষ্টে আমাকে ছাড়িয়ে নেয়।কিন্তু দিয়া যেন মরিয়া হয়ে গেছে, বারবার আমাকে নাহয় আনিষাকে মারার চেষ্টা করছে।
আমরা এই রুমে আর থাকতে না পেরে বেরিয়ে আসলাম। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো।
কাঞ্চন দিয়ার শরীরটাকে বেছে নিয়েছে। ওর মধ্যে প্রবেশ করে আমাদের মারতে চাইছে। আমার বোনটার এই অবস্থা দেখে আর সহ্য করতে পারছিনা।
আমি কাঁদতে কাঁদতে রেহানকে বললাম – রেহান,কিছু একটা কর!
রাত তিনটা।
পলাশ মামা কাকে যেন ফোন করলেন।
প্রায় ১৫-২০ মিনিট পরে তিনজন লোক আসলো।
তাদের মধ্যে একজন মাহমুদ, যে লোকটা আমাদের জমিদার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। আর একজন আনিষাকে যখন পানি থেকে তোলা হয়েছে,তখন পুকুর পাড়ে দেখেছি।
অন্যজন মৌলভী সাহেব।
বাগানের পাশের মসজিদের হুজুরকে নিয়ে এসেছে উনারা।
হুজুর সাথে মাহমুদ, রেহান,তাহসিন আর পলাশ মামা দিয়ার রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
আমরা বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি।
কিছুক্ষন পরে দিয়ার চিৎকার, চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। কিন্তু কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না।
টেনশনে একেকজনের অবস্থা কাহিল।জানি না কি হবে, তবুও মনে ক্ষীণ আশা- হুজুর যখন এসেছেন, তখন নিশ্চয়ই একটা সমাধান হবে!
প্রায় ৪০ মিনিট পরে উনারা বেরিয়ে আসলেন।দিয়ার গলা আর শোনা যাচ্ছে না।
দরজা খোলার সাথে সাথে আমি দৌড়ে রুমে গেলাম।
দিয়া বিছানায় যেন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
তাহসিন আর রিফাত আমাকে জোর করে বের করে আনলো।আমি ওর কাছে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে থাকতে দেয়নি;
রুমের বাইরে নিয়ে এসে আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।
তাহসিনকে জিজ্ঞেস করলাম কি বলেছেন হুজুর।
তখন হুজুর নিজেই বললেন – আপাতত শরীর ছেড়ে গেছে, কিন্তু আবারও আসবে। আমার পক্ষে ওকে একেবারে তাড়ানো সম্ভব না। অনেক শক্তিশালী।
এখানে যারা আসবে, কাউকে ভালো থাকতে দিবে না।
ছোট কর্তার উপর ক্ষোভ আর প্রতিশোধের জন্য এসব করছে!
– এখন আমরা কি করবো?(খুশবু)
– কিছু কবজ দিয়ে যাচ্ছি, আপনাদের শরীর বন্ধ করা যাবে এই কবজে,কিন্তু এই মেয়েটাকে(দিয়াকে) কিছু দিলে ওর অনেক বড় ক্ষতি হবে।
আপনারা অন্যকাউকে নিয়ে আসেন। আমি আর কিছু করতে পারবোনা।
হুজুর চলে গেলেন। ফজরের আজান হয়ে গেছে।
আমরা হতাশ হয়ে পড়লাম।
কিন্তু হতাশ হয়ে পড়লে তো চলবে না।কাল হরতাল উঠে যাবে আর রেল লাইনের কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। আমরা আগামীকাল চলে যেতে পারবো।।
কিন্তু একটা রাত!
এই রাতেই কাঞ্চন কিছু একটা ঘটাবে,এটা নিশ্চিত!
সকাল থেকেই পলাশ মামা কাউকে প্রতিনিয়ত ফোন করে যাচ্ছেন। তাহসিন, রেহান অনেক ব্যস্ত হয়ে কি যেন কথাবার্তা বলছে মামার সাথে!
আমি গেলাম ওদের কাছে।
– কিছু ব্যবস্থা হয়েছে?
– একজন বড় হুজুরের সঙ্গে কথা বললাম, কিন্তু উনি যা বললেন এটা তো আরও কঠিন হয়ে গেছে! (পলাশ মামা)
– কি বলেছেন উনি?
– উনি অনেক দূর থেকে বাইকে আসবেন,আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। উনি আমাদের সাহায্য করবেন।
তবে সব শুনে উনি বলেছেন একমাত্র “ছোট বাবু” যদি একবার কাঞ্চনের কাছ এসে ক্ষমা চান,তবে হয়তো একটা উপায় বের করে একেবারে কাঞ্চনের ঝামেলা শেষ করে দিতে পারবেন।। ( তাহসিন)
– আমার মনে হয় একেবারে শেষ করে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। কারণ আমরা বেঁচে গেলেও আবার কেউ আসলে তাদের প্রান সংশয় রয়েছে! ( রেহান)
– কিন্তু কোথায় আছেন “ছোট বাবু “! উনাকে কোথায় পাবো এখন!!
পলাশ মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন- উনাকে আর পাবো না!
– উনি কি দেশে বাইরে?
– নাহ! উনি নেই।
উনার খোঁজ নিয়েছি কয়েক ঘন্টা ধরে। উনার বাবা ৭ বছর আগেই এই বাগান বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
তবুও অনেক কষ্টে উনার বাসায় যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু কোনো লাভ হলো না!( পলাশ মামা)
– কেন?? উনি কোথায়?
-উনি মারা গেছেন।( রেহান)
– মারা গেছেন!
– হা, ৯ বছর আগেই উনি আত্মহত্যা করেছেন!( তাহসিন)
– আত্নহত্যা! কিন্তু কেন?!!
আমি বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম।
– উনার বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনার মা অসুস্থ, বোন উনার মাকে দেখতে এসেছেন। উনার বোনকে বলেছিলাম এখানকার কথা। তখন উনি বললেন যে, দেবাশীষ বাবু( ছোট বাবু) সুইসাইড করেছিলেন! তবে উনি এটাও বলেছেন – দেবাশীষ বাবু কাঞ্চনের জন্যই মারা গেছেন।( মামা)
আমি হতাশ হয়ে বসে পড়লাম।
– এখন কি হবে!! কাঞ্চনের জন্য মারা গেছেন,কিন্তু কেন? বিষয়টা আরও ঘোলাটে হয়ে গেছে!
– একটা উপায় আছে!( অনি)
রিফাত আর অনি এসেছে।
– কি উপায়?
সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি অনি কি উপায় বলে সেটা শোনার জন্য।।
– কাঞ্চন তো ছোট বাবুর উপর ক্ষিপ্ত। আর ছোট বাবু সুইসাইড করেছিলেন, এই খবর কাঞ্চনকে জানাতে পারলে ও হয়তো ওর তান্ডব বন্ধ করতে পারে!
ছোট বাবুর সাথে যোগাযোগ করার একটা উপায় আছে, সেটা একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।( অনি)
– ছোট বাবুর সাথে! কিন্তু উনি তো মৃত!
পলাশ মামা অবাক হয়ে বললেন।
– জানি। কিন্তু উপায় তো আছে। ( অনি)
– কি উপায়!
আমি বিস্মিত চোখে জিজ্ঞেস করলাম।
রেহান বললো – আমি বুঝতে পেরেছি।
প্ল্যানচেট!
– ইয়েস! প্ল্যানচেট করে আমরা ছোট বাবু আত্মাকে আহবান করতে পারি।উনি কেন কাঞ্চনের জন্য সুইসাইড করেছেন সেটা জানতে চাইবো।(অনি)
– কিন্তু প্ল্যানচেট কিভাবে করবো? আমরা তো এসব জানি না কিছুই!
– সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমার মাথায় আসেইনি আগে!
আমার এক বন্ধু আছে, সে মাঝেমধ্যে প্ল্যানচেট করে শুনেছিলাম। কিন্তু আমি নিজে কখনো করিনি।
ওর সাথে যোগাযোগ করলে ও সব শিখিয়ে দেবে।( পলাশ মামা)
-That’s great! আপনি এক্ষুনি ফোন করুন মামা।( রেহান)
মামা ফোন করে বিস্তারিত বললেন।
মামার বন্ধু তখন উনাকে ভিডিও কল দিলেন। দিয়ে কি কি দেখালেন।
অনি,মামা,তাহসিন আর রেহান- ওরা মামার রুমে বসে সব কিছু গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলো।
ওই ভদ্রলোক যেভাবে বললেন সেইভাবেই প্ল্যানচেটের বোর্ড তৈরি করলো।
আর যা কিছু লাগবে সব সন্ধ্যার আগেই যোগাড় হয়ে গেছে।
এদিকে সারাদিন দিয়া মোটামুটি স্বাভাবিক ছিলো। তেমন অদ্ভুত কোনো কিছু ঘটেনি,তবে ও খুব গম্ভীর হয়ে আছে।
মাগরিবের আজানের ঠিক পরেই আবার দিয়া তার অন্য রূপে ফিরে আসে!
যথারীতি দরজা আটকে দেয়া হয়েছে। এশার নামাজের পরে হুজুর আসলেন।
হুজুরকে ছোট বাবুর আত্মহত্যার কথা বলা হলো।
উনি গম্ভীরমুখে বললেন – হুমম।
তারপর দিয়াকে ধরে উনার সামনে আনা হলো।
উনি দিয়ার কনিষ্ঠা আঙ্গুলটির মাথায় চেপে ধরে কি পড়ে তিনবার ফুঁ দিবার সঙ্গে সঙ্গে দিয়া গড়গড় আওয়াজ শুরু করলো।
তারপর শুরু হলো হুজুরের সাথে তর্ক!
– ছেড়ে দে আমাকে। আমাকে কিচ্ছু করতে পারবিনা!
দিয়ার মুখ থেকে কথা বের হলেও মূলত তারমধ্যে থাকা কাঞ্চন কথা বলছে!
– এই মেয়েটাকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস? কেন এসেছিস এখানে? (হুজুর)
– ওরাই তো আসতে বাধ্য করলো! এই মেয়েটাকে ( আমার দিকে আঙুল দিয়ে দেখায়) মারতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওরা বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে! এখন তো আমি কাউকে ছাড়বো নাহ…হুহ..হুহ…
দিয়া ভয়ংকর জন্তুর মতো নিঃশ্বাস নিচ্ছে!
– তুই কাউকে কিচ্ছু করতে পারবিনা।
তার আগেই আমি তোকে শেষ করে দিবো!( হুজুর)
– তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবিনা না…. হা…হা..হা…. হুহ… হু….
আমি আবার আসবো।আবার….
বলেই দিয়া ওর ঘাড় অদ্ভুত ভাবে নাড়াচাড়া করছে!
– তোর রাগ ছোট বাবুর উপর, তাহলে অন্যদের ক্ষতি করছিস কেন? ( হুজুর)
– বলেছি নাহ…. শহরের কেউ এই বাগানে এসে সুখে থাকতে দিবোনা।সব বেঈমান!
সব!
– তোর ছোট বাবু এখন কোথায় জানিস??( হুজুর)
– কোথায় আবার, আবার বিয়ে করে সুখে সংসার করছে!
আমার সন্তানটাকেও পৃথিবীর আলো দেখতে দিলোনা!
কাঞ্চন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
পরক্ষণেই দপ করে জ্বলে উঠে ওর চোখ!
– একবার ওর সন্ধান পেলে ওর বংশ নির্বংশ করে দিবো! শেষ করে দেবো!!
– তোর ছোট বাবু তোর মতোই আত্মহত্যা করেছে। সেটাও জানিস না! আর মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছিস!( হুজুর)
– মিথ্যে বলছিস তুই! বিশ্বাস করি না আমি। সব মিথ্যেবাদীর দল!
– ওরা,যদি প্রমাণ করে দেয় ছোট বাবু তোর জন্যই মরেছে তাহলে কি করবি?( হুজুর)
কাঞ্চন কেমন চুপ করে গেছে!
হুজুর আবার ধমক দিলেন – বল এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবি!
– তোরা যদি সত্যি বলিস তবে আমি চলে যাবো।
রেহান বললো – হুজুর, আমি একটু কথা বলতে পারবো উনার সাথে?
– বলুন।।
রেহান তখন দিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
– আপনার কথা আমরা সব শুনেছি। খুব খারাপ হয়েছে আপনার সাথে। কিন্তু আপনার ছোট বাবু ও প্রায় নয় বছর আগেই সুইসাইড করেছে।উনি আপনার জন্যই সুইসাইড করেছেন।
আপনি যদি কথা দেন আর কোনোদিন এখানে কারো ক্ষতি করবেন না আর থাকবেন না এখানে, তবেই আপনার সামনেই প্রমাণ করে দেবো ।
– যদি প্রমাণ করতে পারিস তবে কথা দিলাম একেবারে চলে যাবো আর যদি মিথ্যে বলিস, তাহলে কেউ বাঁচবিনা!
হুজুর বললেন – প্রমাণ করার পর ও যদি তুই না যাস??
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *