প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 14

রাতে আর তেমন কিছু ঘটেনি। বাকি রাতটা স্বাভাবিক কেটে গেলো।
সকালের সূর্যটা অন্যদিনের মতো উঠলেও আমাদের জন্য অন্যসব স্বাভাবিক দিনের মতো হয়নি। কারণ সকাল বেলায় একটা দুঃসংবাদ পেলাম।
হরতাল চলছে, তাই ট্রেনে যাবো ঠিক হয়েছিলো।কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনলাম ট্রেন দুর্ঘটনা! ট্রেনসহ সেতু ভেঙে পড়ায় সিলেটের সাথে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ! বেশ হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
এটা আমাদের জন্য অনেক খারাপ একটা সংবাদ। তারমানে আরও দুএকদিন এখানেই থাকতে হবে!! সবার মন খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। তাই বাধ্য হয়েই থাকতে হবে।
এদিকে বাসায় এসবের কিছুই জানানো হয়নি। কারণ যদি জানতে পারে তাহলে সবাই চিন্তায় পড়ে যাবে আরোও সমস্যা বেড়ে যাবে।
সকালের নাস্তার পরে তাহসিন বললো – এখন তো কিছু করার নেই, তাই সবাই খুব সাবধানে থাকতে হবে।
রেহান বললো – হা, কেউ একা কোথাও যাবিনা।আর কোথাও যাওয়ার ও দরকার নেই।।
আমরা সবাই একসাথে বসে আছি।
তাহসিন আর রেহান পলাশ মামার সাথে কথা বলছে।
– আমার কিন্তু এসব ভালো লাগছে না। এখনই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটার ছিলো?!
খুশবু হতাশ হয়ে বললো।
আমি কিছু বলছি না,চুপচাপ শুনছি। সত্যি বলতে আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি। আরও দুটো রাত এখানে থাকতে হবে। জানি না কি কি ঘটবে এই দুইদিন!
লাঞ্চের পরে তাহসিন বললো
– আমি আর রেহান মামার সাথে বের হচ্ছি। তোরা কোথায় যাবি না, বাংলোয় থাকবি।
রেহান, তাহসিন আর পলাশ মামা বেরিয়ে গেলেন।
আমি আর খুশবু আমাদের রুমে এসে শুয়ে আছি। কোথাও যাবো না, তারচেয়ে ভালো একটু ঘুমিয়ে নিই।গতকাল যা হয়েছে তাতে আমার শরীরও খুব একটা ভালো নেই।জ্বর নেই এখন,কিন্তু শরীর অনেক দুর্বল লাগছে সাথে প্রচুর ব্যথা।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠলাম চেঁচামেচি শুনে।
তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে গিয়ে দেখি অনি, খুশবু,রিফাত আর দিয়া জোরে জোরে কথা বলছে। অনেক অস্থির দেখাচ্ছে ওদের।আর খুশবু কাঁদছে।
– কি হয়েছে? এতো শোরগোল কিসের?
খুশবু! কাঁদছিস কেন??
– আনিষাকে পাওয়া যাচ্ছে না! অনি চিন্তিত মুখে বললো।
– কিহ!! পাওয়া যাচ্ছে না! মানে কি?
– আমি দেখেছি খুশবু আপুর সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছে, বললো দূরে কোথাও না, বাংলোর সামনের রাস্তায়। খুশবু আপুর নাকি দম আটকে গেছে, আর একা যেতেও ভয় পাচ্ছে। তাই আনিষা আপুকে নিয়ে যাচ্ছে।
দিয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
– আমিও দেখেছি।
অনিও সায় দেয়।।
– খুশবু এখানে একা আসলো কিন্তু আনিষা কোথায়??
উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
– আমি ফিরে আসবো কোথা থেকে? আমি তো বাংলো থেকে এক পা ও বাইরে রাখিনি!
খুশবু কাঁদতে কাঁদতে বললো।
– মানে কি?? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!.
রিফাত এগিয়ে এসে বললো – আপু, আমি বুঝিয়ে বলছি।
দিয়া আর অনি ভাইয়া, আনিষা আপুকে দেখেছে খুশবু আপুর সাথে বেরিয়ে যেতে। কিন্তু এখন দেখি খুশবু আপু রুম থেকে বেরিয়ে আসছে।।
দিয়া জিজ্ঞেস করলো আনিষা আপু কোথায়, কিন্তু খুশবু আপু কিছুই নাকি জানে না।
ঘুম থেকে উঠে এসেছে মাত্র!.
আমি কিছু বলার আগেই খুশবু হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো – আমি তো হিয়ার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলাম। মাত্র উঠে আসলাম।
– হা, খুশবু আমার সাথেই ঘুমিয়েছিলো।
কিন্তু আনিষা কখন বেরিয়ে গেছে??
– এইতো পনেরো – বিশ মিনিটের উপর হবে।( অনি)
– তাড়াতাড়ি ওকে খুঁজে বের করতে হবে, আল্লাহ না করুক দেরি হয়ে গেলে যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়!!
– কিন্তু আমি ওর সাথে যাইনি! ওরা মিথ্যে বলছে কেন?
খুশবু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো।
– এখনও বুঝতে পারছিস না?!! ওকে নিয়ে গেছে। সেদিন রেহানের রূপে আমার সামনে এসেছিলো! আর আজ তোর রূপ নিয়ে আনিষাকে নিয়ে গেছে!!
আর এক মিনিটও দেরি করা যাবে না সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চল।
অনি আর রিফাত দ্রুত ওদের ব্যাগ নিয়ে আসলো। আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে যাচ্ছি।
– রেহানদের জানানো দরকার। ( অনি)
– তাড়াতাড়ি ফোন কর।
অনি ফোন করে ওদেরকে জানালো।
– আমরা এখন কোথায় যাবো?( খুশবু)
– কোথায় আবার সেই জমিদার বাড়ি আর পদ্ম পুকুরে! ( অনি)
এমনিতেই গতকালের ধকলে আমার অবস্থা খারাপ, কিন্তু এখন এসবের দিকে খেয়াল দেবার সময় নেই। আনিষা কোথায় আছে, কি অবস্থা আছে কে জানে!
কি হচ্ছে ওর সাথে!!
ভাবতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
আমরা যে রাস্তায় গেলাম সে রাস্তায় প্রথমে পদ্ম পুকুর পড়ে,তারপর জমিদার বাড়ি।
পদ্ম পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখি পলাশ মামা আরও দুজন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমরা পৌঁছানোর আগেই ওনারা পৌঁছে গেছেন।
আনিষা মাঝ পুকুরে ডুবছে আর ভাসছে।।
রেহান, তাহসিন আর একজন লোক আনিষাকে পানি থেকে তোলার জন্য সাঁতরে ওর কাছে যাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত আনিষাকে তুলে আনলো। যখন তুলে আনলো, তখন আনিষার জ্ঞান ছিলো না।
প্রচুর পানি খেয়েছে।
পুশ করে ওর পেট থেকে পানি বের করার পর ওর জ্ঞান ফিরে।
স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস নিলাম।
ও কাঁদতে শুরু করে। কোনো কথা বলতে পারছে না, তাহসিনের হাত আঁকড়ে ধরে কাঁদছে তো কাঁদছেই।
আনিষাকে নিয়ে আমরা বাংলোয় ফিরে এলাম।।
সন্ধ্যা নেমে গেছে।
রাতে আর কেউ কিছু খেতে পারেনি। আসলে সবাই টেনশনে আছে। এতো দিন এতো উৎপাত করেনি, কিন্তু আমার আসার পরে বেড়ে গেছে।
শুধু আমাকে নয়,অন্যদেরকেও মারতে চেষ্টা করছে!
রাত দশটার দিকে আমি আনিষাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলাম। এখানে সবাই বসে আছে।
আনিষাকে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে ওখানে গেলো।।
আনিষা বললো – বারান্দার সামনে হাঁটছিলাম। তখন খুশবু আপু এসে বললো একটু সামনের রাস্তায় যাবে,একা যাবে না। আমিও সাথে গেলাম।
কিন্তু উনি হেঁটেই যাচ্ছেন। কিছু সময় পরে বললাম – ঐ দিকে যাবো না, বাংলোয় ফিরে চলুন।
তখন উনি আমার দিকে ভয়ংকর ভাবে তাকালেন! পরে দেখি খুশবু আপু না! বীভৎস চেহারার একটা মেয়ে!
চিৎকার করতে চাইছিলাম, কিন্তু আমার গলা থেকে স্বর বের হচ্ছিলো না। ও আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
তারপর আর কিছু বলতে পারি না।
যখন হুঁশ হলো, তখন দেখলাম পুকুরে ডুবে যাচ্ছি। আমি সাঁতার জানি না। বাঁচার চেষ্টা করছি আর ও….
পুকুর ঘাটে বসে খিলখিল করে হাসছে!.
আনিষা আবার কাঁদতে শুরু করলো।
আ……
খুশবু চিৎকার শুনে দৌড়ে সবাই রুমে যাবার আগেই খুশবু এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো আমাদের সামনে।
থরথর করে কাঁপছে।।
– কি হয়েছে খুশবু?
– ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি জানালার এক পার্ট খুলে আছে। ওই দিকে চোখ পড়তেই দেখি এক জোড়া চোখ! মাথা নিচে, পা উপরে দিয়ে ঝুলে আছে বাইরে!!
সবাই চিন্তায় পড়ে গেলাম। এ আমাদের পিছু ছাড়ছে না।আজ রাত কিভাবে কাটবে জানি না।
রাত বারোটা বেজে গেছে।
দিয়ার অনেক সাহস । ও ঘুমাবে বলে একাই নিজের রুমে চলে গেলো।
আমরাও কিছুক্ষন পরে ঘুমাতে গেলাম।
রাত যখন প্রায় দুটো।
আমার চোখে ঘুম আসে। কিন্তু ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে কেউ কানের কাছে ফিসফিস করছে।
ড্রীম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছি। তাকিয়ে দেখি কেউ নেই!
আবার শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে।
একটু পরেই আবার শুনতে পেলাম কেউ আলমারি খুলছে, রুমের মধ্যে হাঁটছে।
মনে হচ্ছে খুশবু উঠেছে। আমি আর দেখছি না। কিন্তু অতিরিক্ত শব্দে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। উঠে বসে পড়ি।
খুশবু গভীর ঘুমে। রুমে কেউ নেই। আলমারীও বন্ধ!
এবার ভয় পেয়ে গেছি। বুঝতে পারছি কি হচ্ছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো শক্ত করে শুয়ে আছি। ঘুম চলে গেছে চোখ থেকে!
বেশ কিছু সময় পরে একটা গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম আমার উপর।
কিছু না বুঝেই হঠাৎ চোখ খুলে তাকাই।
যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না!
চোখ খুলতেই দেখি আমার চোখ কাঞ্চনের চোখ বরাবর! দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চি!
শূন্যে ভেসে আমার দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে কাঞ্চন!
এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে দুই সেকেন্ড ফ্রীজ হয়ে গেছি,তারপর চোখ বন্ধ করে এক চিৎকার দিলাম।
খুশবু উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে, অন্যরাও এসে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।
খুশবু দরজা খুলে দিলো।সবাই আসলো।
কারো বুঝতে বাকি নেই আবার কিছু ঘটেছে। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি। এক সময় ওদের বললাম।
ওরা এখানেই বসে আছে। আর ঘুমাতে হবে না। রাত টা বসেই কাটিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু দিয়া কোথায়?
সবাইকে দেখলেও দিয়াকে দেখতে পাচ্ছি না!
আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– দিয়া কোথায়??
– ও তো আমার সাথেই বের হয়েছে রুম থেকে! ( আনিষা)
কেউ কিছু বলার আগেই রেহান দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ওর পিছনে আমরাও।
দিয়া ওর রুমেই মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে!
– তুই এখানে একা বসে আসছি কেন?
দিয়ার কাঁধে হাত রেখে রেহান জিজ্ঞাসা করলো।
আমরাও ওর পিছনে রুমে ঢুকলাম।
রেহানের দিকে এমন করে তাকালো যে রেহান ভয়ে দুইহাত পিছনে সরে আসলো!
চলবে…..